দেশে বিগত সাত বছরে সুগন্ধি চালের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু রপ্তানি বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। পাশাপাশি দেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হারাচ্ছে বিশ্ববাজারে অবস্থান। সেটা দখন করছে প্রতিযোগী ভারত ও পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরা। যে কারণে কৃষকদের ক্ষতির কথা মাথায় রেখে দেশের রপ্তানি ও সেটা থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুগন্ধি চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যাচ্ছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের (এফপিএমইউ) মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগির এটা বাস্তবায়ন হবে। তাহলে উঠে যাবে সুগন্ধি চালের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে সুগন্ধি চাল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। এরপর সুগন্ধি চালের কারণে অন্যান্য নানা ধরনের কৃষিপণ্য রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এরপর থেকে রপ্তানি আয় বাড়াতে দেশের ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দেশের রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সুগন্ধি চাল ভারতে পাচার হচ্ছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। কারণ উৎপাদন এলাকায় চালের দাম অনেক কমে গিয়েছিল। সে সুযোগে কিছু ভারতীয় রপ্তানিকারক এদেশ থেকে চাল নিয়ে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডিং ব্যবহার করে বিদেশে রপ্তানি করছে, যার ফলে বাংলাদেশ তার বাজার হারাচ্ছে। এ দেশের রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে সুগন্ধি চালের উল্লেখযোগ্য চাহিদা রয়েছে।
রপ্তানি বাজার কেমন?
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে গড়ে সুগন্ধি চাল উৎপাদন হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। আর প্রতিবছর গড়ে রপ্তানি হয় ১০ হাজার টন। অর্থাৎ, উৎপাদনের সর্বোচ্চ ২ শতাংশ পর্যন্ত রপ্তানি করা হয়। যেখানে প্রতি বছর তিন লাখ টন সুগন্ধি চাল উদ্বৃত্ত থাকে। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ সুগন্ধি চাল রপ্তানি শুরু করে। প্রথম বছর ৬৬৩ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়। পরের বছরগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে রপ্তানি বন্ধের আগে ১০ হাজার ৮৭৯ টনে উন্নীত হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৬ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৫ লাখ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫১ লাখ মার্কিন ডলারের সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়েছে। সরকারি তথ্য বলছে, ৭৫ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে বসবাস করছেন, কিন্তু অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ থেকে এক কোটিতে। দক্ষিণ এশীয় এবং মধ্য প্রাচ্যের পটভূমির লোকেরা সুগন্ধযুক্ত চালের প্রধান ভোক্তা।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক বলেন, সুগন্ধি চাল রপ্তানি চালু হলে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ব বাজারে একটি ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারবে। এতে দেশের রাজস্ব যেমন বাড়বে আবার আমরা ডলার সংকটে ভুগছি সেটা অনেকটা কমবে। আগেও সুগন্ধি চাল রপ্তানি চালু রেখে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান আরও বাড়ানোর সুযোগ ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ ছিল। এখন তারা চাইলে আমরা সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবো। দেশে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাজারে দেশের যে সব পণ্যের চাহিদা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো সুগন্ধি চাল। অথচ বিদায়ী অর্থবছরের পুরোটা সময় এই পণ্যের রপ্তানি বন্ধ থাকায় সবজি, ফল, শুকনো খাবার, চাল এবং মসলাসহ কাঁচা ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের রপ্তানি ব্যাপকহারে কমে গেছে।
বাজার দখলে নিয়েছে ভারত-পাকিস্তান
সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে। ঠিক একই বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তান।
তথ্য বলছে, বিশ্ববাজারে ৮০ লাখ টন সুগন্ধি চালের চাহিদা রয়েছে। যার অর্ধেকের বেশি রপ্তানি করে ভারত, যা প্রায় ৪৫ লাখ টন। বাংলাদেশ করে ১০ লাখ টন এবং এরপর ৬ লাখ টন করে পাকিস্তান। স্কয়ারের পারভেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বাজার প্রতিবেশী দেশ নিয়ে গেছে বন্ধের সময়। যদিও বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ঝুড়িতে সুগন্ধি চাল একটা বড় প্রোডাক্ট, এটা বন্ধ থাকায় তার একটা প্রভাব রপ্তানি আয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছর কৃষিপণ্যের রপ্তানি বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক থেকে ছিটকে পড়েছে। এখন নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে আবারও রপ্তানিতে নতুন উদ্যম ফিরবে।
বাংলা স্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন/এসকে
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের (এফপিএমইউ) মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগির এটা বাস্তবায়ন হবে। তাহলে উঠে যাবে সুগন্ধি চালের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে সুগন্ধি চাল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। এরপর সুগন্ধি চালের কারণে অন্যান্য নানা ধরনের কৃষিপণ্য রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এরপর থেকে রপ্তানি আয় বাড়াতে দেশের ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দেশের রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সুগন্ধি চাল ভারতে পাচার হচ্ছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। কারণ উৎপাদন এলাকায় চালের দাম অনেক কমে গিয়েছিল। সে সুযোগে কিছু ভারতীয় রপ্তানিকারক এদেশ থেকে চাল নিয়ে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডিং ব্যবহার করে বিদেশে রপ্তানি করছে, যার ফলে বাংলাদেশ তার বাজার হারাচ্ছে। এ দেশের রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে সুগন্ধি চালের উল্লেখযোগ্য চাহিদা রয়েছে।
রপ্তানি বাজার কেমন?
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে গড়ে সুগন্ধি চাল উৎপাদন হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। আর প্রতিবছর গড়ে রপ্তানি হয় ১০ হাজার টন। অর্থাৎ, উৎপাদনের সর্বোচ্চ ২ শতাংশ পর্যন্ত রপ্তানি করা হয়। যেখানে প্রতি বছর তিন লাখ টন সুগন্ধি চাল উদ্বৃত্ত থাকে। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ সুগন্ধি চাল রপ্তানি শুরু করে। প্রথম বছর ৬৬৩ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়। পরের বছরগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে রপ্তানি বন্ধের আগে ১০ হাজার ৮৭৯ টনে উন্নীত হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৬ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৫ লাখ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫১ লাখ মার্কিন ডলারের সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়েছে। সরকারি তথ্য বলছে, ৭৫ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে বসবাস করছেন, কিন্তু অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ থেকে এক কোটিতে। দক্ষিণ এশীয় এবং মধ্য প্রাচ্যের পটভূমির লোকেরা সুগন্ধযুক্ত চালের প্রধান ভোক্তা।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক বলেন, সুগন্ধি চাল রপ্তানি চালু হলে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ব বাজারে একটি ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারবে। এতে দেশের রাজস্ব যেমন বাড়বে আবার আমরা ডলার সংকটে ভুগছি সেটা অনেকটা কমবে। আগেও সুগন্ধি চাল রপ্তানি চালু রেখে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান আরও বাড়ানোর সুযোগ ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ ছিল। এখন তারা চাইলে আমরা সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবো। দেশে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাজারে দেশের যে সব পণ্যের চাহিদা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো সুগন্ধি চাল। অথচ বিদায়ী অর্থবছরের পুরোটা সময় এই পণ্যের রপ্তানি বন্ধ থাকায় সবজি, ফল, শুকনো খাবার, চাল এবং মসলাসহ কাঁচা ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের রপ্তানি ব্যাপকহারে কমে গেছে।
বাজার দখলে নিয়েছে ভারত-পাকিস্তান
সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে। ঠিক একই বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তান।
তথ্য বলছে, বিশ্ববাজারে ৮০ লাখ টন সুগন্ধি চালের চাহিদা রয়েছে। যার অর্ধেকের বেশি রপ্তানি করে ভারত, যা প্রায় ৪৫ লাখ টন। বাংলাদেশ করে ১০ লাখ টন এবং এরপর ৬ লাখ টন করে পাকিস্তান। স্কয়ারের পারভেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বাজার প্রতিবেশী দেশ নিয়ে গেছে বন্ধের সময়। যদিও বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ঝুড়িতে সুগন্ধি চাল একটা বড় প্রোডাক্ট, এটা বন্ধ থাকায় তার একটা প্রভাব রপ্তানি আয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছর কৃষিপণ্যের রপ্তানি বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক থেকে ছিটকে পড়েছে। এখন নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে আবারও রপ্তানিতে নতুন উদ্যম ফিরবে।
বাংলা স্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন/এসকে