ক্ষমতা ও পরিষেবা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করে ঢাকার ওপর চাপ কমাতে দেশের পুরনো চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদনের নির্বাহী সারসংক্ষেপ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং সরকারের কার্যপরিধি সুবিস্তৃত হওয়ার ফলে বর্তমান প্রশাসনিক ও স্থানীয় সরকার কাঠামো যথেষ্ট বলে প্রতীয়মান হয় না। অন্যদিকে, এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় মন্ত্রণালয় পর্যায়ে খুঁটিনাটি বহু কাজ সম্পাদন করা হয়। ক্ষমতার প্রত্যর্পণ (ডেলিগেশন) বিবেচনায় দেশে বিশাল জনসংখ্যার পরিষেবা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষ্যে দেশের পুরানো চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এর ফলে এককেন্দ্রীক সরকারের পক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ কমবে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা শহরের উপর চাপ কমবে।
জেলা পরিষদ বাতিল
কমিশন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, স্থানীয় সরকারের একটি ধাপ হিসেবে জেলা পরিষদ বহাল থাকবে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা রয়েছে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কখনোই নাগরিকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হননি। কিছু জেলা পরিষদ বাদে অধিকাংশেরই নিজস্ব রাজস্বের শক্তিশালী উৎস নেই। ফলে অধিকাংশ জেলা পরিষদ আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তাই জেলা পরিষদ বাতিল করা যেতে পারে। জেলা পরিষদের সহায়-সম্পদ প্রস্তাবিত সংশ্লিষ্ট প্রাদেশিক সরকারকে হস্তান্তর করা যেতে পারে।
পৌরসভা শক্তিশালীকরণ: পৌরসভার গুরুত্ব বিবেচনায় স্থানীয় সরকার হিসেবে একে অধিকতর শক্তিশালী করার জন্য সুপারিশ করা হলো। পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন ওয়ার্ড মেম্বারদের ভোটে। কারণ চেয়ারম্যান একবার নির্বাচিত হলে মেম্বারদের আর গুরুত্ব দেয় না।
উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করা
স্থানীয় সরকার হিসেবে উপজেলা পরিষদকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সুপারিশ করা মধ্য হলো। তবে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বাতিল করা যেতে পারে। উপজেলা পরিষদকে আরো জনপ্রতিনিধিত্বশীল করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মধ্য সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশকে আবর্তন পদ্ধতিতে পরিষদের সদস্য হওয়ার বিধান করা যেতে পারে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উপজেলা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত না রেখে তাকে শুধু সংরক্ষিত বিষয় ও বিধিবদ্ধ বিষয়াদি যেমন আইনশৃংখলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ইত্যাদি দেখাশুনার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হলো। এর উদ্দেশ্য তাকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রাখা। একজন সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার অফিসারকে উপজেলা পরিষদের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বলে প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
ভূমি ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে দ্বিতীয় শ্রেনীর একজন ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কর্মরত কানুনগোদের মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর অধীনে তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন করা যেতে পারে। এরূপ পদোন্নতির পরীক্ষা পিএসসি-র মাধ্যমে হতে হবে। পরবর্তীতে তারা পদোন্নতি পেয়ে ২৫ শতাংশ সহকারী কমিশনার (ভূমি) হতে পারবে।
ইউনিয়ন পরিষদের সংস্কার
ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সংখ্যা জনসংখ্যার অনুপাতে ৯-১১ করা যেতে পারে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দুইজন সদস্য নির্বাচিত হবেন, যাদের মধ্যে একজন অবশ্যই মহিলা হতে হবে বলে বিধান করার সুপারিশ দিয়েছে কমিশন। এর ফলে একদিকে মহিলাদের ৫০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব এবং তাদের কর্ম এলাকা সুনিশ্চিত হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন মেম্বারদের ভোটে। কারণ চেয়ারম্যান একবার নির্বাচিত হলে মেম্বারদের আর গুরুত্ব দেয় না বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে কমিশন।
ইউনিয়ন পরিষদকে অধিক দায়িত্ব দেওয়া
কমিশন সুপারিশে জানিয়েছে, উপানুষ্ঠানিক ও মসজিদভিত্তিক উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদকে দেওয়া যেতে পারে। ইউনয়ন পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কৃষি ও পানি বিষয়ক কমিটি গঠন করা মধ্য যেতে পারে। একইভাবে পরিষেবা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা কমিটিসহ ও অন্যান্য কমিটি গঠন করা যেতে পারে। ইউনিয়ন পরিষদে বর্তমানে যে গ্রাম আদালত বা সালিশী ব্যবস্থা রয়েছে তাকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করা হলে গ্রাম পর্যায়ে মামলা-বিরোধ ইত্যাদি কমে আসবে। এলাকার জনসাধারণকে আমন্ত্রণ জানিয়ে গনশুনানির মাধ্যমে এসকল কমিটি গঠন করতে হবে এবং কমিটিসমূহের কার্যক্রমে তাদের উপস্থিত থাকার সুযোগ দিতে হবে হবে বলে প্রস্তাব দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে
প্রধান উপদেষ্টার কাছে দুই সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং সরকারের কার্যপরিধি সুবিস্তৃত হওয়ার ফলে বর্তমান প্রশাসনিক ও স্থানীয় সরকার কাঠামো যথেষ্ট বলে প্রতীয়মান হয় না। অন্যদিকে, এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় মন্ত্রণালয় পর্যায়ে খুঁটিনাটি বহু কাজ সম্পাদন করা হয়। ক্ষমতার প্রত্যর্পণ (ডেলিগেশন) বিবেচনায় দেশে বিশাল জনসংখ্যার পরিষেবা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষ্যে দেশের পুরানো চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এর ফলে এককেন্দ্রীক সরকারের পক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ কমবে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা শহরের উপর চাপ কমবে।
জেলা পরিষদ বাতিল
কমিশন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, স্থানীয় সরকারের একটি ধাপ হিসেবে জেলা পরিষদ বহাল থাকবে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা রয়েছে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কখনোই নাগরিকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হননি। কিছু জেলা পরিষদ বাদে অধিকাংশেরই নিজস্ব রাজস্বের শক্তিশালী উৎস নেই। ফলে অধিকাংশ জেলা পরিষদ আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তাই জেলা পরিষদ বাতিল করা যেতে পারে। জেলা পরিষদের সহায়-সম্পদ প্রস্তাবিত সংশ্লিষ্ট প্রাদেশিক সরকারকে হস্তান্তর করা যেতে পারে।
পৌরসভা শক্তিশালীকরণ: পৌরসভার গুরুত্ব বিবেচনায় স্থানীয় সরকার হিসেবে একে অধিকতর শক্তিশালী করার জন্য সুপারিশ করা হলো। পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন ওয়ার্ড মেম্বারদের ভোটে। কারণ চেয়ারম্যান একবার নির্বাচিত হলে মেম্বারদের আর গুরুত্ব দেয় না।
উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করা
স্থানীয় সরকার হিসেবে উপজেলা পরিষদকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সুপারিশ করা মধ্য হলো। তবে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বাতিল করা যেতে পারে। উপজেলা পরিষদকে আরো জনপ্রতিনিধিত্বশীল করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মধ্য সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশকে আবর্তন পদ্ধতিতে পরিষদের সদস্য হওয়ার বিধান করা যেতে পারে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উপজেলা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত না রেখে তাকে শুধু সংরক্ষিত বিষয় ও বিধিবদ্ধ বিষয়াদি যেমন আইনশৃংখলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ইত্যাদি দেখাশুনার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হলো। এর উদ্দেশ্য তাকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রাখা। একজন সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার অফিসারকে উপজেলা পরিষদের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বলে প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
ভূমি ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে দ্বিতীয় শ্রেনীর একজন ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কর্মরত কানুনগোদের মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর অধীনে তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন করা যেতে পারে। এরূপ পদোন্নতির পরীক্ষা পিএসসি-র মাধ্যমে হতে হবে। পরবর্তীতে তারা পদোন্নতি পেয়ে ২৫ শতাংশ সহকারী কমিশনার (ভূমি) হতে পারবে।
ইউনিয়ন পরিষদের সংস্কার
ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সংখ্যা জনসংখ্যার অনুপাতে ৯-১১ করা যেতে পারে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দুইজন সদস্য নির্বাচিত হবেন, যাদের মধ্যে একজন অবশ্যই মহিলা হতে হবে বলে বিধান করার সুপারিশ দিয়েছে কমিশন। এর ফলে একদিকে মহিলাদের ৫০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব এবং তাদের কর্ম এলাকা সুনিশ্চিত হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন মেম্বারদের ভোটে। কারণ চেয়ারম্যান একবার নির্বাচিত হলে মেম্বারদের আর গুরুত্ব দেয় না বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে কমিশন।
ইউনিয়ন পরিষদকে অধিক দায়িত্ব দেওয়া
কমিশন সুপারিশে জানিয়েছে, উপানুষ্ঠানিক ও মসজিদভিত্তিক উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদকে দেওয়া যেতে পারে। ইউনয়ন পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কৃষি ও পানি বিষয়ক কমিটি গঠন করা মধ্য যেতে পারে। একইভাবে পরিষেবা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা কমিটিসহ ও অন্যান্য কমিটি গঠন করা যেতে পারে। ইউনিয়ন পরিষদে বর্তমানে যে গ্রাম আদালত বা সালিশী ব্যবস্থা রয়েছে তাকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করা হলে গ্রাম পর্যায়ে মামলা-বিরোধ ইত্যাদি কমে আসবে। এলাকার জনসাধারণকে আমন্ত্রণ জানিয়ে গনশুনানির মাধ্যমে এসকল কমিটি গঠন করতে হবে এবং কমিটিসমূহের কার্যক্রমে তাদের উপস্থিত থাকার সুযোগ দিতে হবে হবে বলে প্রস্তাব দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে
প্রধান উপদেষ্টার কাছে দুই সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা