মাঘের শীতে বাঘ পালায়—এ প্রবাদ এই শীতে আর খাটল না। গ্রামাঞ্চলে ভোর ও রাতে কিছুটা শীত অনুভূত হলেও শহরাঞ্চলে শীত নেই বললেই চলে। মাঘ মাসের শেষ সপ্তাহে এসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। মাঘ মাসে রাত ও দিনের তাপমাত্রা ‘স্বাভাবিকে’র তুলনায় ঊর্ধ্বে রয়েছে। কুয়াশা ঢাকা ভোর বা সন্ধ্যায় আগুনের ধারে গোল হয়ে ওম নেওয়ার দৃশ্য তো দেখাই যাচ্ছে না। নগরবাসীর অনেকের ঘরে পাখা ঘুরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে প্রকৃতিতে উঁকি দিচ্ছে বসন্ত। এবার মাঘ মাসে শীতের এমন আচরণ আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। তাদের মতে, এ সময়ে আবহাওয়া এমনটি থাকার কথা নয়। পুরো শীত মৌসুমে প্রকৃতির বিপরীত আচরণ লক্ষ করা গেছে। বায়ুর আচরণে পরিবর্তন ঘটেছে। এভাবে শীত কমে যাওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিত, যা নানা দিক দিয়ে সংকট তৈরি করতে পারে।
দুর্বল লা নিনার কারণেই এবার জেঁকে বসতে পারেনি শীত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে দাপটের সঙ্গে লা নিনা আসার কথা ছিল, শেষ পর্যন্ত আসেনি। লা নিনার দুর্বল প্রভাবে এবার ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা অনেক বেশি। কালবৈশাখীর সময় আসার আগেই বেশ কয়েকটি বড় ঝড়বৃষ্টি দেখতে পারে বাংলাদেশ।
এবার পুরো মৌসুমে সেভাবে শীতের প্রকোপ অনুভূত হয়নি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, জানুয়ারি মাসের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছরের জানুয়ারির গড় তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৭। এবারের জানুয়ারিতে দেশে কোনো তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয়নি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে ২০২৪ সালে চারটি, ২০২৩ সালে একটি এবং ২০২২ ও ২০২১ সালে তিনটি করে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয়েছিল। এবার জানুয়ারিতে গড় তাপমাত্রাও ছিল অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি, বিপরীতে কুয়াশা কম পড়েছে।
শীত কম হওয়ার আরও তিনটি কারণের কথা বলছেন আবহাওয়াবিদরা। এক. উচ্চ চাপ বলয় না থাকা। দুই. বজ্রমেঘ সৃষ্টি না হওয়া। তিন. ইন্ডিয়ান ওশান ডাইপোলের (ওআইডি) নিরপেক্ষ অবস্থান।
কোনো স্থানে বায়ুর চাপ আশপাশের এলাকার চেয়ে বেশি হলে তাকে উচ্চ চাপ বলয় বলা হয়। এই অঞ্চলে বায়ুচাপ বলয় প্রাধান্যশীল থাকলে ওপর থেকে আসা বায়ু শীতের তীব্রতা বাড়ায়। এবার সেই বায়ুচাপ বলয় প্রাধান্যশীল ছিল না বলেই শীতলতম মাস জানুয়ারি অনেকটাই তার বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে, এমন মত আবহাওয়াবিদদের।
এবার পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে বজ্রমেঘ কম সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বজ্রমেঘ বৃষ্টিপাত তৈরি করে। বৃষ্টি হলে শীতলতা বাড়ে। এবার তাও নেই। অন্যদিকে ওআইডির সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার একটি অনিয়মিত দোলন। এর তিনটি ধাপ আছে। সেগুলো হলো ইতিবাচক, নেতিবাচক ও নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ থাকলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, এবার শীতের মাস জানুয়ারিতে তাপমাত্রা বেশি ছিল। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখনো বৃষ্টি হয়নি, বাতাসে যে আর্দ্রতা আছে, তা কাটেনি। তাই শীত নেই বললেই চলে। মূলত এখন গরম এসে গেছে, তাপমাত্রা বেশি। আগামী শুক্র ও শনিবার তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। এর পর থেকে তাপমাত্রা বাড়বেই। পুরোপুরি গরম চলে আসবে। তিনি বলেন, বর্ষার মতো শীত নির্দিষ্ট নিয়মে বিদায় নেয় না। তবে বিদায় হয়ে গেছে বললেই চলে। এ বছর গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোরও একই অবস্থা। এ অঞ্চলে চলতি বছরে তেমন দীর্ঘ কিংবা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম।
শীত কতটা পড়ে, তা দুইভাবে বোঝা যায়। এক. শীতের অনুভূতি দিয়ে। দুই. তাপমাত্রার মাধ্যমে। যদি দিনের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর কম হয়, তাহলে শীত বেড়ে যায়। এবারের জানুয়ারি মাসে তিন দিন (২ থেকে ৪ জানুয়ারি) এই পার্থক্য গড়ে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছিল।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এবার শীতটি অন্য ধরনের। এবার জানুয়ারি ছিল উষ্ণতম মাস; যদিও জানুয়ারি শীতলতম মাস আমাদের দেশে। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। সাধারণত বছরের এ সময়ে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ২০ শতাংশের বেশি থাকে না। এবার জানুয়ারি মাসজুড়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য ছিল। এ কারণে জানুয়ারি মাসে স্বাভাবিক শীত পড়েনি। তার ব্যাখ্যা হলো, জলীয় বাষ্পের বিভিন্ন স্তরে সূর্যের তাপ সঞ্চিত থাকে। ফলে বায়ুমণ্ডলের উঁচু স্তর থেকে শীতল বায়ুপ্রবাহে বাধা তৈরি হয়। তিনি বলেন, সাধারণত ভারতীয় উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয় শীতকালে বাংলাদেশ বা ভারতের আসাম পর্যন্ত বর্ধিত থাকে। এবার তা অনেকটা কম থাকার কারণে শীতের অনুভূতি ছিল না। এর কারণ হলো বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন। স্থানীয় প্রভাবের সঙ্গে ‘টেলি-কানেকশন’ সবকিছু মিলেমিশে আবহাওয়ার খামখেয়ালি আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আবহাওয়ার এমন বৈরিতার কারণ অনুসন্ধানে আরও গবেষণা করতে হবে।
আবহাওয়া অফিস বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল, এই ৩০ বছরে বাংলাদেশের যে তাপমাত্রা এবং ১৯৯১ থেকে ২০২০ সাল, ৩০ বছরের যে তাপমাত্রা, তা তুলনা করলে দেখা যায় যে সাম্প্রতিক সময়ে সারা বছরের তাপমাত্রাই বেড়েছে ও বৃষ্টিপাত কমেছে।
শীত কম পড়ার কারণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের (বিডব্লিউওটি) প্রধান আবহাওয়া গবেষক খালিদ হোসেন বলেন, এই বছরটা গেছে নিউট্রাল টু লা নিনা এয়ারের দিকে। সাধারণত লা নিনা এয়ারের মধ্যে থাকলে শীত কম পড়ে। শীতকালে বাতাস ভূমি থেকে সাগরের দিকে যায়। কিন্তু ওয়েস্টার্ন ডিস্টার্বেন্সের কারণে ভূমি থেকে সাগরে বাতাস যাওয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে শীতকাল হওয়াটাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।তিনি বলেন, কুয়াশা বেল্টের কারণেও শীত কম পড়েছে। কুয়াশা বেল্ট থাকলে উপরের দিকে ঢেকে থাকে। এর ফলে শহর বা লোকাল অঞ্চল থেকে যে গরম বাতাস বের হয়, সেটা আর উপরের দিকে যেতে পারে না। গরম বাতাস উপরে যেতে না পারার কারণে হিট ডোমের মতো কাজ করে বা কুয়াশা বেল্টে বাতাসটা আটকা থাকে। এর ফলে শক্তিশালী শৈত্যপ্রবাহ তৈরি হতে পারে না। শীত অনুভূত হলেও শৈত্যপ্রবাহ সেভাবে হয় না। এই কারণগুলোতেই এ বছর শীত কিছুটা কম অনুভূত হয়েছে।
চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে ক্রমান্বয়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে; সেইসঙ্গে স্বাভাবিকের চেয়ে দিনে ও রাতে তাপমাত্রা বেশি থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। আর বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড় বা নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। চলতি মাসের প্রথমার্ধে দেশের উত্তর, পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে নদী অববাহিকায় মাঝারি বা ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা বা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন/এসকে
দুর্বল লা নিনার কারণেই এবার জেঁকে বসতে পারেনি শীত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে দাপটের সঙ্গে লা নিনা আসার কথা ছিল, শেষ পর্যন্ত আসেনি। লা নিনার দুর্বল প্রভাবে এবার ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা অনেক বেশি। কালবৈশাখীর সময় আসার আগেই বেশ কয়েকটি বড় ঝড়বৃষ্টি দেখতে পারে বাংলাদেশ।
এবার পুরো মৌসুমে সেভাবে শীতের প্রকোপ অনুভূত হয়নি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, জানুয়ারি মাসের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছরের জানুয়ারির গড় তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৭। এবারের জানুয়ারিতে দেশে কোনো তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয়নি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে ২০২৪ সালে চারটি, ২০২৩ সালে একটি এবং ২০২২ ও ২০২১ সালে তিনটি করে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয়েছিল। এবার জানুয়ারিতে গড় তাপমাত্রাও ছিল অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি, বিপরীতে কুয়াশা কম পড়েছে।
শীত কম হওয়ার আরও তিনটি কারণের কথা বলছেন আবহাওয়াবিদরা। এক. উচ্চ চাপ বলয় না থাকা। দুই. বজ্রমেঘ সৃষ্টি না হওয়া। তিন. ইন্ডিয়ান ওশান ডাইপোলের (ওআইডি) নিরপেক্ষ অবস্থান।
কোনো স্থানে বায়ুর চাপ আশপাশের এলাকার চেয়ে বেশি হলে তাকে উচ্চ চাপ বলয় বলা হয়। এই অঞ্চলে বায়ুচাপ বলয় প্রাধান্যশীল থাকলে ওপর থেকে আসা বায়ু শীতের তীব্রতা বাড়ায়। এবার সেই বায়ুচাপ বলয় প্রাধান্যশীল ছিল না বলেই শীতলতম মাস জানুয়ারি অনেকটাই তার বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে, এমন মত আবহাওয়াবিদদের।
এবার পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে বজ্রমেঘ কম সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বজ্রমেঘ বৃষ্টিপাত তৈরি করে। বৃষ্টি হলে শীতলতা বাড়ে। এবার তাও নেই। অন্যদিকে ওআইডির সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার একটি অনিয়মিত দোলন। এর তিনটি ধাপ আছে। সেগুলো হলো ইতিবাচক, নেতিবাচক ও নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ থাকলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, এবার শীতের মাস জানুয়ারিতে তাপমাত্রা বেশি ছিল। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখনো বৃষ্টি হয়নি, বাতাসে যে আর্দ্রতা আছে, তা কাটেনি। তাই শীত নেই বললেই চলে। মূলত এখন গরম এসে গেছে, তাপমাত্রা বেশি। আগামী শুক্র ও শনিবার তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। এর পর থেকে তাপমাত্রা বাড়বেই। পুরোপুরি গরম চলে আসবে। তিনি বলেন, বর্ষার মতো শীত নির্দিষ্ট নিয়মে বিদায় নেয় না। তবে বিদায় হয়ে গেছে বললেই চলে। এ বছর গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোরও একই অবস্থা। এ অঞ্চলে চলতি বছরে তেমন দীর্ঘ কিংবা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম।
শীত কতটা পড়ে, তা দুইভাবে বোঝা যায়। এক. শীতের অনুভূতি দিয়ে। দুই. তাপমাত্রার মাধ্যমে। যদি দিনের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর কম হয়, তাহলে শীত বেড়ে যায়। এবারের জানুয়ারি মাসে তিন দিন (২ থেকে ৪ জানুয়ারি) এই পার্থক্য গড়ে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছিল।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এবার শীতটি অন্য ধরনের। এবার জানুয়ারি ছিল উষ্ণতম মাস; যদিও জানুয়ারি শীতলতম মাস আমাদের দেশে। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। সাধারণত বছরের এ সময়ে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ২০ শতাংশের বেশি থাকে না। এবার জানুয়ারি মাসজুড়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য ছিল। এ কারণে জানুয়ারি মাসে স্বাভাবিক শীত পড়েনি। তার ব্যাখ্যা হলো, জলীয় বাষ্পের বিভিন্ন স্তরে সূর্যের তাপ সঞ্চিত থাকে। ফলে বায়ুমণ্ডলের উঁচু স্তর থেকে শীতল বায়ুপ্রবাহে বাধা তৈরি হয়। তিনি বলেন, সাধারণত ভারতীয় উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয় শীতকালে বাংলাদেশ বা ভারতের আসাম পর্যন্ত বর্ধিত থাকে। এবার তা অনেকটা কম থাকার কারণে শীতের অনুভূতি ছিল না। এর কারণ হলো বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন। স্থানীয় প্রভাবের সঙ্গে ‘টেলি-কানেকশন’ সবকিছু মিলেমিশে আবহাওয়ার খামখেয়ালি আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আবহাওয়ার এমন বৈরিতার কারণ অনুসন্ধানে আরও গবেষণা করতে হবে।
আবহাওয়া অফিস বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল, এই ৩০ বছরে বাংলাদেশের যে তাপমাত্রা এবং ১৯৯১ থেকে ২০২০ সাল, ৩০ বছরের যে তাপমাত্রা, তা তুলনা করলে দেখা যায় যে সাম্প্রতিক সময়ে সারা বছরের তাপমাত্রাই বেড়েছে ও বৃষ্টিপাত কমেছে।
শীত কম পড়ার কারণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের (বিডব্লিউওটি) প্রধান আবহাওয়া গবেষক খালিদ হোসেন বলেন, এই বছরটা গেছে নিউট্রাল টু লা নিনা এয়ারের দিকে। সাধারণত লা নিনা এয়ারের মধ্যে থাকলে শীত কম পড়ে। শীতকালে বাতাস ভূমি থেকে সাগরের দিকে যায়। কিন্তু ওয়েস্টার্ন ডিস্টার্বেন্সের কারণে ভূমি থেকে সাগরে বাতাস যাওয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে শীতকাল হওয়াটাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।তিনি বলেন, কুয়াশা বেল্টের কারণেও শীত কম পড়েছে। কুয়াশা বেল্ট থাকলে উপরের দিকে ঢেকে থাকে। এর ফলে শহর বা লোকাল অঞ্চল থেকে যে গরম বাতাস বের হয়, সেটা আর উপরের দিকে যেতে পারে না। গরম বাতাস উপরে যেতে না পারার কারণে হিট ডোমের মতো কাজ করে বা কুয়াশা বেল্টে বাতাসটা আটকা থাকে। এর ফলে শক্তিশালী শৈত্যপ্রবাহ তৈরি হতে পারে না। শীত অনুভূত হলেও শৈত্যপ্রবাহ সেভাবে হয় না। এই কারণগুলোতেই এ বছর শীত কিছুটা কম অনুভূত হয়েছে।
চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে ক্রমান্বয়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে; সেইসঙ্গে স্বাভাবিকের চেয়ে দিনে ও রাতে তাপমাত্রা বেশি থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। আর বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড় বা নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। চলতি মাসের প্রথমার্ধে দেশের উত্তর, পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে নদী অববাহিকায় মাঝারি বা ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা বা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন/এসকে