
নূরুল ইসলাম নিরব
২০৩০ সালের মধ্যে সড়কে এসডিজি বাস্তবায়নের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তার বাস্তব রুপ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও সুলভ পরিবহন ব্যবস্থায় সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার যে কথা রয়েছে তা বাস্তবায়ন এখন বড়ই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে না পারা। যদিও সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার বদ্ধপরিকর। তবুও চালক, হেলপার ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের দাপটে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
সম্প্রতি অন্তর্বতীকালীন সরকার সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানোর বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েও চালক-হেলপারদের অসহযোগিতয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সেই প্রকল্প। বাস মালিক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস খাতে ‘কাঁচা টাকা’র লোভে এক পক্ষ শৃঙ্খলায় আসতে চাচ্ছে না। কাঁচা টাকা মানে আনলিমিটেড নগদ আয় কমে যাওয়ার ভয়ে চালক-হেলপাররা সরকারকে সহযোগিতা করতে নারাজ। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এসডিজির লক্ষমাত্রা অর্জন করা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, এসডিজির অভীষ্ট ৩ :৬-এ বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা ২০২০ সালের মধ্যে অর্ধেকে কমিয়ে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। এসডিজির অভীষ্ট ১১ :২-এ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত যানবাহন সম্প্রসারণ করে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও সুলভ পরিবহন ব্যবস্থায় সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। দুর্ঘটনা কমাতেও পারিনি, বরং বাড়ছে। বাকি থাকল ২০৩০ সাল। সে লক্ষ্য অর্জন তো মহা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ২০২৫ সালে সদ্য গত হওয়া জানুয়ারি মাসেই দেশে ৬৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬৭৭ জন নিহত এবং ১২৭১ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে রেলপথে ৫৭টি দুর্ঘটনায় ৫৯ জন নিহত ও নৌপথে ১৬টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন। ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
সূত্রমতে, ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে চালু হয় কাউন্টার ও ই-টিকিটিং ব্যবস্থা। কিন্তু ১০ দিন পার হতেই দেখা যাচ্ছে যাত্রী ওঠানামার কাউন্টার ব্যবস্থাই উল্টো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারণ বাসচালক ও শ্রমিকরা এ ব্যবস্থায় আগ্রহী নন। তাদের দাবি, নতুন ব্যবস্থায় যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠীও। এদিকে, বাস মালিক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস খাতে ‘কাঁচা টাকা’র লোভে এক পক্ষ শৃঙ্খলায় আসতে চাচ্ছে না।
পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার অধিকাংশ বাস চুক্তিভিত্তিক পরিচালিত হয়, যেখানে চালক ও শ্রমিকরা দৈনিক জমা ও তেলের খরচ পরিশোধের পর বাকি অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। এতে মালিক তিন হাজার টাকা পান, আর বাস স্টাফরা চার-পাঁচ হাজার পান। আর এ কারণেই দৈনিক জমার বাইরে যত আয় করা যায়, ততই লাভ- এই হিসাব করেন বাসচালক ও হেলপাররা। এ জন্য তারা বেশি ট্রিপ দিতে চান, যত্রতত্র যাত্রী তোলেন, এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায়ও নামেন। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে, যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাইদা বাসের এক চালক বলেন, আগে মালিকের জমা, তেল খরচ আর খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে আমাদের থাকতো কখনও পাঁচ হাজার, কখনও চার হাজার। কম কইরা হইলেও তিন হাজার। এখন দিন শেষে আমি চালক, আমার হাতে এক হাজার টাকাও থাকে না। এমনে করলে তো আমাদের চলবো না। শুধু চালক-শ্রমিকরাই নন, বাস মালিকরাও নতুন ব্যবস্থায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন। নতুন ব্যবস্থা চালুর চারদিন পর বাস চালকরা নির্ধারিত কাউন্টার থেকে যাত্রী ওঠানো বন্ধ করে দেন এবং যত্রতত্র যাত্রী উঠিয়ে নিজেরা ভাড়া আদায় করেন। এতে কোম্পানি তার আয় হারাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে বাস মালিকদের আয়ে। তারাও আগের চেয়ে কম টাকার হিসাব পান। ভিআইপি কোম্পানির একজন বাস মালিক বলেন, কাউন্টার পদ্ধতিতে চালকরা রাজি না। তাই কাউন্টার থেকে যাত্রী তুলতে অবহেলা করে। এর জন্য আমরাও কোম্পানির কাছে গিয়ে টাকা পাই না। যা হিসাব দেয় তা বুঝে আসে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাউন্টার ব্যবস্থায় আগ্রহ দেখালেও বাসচালক ও শ্রমিকদের অনাগ্রহের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। নতুন ব্যবস্থার বিরোধিতা করে বাসচালকরা গাড়ি রাস্তায় নামাচ্ছেন না। যত্রতত্র যাত্রী তুলে কাউন্টারে বাস পূর্ণ করে নিয়ে আসেন। এতে যারা টিকিট কেটে বাসে ওঠার জন্য অপেক্ষা করেন, তারা উঠতে পারেন না। বাড্ডার যাত্রী মোতাহার হোসেন বলেন, এই ব্যবস্থা চালুর পর মনে হয়েছে পরিবহন খাতেও শৃঙ্খলা আসছে। যদিও বাসগুলো ভালো ছিল না, তবু শৃঙ্খলা আসছে দেখে ভালো লাগছিল। কিন্তু এখন দেখি ঝামেলা বেড়েছে, বাস তো পাওয়াই যায় না। যেগুলো আসে, সব বাস যাত্রী ভরে নিয়ে আসে। বেশিরভাগ যাত্রী রাস্তা থেকে ওঠায়। আমরা টিকিট কেটে উল্টো ভোগান্তিতে পড়ি।
এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, কয়েকটি বাস কোম্পানির নিজেদের মধ্যে অনিয়ম ছিল, ঝামেলা ছিল। তাই সব কাউন্টার বসাতে পারে নাই। আবার বাস ড্রাইভার-হেল্পাররাও চাচ্ছে না শৃঙ্খলা অনুযায়ী চলুক। তারা চায় চুক্তিতে বাস চালিয়ে তিন হাজার মালিককে দিয়ে নিজেরা ৯ হাজার টাকা রাখতে। তাই বিশৃঙ্খলা থাকলেও তারা আগের মতোই চলতে চায়। শুধু তারাই নয়, যেসব বাসচালক-হেল্পার নিয়মের মধ্যে আসতে চাচ্ছেন, তাদেরও বাধা দিচ্ছে। সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা যতটা সহজ দেখা যায়, ততটা সহজ না। আমাদের আরও কয়েক মাস লাগবে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও এটি এখন বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। চালক-শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে এ ধরনের পরিবর্তন কার্যকর করা কঠিন। মালিক-শ্রমিকদের বিরোধ এবং নীতিনির্ধারকদের দুর্বল পরিকল্পনার কারণে যাত্রী দুর্ভোগ কমার কোনও ইঙ্গিত এখনও দেখা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, সরকার যদি গণপরিবহন খাতকে নিজেদের আওতায় এনে একটি কোম্পানি পরিচালনা করে, তবে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব। মেট্রোরেলের মতো একটি পরিবহন ব্যবস্থার জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা খুব বেশি নয়।তিনি আরও বলেন, সরকার কোম্পানিটিকে একটি লাভবান ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে পারলে পরিবহন ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে- সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হবে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা। দ্রুত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করা। সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সড়ক নিরাপত্তা উইং চালু করা। তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এসকে
২০৩০ সালের মধ্যে সড়কে এসডিজি বাস্তবায়নের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তার বাস্তব রুপ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও সুলভ পরিবহন ব্যবস্থায় সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার যে কথা রয়েছে তা বাস্তবায়ন এখন বড়ই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে না পারা। যদিও সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার বদ্ধপরিকর। তবুও চালক, হেলপার ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের দাপটে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
সম্প্রতি অন্তর্বতীকালীন সরকার সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানোর বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েও চালক-হেলপারদের অসহযোগিতয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সেই প্রকল্প। বাস মালিক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস খাতে ‘কাঁচা টাকা’র লোভে এক পক্ষ শৃঙ্খলায় আসতে চাচ্ছে না। কাঁচা টাকা মানে আনলিমিটেড নগদ আয় কমে যাওয়ার ভয়ে চালক-হেলপাররা সরকারকে সহযোগিতা করতে নারাজ। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এসডিজির লক্ষমাত্রা অর্জন করা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, এসডিজির অভীষ্ট ৩ :৬-এ বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা ২০২০ সালের মধ্যে অর্ধেকে কমিয়ে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। এসডিজির অভীষ্ট ১১ :২-এ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত যানবাহন সম্প্রসারণ করে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও সুলভ পরিবহন ব্যবস্থায় সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। দুর্ঘটনা কমাতেও পারিনি, বরং বাড়ছে। বাকি থাকল ২০৩০ সাল। সে লক্ষ্য অর্জন তো মহা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ২০২৫ সালে সদ্য গত হওয়া জানুয়ারি মাসেই দেশে ৬৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬৭৭ জন নিহত এবং ১২৭১ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে রেলপথে ৫৭টি দুর্ঘটনায় ৫৯ জন নিহত ও নৌপথে ১৬টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন। ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
সূত্রমতে, ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে চালু হয় কাউন্টার ও ই-টিকিটিং ব্যবস্থা। কিন্তু ১০ দিন পার হতেই দেখা যাচ্ছে যাত্রী ওঠানামার কাউন্টার ব্যবস্থাই উল্টো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারণ বাসচালক ও শ্রমিকরা এ ব্যবস্থায় আগ্রহী নন। তাদের দাবি, নতুন ব্যবস্থায় যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠীও। এদিকে, বাস মালিক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস খাতে ‘কাঁচা টাকা’র লোভে এক পক্ষ শৃঙ্খলায় আসতে চাচ্ছে না।
পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার অধিকাংশ বাস চুক্তিভিত্তিক পরিচালিত হয়, যেখানে চালক ও শ্রমিকরা দৈনিক জমা ও তেলের খরচ পরিশোধের পর বাকি অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। এতে মালিক তিন হাজার টাকা পান, আর বাস স্টাফরা চার-পাঁচ হাজার পান। আর এ কারণেই দৈনিক জমার বাইরে যত আয় করা যায়, ততই লাভ- এই হিসাব করেন বাসচালক ও হেলপাররা। এ জন্য তারা বেশি ট্রিপ দিতে চান, যত্রতত্র যাত্রী তোলেন, এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায়ও নামেন। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে, যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাইদা বাসের এক চালক বলেন, আগে মালিকের জমা, তেল খরচ আর খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে আমাদের থাকতো কখনও পাঁচ হাজার, কখনও চার হাজার। কম কইরা হইলেও তিন হাজার। এখন দিন শেষে আমি চালক, আমার হাতে এক হাজার টাকাও থাকে না। এমনে করলে তো আমাদের চলবো না। শুধু চালক-শ্রমিকরাই নন, বাস মালিকরাও নতুন ব্যবস্থায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন। নতুন ব্যবস্থা চালুর চারদিন পর বাস চালকরা নির্ধারিত কাউন্টার থেকে যাত্রী ওঠানো বন্ধ করে দেন এবং যত্রতত্র যাত্রী উঠিয়ে নিজেরা ভাড়া আদায় করেন। এতে কোম্পানি তার আয় হারাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে বাস মালিকদের আয়ে। তারাও আগের চেয়ে কম টাকার হিসাব পান। ভিআইপি কোম্পানির একজন বাস মালিক বলেন, কাউন্টার পদ্ধতিতে চালকরা রাজি না। তাই কাউন্টার থেকে যাত্রী তুলতে অবহেলা করে। এর জন্য আমরাও কোম্পানির কাছে গিয়ে টাকা পাই না। যা হিসাব দেয় তা বুঝে আসে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাউন্টার ব্যবস্থায় আগ্রহ দেখালেও বাসচালক ও শ্রমিকদের অনাগ্রহের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। নতুন ব্যবস্থার বিরোধিতা করে বাসচালকরা গাড়ি রাস্তায় নামাচ্ছেন না। যত্রতত্র যাত্রী তুলে কাউন্টারে বাস পূর্ণ করে নিয়ে আসেন। এতে যারা টিকিট কেটে বাসে ওঠার জন্য অপেক্ষা করেন, তারা উঠতে পারেন না। বাড্ডার যাত্রী মোতাহার হোসেন বলেন, এই ব্যবস্থা চালুর পর মনে হয়েছে পরিবহন খাতেও শৃঙ্খলা আসছে। যদিও বাসগুলো ভালো ছিল না, তবু শৃঙ্খলা আসছে দেখে ভালো লাগছিল। কিন্তু এখন দেখি ঝামেলা বেড়েছে, বাস তো পাওয়াই যায় না। যেগুলো আসে, সব বাস যাত্রী ভরে নিয়ে আসে। বেশিরভাগ যাত্রী রাস্তা থেকে ওঠায়। আমরা টিকিট কেটে উল্টো ভোগান্তিতে পড়ি।
এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, কয়েকটি বাস কোম্পানির নিজেদের মধ্যে অনিয়ম ছিল, ঝামেলা ছিল। তাই সব কাউন্টার বসাতে পারে নাই। আবার বাস ড্রাইভার-হেল্পাররাও চাচ্ছে না শৃঙ্খলা অনুযায়ী চলুক। তারা চায় চুক্তিতে বাস চালিয়ে তিন হাজার মালিককে দিয়ে নিজেরা ৯ হাজার টাকা রাখতে। তাই বিশৃঙ্খলা থাকলেও তারা আগের মতোই চলতে চায়। শুধু তারাই নয়, যেসব বাসচালক-হেল্পার নিয়মের মধ্যে আসতে চাচ্ছেন, তাদেরও বাধা দিচ্ছে। সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা যতটা সহজ দেখা যায়, ততটা সহজ না। আমাদের আরও কয়েক মাস লাগবে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও এটি এখন বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। চালক-শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে এ ধরনের পরিবর্তন কার্যকর করা কঠিন। মালিক-শ্রমিকদের বিরোধ এবং নীতিনির্ধারকদের দুর্বল পরিকল্পনার কারণে যাত্রী দুর্ভোগ কমার কোনও ইঙ্গিত এখনও দেখা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, সরকার যদি গণপরিবহন খাতকে নিজেদের আওতায় এনে একটি কোম্পানি পরিচালনা করে, তবে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব। মেট্রোরেলের মতো একটি পরিবহন ব্যবস্থার জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা খুব বেশি নয়।তিনি আরও বলেন, সরকার কোম্পানিটিকে একটি লাভবান ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে পারলে পরিবহন ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে- সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হবে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা। দ্রুত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করা। সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সড়ক নিরাপত্তা উইং চালু করা। তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এসকে