কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। স্বার্থের সংঘাত। এই গ্যাঁড়াকলে পড়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের প্রতিষ্ঠান মেসার্স কিস্টোন বিজনেস সাপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড। গত সরকারের আমলে ধারাবাহিকভাবে কাজ পেয়ে যাওয়া এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং সিইও তার স্ত্রী দিলরুবা কবির। যদিও ফাওজুল কবির খান সরকারের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাওয়ার পর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয় বলে দাবি কোম্পানিটির।
তবে কিস্টোনের গত ২৪ অক্টোবরের একটি চিঠি থেকে জানা যায়, তখনো এই কোম্পানির একজন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার নাম। চিঠিটি পাঠানো হয় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিইআরবি) নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ ও ক্ষমতাবর্ধন (ঢাকা-ময়মনসিংহ বিভাগ) প্রকল্পের পরিচালককে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের অধীন একটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে চুক্তি রয়েছে কিস্টোনের।
নথি বলছে, কিস্টোন বিজনেস সাপোর্ট কোম্পানি বর্তমানে গোপালগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রকৌশল পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। সঞ্চালন লাইনের ডিজাইন, এস্টিমেট ও সুপারভিশন কাজের জন্য দ্বিতীয় দফায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ তারা।
এই চুক্তির অবসান চেয়ে বিআরইবিকে চিঠি দিয়ে কিস্টোন বলছে, উপদেষ্টার প্রতিষ্ঠান এই চুক্তিতে থাকার কারণে স্বার্থের সংঘাতের প্রশ্ন আসতে পারে। চিঠিতে চেয়ারম্যান ও সিইও হিসেবে স্বাক্ষর করেন লিয়াকত আলী চৌধুরী।
ফাওজুল কবির খান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ১৬ আগস্ট, আর কিস্টোন চুক্তির অবসান চেয়ে চিঠি দেয় ২৪ অক্টোবর। তারও এক মাসের বেশি সময় পর ৩০ নভেম্বরে চুক্তির অবসায়ন চাওয়া হয়। শপথের প্রায় সাড়ে তিন মাস পর চুক্তি অবসায়নে কি কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট ঘটেনি- এই প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যে।
উপদেষ্টা শপথ নেওয়ার পরপরই কেন চুক্তি অবসায়নের আবেদন করেনি কিস্টোন? জানতে কিস্টোনের একটি নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করলেও সাড়া মেলেনি তাদের।
এদিকে প্রকল্প পরিচালক আওলাদ হোসেন বলেন, কিস্টোনের আবেদন অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ৩০ নভেম্বর অবসান হয়েছে চুক্তির। নতুন কোম্পানি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা। কিস্টোন তাদের কয়েকজন প্রকৌশলীকে প্রকল্পে রেখে দেওয়ার আবেদন করেছে, সেটি নতুন কোম্পানির ওপর নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।
চুক্তি অবসানের কথা বললেও কোনো নথি দেখাননি প্রকল্প পরিচালক। এমনকি চুক্তির পর গত এক বছরে কিস্টোনের সার্বিক কাজের অনুপাতও সুস্পষ্ট বলতে পারেননি প্রকল্প পরিচালক কিংবা অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক জয়দেব মালাকার। তবে কিস্টোনের সম্পাদিত কাজের পরিমাণ বিবেচনা করে তৈরি হয়েছে তাদের প্রাপ্য হিসাব। বিল পরিশোধের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তারা।
অন্য সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের শর্তে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব থাকলেও এত দিন কীভাবে উপদেষ্টার নাম কিস্টোন কোম্পানির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল? স্বার্থের সংঘাত কি ঘটেনি? প্রকল্প পরিচালকের দাবি, তারা কোনোভাবে প্রভাবিত হননি উপদেষ্টার কোম্পানি থেকে।
বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া নথি থেকে দেখা যায়, ২০১৮ সালেও কিস্টোনের সঙ্গে একই রকম চুক্তি ছিল বিআরইবির। সেবার কিস্টোন সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও সেটি ছিল প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অনেক বেশি। পরে দর কিছুটা কমিয়ে তারাই পরামর্শক নিযুক্ত হয়। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২৩ সালে আবার কিস্টোনের সঙ্গে চুক্তি করে বিআরইবি।
গত সরকারের আমলে এভাবে ধারাবাহিকভাবে কাজ পেয়ে যাওয়ার ঘটনায় কিস্টোন ও বিআরইবি কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এই সুবিধা পাওয়ার পেছনে বর্তমান উপদেষ্টার সাবেক সরকারি দায়িত্বের ভূমিকা সামনে আসছে বলে মনে করেন তারা।
বিসিএসের ১৯৭৯ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ছিলেন। এর আগে তিনি অবকাঠামো ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি উৎপাদনে অর্থায়ন ও কারিগরি সহযোগিতার প্রতিষ্ঠান ইডকলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন।
২০০৯ সালে চাকরি থেকে অবসরের পর ফাওজুল কবির খান প্রতিষ্ঠা করেন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘কিস্টোন কনসাল্টিং কোম্পানি’। বিদ্যুৎ বিভাগের বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতের বিভিন্ন কারিগরি পরামর্শক কাজে সম্পৃক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র: ঢাকা টাইমস
বাংলা স্কুপ/ ডেস্ক/ এনআইএন
তবে কিস্টোনের গত ২৪ অক্টোবরের একটি চিঠি থেকে জানা যায়, তখনো এই কোম্পানির একজন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার নাম। চিঠিটি পাঠানো হয় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিইআরবি) নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ ও ক্ষমতাবর্ধন (ঢাকা-ময়মনসিংহ বিভাগ) প্রকল্পের পরিচালককে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের অধীন একটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে চুক্তি রয়েছে কিস্টোনের।
নথি বলছে, কিস্টোন বিজনেস সাপোর্ট কোম্পানি বর্তমানে গোপালগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রকৌশল পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। সঞ্চালন লাইনের ডিজাইন, এস্টিমেট ও সুপারভিশন কাজের জন্য দ্বিতীয় দফায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ তারা।
এই চুক্তির অবসান চেয়ে বিআরইবিকে চিঠি দিয়ে কিস্টোন বলছে, উপদেষ্টার প্রতিষ্ঠান এই চুক্তিতে থাকার কারণে স্বার্থের সংঘাতের প্রশ্ন আসতে পারে। চিঠিতে চেয়ারম্যান ও সিইও হিসেবে স্বাক্ষর করেন লিয়াকত আলী চৌধুরী।
ফাওজুল কবির খান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ১৬ আগস্ট, আর কিস্টোন চুক্তির অবসান চেয়ে চিঠি দেয় ২৪ অক্টোবর। তারও এক মাসের বেশি সময় পর ৩০ নভেম্বরে চুক্তির অবসায়ন চাওয়া হয়। শপথের প্রায় সাড়ে তিন মাস পর চুক্তি অবসায়নে কি কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট ঘটেনি- এই প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যে।
উপদেষ্টা শপথ নেওয়ার পরপরই কেন চুক্তি অবসায়নের আবেদন করেনি কিস্টোন? জানতে কিস্টোনের একটি নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করলেও সাড়া মেলেনি তাদের।
এদিকে প্রকল্প পরিচালক আওলাদ হোসেন বলেন, কিস্টোনের আবেদন অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ৩০ নভেম্বর অবসান হয়েছে চুক্তির। নতুন কোম্পানি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা। কিস্টোন তাদের কয়েকজন প্রকৌশলীকে প্রকল্পে রেখে দেওয়ার আবেদন করেছে, সেটি নতুন কোম্পানির ওপর নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।
চুক্তি অবসানের কথা বললেও কোনো নথি দেখাননি প্রকল্প পরিচালক। এমনকি চুক্তির পর গত এক বছরে কিস্টোনের সার্বিক কাজের অনুপাতও সুস্পষ্ট বলতে পারেননি প্রকল্প পরিচালক কিংবা অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক জয়দেব মালাকার। তবে কিস্টোনের সম্পাদিত কাজের পরিমাণ বিবেচনা করে তৈরি হয়েছে তাদের প্রাপ্য হিসাব। বিল পরিশোধের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তারা।
অন্য সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের শর্তে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব থাকলেও এত দিন কীভাবে উপদেষ্টার নাম কিস্টোন কোম্পানির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল? স্বার্থের সংঘাত কি ঘটেনি? প্রকল্প পরিচালকের দাবি, তারা কোনোভাবে প্রভাবিত হননি উপদেষ্টার কোম্পানি থেকে।
বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া নথি থেকে দেখা যায়, ২০১৮ সালেও কিস্টোনের সঙ্গে একই রকম চুক্তি ছিল বিআরইবির। সেবার কিস্টোন সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও সেটি ছিল প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অনেক বেশি। পরে দর কিছুটা কমিয়ে তারাই পরামর্শক নিযুক্ত হয়। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২৩ সালে আবার কিস্টোনের সঙ্গে চুক্তি করে বিআরইবি।
গত সরকারের আমলে এভাবে ধারাবাহিকভাবে কাজ পেয়ে যাওয়ার ঘটনায় কিস্টোন ও বিআরইবি কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এই সুবিধা পাওয়ার পেছনে বর্তমান উপদেষ্টার সাবেক সরকারি দায়িত্বের ভূমিকা সামনে আসছে বলে মনে করেন তারা।
বিসিএসের ১৯৭৯ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ছিলেন। এর আগে তিনি অবকাঠামো ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি উৎপাদনে অর্থায়ন ও কারিগরি সহযোগিতার প্রতিষ্ঠান ইডকলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন।
২০০৯ সালে চাকরি থেকে অবসরের পর ফাওজুল কবির খান প্রতিষ্ঠা করেন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘কিস্টোন কনসাল্টিং কোম্পানি’। বিদ্যুৎ বিভাগের বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতের বিভিন্ন কারিগরি পরামর্শক কাজে সম্পৃক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র: ঢাকা টাইমস
বাংলা স্কুপ/ ডেস্ক/ এনআইএন