বাংলা স্কুপ, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪:
যেকোনো পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। অন্তর্বর্তী সরকার যাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো শেষ করতে পারে এবং ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে- সে কারণেই তাঁর এই সমর্থন।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ প্রতিশ্রুতি দেন সেনাপ্রধান।
একইসঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না জানিয়ে তিনি বলেছেন, আগামী দেড় বছরের মধ্যে দেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ হতে হবে।
সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎকার নিয়ে এক বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আগস্টের শুরুর দিকে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের সময় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং তার সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ফলে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেন।
এরপর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে দেশের প্রধান প্রধান খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এমন অবস্থায় ইউনূস প্রশাসনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন সেনাপ্রধান।
ড. ইউনূস প্রসঙ্গে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আমি তাঁর পাশে থাকব, যা-ই হোক না কেন, যাতে তিনি তাঁর মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।
বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ড. ইউনূস। তিনি বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করতে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই সংস্কারগুলো অনুসরণ করে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের কাজ সম্পন্ন হওয়া উচিত বলে মনে করেন ওয়াকার-উজ-জামান। তবে এর জন্য ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন তিনি। সেনাপ্রধান বলেন, আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলবো, এই সময়সীমার মধ্যেই আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।
সেনাবাহিনী এই সরকারের দেশ স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে উল্লেখ করে জেনারেল ওয়াকার বলছেন, ড. ইউনূস ও তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার দেখা করেন। তাদের মধ্যে ‘খুব ভালো সম্পর্ক’ রয়েছে।তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে একসঙ্গে কাজ করলে, আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনও কারণ নেই।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা প্রশাসনের নাটকীয় পতনের পর সিভিল সার্ভিসের কিছু অংশ এখনও সঠিকভাবে কার্যকর হয়নি। বাংলাদেশ পুলিশের প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার সদস্য এখনও বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলার রক্ষার দায়িত্ব পালনে নানা কার্যক্রম করছে সেনাবাহিনী।
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির কয়েক সপ্তাহ আগেই সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, আমি এমন কিছু করব না যা সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষতিকর হয়। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেনাবাহিনীর ভেতরে অন্যায়ের সঙ্গে জড়ানোর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি সেনাপ্রধান।
সেনাবাহিনীতে কর্মরত কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা সংস্থাগুলোতে কাজ করার সময় কিছু সামরিক কর্মকর্তা বিচ্যুতিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকতে পারেন।
দীর্ঘমেয়াদে সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখার ইচ্ছার কথাও জানান সেনাপ্রধান। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি কেবল তখনই ঘটতে পারে যখন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকবে। সেক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলান। অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে এ দিকটায় নজর দিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। কোনো অবস্থাতেই একজন সৈনিকের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া উচিত নয়।
(সূত্র: প্রথম আলো, সমকাল, বাংলা ট্রিবিউন)
ডেস্ক/এসকে
যেকোনো পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। অন্তর্বর্তী সরকার যাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো শেষ করতে পারে এবং ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে- সে কারণেই তাঁর এই সমর্থন।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ প্রতিশ্রুতি দেন সেনাপ্রধান।
একইসঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না জানিয়ে তিনি বলেছেন, আগামী দেড় বছরের মধ্যে দেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ হতে হবে।
সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎকার নিয়ে এক বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আগস্টের শুরুর দিকে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের সময় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং তার সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ফলে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেন।
এরপর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে দেশের প্রধান প্রধান খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এমন অবস্থায় ইউনূস প্রশাসনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন সেনাপ্রধান।
ড. ইউনূস প্রসঙ্গে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আমি তাঁর পাশে থাকব, যা-ই হোক না কেন, যাতে তিনি তাঁর মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।
বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ড. ইউনূস। তিনি বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করতে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই সংস্কারগুলো অনুসরণ করে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের কাজ সম্পন্ন হওয়া উচিত বলে মনে করেন ওয়াকার-উজ-জামান। তবে এর জন্য ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন তিনি। সেনাপ্রধান বলেন, আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলবো, এই সময়সীমার মধ্যেই আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।
সেনাবাহিনী এই সরকারের দেশ স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে উল্লেখ করে জেনারেল ওয়াকার বলছেন, ড. ইউনূস ও তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার দেখা করেন। তাদের মধ্যে ‘খুব ভালো সম্পর্ক’ রয়েছে।তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে একসঙ্গে কাজ করলে, আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনও কারণ নেই।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা প্রশাসনের নাটকীয় পতনের পর সিভিল সার্ভিসের কিছু অংশ এখনও সঠিকভাবে কার্যকর হয়নি। বাংলাদেশ পুলিশের প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার সদস্য এখনও বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলার রক্ষার দায়িত্ব পালনে নানা কার্যক্রম করছে সেনাবাহিনী।
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির কয়েক সপ্তাহ আগেই সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, আমি এমন কিছু করব না যা সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষতিকর হয়। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেনাবাহিনীর ভেতরে অন্যায়ের সঙ্গে জড়ানোর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি সেনাপ্রধান।
সেনাবাহিনীতে কর্মরত কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা সংস্থাগুলোতে কাজ করার সময় কিছু সামরিক কর্মকর্তা বিচ্যুতিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকতে পারেন।
দীর্ঘমেয়াদে সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখার ইচ্ছার কথাও জানান সেনাপ্রধান। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি কেবল তখনই ঘটতে পারে যখন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকবে। সেক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলান। অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে এ দিকটায় নজর দিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। কোনো অবস্থাতেই একজন সৈনিকের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া উচিত নয়।
(সূত্র: প্রথম আলো, সমকাল, বাংলা ট্রিবিউন)
ডেস্ক/এসকে