বাংলা স্কুপ, ৭ অক্টোবর:
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেডের কাজলা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্যুতের সরকারি ১৬৩৪টি মিটার স্থাপনের নামে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গ্রাহকের আঙ্গিনায় পোস্টপেইড মিটারের পরিবর্তে প্রিপেইড মিটার রিপ্লেস না করেই তিনি নতুন বিদ্যুৎ সংযোগে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মিটার বরাদ্দ দিচ্ছেন। এর বাইরেও তিনি উৎকোচ নিয়ে পোস্টপেইড মিটারের স্থানে প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থাপন করছেন। এই প্রকৌশলীর নেতৃত্বাধীন চক্র কাজলা ডিভিশনকে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে।
আর এসব খুঁজতে গিয়ে বাংলাস্কুপের হাতে এসেছে কাজলা ডিভিশনের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের অনেক নথি। নথি পর্যালোচনা ও বিভিন্ন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে রাশেদুলের দুর্নীতির অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, যার আংশিক অংশ প্রকাশ করা হলো। জানা যায়, প্রতিটি প্রিপেইড মিটার বরাদ্দের নামে গড়ে ২২০০ টাকা করে ঘুষ নেয়া হয়। এই হিসাবে ১৬৩৪টি মিটারে ঘুষের টাকার পরিমাণ ৩৫,৯৪,৮০০ টাকা। এই টাকাই হাতিয়ে নিয়েছে রাশেদুল চক্র।
সূত্র জানায়, কাজলা ডিভিশনে গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার। সর্বশেষ দশ হাজার গ্রাহকের পোস্টপেইড মিটারের রিপ্লেসমেন্টের বিপরীতে আট হাজার প্রিপেইড মিটার বরাদ্দ দেয় ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ। সূত্র বলছে, ওই নির্বাহী প্রকৌশলী গ্রাহকের আঙ্গিনায় প্রিপেইড মিটার স্থাপন না করে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগগুলোতে গ্রাহকের কাছ থেকে মিটারপ্রতি ২২০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা উৎকোচ নিয়ে প্রিপেইড মিটার দিচ্ছে। ঘুষ দিয়ে মিটার পেলেও সরকারি হিসাব অনুযায়ী মাসিক ভাড়া গুণতে হয় ৪০ টাকা করে। আর এই ভাড়া গুনতে হবে ১০ বছরের বেশি সময়। গ্রাহকেরা জানান, খোলা বাজারে প্রকারভেদে প্রিপেইড মিটারের মূল্য ৫২০০ থেকে ৫৬০০ টাকা।
তবে ডিপিডিসির বিভিন্ন ডিভিশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্থাটির পক্ষ থেকে যেসব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দেওয়া হয়েছে তা খারাপ হলে ঐ মিটার রিপ্লেস করে দেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ গ্রাহকের ভাগ্যে জোটে না রিপ্লেস মিটার। তখন গ্রাহককে বাধ্য হয়েই খোলাবাজার থেকে মিটার কিনতে হয় চড়া দামে। না হলে ওই ডিভিশনের কর্মকর্তাদের উৎকোচ দিয়ে মিটার লাগাতে হয়।
সূত্র জানায়, রাশেদুল চক্রের আরেক কুশীলব কাজলা ডিভিশনের স্টোরকিপার রবিউল হোসেন। তিনি ঘুরেফিরে প্রায় ১৮ বছর যাবৎ এই ডিভিশনেই কর্মরত থাকায় দুর্নীতির নেটওয়ার্ক অনেক বিস্তার হয়েছে। অফিসে বসেই তার প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার ছবি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। রাজ, মো. হাসান ও রাজীব নামে আরো তিনজনকে এই চক্রের সদস্য হিসেবে সনাক্ত করেছে বাংলাস্কুপ।
কাজলা ডিভিশনে প্রিপেইড মিটার বরাদ্দ হয় টাকার বিনিময়ে। অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য। এনএন এন্টারপ্রাইজ নামে এক ওয়ারিং ঠিকাদারের লোক মো. হাসানের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে জনৈক রফিকুল ইসলাম খোকন সম্প্রতি চারটি প্রিপেইড মিটার নেয়, যার একটির কাস্টমার নাম্বার- ৪২৫২৯৫৪৬। ওই গ্রাহকের মুঠোফোনের নাম্বারে ফোন করলে ফোনটি ধরেন মো. হাসান। এই ফোন নাম্বারটি কার জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি কাজলা ডিভিশনের গ্রাহকদের অনলাইন করেন এবং গ্রাহকদের নতুন সংযোগের ওয়ারিং সার্টিফিকেট ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সহায়তা করেন। ওই ডিভিশনের আরেক গ্রাহক মো. রুবেল হোসেনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্টোরকিপার রবিউল হোসেনের মাধ্যমে নির্বাহী প্রকৌশলীকে ৩ হাজার টাকা দিয়েছিলাম, প্রিপেইড মিটার উনারই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, কাজলা ডিভিশনের ওই চক্র আসু মোল্লা ও মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ নামে দুজন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মিটার ইস্যু করেছে। এই দুই গ্রাহককেও একটি মোবাইল নাম্বারের (০১৮১৯৮৩৩৬৫_) বিপরীতে মিটার ইস্যু করেছে চক্রটি।
এভাবেই দুর্নীতি, অনিয়ম আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাশেদুল ইসলাম অর্থবিত্তের পাহাড় গড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন ডিপিডিসির প্রশাসন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাই দুর্নীতি করেও বারবার পার পেয়ে যান রাশেদুল।
আরো অভিযোগ রয়েছে, প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম অবৈধভাবে টাকা আয়ের জন্য নানা অজুহাতে প্রতিনিয়ত সাধারণ গ্রাহকদের হয়রানি করছেন। বৈধ পন্থায় কেউ বিদ্যুতের সংযোগ নিতে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিলেও মনগড়া নানা অজুহাত দিয়ে হয়রানি করে থাকেন। কিন্তু উৎকোচ দিলেই সব ঠিক, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ঘাটতি থাকলেও মুহূর্তেই সংযোগ লেগে যায়! এভাবে ডিপিডিসির কাজলা ডিভিশনে অনিয়ম-দুর্নীতির এক অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছেন এই প্রকৌশলী। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ প্রশাসন দপ্তরে ফাইলবন্দী রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম ২০০৮ সালের ৩০ জুন ডিপিডিসির কমলাপুর ডিভিশনে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে যোগদান করেন। এরপর দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় তাকে গ্রিড (সাউথ) এ দীর্ঘদিন সংযুক্ত করে রাখা হয়। পরবর্তীতে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পদে ২০১৪ সালের ২ মার্চ কোম্পানি সচিবালয়ে বদলি করা হলেও পরদিনই ফের একই পদে গ্রিড-১ এ বদলি করা হয়। এভাবে কয়েক দফা বিভিন্ন দপ্তরে বদলির পর ২০১৮ সালের ২১ জুন নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি হলে ট্যারিফ অ্যান্ড এনার্জি অডিট ডিভিশনে তাকে বদলি করা হয়। সেখানে ১৩ দিন চাকরির পর ২০১৮ সালের ৫ জুলাই ফের তাকে প্রজেক্ট-২ এর ৩৩/১১ কেভি সাব স্টেশন অ্যান্ড লাইন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর উন্নয়ন দপ্তরে বদলি করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট নির্বাহী পরিচালক অপারেশনের দপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়। সূত্র আরও জানায়, ঐ বছরই তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ানকে 'ম্যানেজ' করে তিনি ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কাজলা ডিভিশনে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। আর এরপরই তার দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাত্রা আরো একধাপ বেড়ে যায়।
ডিপিডিসির এইচআর সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে কমলাপুর বিভাগে কর্মরত অবস্থায় ৪০ লাখ টাকা বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে ডিপিডিসির তৎকালীন কোম্পানি সচিব মো. মনির চৌধুরীর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত রাশেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। তখনও তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে 'ম্যানেজ' করে বরখাস্তের আদেশ দ্রুত প্রত্যাহার করিয়ে নেন।
অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম। জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, প্রিপেইড মিটার ও বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই।
ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ এম শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর মাঠ পর্যায়ে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। এরপরও গ্রাহক হয়রানি ও প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থাপনে কোন দুর্নীতি হলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পেলে চাকরিবিধি অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএস/প্রতিবেদক/এসকে
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হলেন ফারজানা মমতাজ
অবসরে যাচ্ছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব
কূপ খনন ও অনুসন্ধান সহজ হলে জ্বালানি সংকট কেটে যাবে : জ্বালানি উপদেষ্টা
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতির তথ্য চেয়েছে সরকার
ডেসকোর 'অনিয়ম' অনুসন্ধানে কমিটি গঠন
'দুর্নীতির দায় বিদ্যুৎ সচিব এড়াতে পারেন না'
গিরগিটির মত রং পাল্টান যাঁরা!
অনিয়ম-দুর্নীতিতে অপ্রতিরোধ্য দুই প্রকৌশলী!
এপিএসসিএলের ৩ কর্মকর্তার দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ
ডেসকোর দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের লুটপাটের টাকা ফিরিয়ে আনার দাবি
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতা ছাড়া প্রকল্প-টেন্ডার নয় : জ্বালানি উপদেষ্টা
'বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোমড় ভেঙে দেওয়া হয়েছে'
সুখবর দিলেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেডের কাজলা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্যুতের সরকারি ১৬৩৪টি মিটার স্থাপনের নামে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গ্রাহকের আঙ্গিনায় পোস্টপেইড মিটারের পরিবর্তে প্রিপেইড মিটার রিপ্লেস না করেই তিনি নতুন বিদ্যুৎ সংযোগে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মিটার বরাদ্দ দিচ্ছেন। এর বাইরেও তিনি উৎকোচ নিয়ে পোস্টপেইড মিটারের স্থানে প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থাপন করছেন। এই প্রকৌশলীর নেতৃত্বাধীন চক্র কাজলা ডিভিশনকে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে।
আর এসব খুঁজতে গিয়ে বাংলাস্কুপের হাতে এসেছে কাজলা ডিভিশনের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের অনেক নথি। নথি পর্যালোচনা ও বিভিন্ন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে রাশেদুলের দুর্নীতির অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, যার আংশিক অংশ প্রকাশ করা হলো। জানা যায়, প্রতিটি প্রিপেইড মিটার বরাদ্দের নামে গড়ে ২২০০ টাকা করে ঘুষ নেয়া হয়। এই হিসাবে ১৬৩৪টি মিটারে ঘুষের টাকার পরিমাণ ৩৫,৯৪,৮০০ টাকা। এই টাকাই হাতিয়ে নিয়েছে রাশেদুল চক্র।
সূত্র জানায়, কাজলা ডিভিশনে গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার। সর্বশেষ দশ হাজার গ্রাহকের পোস্টপেইড মিটারের রিপ্লেসমেন্টের বিপরীতে আট হাজার প্রিপেইড মিটার বরাদ্দ দেয় ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ। সূত্র বলছে, ওই নির্বাহী প্রকৌশলী গ্রাহকের আঙ্গিনায় প্রিপেইড মিটার স্থাপন না করে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগগুলোতে গ্রাহকের কাছ থেকে মিটারপ্রতি ২২০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা উৎকোচ নিয়ে প্রিপেইড মিটার দিচ্ছে। ঘুষ দিয়ে মিটার পেলেও সরকারি হিসাব অনুযায়ী মাসিক ভাড়া গুণতে হয় ৪০ টাকা করে। আর এই ভাড়া গুনতে হবে ১০ বছরের বেশি সময়। গ্রাহকেরা জানান, খোলা বাজারে প্রকারভেদে প্রিপেইড মিটারের মূল্য ৫২০০ থেকে ৫৬০০ টাকা।
তবে ডিপিডিসির বিভিন্ন ডিভিশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্থাটির পক্ষ থেকে যেসব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দেওয়া হয়েছে তা খারাপ হলে ঐ মিটার রিপ্লেস করে দেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ গ্রাহকের ভাগ্যে জোটে না রিপ্লেস মিটার। তখন গ্রাহককে বাধ্য হয়েই খোলাবাজার থেকে মিটার কিনতে হয় চড়া দামে। না হলে ওই ডিভিশনের কর্মকর্তাদের উৎকোচ দিয়ে মিটার লাগাতে হয়।
সূত্র জানায়, রাশেদুল চক্রের আরেক কুশীলব কাজলা ডিভিশনের স্টোরকিপার রবিউল হোসেন। তিনি ঘুরেফিরে প্রায় ১৮ বছর যাবৎ এই ডিভিশনেই কর্মরত থাকায় দুর্নীতির নেটওয়ার্ক অনেক বিস্তার হয়েছে। অফিসে বসেই তার প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার ছবি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। রাজ, মো. হাসান ও রাজীব নামে আরো তিনজনকে এই চক্রের সদস্য হিসেবে সনাক্ত করেছে বাংলাস্কুপ।
কাজলা ডিভিশনে প্রিপেইড মিটার বরাদ্দ হয় টাকার বিনিময়ে। অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য। এনএন এন্টারপ্রাইজ নামে এক ওয়ারিং ঠিকাদারের লোক মো. হাসানের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে জনৈক রফিকুল ইসলাম খোকন সম্প্রতি চারটি প্রিপেইড মিটার নেয়, যার একটির কাস্টমার নাম্বার- ৪২৫২৯৫৪৬। ওই গ্রাহকের মুঠোফোনের নাম্বারে ফোন করলে ফোনটি ধরেন মো. হাসান। এই ফোন নাম্বারটি কার জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি কাজলা ডিভিশনের গ্রাহকদের অনলাইন করেন এবং গ্রাহকদের নতুন সংযোগের ওয়ারিং সার্টিফিকেট ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সহায়তা করেন। ওই ডিভিশনের আরেক গ্রাহক মো. রুবেল হোসেনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্টোরকিপার রবিউল হোসেনের মাধ্যমে নির্বাহী প্রকৌশলীকে ৩ হাজার টাকা দিয়েছিলাম, প্রিপেইড মিটার উনারই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, কাজলা ডিভিশনের ওই চক্র আসু মোল্লা ও মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ নামে দুজন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মিটার ইস্যু করেছে। এই দুই গ্রাহককেও একটি মোবাইল নাম্বারের (০১৮১৯৮৩৩৬৫_) বিপরীতে মিটার ইস্যু করেছে চক্রটি।
এভাবেই দুর্নীতি, অনিয়ম আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাশেদুল ইসলাম অর্থবিত্তের পাহাড় গড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন ডিপিডিসির প্রশাসন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাই দুর্নীতি করেও বারবার পার পেয়ে যান রাশেদুল।
আরো অভিযোগ রয়েছে, প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম অবৈধভাবে টাকা আয়ের জন্য নানা অজুহাতে প্রতিনিয়ত সাধারণ গ্রাহকদের হয়রানি করছেন। বৈধ পন্থায় কেউ বিদ্যুতের সংযোগ নিতে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিলেও মনগড়া নানা অজুহাত দিয়ে হয়রানি করে থাকেন। কিন্তু উৎকোচ দিলেই সব ঠিক, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ঘাটতি থাকলেও মুহূর্তেই সংযোগ লেগে যায়! এভাবে ডিপিডিসির কাজলা ডিভিশনে অনিয়ম-দুর্নীতির এক অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছেন এই প্রকৌশলী। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ প্রশাসন দপ্তরে ফাইলবন্দী রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম ২০০৮ সালের ৩০ জুন ডিপিডিসির কমলাপুর ডিভিশনে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে যোগদান করেন। এরপর দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় তাকে গ্রিড (সাউথ) এ দীর্ঘদিন সংযুক্ত করে রাখা হয়। পরবর্তীতে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পদে ২০১৪ সালের ২ মার্চ কোম্পানি সচিবালয়ে বদলি করা হলেও পরদিনই ফের একই পদে গ্রিড-১ এ বদলি করা হয়। এভাবে কয়েক দফা বিভিন্ন দপ্তরে বদলির পর ২০১৮ সালের ২১ জুন নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি হলে ট্যারিফ অ্যান্ড এনার্জি অডিট ডিভিশনে তাকে বদলি করা হয়। সেখানে ১৩ দিন চাকরির পর ২০১৮ সালের ৫ জুলাই ফের তাকে প্রজেক্ট-২ এর ৩৩/১১ কেভি সাব স্টেশন অ্যান্ড লাইন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর উন্নয়ন দপ্তরে বদলি করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট নির্বাহী পরিচালক অপারেশনের দপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়। সূত্র আরও জানায়, ঐ বছরই তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ানকে 'ম্যানেজ' করে তিনি ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কাজলা ডিভিশনে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। আর এরপরই তার দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাত্রা আরো একধাপ বেড়ে যায়।
ডিপিডিসির এইচআর সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে কমলাপুর বিভাগে কর্মরত অবস্থায় ৪০ লাখ টাকা বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে ডিপিডিসির তৎকালীন কোম্পানি সচিব মো. মনির চৌধুরীর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত রাশেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। তখনও তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে 'ম্যানেজ' করে বরখাস্তের আদেশ দ্রুত প্রত্যাহার করিয়ে নেন।
অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম। জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, প্রিপেইড মিটার ও বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই।
ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ এম শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর মাঠ পর্যায়ে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। এরপরও গ্রাহক হয়রানি ও প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থাপনে কোন দুর্নীতি হলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পেলে চাকরিবিধি অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএস/প্রতিবেদক/এসকে
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হলেন ফারজানা মমতাজ
অবসরে যাচ্ছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব
কূপ খনন ও অনুসন্ধান সহজ হলে জ্বালানি সংকট কেটে যাবে : জ্বালানি উপদেষ্টা
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতির তথ্য চেয়েছে সরকার
ডেসকোর 'অনিয়ম' অনুসন্ধানে কমিটি গঠন
'দুর্নীতির দায় বিদ্যুৎ সচিব এড়াতে পারেন না'
গিরগিটির মত রং পাল্টান যাঁরা!
অনিয়ম-দুর্নীতিতে অপ্রতিরোধ্য দুই প্রকৌশলী!
এপিএসসিএলের ৩ কর্মকর্তার দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ
ডেসকোর দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের লুটপাটের টাকা ফিরিয়ে আনার দাবি
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতা ছাড়া প্রকল্প-টেন্ডার নয় : জ্বালানি উপদেষ্টা
'বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোমড় ভেঙে দেওয়া হয়েছে'
সুখবর দিলেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা