
দরপত্রের ধারায় ফিরেছে দেশের বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত। বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ বিধান বাতিলের পর সব ক্ষেত্রেই দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। সব ক্ষেত্রে ভালো সাড়া পাওয়া না গেলেও এই প্রক্রিয়াকে সরকারি ক্রয়ের সবচেয়ে স্বচ্ছ মাধ্যম বলে বিবেচনা করা হয়। সম্প্রতি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির পর ১২টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করেছে সরকার। বিগত সরকার এসব ক্রয়-প্রক্রিয়া সরাসরি দরকষাকষি বা নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে করে আসছিল।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহে বিশেষ বিধান করে। সেই বিধানের আলোকে বিনা দরপত্রে ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হতো। নিজেদের পছন্দের মানুষকে কাজ দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষ বিধানে বেশি দামে কাজ দেওয়া হয়েছে বলে সমালোচনা রয়েছে। যদিও সাবেক সরকারের তরফ থেকে সেসব সমালোচনা বরাবর অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সুশীল সমাজের একটি অংশের সঙ্গে দেশের বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরাও এই বিধানের বিরোধিতা করে এসেছে। এরপরও পরপর দুই দফায় বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ বিধানের সময় বাড়ানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতেই বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ বিধান বাতিল করে দেয়। একই সঙ্গে বিশেষ বিধানের আলোকে গ্রহণ করা প্রকল্পগুলো নিয়ে কোনও প্রশ্ন না তোলার বিষয়ে যে ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, উচ্চ আদালত সেটিকেও অবৈধ ঘোষণা করে। অর্থাৎ এখন যে কেউ চাইলে জনস্বার্থে এসব প্রকল্পের বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবেন।
বিশেষ বিধান বাতিলের পর সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জ্বালানি তেল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য দরপত্র আহ্বান করছে। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলেও সমালোচনা রয়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, এলএনজি কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে তারা ভালো সাড়া পাচ্ছেন না। আবার কোনও কোনও সময় দরপত্র ডাকার সময় স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম কম থাকছে, কিন্তু শর্ত অনুযায়ী তিনটি দরপত্র জমা না পড়ায় পুরো দর প্রক্রিয়া বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। আবার দরপত্র আহ্বান করা হলে দেখা যাচ্ছে এলএনজির দাম বেড়ে যাচ্ছে। তখন আবার বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট বা সরকারি ক্রয় নীতি অনুযায়ী যেকোনও ক্ষেত্রে তিনটি দরপত্র জমা পড়ার বিধান রয়েছে। ফলে কোনও সময় দুটি দরপত্র জমা পড়লে সেই দর প্রক্রিয়া বাতিল করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, কোনও কোনও ক্ষেত্রে সাড়া না মেলার ঘটনা ঘটলেও এটাই একমাত্র বৈধ প্রক্রিয়া।
অন্যদিকে ১২টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে। দেশে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য এর আগে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে কাজ দেওয়া হতো। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের সরকারের দেওয়া ৩৪টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যাদেশ বাতিল করে দিছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমে আসতে পারে। আগে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট করে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের দাম বাড়িয়ে রাখা হয়েছিল, এখন যা অনেকটা কমে আসতে পারে।
এর আগে প্রতি ইউনিট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের দাম দেওয়া হতো ১৬ থেকে ১৮ সেন্ট। তবে অতি সম্প্রতি যেসব কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে সেখানেও দাম দেওয়া হয়েছে ১০ থেকে সাড়ে ১০ সেন্ট। ভারতে যা সাড়ে চার সেন্টে নেমে এসেছে। তবে ভারতে সূর্যালোক বেশি পাওয়া যায় বলে দাম কিছুটা কম পড়ে। যদিও এতটা দামের হেরফের হওয়া নিয়ে বাংলাদেশে সমালোচনা রয়েছে।
গেলো সপ্তাহে যেসব সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে তা হলো, সুন্দরবনের কাছে ১০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, হাটহাজারীতে ১৮ মেগাওয়াট গ্রিড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, আরেকটি ২০ মেগাওয়াট গ্রিড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র সবুজপাড়ায়, মৌলভীবাজারে ২৫ মেগাওয়াট গ্রিড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, বাজিতপুরে ২৫ মেগাওয়াট গ্রিড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, চন্দ্রঘোনায় ২৫ মেগাওয়াট গ্রিড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, উখিয়ায় ৩০ মেগাওয়াট, লোহাগড়ায় ৩০ মেগাওয়াট, নবাবগঞ্জে ৩৫ মেগাওয়াট, কুড়িগ্রামে ৪৫ মেগাওয়াট, ফটিকছড়িতে ৪৫ মেগাওয়াট ও ভালুকায় ৪৫ মেগাওয়াট গ্রিড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেইন বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইন বাতিল করাটা খুব জরুরি ছিল। খুবই ভালো উদ্যোগ নিয়েছে এই সরকার। তবে এভাবে দরপত্র আহ্বানের সুবিধা ও অসুবিধাও আছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানির ক্ষেত্রে অনেক বিষয় আছে, যেগুলো আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে ওঠানামা করে। সেক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান করে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় গেলে সেই কম দরের সুবিধা আমরা পাবো না। আবার অনেক প্রকল্পে জমির প্রয়োজন হয়। সেসব ক্ষেত্রে আলোচনা করারও দরকার হতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনার জন্য সরকার চাইলে একটি কমিটিও করে নিতে পারে। যার মাধ্যমে দ্রুত কিছু কিছু ইস্যুতে সিদ্ধান্ত দেওয়া যায়। এদিকে আবার কিছু কিছু ইস্যুর জন্য দরপত্র আহ্বানই সবচেয়ে স্বচ্ছ হবে বলে তিনি অভিমত দেন।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহে বিশেষ বিধান করে। সেই বিধানের আলোকে বিনা দরপত্রে ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হতো। নিজেদের পছন্দের মানুষকে কাজ দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষ বিধানে বেশি দামে কাজ দেওয়া হয়েছে বলে সমালোচনা রয়েছে। যদিও সাবেক সরকারের তরফ থেকে সেসব সমালোচনা বরাবর অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সুশীল সমাজের একটি অংশের সঙ্গে দেশের বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরাও এই বিধানের বিরোধিতা করে এসেছে। এরপরও পরপর দুই দফায় বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ বিধানের সময় বাড়ানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতেই বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ বিধান বাতিল করে দেয়। একই সঙ্গে বিশেষ বিধানের আলোকে গ্রহণ করা প্রকল্পগুলো নিয়ে কোনও প্রশ্ন না তোলার বিষয়ে যে ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, উচ্চ আদালত সেটিকেও অবৈধ ঘোষণা করে। অর্থাৎ এখন যে কেউ চাইলে জনস্বার্থে এসব প্রকল্পের বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবেন।
বিশেষ বিধান বাতিলের পর সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জ্বালানি তেল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য দরপত্র আহ্বান করছে। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলেও সমালোচনা রয়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, এলএনজি কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে তারা ভালো সাড়া পাচ্ছেন না। আবার কোনও কোনও সময় দরপত্র ডাকার সময় স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম কম থাকছে, কিন্তু শর্ত অনুযায়ী তিনটি দরপত্র জমা না পড়ায় পুরো দর প্রক্রিয়া বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। আবার দরপত্র আহ্বান করা হলে দেখা যাচ্ছে এলএনজির দাম বেড়ে যাচ্ছে। তখন আবার বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট বা সরকারি ক্রয় নীতি অনুযায়ী যেকোনও ক্ষেত্রে তিনটি দরপত্র জমা পড়ার বিধান রয়েছে। ফলে কোনও সময় দুটি দরপত্র জমা পড়লে সেই দর প্রক্রিয়া বাতিল করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, কোনও কোনও ক্ষেত্রে সাড়া না মেলার ঘটনা ঘটলেও এটাই একমাত্র বৈধ প্রক্রিয়া।
অন্যদিকে ১২টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে। দেশে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য এর আগে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে কাজ দেওয়া হতো। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের সরকারের দেওয়া ৩৪টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যাদেশ বাতিল করে দিছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমে আসতে পারে। আগে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট করে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের দাম বাড়িয়ে রাখা হয়েছিল, এখন যা অনেকটা কমে আসতে পারে।
এর আগে প্রতি ইউনিট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের দাম দেওয়া হতো ১৬ থেকে ১৮ সেন্ট। তবে অতি সম্প্রতি যেসব কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে সেখানেও দাম দেওয়া হয়েছে ১০ থেকে সাড়ে ১০ সেন্ট। ভারতে যা সাড়ে চার সেন্টে নেমে এসেছে। তবে ভারতে সূর্যালোক বেশি পাওয়া যায় বলে দাম কিছুটা কম পড়ে। যদিও এতটা দামের হেরফের হওয়া নিয়ে বাংলাদেশে সমালোচনা রয়েছে।
গেলো সপ্তাহে যেসব সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে তা হলো, সুন্দরবনের কাছে ১০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, হাটহাজারীতে ১৮ মেগাওয়াট গ্রিড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, আরেকটি ২০ মেগাওয়াট গ্রিড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র সবুজপাড়ায়, মৌলভীবাজারে ২৫ মেগাওয়াট গ্রিড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, বাজিতপুরে ২৫ মেগাওয়াট গ্রিড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, চন্দ্রঘোনায় ২৫ মেগাওয়াট গ্রিড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, উখিয়ায় ৩০ মেগাওয়াট, লোহাগড়ায় ৩০ মেগাওয়াট, নবাবগঞ্জে ৩৫ মেগাওয়াট, কুড়িগ্রামে ৪৫ মেগাওয়াট, ফটিকছড়িতে ৪৫ মেগাওয়াট ও ভালুকায় ৪৫ মেগাওয়াট গ্রিড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেইন বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইন বাতিল করাটা খুব জরুরি ছিল। খুবই ভালো উদ্যোগ নিয়েছে এই সরকার। তবে এভাবে দরপত্র আহ্বানের সুবিধা ও অসুবিধাও আছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানির ক্ষেত্রে অনেক বিষয় আছে, যেগুলো আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে ওঠানামা করে। সেক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান করে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় গেলে সেই কম দরের সুবিধা আমরা পাবো না। আবার অনেক প্রকল্পে জমির প্রয়োজন হয়। সেসব ক্ষেত্রে আলোচনা করারও দরকার হতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনার জন্য সরকার চাইলে একটি কমিটিও করে নিতে পারে। যার মাধ্যমে দ্রুত কিছু কিছু ইস্যুতে সিদ্ধান্ত দেওয়া যায়। এদিকে আবার কিছু কিছু ইস্যুর জন্য দরপত্র আহ্বানই সবচেয়ে স্বচ্ছ হবে বলে তিনি অভিমত দেন।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন