
মেশিনের নাম এয়ার ফ্লো মেশিন। কৃষকদের কাছে ‘পেঁয়াজের এসি’ হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে এই এয়ার ফ্লো মেশিন। মেশিনটির মাধ্যমে দীর্ঘদিন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। ফরিদপুরে দিন দিন বাড়ছে এ মেশিনের চাহিদা। জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে ফরিদপুরের তৈরি এই এয়ার ফ্লো মেশিন। অল্প খরচে পেঁয়াজ সংরক্ষণে বেশ চাহিদা বেড়েছে মেশিনটির।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের অম্বিকাপুর বাজারে ‘মা মেটাল’ নামে একটি কারখানায় মেশিনটি তৈরি হচ্ছে। নিজ এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে মেশিনটি। সাধারণত পেঁয়াজ ওঠার মৌসুমের শুরুতে এর দাম কম থাকে। দীর্ঘদিন সংরক্ষণের অভাবে চাষিরা লাভের মুখ দেখার আগেই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হন। লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে বাঁশের মাচা বা চাঙে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে হয় তাদের। কিন্তু অধিক তাপমাত্রায় ঘেমে যাওয়া, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, অতিরিক্ত জলীয়দ বাষ্পে পচন ধরা ও রং নষ্ট হওয়াসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় চাষিদের।এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়িত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরামর্শক দলের ভ্যালুচেন বিশেষজ্ঞরা ‘বায়ুপ্রবাহ যন্ত্রের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ’ প্রযুক্তির এই এয়ার ফ্লো মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।
ফরিদপুরের অম্বিকাপুর বাজারে মেশিন তৈরির কারখানায় (মা মেটাল) গিয়ে দেখা যায়, পাঁচজন শ্রমিক মেশিন তৈরির কাজে ব্যস্ত। দিন-রাত সমানতালে চলছে কাজ। যেন ফুরসত নেই। টুংটাং শব্দে মুখর চারপাশ। বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে ক্রেতারা। সরাসরি ছাড়াও মোবাইলের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। মোবাইলে টাকা পেমেন্ট করে কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে এয়ার ফ্লো মেশিন।তিনটি সাইজের মেশিন তৈরি হচ্ছে। দামও তিন প্রকার। ১০ টনের একটি মেশিনে প্রায় ২৫০ মণ পেঁয়াজ রাখা যায়, যার দাম ১৫ হাজার টাকা। ১২ টনের মেশিনের দাম (৩০০ মণ পেঁয়াজ রাখা যায়) ১৭ হাজার ও ১৪ টন (৪০০ মণ পেঁয়াজ রাখা যায়) সাইজের মেশিনের দাম ২০ হাজার টাকা।
‘মা মেটাল’র মালিক মহিদুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালে তিনি প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে দশটি মেশিন তৈরির মাধ্যমে কাজ শুরু করেন। এরপর ২০২৩-২৪ সালে ৯৭টি মেশিন তৈরি করেন এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। চলতি বছরের গত তিন মাসে তিনি প্রায় ৪০০টি মেশিন তৈরি করেছেন। যা জেলা ছাড়াও রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকদের কাছে বিক্রি করেছেন। মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে পেমেন্টের মাধ্যমে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ মেশিন পৌঁছে দেন তিনি।
মেশিন তৈরির কারখানার মালিক মুহিদুল ইসলাম আরও বলেন, এই মেশিনের মাধ্যমে নিচে বাতাস টেনে আটকে দেয়। পরে সেই বাতাস পেঁয়াজের ভেতর দিয়ে বের হয়। এতে পেঁয়াজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে পেঁয়াজ দীর্ঘদিন ভালো থাকে। পেঁয়াজ পচে না। নষ্ট পেঁয়াজ থাকলে সেটি নিজে থেকেই শুকিয়ে যায়, যার ফলে পাশের পেঁয়াজকে নষ্ট করত পারে না।মেশিন ক্রয় করতে আসা নগরকান্দা উপজেলার পেঁয়াজ চাষি মো. উজ্জ্বল মিয়া বলেন, এভাবে পেঁয়াজ ভালো থাকে। গত বছর এভাবে পেঁয়াজ রেখে আমাদের এলাকার অনেক কৃষক লাভবান হয়েছেন। খবর শুনে এবার আমিও একটি মেশিন কিনলাম। এখন পেঁয়াজের মন সর্বোচ্চ ১৩০০ টাকা। আমার নিজের প্রায় তিনশো মণ পেঁয়াজ আছে, বিক্রি না করে এ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করবো। দাম বাড়লে বিক্রি করবো।
বোয়ালমারীর কাদিরদি থেকে আগত মেশিন ক্রেতা আকিদুল শেখ বলেন, এ মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজ ভালো থাকে, তাই এবার দুটি মেশিন কিনেছি। সালথার কৃষক ইনামুল হোসেন বলেন, মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে দীর্ঘদিন পেঁয়াজ ভালো থাকে। এ খবর কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ায় মেশিনের চাহিদা বাড়ছে।পেঁয়াজ চাষি সোহরাফ হোসেন বলেন, একটি ছাদযুক্ত টিনের কিংবা ইটের ঘরের মেঝেতে ইট দিয়ে মাচা তৈরির পর মাদুর বা বাঁশের চাটাই বিছিয়ে তার মধ্যে এই যন্ত্রটি স্থাপন করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে আট মাস পর্যন্ত একশ বর্গফুট জায়গায় প্রায় তিনশো মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। এতে মাসে মাত্র ছয়শ টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয়। এর বাইরে কোনো ব্যয় নেই। এ পদ্ধতিতে আমি এবার দুটি মেশিনের মাধ্যমে সাড়ে চারশ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছি।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণের এই প্রযুক্তিটি অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। এই মেশিনের মাধ্যমে কমপক্ষে আট মাস পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। এতে সংরক্ষিত পেঁয়াজের ওজন হ্রাস শতকরা মাত্র ২৫ শতাংশ। পচন প্রায় শূন্য শতাংশ। এয়ার ফ্লো মেশিনটি দিন দিন কৃষকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের অম্বিকাপুর বাজারে ‘মা মেটাল’ নামে একটি কারখানায় মেশিনটি তৈরি হচ্ছে। নিজ এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে মেশিনটি। সাধারণত পেঁয়াজ ওঠার মৌসুমের শুরুতে এর দাম কম থাকে। দীর্ঘদিন সংরক্ষণের অভাবে চাষিরা লাভের মুখ দেখার আগেই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হন। লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে বাঁশের মাচা বা চাঙে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে হয় তাদের। কিন্তু অধিক তাপমাত্রায় ঘেমে যাওয়া, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, অতিরিক্ত জলীয়দ বাষ্পে পচন ধরা ও রং নষ্ট হওয়াসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় চাষিদের।এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়িত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরামর্শক দলের ভ্যালুচেন বিশেষজ্ঞরা ‘বায়ুপ্রবাহ যন্ত্রের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ’ প্রযুক্তির এই এয়ার ফ্লো মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।
ফরিদপুরের অম্বিকাপুর বাজারে মেশিন তৈরির কারখানায় (মা মেটাল) গিয়ে দেখা যায়, পাঁচজন শ্রমিক মেশিন তৈরির কাজে ব্যস্ত। দিন-রাত সমানতালে চলছে কাজ। যেন ফুরসত নেই। টুংটাং শব্দে মুখর চারপাশ। বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে ক্রেতারা। সরাসরি ছাড়াও মোবাইলের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। মোবাইলে টাকা পেমেন্ট করে কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে এয়ার ফ্লো মেশিন।তিনটি সাইজের মেশিন তৈরি হচ্ছে। দামও তিন প্রকার। ১০ টনের একটি মেশিনে প্রায় ২৫০ মণ পেঁয়াজ রাখা যায়, যার দাম ১৫ হাজার টাকা। ১২ টনের মেশিনের দাম (৩০০ মণ পেঁয়াজ রাখা যায়) ১৭ হাজার ও ১৪ টন (৪০০ মণ পেঁয়াজ রাখা যায়) সাইজের মেশিনের দাম ২০ হাজার টাকা।
‘মা মেটাল’র মালিক মহিদুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালে তিনি প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে দশটি মেশিন তৈরির মাধ্যমে কাজ শুরু করেন। এরপর ২০২৩-২৪ সালে ৯৭টি মেশিন তৈরি করেন এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। চলতি বছরের গত তিন মাসে তিনি প্রায় ৪০০টি মেশিন তৈরি করেছেন। যা জেলা ছাড়াও রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকদের কাছে বিক্রি করেছেন। মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে পেমেন্টের মাধ্যমে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ মেশিন পৌঁছে দেন তিনি।
মেশিন তৈরির কারখানার মালিক মুহিদুল ইসলাম আরও বলেন, এই মেশিনের মাধ্যমে নিচে বাতাস টেনে আটকে দেয়। পরে সেই বাতাস পেঁয়াজের ভেতর দিয়ে বের হয়। এতে পেঁয়াজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে পেঁয়াজ দীর্ঘদিন ভালো থাকে। পেঁয়াজ পচে না। নষ্ট পেঁয়াজ থাকলে সেটি নিজে থেকেই শুকিয়ে যায়, যার ফলে পাশের পেঁয়াজকে নষ্ট করত পারে না।মেশিন ক্রয় করতে আসা নগরকান্দা উপজেলার পেঁয়াজ চাষি মো. উজ্জ্বল মিয়া বলেন, এভাবে পেঁয়াজ ভালো থাকে। গত বছর এভাবে পেঁয়াজ রেখে আমাদের এলাকার অনেক কৃষক লাভবান হয়েছেন। খবর শুনে এবার আমিও একটি মেশিন কিনলাম। এখন পেঁয়াজের মন সর্বোচ্চ ১৩০০ টাকা। আমার নিজের প্রায় তিনশো মণ পেঁয়াজ আছে, বিক্রি না করে এ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করবো। দাম বাড়লে বিক্রি করবো।
বোয়ালমারীর কাদিরদি থেকে আগত মেশিন ক্রেতা আকিদুল শেখ বলেন, এ মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজ ভালো থাকে, তাই এবার দুটি মেশিন কিনেছি। সালথার কৃষক ইনামুল হোসেন বলেন, মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে দীর্ঘদিন পেঁয়াজ ভালো থাকে। এ খবর কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ায় মেশিনের চাহিদা বাড়ছে।পেঁয়াজ চাষি সোহরাফ হোসেন বলেন, একটি ছাদযুক্ত টিনের কিংবা ইটের ঘরের মেঝেতে ইট দিয়ে মাচা তৈরির পর মাদুর বা বাঁশের চাটাই বিছিয়ে তার মধ্যে এই যন্ত্রটি স্থাপন করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে আট মাস পর্যন্ত একশ বর্গফুট জায়গায় প্রায় তিনশো মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। এতে মাসে মাত্র ছয়শ টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয়। এর বাইরে কোনো ব্যয় নেই। এ পদ্ধতিতে আমি এবার দুটি মেশিনের মাধ্যমে সাড়ে চারশ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছি।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণের এই প্রযুক্তিটি অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। এই মেশিনের মাধ্যমে কমপক্ষে আট মাস পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। এতে সংরক্ষিত পেঁয়াজের ওজন হ্রাস শতকরা মাত্র ২৫ শতাংশ। পচন প্রায় শূন্য শতাংশ। এয়ার ফ্লো মেশিনটি দিন দিন কৃষকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন