
আমিনুল কবির সুমন॥
বৈদ্যুতিক তার পরিবর্তনের সময় বিদ্যুৎকর্মী নিহতের জেরে তিন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ডিপিডিসি) ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। ডিপিডিসিতে কর্মরত বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা অবিলম্বে এই বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছেন ।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদনে সংস্থাটিতে কর্মরত সর্বস্তরের প্রকৌশলীরা ওই বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। এর আগে, বুধবার (১৬ এপ্রিল) কাঁটাবনস্থ স্ক্যাডা ভবনে বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলী নেতৃবৃন্দ জরুরি সভা করেন। সভার সিদ্ধান্তক্রমে, ওইদিন দুপুর দুইটার পর সংস্থাটির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করেন।
গত ৯ এপ্রিল ডিপিডিসির মগবাজার ডিভিশনের আওতাধীন ১৫/১৫, ওমর আলী লেন পশ্চিম রামপুরায় এক বিদ্যুৎ গ্রাহকের দুইটি এলটি মিটার স্থাপন এবং ২৩০ ভোল্ট লাইন থেকে সার্ভিস তার পরিবর্তনের কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত হন বাৎসরিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তামিম ইন্টারন্যাশনালের কর্মী কামরান হোসেন। এই ঘটনার পর মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ডিপিডিসির মগবাজার সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী (অ: দা:) মো. মাহে আলম ও সহকারী প্রকৌশলী শেখ আবেদ আলিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বৃহস্পতিবার ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদনে সর্বস্তরের প্রকৌশলীরা বলেন, নিহত ব্যক্তি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘তামিম ইন্টারন্যাশনাল’-এর অধীনস্থ কারিগরি দলের সদস্য ছিলেন। তিনি সার্ভিস তার পরিবর্তনের সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। এই কাজে ডিপিডিসির কোনো তত্ত্বাবধায়ক, নির্বাহী বা সহকারী প্রকৌশলীর সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল না।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ডিপিডিসির নিয়মিত রুটিন কার্যক্রম হিসেবে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় মিটার স্থাপন ও সংযোগের কাজ চলে। সাধারণত এই ধরনের কাজে শাটডাউন নেওয়া হয় না এবং এটি বিদ্যুৎ বিতরণ খাতে প্রচলিত একটি প্র্যাকটিস।
প্রকৌশলীরা জানান, সংস্থাটি দৈনিক ২০–৩০টি এলটি সংযোগ দেয় এবং এনওসিএস মগবাজার এলাকায় এটিই প্রথম দুর্ঘটনা। সারাদেশে এমন দুর্ঘটনার হার অত্যন্ত কম হওয়ায়, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা হিসেবেই দেখা উচিত।
চিঠিতে Electrical Safety Foundation International (ESFI)-এর তথ্য তুলে ধরেন প্রকৌশলীরা। তথ্যমতে, ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, ইলেকট্রিক্যাল কাজ ছিল সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে। এই সময়কালে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে ইলেকট্রিক্যাল দুর্ঘটনায় বিশেষ করে ওভারহেড লাইনে কাজ করার সময় প্রায় ৪১% মৃত্যু ঘটে (র্সোস: https://www.esfi.org/electrical-fatalities-in workplace-2011-2022/)। কিন্তু বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর দিকে হতে ২০২০ সালের তথ্য অনুসারে সড়ক ও পরিবহন সেক্টর ১ম (৩৮.৮%), নির্মাণ সেক্টর ২য় (২৭.৩%), সকল সার্ভিস সেক্টর ৩য় (১৯.৯%) (সোস: Bangladesh workplace Death Report 2020)। সুতরাং ইলেকট্রিক্যাল কাজ সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং ডিপিডিসি সতর্কতার সাথে কাজ করা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটছে, যা মানবিক ও কারিগরি উভয় দিক থেকেই অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে আরো কমিয়ে আনার জন্য Root Cause বিশ্লেষণ করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিপিডিসির প্রকৌশলী সমাজের দাবি, নিহত বিদ্যুৎকর্মী যে কাজ করছিলেন তা মূলত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়ভার। তার মৃত্যুর দায়ভার প্রকৌশলীদের ওপর চাপানো অনভিপ্রেত। বরখাস্তের ঘটনায় প্রকৌশলীদের মাঝে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে এবং এটি কর্মস্পৃহার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমতাবস্থায় প্রকৌশলী সমাজ সাময়িক বরখাস্ত আদেশ বাতিল করে প্রকৌশলীদের ন্যায্যতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাংলা স্কুপকে বলেন, যে কোন দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু দুঃখজনক। অন্তবর্তীকালীন সরকার এই জাতীয় দুর্ঘটনা রোধে নানা রকমের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনারোধে মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে। সেগুলো নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব কাজ করছেন। সম্প্রতি ডিপিডিসির মগবাজার ডিভিশনে বিদ্যুৎকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় উপদেষ্টা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ জাতীয় ঘটনা ডিপিডিসিতে প্রায়ই ঘটছে। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটিতে কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেলে চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎকর্মীদের আরো সতর্ক হয়ে কাজ করার আহবান জানান তিনি।
প্রকৌশলীদের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা স্কুপকে বলেন, ওই তিন প্রকৌশলীর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রশাসনিক বিষয়। এই দুর্ঘটনায় ওই কর্মকর্তাদের দায় আছে কি নেই, তা নির্ধারণ হবে মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর। তদন্ত প্রতিবেদন ইতিবাচক হলে তাঁদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হবে বলে জানান তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে সম্প্রতি একজন দক্ষ আমলাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত ১৬ বছরে ডিপিডিসিতে দুর্ঘটনাজনিত কারণে কতজন নিহত হয়েছেন, কী কী অনিয়ম হয়েছে- তার তালিকা করতে বলা হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় কোন কর্মকর্তার দায় আছে কি না, তাও নিরুপণ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রাহকসেবা দিতে গিয়ে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই আমরা অসদাচরণের অভিযোগ শুনতে পাই। ওইসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার শতভাগ গ্রাহকসেবা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। অনিয়ম ও অবহেলায় কোন গ্রাহক সেবাবঞ্চিত হলে তা তদন্তপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডিপিডিসির প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিনই সংস্থাটির আওতাধীন এলাকায় এলটিতে (নিম্নচাপ) শত শত নতুন মিটার ও সংযোগ প্রদান করা হয়ে থাকে। শুধুমাত্র উচ্চচাপ সংযোগের সময় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে শাটডাউন নিতে হয়। মগবাজারে ঘটনা একটি দুর্ঘটনা মাত্র। এই দুর্ঘটনার কারণে তিনজন প্রকৌশলীকে সাময়কি বরখাস্ত করা দুঃখজনক। অবিলম্বে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে মাঠপর্যায়ের প্রকৌশলীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এদিকে, বিদ্যুৎকর্মী নিহতের ঘটনায় মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি বুধবার (১৬ এপ্রিল) মগবাজার ডিভিশন ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে।
বাংলাস্কুপ/বিশেষ প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে
বিদ্যুৎকর্মীর মৃত্যু : ডিপিডিসির তিন কর্মকর্তা বরখাস্ত, ক্ষুব্ধ প্রকৌশলীরা
আর কত বিদ্যুতকর্মীর প্রাণ গেলে টনক নড়বে!
বৈদ্যুতিক তার পরিবর্তনের সময় বিদ্যুৎকর্মী নিহতের জেরে তিন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ডিপিডিসি) ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। ডিপিডিসিতে কর্মরত বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা অবিলম্বে এই বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছেন ।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদনে সংস্থাটিতে কর্মরত সর্বস্তরের প্রকৌশলীরা ওই বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। এর আগে, বুধবার (১৬ এপ্রিল) কাঁটাবনস্থ স্ক্যাডা ভবনে বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলী নেতৃবৃন্দ জরুরি সভা করেন। সভার সিদ্ধান্তক্রমে, ওইদিন দুপুর দুইটার পর সংস্থাটির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করেন।
গত ৯ এপ্রিল ডিপিডিসির মগবাজার ডিভিশনের আওতাধীন ১৫/১৫, ওমর আলী লেন পশ্চিম রামপুরায় এক বিদ্যুৎ গ্রাহকের দুইটি এলটি মিটার স্থাপন এবং ২৩০ ভোল্ট লাইন থেকে সার্ভিস তার পরিবর্তনের কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত হন বাৎসরিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তামিম ইন্টারন্যাশনালের কর্মী কামরান হোসেন। এই ঘটনার পর মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ডিপিডিসির মগবাজার সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী (অ: দা:) মো. মাহে আলম ও সহকারী প্রকৌশলী শেখ আবেদ আলিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বৃহস্পতিবার ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদনে সর্বস্তরের প্রকৌশলীরা বলেন, নিহত ব্যক্তি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘তামিম ইন্টারন্যাশনাল’-এর অধীনস্থ কারিগরি দলের সদস্য ছিলেন। তিনি সার্ভিস তার পরিবর্তনের সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। এই কাজে ডিপিডিসির কোনো তত্ত্বাবধায়ক, নির্বাহী বা সহকারী প্রকৌশলীর সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল না।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ডিপিডিসির নিয়মিত রুটিন কার্যক্রম হিসেবে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় মিটার স্থাপন ও সংযোগের কাজ চলে। সাধারণত এই ধরনের কাজে শাটডাউন নেওয়া হয় না এবং এটি বিদ্যুৎ বিতরণ খাতে প্রচলিত একটি প্র্যাকটিস।
প্রকৌশলীরা জানান, সংস্থাটি দৈনিক ২০–৩০টি এলটি সংযোগ দেয় এবং এনওসিএস মগবাজার এলাকায় এটিই প্রথম দুর্ঘটনা। সারাদেশে এমন দুর্ঘটনার হার অত্যন্ত কম হওয়ায়, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা হিসেবেই দেখা উচিত।
চিঠিতে Electrical Safety Foundation International (ESFI)-এর তথ্য তুলে ধরেন প্রকৌশলীরা। তথ্যমতে, ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, ইলেকট্রিক্যাল কাজ ছিল সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে। এই সময়কালে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে ইলেকট্রিক্যাল দুর্ঘটনায় বিশেষ করে ওভারহেড লাইনে কাজ করার সময় প্রায় ৪১% মৃত্যু ঘটে (র্সোস: https://www.esfi.org/electrical-fatalities-in workplace-2011-2022/)। কিন্তু বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর দিকে হতে ২০২০ সালের তথ্য অনুসারে সড়ক ও পরিবহন সেক্টর ১ম (৩৮.৮%), নির্মাণ সেক্টর ২য় (২৭.৩%), সকল সার্ভিস সেক্টর ৩য় (১৯.৯%) (সোস: Bangladesh workplace Death Report 2020)। সুতরাং ইলেকট্রিক্যাল কাজ সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং ডিপিডিসি সতর্কতার সাথে কাজ করা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটছে, যা মানবিক ও কারিগরি উভয় দিক থেকেই অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে আরো কমিয়ে আনার জন্য Root Cause বিশ্লেষণ করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিপিডিসির প্রকৌশলী সমাজের দাবি, নিহত বিদ্যুৎকর্মী যে কাজ করছিলেন তা মূলত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়ভার। তার মৃত্যুর দায়ভার প্রকৌশলীদের ওপর চাপানো অনভিপ্রেত। বরখাস্তের ঘটনায় প্রকৌশলীদের মাঝে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে এবং এটি কর্মস্পৃহার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমতাবস্থায় প্রকৌশলী সমাজ সাময়িক বরখাস্ত আদেশ বাতিল করে প্রকৌশলীদের ন্যায্যতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাংলা স্কুপকে বলেন, যে কোন দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু দুঃখজনক। অন্তবর্তীকালীন সরকার এই জাতীয় দুর্ঘটনা রোধে নানা রকমের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনারোধে মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে। সেগুলো নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব কাজ করছেন। সম্প্রতি ডিপিডিসির মগবাজার ডিভিশনে বিদ্যুৎকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় উপদেষ্টা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ জাতীয় ঘটনা ডিপিডিসিতে প্রায়ই ঘটছে। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটিতে কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেলে চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎকর্মীদের আরো সতর্ক হয়ে কাজ করার আহবান জানান তিনি।
প্রকৌশলীদের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা স্কুপকে বলেন, ওই তিন প্রকৌশলীর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রশাসনিক বিষয়। এই দুর্ঘটনায় ওই কর্মকর্তাদের দায় আছে কি নেই, তা নির্ধারণ হবে মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর। তদন্ত প্রতিবেদন ইতিবাচক হলে তাঁদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হবে বলে জানান তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে সম্প্রতি একজন দক্ষ আমলাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত ১৬ বছরে ডিপিডিসিতে দুর্ঘটনাজনিত কারণে কতজন নিহত হয়েছেন, কী কী অনিয়ম হয়েছে- তার তালিকা করতে বলা হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় কোন কর্মকর্তার দায় আছে কি না, তাও নিরুপণ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রাহকসেবা দিতে গিয়ে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই আমরা অসদাচরণের অভিযোগ শুনতে পাই। ওইসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার শতভাগ গ্রাহকসেবা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। অনিয়ম ও অবহেলায় কোন গ্রাহক সেবাবঞ্চিত হলে তা তদন্তপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডিপিডিসির প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিনই সংস্থাটির আওতাধীন এলাকায় এলটিতে (নিম্নচাপ) শত শত নতুন মিটার ও সংযোগ প্রদান করা হয়ে থাকে। শুধুমাত্র উচ্চচাপ সংযোগের সময় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে শাটডাউন নিতে হয়। মগবাজারে ঘটনা একটি দুর্ঘটনা মাত্র। এই দুর্ঘটনার কারণে তিনজন প্রকৌশলীকে সাময়কি বরখাস্ত করা দুঃখজনক। অবিলম্বে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে মাঠপর্যায়ের প্রকৌশলীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এদিকে, বিদ্যুৎকর্মী নিহতের ঘটনায় মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি বুধবার (১৬ এপ্রিল) মগবাজার ডিভিশন ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে।
বাংলাস্কুপ/বিশেষ প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে
বিদ্যুৎকর্মীর মৃত্যু : ডিপিডিসির তিন কর্মকর্তা বরখাস্ত, ক্ষুব্ধ প্রকৌশলীরা
আর কত বিদ্যুতকর্মীর প্রাণ গেলে টনক নড়বে!