ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ , ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​মানিকনগরে সঞ্চালন লাইনে দুর্ঘটনা

এখনও বহাল তবিয়তে প্রকৌশলী আসাদুল ইসলাম!

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৩-১১-২০২৪ ০৩:৫৪:০৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৩-১১-২০২৪ ০৫:৪৩:২২ অপরাহ্ন
এখনও বহাল তবিয়তে প্রকৌশলী আসাদুল ইসলাম! ​ফাইল ফটো
রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় সঞ্চালন লাইনে কাজ করার সময় তড়িতাহত হয়ে হতাহতের ঘটনায় এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল ইসলাম। এ ঘটনায় ঢাকা পওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) মানিকনগর ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম সিরাজ ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা কমপ্লেইন সুপারভাইজার (সিএস) মো. আলী আজম খানকে গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাতেই সাময়িক বরখাস্ত করলেও মূল অভিযুক্তরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। 
তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় দুর্ঘটনা হওয়ার আগে সকালে উচ্চচাপ বিদ্যুৎ সঞ্চালন সায়েদাবাদ ফিডারে ওই বিদ্যুৎকর্মীরা কাজ শেষ করে কন্ট্রোল রুমকে অবহিত করার আগেই সঞ্চালন লাইন চালু করে দেয়া হয়। ভাগ্যক্রমে ওই ৬ শ্রমিক প্রাণে বেঁচে যান। সূত্র জানায়, ঐ সায়দাবাদ ফিডার ও মানিকনগর ওয়াপদা ফিডারটিরও দায়িত্বে ছিলেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল ইসলাম। ডিপিডিসির ৩৬টি ডিভিশনেই ফিডারের (বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন) মূল দায়িত্বে থাকেন উপ-সহকারী প্রকৌশলীরা। স্থানীয় পর্যায়ে ওই ফিডারের সাময়িক দেখভালও তারা করেন। প্রশ্ন উঠেছে, ভয়াবহ দুর্ঘটনার আগে ঐদিন সকালে সায়েদাবাদ ফিডারে কর্মরত বিদ্যুৎকর্মীদের ক্লিয়ারেন্স না নিয়েই কেন সঞ্চালন লাইনটি চালু করা হয়েছিলো? আর ঐ সময় সংশ্লিষ্ট ফিডার ইনচার্জ উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল ইসলাম কোথায় ছিলেন? ওই দিন ফিডারটির রক্ষণাবেক্ষণের সময় ফিডার ইনচার্জ কেন ছিলেন না?
মানিকনগর ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল ইসলামের বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধানে বাংলাস্কুপের হাতে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডিপিডিসিতে তাঁর চাকরি হয়েছিলো ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে। চাকরির শুরুতে তার প্রথম পদায়ন ছিলো মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম দপ্তরে। পরবর্তীতে ৮ জানুয়ারি ২০১৯ সালে তিনি পোস্তগোলা ডিভিশনে বদলি নেন। এরপর তাঁর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। টানা ৫ বছর তিনি ওই ডিভিশন এলাকায় দাঁপিয়ে বেরিয়েছেন। তিনি গড়ে তুলেছিলেন একটি সিন্ডিকেট। আর ওই সিন্ডিকেটের স্থানীয় পর্যায়ের দালাল ছিলো শহীদ, মাসুদ ও কবির। আর অন্যদিকে, ওই সময় পোস্তগোলা ডিভিশনের তৎকালীন সিএসএস-এর বাৎসরিক ঠিকাদারের কিছু অসাধু মিটাররিডার। তথ্য অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে আসা গ্রাহকদের করেছেন হয়রানি, চাহিদামত টাকা হাতে পেলেই গ্রাহকদের সংযোগের প্রাথমিক ব্যবস্থা নিতেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রকৌশলী তৎকালীন সময়ে ওই এলাকায় চুক্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন চালিয়ে প্রতি মাসে অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেছেন। এতে করে ডিপিডিসি হারিয়েছে রাজস্ব । ওই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠার পরও তৎকালীন মানবসম্পদ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই তাঁকে গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ সালে মানিকনগর ডিভিশনে বদলি করে। আর এই বদলি হয়েই মানিকনগর ডিভিশনে গড়ে তুলেছেন আরেকটি সিন্ডিকেট। 
সূত্র জানায়, মানিকনগর ডিভিশনে কোন বিদ্যুৎ গ্রাহক সংযোগের জন্য আবেদন করলেই এই প্রকৌশলীর সাথে কথা না বললে সংযোগ মিলে না । আরও জানা যায়, সকালে তিনি অফিসে এসেই ডিভিশন এলাকায় বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানির অফিসে ঘুরে বেড়াতেন। ওই ডিভিশনে উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সংযোগের যেকোন কাজের ঠিকাদারি নিতেন তিনি। সম্প্রতি মানিকনগর ডিভিশন এলাকায় বেশ কয়েকটি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত করলে ওই গ্রাহকদের জরিমানার আওতায় আনা হয়েছিলো। গ্রাহকদের অবৈধ ওই সংযোগগুলো চালানোর পিছনে  প্রকৌশলী আসাদুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।  
এদিকে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) মোরশেদ  আলম খানের মানিকনগরের ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলা ও তাঁর বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হওয়ায় প্রকৌশলীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক প্রকৌশলী বলছেন, এ দুর্ঘটনার দায় মোরশেদ আলম খান কোন অবস্থাতেই এড়াতে পারেন না। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাহী পরিচালক পদে থাকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চান না। অবশ্য মোরশেদ  আলম খানকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে কৈফিয়ত তলবের চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।  
অভিযোগের বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল ইসলামকে মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
এদিকে দুর্ঘটনা নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ এম শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বাংলা স্কুপকে বলেন, দুর্ঘটনা নিয়ে ফিডার ইন চার্জ উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল ইসলামের অবহেলার সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছি। ওইদিন সায়েদাবাদ ফিডারে বিদ্যুৎকর্মীদের কাজ শেষে ক্লিয়ারেন্স না নিয়েই সঞ্চালন লাইন চালু করার বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। তদন্ত করতে এসে ডিভিশনের বেশ কিছু অনিয়মও আমার চোখে পড়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আমি এসব উল্লেখ করেছি।
উল্লেখ্য, মানিকনগরে তড়িতাহত হয়ে বিদ্যুৎকর্মী হতাহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বাংলা স্কুপ/প্রতিবেদক/এসকে

মানিকনগরের দুর্ঘটনায় আরেক কর্মকর্তা বরখাস্ত

মানুষের মৃত্যুর কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না : বিদ্যুৎ উপদেষ্টা
 
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ