সাত বছর বয়সী নাফীউল আলম বেশ কিছু দিন ধরেই জ্বরে ভুগছে। এর সঙ্গে আছে সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্টও। চিকিৎসকের পরামর্শে শিশুটির ব্যবহার করতে হচ্ছে নেবুলাইজার। ফলে স্কুলেও যেতে পারছে না সে। তার বাবা সামিউল আলম জানান, অসুস্থতায় বাচ্চাটা বেশ কষ্ট পাচ্ছে। শীত এলেই অসুস্থতা চেপে বসে তার।
কয়েক দিন ধরে প্রায় পুরো দেশেই জেঁকে বসেছে শীত। পৌষের শুরু থেকেই সারা দেশে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এ সময় ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। চিকিৎসকদের মতে, শীতে শিশুদের ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। রাজধানীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। বেশি চাপ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে। এর বাইরেও বিভিন্ন হাসপাতালে আসা সর্দি-জ্বরে আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু।
এই সময়ে তাপমাত্রাও করছে ওঠানামা। দিনে গরম তো রাতে ঠান্ডা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ চার বিভাগের তাপমাত্রা বাড়বে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর। তবে সারা দেশে তাপমাত্রা সামান্য কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবিরের দেওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অফিস জানায়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্যত্র তা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা জ্বর, ঠান্ডা ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। চিকিৎসকরা বলছেন, চলতি বছরে তীব্র শীতের কারণে দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগই শিশু। বাচ্চারা শ্বাসতন্ত্রের নানা ধরনের সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বাচ্চাদের অ্যাজমাও বেড়ে গেছে।
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘শীতে শিশুদের ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর বেড়ে যায়। শীত যত বাড়ে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি শিশুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর বাইরেও শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের চর্মরোগ, অ্যালার্জিজনিত রোগীর সংখ্যা প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের একজন চিকিৎসক জানান, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি। এছাড়া নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু শিশু এই মুহূর্তে ভর্তি আছে। শীতের প্রকোপ বাড়লে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মাহবুবুল হক জানান, শীত মৌসুমে কাশি, সর্দি ও ঠান্ডাজনিত রোগ বেড়ে গেছে। এ কারণে কিছু কিছু শিশুর ঠান্ডা থেকে নিউমোনিয়া হয়ে যায়। ব্রংকাইটিস যাদের আছে বা অ্যাজমা আছে, তাদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, শিশুরা এ সময়ে ঠান্ডাজনিত রোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিশু হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গত ১ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত (এআরআই বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন) সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ব্রংকাইটিস, ব্রংকিওলাইটিস ও নিউমোনিয়ায় ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৪৩৭ জন। আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ। আর সারা দেশে ডায়রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে একজনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৭৩ হাজারেরও।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ বলেন, ‘শীতে শিশুদের সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বাড়ে। একইসঙ্গে চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার মতো রোগও বাড়ছে। শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না। শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
বাংলা স্কুপ/ ডেস্ক/ এনআইএন
কয়েক দিন ধরে প্রায় পুরো দেশেই জেঁকে বসেছে শীত। পৌষের শুরু থেকেই সারা দেশে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এ সময় ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। চিকিৎসকদের মতে, শীতে শিশুদের ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। রাজধানীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। বেশি চাপ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে। এর বাইরেও বিভিন্ন হাসপাতালে আসা সর্দি-জ্বরে আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু।
এই সময়ে তাপমাত্রাও করছে ওঠানামা। দিনে গরম তো রাতে ঠান্ডা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ চার বিভাগের তাপমাত্রা বাড়বে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর। তবে সারা দেশে তাপমাত্রা সামান্য কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবিরের দেওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অফিস জানায়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্যত্র তা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা জ্বর, ঠান্ডা ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। চিকিৎসকরা বলছেন, চলতি বছরে তীব্র শীতের কারণে দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগই শিশু। বাচ্চারা শ্বাসতন্ত্রের নানা ধরনের সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বাচ্চাদের অ্যাজমাও বেড়ে গেছে।
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘শীতে শিশুদের ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর বেড়ে যায়। শীত যত বাড়ে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি শিশুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর বাইরেও শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের চর্মরোগ, অ্যালার্জিজনিত রোগীর সংখ্যা প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের একজন চিকিৎসক জানান, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি। এছাড়া নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু শিশু এই মুহূর্তে ভর্তি আছে। শীতের প্রকোপ বাড়লে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মাহবুবুল হক জানান, শীত মৌসুমে কাশি, সর্দি ও ঠান্ডাজনিত রোগ বেড়ে গেছে। এ কারণে কিছু কিছু শিশুর ঠান্ডা থেকে নিউমোনিয়া হয়ে যায়। ব্রংকাইটিস যাদের আছে বা অ্যাজমা আছে, তাদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, শিশুরা এ সময়ে ঠান্ডাজনিত রোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিশু হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গত ১ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত (এআরআই বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন) সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ব্রংকাইটিস, ব্রংকিওলাইটিস ও নিউমোনিয়ায় ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৪৩৭ জন। আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ। আর সারা দেশে ডায়রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে একজনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৭৩ হাজারেরও।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ বলেন, ‘শীতে শিশুদের সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বাড়ে। একইসঙ্গে চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার মতো রোগও বাড়ছে। শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না। শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
বাংলা স্কুপ/ ডেস্ক/ এনআইএন