পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরকে ২০১৩ সালে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন নামে ঘোষণা করা হয়। চরটি একসময় নাজিরপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত চর ডিয়ারা ও চর কচুয়া গ্রাম নামে পরিচিত ছিল। ইউনিয়ন হলেও তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না এখানকার বাসিন্দারা। চিকিৎসা, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যা নিয়ে চলছে ঝড়-বৃষ্টি-খড়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা চন্দ্রদ্বীপবাসীর জীবন।
চারদিকে নদী বেষ্টিত ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের উপজেলা শহরে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম খেয়া। যেকোনো প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে তাদের পাড়ি দিতে হয় প্রায় ৫ কিলোমিটার নৌপথ। চরবাসীর সবথেকে বড় সমস্যা চিকিৎসা ও শিক্ষা। ইউনিয়নে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও নেই কোনো উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা। যেকয়টি বিদ্যালয় আছে কোনোটিতেই নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথ পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে কলেজগামী শিক্ষার্থীদের।
অন্যদিকে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠীতে বাড়ছে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর হার। একই সঙ্গে বেড়ে চলেছে বাল্যবিবাহ। চরের ১৫ হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য রয়েছে মাত্র একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। যেখানে নেই কোনো এমবিবিএস ডাক্তার। একজন মেডিকেল সিএইচসিপি দায়িত্বে থাকলেও সবসময় তাকে পাওয়া যায় না। দুপুর ২টা পর তালাবন্ধ থাকে এই ইউনিয়নের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানটি। জরুরি চিকিৎসার জন্য তাদের নদীসহ মোট ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
চন্দ্রদীপের স্থানীয় বাসিন্দা ও কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের চন্দ্রদীপ ইউনিয়নে একটি মাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সেটা চর ওডেল নামে পরিচিত। এটা এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টি হলে চালা থেকে পানি পড়ে ২ ফুট পানি উঠে যায়। আমাদের ইউনিয়নে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রয়োজন। জরুরি সেবা নেওয়ার জন্য একটি স্পিডবোর্ড ও অ্যাম্বুলেন্স দরকার ।
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের মোট আয়তন ১০ হাজার ৭৪৮ একর। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ২ কিলোমিটারের একটি পাকা সড়ক আছে। ১১টি ছোট-বড় চর নিয়ে গঠিত এই ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ খালের ওপরে নির্মিত ব্রিজগুলোরও বেহাল দশা। এদিকে ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ মানুষ পেশায় জেলে ও কৃষক। ঘূর্ণিঝড় রেমালে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় হুমকি মুখে পড়েছে তাদের আয়ের প্রধান মাধ্যম কৃষি। এখন সহজেই তেতুলিয়ার পানি ঢুকে প্লাবিত হয় চরের ফসলী জমি। একটি সেতুর অভাবে কৃষি পণ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য চন্দ্রদ্বীপে নিতে তাদের অনেক বেশি টাকা গুনতে হয় প্রতিনিয়ত।
চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মরিয়ম বলেন, বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়ার সময় হাত-পা কাদায় মেখে যায়। রাস্ত-ঘাট সব কাদা হয়ে যায়,যাতায়াতে কষ্ট হয় । আ স ম ফিরোজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, এখানের অধিকাংশ রাস্তায় হচ্ছে কাঁচা, সামন্য কিছু রাস্তা পাঁকা। এজন্য চন্দ্রদ্বীপে রিকশা বা অটো চলাচল করতে পারে না। যার কারণে স্কুল যদি ৪টায় ছুটি হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের বাসায় পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যায় ।পূর্বপাশের চর ব্রেড এলাকার কিছু শিক্ষার্থী আছে তাদের নৌকা পারাপার হয়ে বাসায় যেতে হয়। জায়গাটা শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ। ওখানে একটি ব্রিজ দরকার। আমাদের বিদ্যালয়ে তিনশতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে, কিন্ত পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। আ স ম ফিরোজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হান্নান বলেন, রাস্তা কাঁচা হওয়ার কারণে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্কুলে যেতে পারি না। বৃষ্টি হলে কাদা হয়ে যায়, আমাদের চলাচলে অনেক কষ্ট হয়।
পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবির হাসান বলেন, চন্দ্রদ্বীপে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান ক্লিনিক নির্মাণ করা হবে। ক্লিনিকের কাজ করবে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, আমরা তাদের সহযোগিতা করব। কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর্মী না থাকার বিষয়টা আমাকে অফিসিয়ালি কেউ জানায়নি।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, এই চরগুলোতে অনেক মানুষ বসবাস করছে। দশমিনা, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী ও বাউফলের কিছু চর রয়েছে যেগুলো বিচ্ছিন্ন কিন্তু সেখানে জনবসতি রয়েছে। অনেক চড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক বেড়িবাঁধ পূর্ববর্তী জলোচ্ছ্বাসে বা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। যেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইতিমধ্যে অনেকগুলো সংস্কার করা হয়েছে ও বাকিগুলো করা হবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে
চারদিকে নদী বেষ্টিত ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের উপজেলা শহরে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম খেয়া। যেকোনো প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে তাদের পাড়ি দিতে হয় প্রায় ৫ কিলোমিটার নৌপথ। চরবাসীর সবথেকে বড় সমস্যা চিকিৎসা ও শিক্ষা। ইউনিয়নে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও নেই কোনো উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা। যেকয়টি বিদ্যালয় আছে কোনোটিতেই নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথ পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে কলেজগামী শিক্ষার্থীদের।
অন্যদিকে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠীতে বাড়ছে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর হার। একই সঙ্গে বেড়ে চলেছে বাল্যবিবাহ। চরের ১৫ হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য রয়েছে মাত্র একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। যেখানে নেই কোনো এমবিবিএস ডাক্তার। একজন মেডিকেল সিএইচসিপি দায়িত্বে থাকলেও সবসময় তাকে পাওয়া যায় না। দুপুর ২টা পর তালাবন্ধ থাকে এই ইউনিয়নের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানটি। জরুরি চিকিৎসার জন্য তাদের নদীসহ মোট ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
চন্দ্রদীপের স্থানীয় বাসিন্দা ও কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের চন্দ্রদীপ ইউনিয়নে একটি মাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সেটা চর ওডেল নামে পরিচিত। এটা এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টি হলে চালা থেকে পানি পড়ে ২ ফুট পানি উঠে যায়। আমাদের ইউনিয়নে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রয়োজন। জরুরি সেবা নেওয়ার জন্য একটি স্পিডবোর্ড ও অ্যাম্বুলেন্স দরকার ।
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের মোট আয়তন ১০ হাজার ৭৪৮ একর। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ২ কিলোমিটারের একটি পাকা সড়ক আছে। ১১টি ছোট-বড় চর নিয়ে গঠিত এই ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ খালের ওপরে নির্মিত ব্রিজগুলোরও বেহাল দশা। এদিকে ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ মানুষ পেশায় জেলে ও কৃষক। ঘূর্ণিঝড় রেমালে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় হুমকি মুখে পড়েছে তাদের আয়ের প্রধান মাধ্যম কৃষি। এখন সহজেই তেতুলিয়ার পানি ঢুকে প্লাবিত হয় চরের ফসলী জমি। একটি সেতুর অভাবে কৃষি পণ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য চন্দ্রদ্বীপে নিতে তাদের অনেক বেশি টাকা গুনতে হয় প্রতিনিয়ত।
চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মরিয়ম বলেন, বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়ার সময় হাত-পা কাদায় মেখে যায়। রাস্ত-ঘাট সব কাদা হয়ে যায়,যাতায়াতে কষ্ট হয় । আ স ম ফিরোজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, এখানের অধিকাংশ রাস্তায় হচ্ছে কাঁচা, সামন্য কিছু রাস্তা পাঁকা। এজন্য চন্দ্রদ্বীপে রিকশা বা অটো চলাচল করতে পারে না। যার কারণে স্কুল যদি ৪টায় ছুটি হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের বাসায় পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যায় ।পূর্বপাশের চর ব্রেড এলাকার কিছু শিক্ষার্থী আছে তাদের নৌকা পারাপার হয়ে বাসায় যেতে হয়। জায়গাটা শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ। ওখানে একটি ব্রিজ দরকার। আমাদের বিদ্যালয়ে তিনশতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে, কিন্ত পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। আ স ম ফিরোজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হান্নান বলেন, রাস্তা কাঁচা হওয়ার কারণে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্কুলে যেতে পারি না। বৃষ্টি হলে কাদা হয়ে যায়, আমাদের চলাচলে অনেক কষ্ট হয়।
পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবির হাসান বলেন, চন্দ্রদ্বীপে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান ক্লিনিক নির্মাণ করা হবে। ক্লিনিকের কাজ করবে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, আমরা তাদের সহযোগিতা করব। কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর্মী না থাকার বিষয়টা আমাকে অফিসিয়ালি কেউ জানায়নি।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, এই চরগুলোতে অনেক মানুষ বসবাস করছে। দশমিনা, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী ও বাউফলের কিছু চর রয়েছে যেগুলো বিচ্ছিন্ন কিন্তু সেখানে জনবসতি রয়েছে। অনেক চড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক বেড়িবাঁধ পূর্ববর্তী জলোচ্ছ্বাসে বা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। যেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইতিমধ্যে অনেকগুলো সংস্কার করা হয়েছে ও বাকিগুলো করা হবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে