ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই গ্রীষ্ম মৌসুমে যশোরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। সাধারণত ১৫-১৬ ফুটকে স্বাভাবিক স্তর বলে ধরা হয়। অবশ্য বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলে পানির স্তর থাকে ২৬-২৮ ফুট। আর মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৩২-৩৬ ফুট পর্যন্ত নামে উঁচু এ অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানি। তবে এবার শীতের শুরুতেই কমতে শুরু করেছে জীবন রক্ষাকারী তরল এ পদার্থটির স্তর। এ ধারা অব্যাহত থাকলে গ্রীষ্ম মৌসুমে সংকট আরো প্রকট হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেচের অভাবে ব্যাহত হতে পারে চাষাবাদও।
এ সময়ে পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এছাড়া পুকুর ও জলাশয় ভরাট এবং অপরিকল্পিত নলকূপ স্থাপনের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে। সাধারণত পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপে পানি ওঠে না। আর যদি ৩০ ফুটের নিচে যায় তাহলে বৈদ্যুতিক মোটর দিয়েও পানি তোলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এভাবে ভূগর্ভের পানির স্তর খালি হয়ে পড়লে তা পূরণে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জেলায় অগভীর নলকূপ রয়েছে ২৪ হাজার ৩২৩টি। এর মধ্যে শুধু সদর উপজেলায় রয়েছে ৫ হাজার ৬২৫টি নলকূপ, সাবমার্সিবল ও তারা টিউবওয়েল। এ উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ২৫-৩২ ফুটের নিচে পানির উপস্থিতি দেখা গেছে। বাঘারপাড়া, ঝিকরগাছা ও শার্শায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। তবে অভয়নগর ও মণিরামপুরে পানির স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ বলেন, ‘জেলার কোথাও কোথাও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে নলকূপে পানি পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শীতের শুরুতেই ২৫-৩২ ফুট পর্যন্ত নেমেছে পানির স্তর। সামনে আরো নামতে পারে।’
যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, শহরে ২৯টি গভীর নলকূপ, ৫০০ তারা পাম্প এবং চার-পাঁচ হাজার টিউবওয়েল ও সাবমার্সিবল রয়েছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এর দুই-তৃতীয়াংশে এরই মধ্যে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। শহরে বর্তমানে ১০ হাজারেরও বেশি পানির গ্রাহক রয়েছেন। এসব গ্রাহকের দৈনিক পানির চাহিদা ২২ লাখ গ্যালন। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে পৌর কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের কতটুকু পানির চাহিদা পূরণ করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এ ব্যাপারে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল আহম্মেদ বলেন, ‘সাধারণত ফাল্গুন মাসের শেষের দিকে এ অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নামতে থাকে। এবার একটু আগেই অস্বাভাবিকভাবে নেমে গেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সামনে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।’
বোরো মৌসুম সেচনির্ভর হওয়ায় এ সময়ে উৎসগুলোয় পর্যাপ্ত পানি থাকা জরুরি বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তারা। অন্যথায় আবাদ ব্যাহত হতে পারে। বিকল্প উপায়ে সেচের ব্যবস্থা করা হলেও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে ধান-চালের বাজারদরে। এ বছর মাঘ মাস থেকে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নামতে শুরু করেছে। বোরো আবাদের শুরুতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে যাওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চাষীরা। পুরো মৌসুমজুড়ে সংকট থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের কৃষক ফরিদ আহমেদ রজব বলেন, ‘এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। তবে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় জমিতে সেচ দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।’
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গভীর নলকূপ রয়েছে ১ হাজার ৮৬৭টি। এসব নলকূপ দিয়ে ২৫ হাজার ২২৩ হেক্টর আবাদি জমিতে সেচ দেয়া হয়। এছাড়া ৬৩ হাজার ৭৯৩টি শ্যালো ও টিউবওয়েল দিয়ে ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে সেচ দেন কৃষক। এর বাইরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, এলজিইডি, পৌরসভার আওতায় আরো কয়েক হাজার গভীর-অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপের পানি সেচের পাশাপাশি মানুষ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করছে।
এ ব্যাপারে বিএডিসি যশোরের যুগ্ম পরিচালক (সার) রোকনুজ্জামান বলেন, ‘পর্যাপ্ত পানির অভাবে ফসলের কাঙ্ক্ষিত ফলন বিঘ্নিত হয়। পর্যাপ্ত সার বা কীটনাশক দিয়েও উচ্চ ফলন আশা করা যায় না।’চলতি মৌসুমে যশোরে ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি অধিদপ্তর। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ শেষ হয়েছে। বাকিটা কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবু তালহা বলেন, ‘অন্যান্য বছরে বোরো আবাদের আগে বৃষ্টিপাত হলেও এ বছর বৃষ্টির দেখা মেলেনি। দ্রুত বৃষ্টিপাত হলে এ পরিস্থিতির উত্তরণ হবে। তা না হলে সেচের অভাবে বোরো আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে
এ সময়ে পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এছাড়া পুকুর ও জলাশয় ভরাট এবং অপরিকল্পিত নলকূপ স্থাপনের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে। সাধারণত পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপে পানি ওঠে না। আর যদি ৩০ ফুটের নিচে যায় তাহলে বৈদ্যুতিক মোটর দিয়েও পানি তোলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এভাবে ভূগর্ভের পানির স্তর খালি হয়ে পড়লে তা পূরণে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জেলায় অগভীর নলকূপ রয়েছে ২৪ হাজার ৩২৩টি। এর মধ্যে শুধু সদর উপজেলায় রয়েছে ৫ হাজার ৬২৫টি নলকূপ, সাবমার্সিবল ও তারা টিউবওয়েল। এ উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ২৫-৩২ ফুটের নিচে পানির উপস্থিতি দেখা গেছে। বাঘারপাড়া, ঝিকরগাছা ও শার্শায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। তবে অভয়নগর ও মণিরামপুরে পানির স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ বলেন, ‘জেলার কোথাও কোথাও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে নলকূপে পানি পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শীতের শুরুতেই ২৫-৩২ ফুট পর্যন্ত নেমেছে পানির স্তর। সামনে আরো নামতে পারে।’
যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, শহরে ২৯টি গভীর নলকূপ, ৫০০ তারা পাম্প এবং চার-পাঁচ হাজার টিউবওয়েল ও সাবমার্সিবল রয়েছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এর দুই-তৃতীয়াংশে এরই মধ্যে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। শহরে বর্তমানে ১০ হাজারেরও বেশি পানির গ্রাহক রয়েছেন। এসব গ্রাহকের দৈনিক পানির চাহিদা ২২ লাখ গ্যালন। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে পৌর কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের কতটুকু পানির চাহিদা পূরণ করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এ ব্যাপারে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল আহম্মেদ বলেন, ‘সাধারণত ফাল্গুন মাসের শেষের দিকে এ অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নামতে থাকে। এবার একটু আগেই অস্বাভাবিকভাবে নেমে গেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সামনে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।’
বোরো মৌসুম সেচনির্ভর হওয়ায় এ সময়ে উৎসগুলোয় পর্যাপ্ত পানি থাকা জরুরি বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তারা। অন্যথায় আবাদ ব্যাহত হতে পারে। বিকল্প উপায়ে সেচের ব্যবস্থা করা হলেও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে ধান-চালের বাজারদরে। এ বছর মাঘ মাস থেকে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নামতে শুরু করেছে। বোরো আবাদের শুরুতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে যাওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চাষীরা। পুরো মৌসুমজুড়ে সংকট থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের কৃষক ফরিদ আহমেদ রজব বলেন, ‘এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। তবে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় জমিতে সেচ দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।’
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গভীর নলকূপ রয়েছে ১ হাজার ৮৬৭টি। এসব নলকূপ দিয়ে ২৫ হাজার ২২৩ হেক্টর আবাদি জমিতে সেচ দেয়া হয়। এছাড়া ৬৩ হাজার ৭৯৩টি শ্যালো ও টিউবওয়েল দিয়ে ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে সেচ দেন কৃষক। এর বাইরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, এলজিইডি, পৌরসভার আওতায় আরো কয়েক হাজার গভীর-অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপের পানি সেচের পাশাপাশি মানুষ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করছে।
এ ব্যাপারে বিএডিসি যশোরের যুগ্ম পরিচালক (সার) রোকনুজ্জামান বলেন, ‘পর্যাপ্ত পানির অভাবে ফসলের কাঙ্ক্ষিত ফলন বিঘ্নিত হয়। পর্যাপ্ত সার বা কীটনাশক দিয়েও উচ্চ ফলন আশা করা যায় না।’চলতি মৌসুমে যশোরে ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি অধিদপ্তর। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ শেষ হয়েছে। বাকিটা কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবু তালহা বলেন, ‘অন্যান্য বছরে বোরো আবাদের আগে বৃষ্টিপাত হলেও এ বছর বৃষ্টির দেখা মেলেনি। দ্রুত বৃষ্টিপাত হলে এ পরিস্থিতির উত্তরণ হবে। তা না হলে সেচের অভাবে বোরো আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে