যশোরে ভূমিহীন পরিচয়ে একজনই বাগিয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছয়টি ঘর। তিনটি ঘরে লাগিয়েছেন এসি। মেঝেতে করেছেন টাইলস। দুই স্ত্রী-সন্তানদের বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে সমালোচনা চললেও তাদের দাবি প্রকৃত ভূমিহীন হিসেবেই ঘর পেয়েছেন। দুই স্ত্রী, সন্তান ও শ্যালিকাসহ ১২ সদস্য নিয়ে ৬ ঘরে বসবাস করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আলতাফ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সরেজমিনে যশোরের মনিরামপুরের হরিহরনগর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। তবে জেলা প্রশাসক বলছে, বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে কী না তা খতিয়ে দেখা হবে।
জানা যায়, মনিরামপুরের হরিহরনগর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২২টি ঘর। সাদা রঙের ঘরগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম উত্তর প্রান্তের ৬টি ঘর। দুই বছর আগে গোলাপি রঙের ঘরগুলোর বারান্দা ঘেরা হয়েছে গ্রিল দিয়ে, মেঝে মোড়ানো হয়েছে টাইলসে, তিনটি ঘরে লাগানো হয়েছে দেড় টনের তিনটি এসি। ঘরে রয়েছে মূল্যবান আসবাবপত্র। এমনকি উঠানটিও করা হয়েছে পাকা।
অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এসব ঘর বাগিয়েছেন তিনি। এরপর নিজেদের মত করে সাজিয়েছেন। কথিত ভূমিহীন এ পরিবারের বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে এলাকায় সমালোচনা চললেও আলতাফ হোসেনের দাবি, প্রকৃত ভূমিহীন হিসবেই তারা ঘর পেয়েছেন। স্বচ্ছলতা ফেরায় শখ পূরণ করেছেন।
এ বিষয়ে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘২০২১ সালে ওই জমিতে (৭২ শতক) আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। তাকে উচ্ছেদ করার নির্দেশনা দেন ইউএনও। একপর্যায়ে ইউএনও প্রতিশ্রুতি দেন তার পরিবারের যতগুলো ঘর লাগবে, এই প্রকল্প থেকে দেয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইউএনও আমাকে ছয়টি ঘরই দিয়েছেন। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকছি।’তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত ভূমিহীন হিসবেই তারা ঘর পেয়েছেন; স্বচ্ছলতা ফেরায় শখ পূরণ করেছেন। তার দুই ছেলে ঢাকায় চাকরি করেন। তারাই ঘরগুলো সংস্কার করেছে। ঘরে টাইলস, ফ্রিজ, এসি লাগিয়েছে। এটা তো দোষের কিছু না।’
আলতাফের স্ত্রী ও ছেলে জানান, টিএনও ও এসিল্যান্ড থেকে এই ঘর বরাদ্দ এসেছে। সবার শখ থাকে, আমাদেরও আছে। আমরা কষ্ট করে নিজের শখ পূরণ করেছি। সেটা করার মানে এটা না, যে আমরা এ ঘরটা পাবো না। তারা আরও বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তনশীল, আজ খারাপ জায়গায় আছি কাল ভালো থাকবো; এটাই তো স্বাভাবিক।’
শুধু আলতাফ হোসেন নয়, তার মত এজাজুল হক মধু নামে আরেক ব্যক্তি বাগিয়েছেন চারটি ঘর। এজাজুল চারটি ঘর নিলেও সেখানে থাকেন না। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আধা কিলো দূরে তার নিজ বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন তিনি। তবে স্থানীয়রা জানান, চারটি ঘরের মধ্যে একটিতে মাঝে মধ্যে আসেন তিনি। বাকিগুলো তালাবদ্ধ থাকে। এ বিষয়ে এজাজুল বলেন, ‘চারটি ঘরের মধ্যে একটিতে মঝেমধ্যে থাকেন তিনি। বাকি তিনটির মধ্যে একটি তার মেয়ে, ভাগ্নি ও ভাইপোকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ থাকেন না এখানে।’
এদিকে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরও তিনটি ঘর তিনজন পেলেও তারা কেউ সেখানে বসবাস করেন না। জমির দলির ও বাড়ির কাগজপত্র বুঝে নিয়ে তারা অন্য জায়গা বসবাস করেন। স্থানীয়রা জানান, নামে নামে তাদের ঘর তুলে দেয়া হয়েছে। এটা কীভাবে হয়েছে? একজনের ছয়টা, অন্যজনের চারটা ঘর। এটা বলা মুশকিল। এ ছাড়া একটা পরিবার ছয়টি ঘর নিয়ে এসি লাগিয়ে থাকছে। আর আমরা একটা ঘরও পাচ্ছি না।
যশোর জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কোনো ব্যতিক্রম হয়ে থাকে বা বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে কীনা তা দেখে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
২০২১ সালে বরাদ্দ দেয়া দুই শতক জমির ওপর নির্মিত আশ্রায়ণের প্রতিটি ঘরে দুটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও বারান্দা রয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে সরকারের খরচ হয় দুই লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সরেজমিনে যশোরের মনিরামপুরের হরিহরনগর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। তবে জেলা প্রশাসক বলছে, বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে কী না তা খতিয়ে দেখা হবে।
জানা যায়, মনিরামপুরের হরিহরনগর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২২টি ঘর। সাদা রঙের ঘরগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম উত্তর প্রান্তের ৬টি ঘর। দুই বছর আগে গোলাপি রঙের ঘরগুলোর বারান্দা ঘেরা হয়েছে গ্রিল দিয়ে, মেঝে মোড়ানো হয়েছে টাইলসে, তিনটি ঘরে লাগানো হয়েছে দেড় টনের তিনটি এসি। ঘরে রয়েছে মূল্যবান আসবাবপত্র। এমনকি উঠানটিও করা হয়েছে পাকা।
অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এসব ঘর বাগিয়েছেন তিনি। এরপর নিজেদের মত করে সাজিয়েছেন। কথিত ভূমিহীন এ পরিবারের বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে এলাকায় সমালোচনা চললেও আলতাফ হোসেনের দাবি, প্রকৃত ভূমিহীন হিসবেই তারা ঘর পেয়েছেন। স্বচ্ছলতা ফেরায় শখ পূরণ করেছেন।
এ বিষয়ে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘২০২১ সালে ওই জমিতে (৭২ শতক) আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। তাকে উচ্ছেদ করার নির্দেশনা দেন ইউএনও। একপর্যায়ে ইউএনও প্রতিশ্রুতি দেন তার পরিবারের যতগুলো ঘর লাগবে, এই প্রকল্প থেকে দেয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইউএনও আমাকে ছয়টি ঘরই দিয়েছেন। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকছি।’তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত ভূমিহীন হিসবেই তারা ঘর পেয়েছেন; স্বচ্ছলতা ফেরায় শখ পূরণ করেছেন। তার দুই ছেলে ঢাকায় চাকরি করেন। তারাই ঘরগুলো সংস্কার করেছে। ঘরে টাইলস, ফ্রিজ, এসি লাগিয়েছে। এটা তো দোষের কিছু না।’
আলতাফের স্ত্রী ও ছেলে জানান, টিএনও ও এসিল্যান্ড থেকে এই ঘর বরাদ্দ এসেছে। সবার শখ থাকে, আমাদেরও আছে। আমরা কষ্ট করে নিজের শখ পূরণ করেছি। সেটা করার মানে এটা না, যে আমরা এ ঘরটা পাবো না। তারা আরও বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তনশীল, আজ খারাপ জায়গায় আছি কাল ভালো থাকবো; এটাই তো স্বাভাবিক।’
শুধু আলতাফ হোসেন নয়, তার মত এজাজুল হক মধু নামে আরেক ব্যক্তি বাগিয়েছেন চারটি ঘর। এজাজুল চারটি ঘর নিলেও সেখানে থাকেন না। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আধা কিলো দূরে তার নিজ বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন তিনি। তবে স্থানীয়রা জানান, চারটি ঘরের মধ্যে একটিতে মাঝে মধ্যে আসেন তিনি। বাকিগুলো তালাবদ্ধ থাকে। এ বিষয়ে এজাজুল বলেন, ‘চারটি ঘরের মধ্যে একটিতে মঝেমধ্যে থাকেন তিনি। বাকি তিনটির মধ্যে একটি তার মেয়ে, ভাগ্নি ও ভাইপোকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ থাকেন না এখানে।’
এদিকে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরও তিনটি ঘর তিনজন পেলেও তারা কেউ সেখানে বসবাস করেন না। জমির দলির ও বাড়ির কাগজপত্র বুঝে নিয়ে তারা অন্য জায়গা বসবাস করেন। স্থানীয়রা জানান, নামে নামে তাদের ঘর তুলে দেয়া হয়েছে। এটা কীভাবে হয়েছে? একজনের ছয়টা, অন্যজনের চারটা ঘর। এটা বলা মুশকিল। এ ছাড়া একটা পরিবার ছয়টি ঘর নিয়ে এসি লাগিয়ে থাকছে। আর আমরা একটা ঘরও পাচ্ছি না।
যশোর জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কোনো ব্যতিক্রম হয়ে থাকে বা বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে কীনা তা দেখে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
২০২১ সালে বরাদ্দ দেয়া দুই শতক জমির ওপর নির্মিত আশ্রায়ণের প্রতিটি ঘরে দুটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও বারান্দা রয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে সরকারের খরচ হয় দুই লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে