ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) বনশ্রী ডিভিশনের সিনিয়র এ্যাসিস্টেন্ট একাউন্টেন্ট (এসএসএ) মো. জসিম উদ্দিন অবৈধভাবে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। বনে গেছেন শত কোটি টাকার মালিক। নামে-বেনামে আছে কোটি টাকার সম্পত্তি। মালিক হয়েছেন বনশ্রী বিল্ডার্স নামে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিরও। নিজস্ব বাড়ি-গাড়ি তো আছেই। বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা জসিম এখন বিপুল বিত্তের মালিক।
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ডিপিডিসির শ্রমিক কর্মচারী লীগের রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে তিনি এ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ঘুষ, টেন্ডার বাণিজ্য, বিদ্যুৎ চুরি, বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন, অবৈধ সংযোগ স্থাপন, অবৈধ ব্যবসা- এমন কিছু নেই যা তিনি করেননি। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যুতের গ্রাহকদের হয়রানি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ডিপিডিসির অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনি মানুষই মনে করতেন না। তাঁর অনৈতিক প্রস্তাবে কেউ রাজি না হলেই করেছেন খারাপ আচরণ। 'রাজাকার' তকমার ভয় দেখিয়ে সৎ কর্মচারীদের দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নেয়া ছিলো ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতার নিত্যদিনের খেলা। কেউ তার পথের বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে দিতেন হত্যার হুমকিও। এভাবেই আওয়ামী লীগ আমলে ডিপিডিসি দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। ডিপিডিসির বিভিন্ন ডিভিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি বাংলাস্কুপ-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ডিপিডিসির জসিম উদ্দিনের এই অপকর্মের চিত্র।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা যায়, গত ৯ জুলাই ‘বিদ্যুতের লাইনম্যান মো. জসিম উদ্দিন এখন শত কোটি টাকার মালিক’ শিরোনামে একটি অভিযোগপত্র জমা পড়ে দুদকে। অভিযোগটি করেন রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা মো. আশরাফ আলী। দুদক চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগটি করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বনশ্রী ডিভিশনের মো. জসিম উদ্দিন (আইডি নং- ২০৬১০) বিদ্যুতের লাইনম্যান এখন শত কোটি টাকার মালিক। বর্তমানে তিনি একটা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক। এই কর্মচারী প্রভাব খাটিয়ে গ্রাহকদের জিম্মি করে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের উচ্চচাপ (বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণ) সাবস্টেশন নির্মাণের ঠিকাদারি করা, নিম্নচাপ (এলটি) বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংযোগের ঠিকাদারি কাজ করে অবৈধভাবে বহু সম্পদের মালিক বনে গেছেন। কোন গ্রাহক তাকে বিদ্যুৎ সংযোগের ঠিকাদারি কাজ না দিলে তাকে সংযোগ দেয়া হয় না।
ইতিমধ্যেই এই কর্মকর্তা রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় নাম লিখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন। তার কোম্পানির নাম বনশ্রী বিল্ডার্স লিমিটেড। বনানীর ১৭ নং রোডের ডি ব্লকের ইউনাইটেড বেনিসন ভবনে কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয়। আর এই কোম্পানির কর্পোরেট অফিস রামপুরা বনশ্রীর হক টাওয়ারে। এই কোম্পানির ভিজিটিং কার্ডে দেখা যায় মো. জসিম উদ্দিন শেখ ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে রয়েছেন।
বর্তমানে 'সিক্স ড্রিমস' নামে তার প্রজেক্ট চলছে উত্তর নন্দিপাড়ায় রসুলবাগ গ্রীণ সিটি, পূর্ণ খিলগাঁওয়ের বহুতল ভবনের পাশের ২০ কাঠার প্লটে। সেখানে এখনও কোন সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়নি। ২০ কাঠার এই প্লটটির দাগ নং- ১০২৯, আরএস দাগ নং- ১৬৬২, হাল সিটি জরিপ দাগ নং- ১৪১৩৭, মৌজা- নন্দিপাড়া, খিলগাঁও, ঢাকা। এর পাশেই আরেকটি ভবন নির্মাণ করছে এই জসিম। ইতিমধ্যে ৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে ।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সরকারের আধা-স্বায়িত্বশাসিত একটি বিদ্যুৎ কোম্পানিতে ছোট একটা পদে চাকরি করে রাতারাতি একটা লোক কীভাবে এত অর্থবিত্তের মালিক বনে যায়? যার চাকরি বয়সের যোগদানের সময় ২০০৮ সালে লাইনম্যান ম্যাট পদে। তার ঢাকার বাসার ঠিকানা হলো ৪৭৬/১, পূর্ব গোড়ান, থানা- খিলগাঁও, ঢাকা। পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে তিনি পদোন্নতিও বাগিয়ে নেন। হয়ে যান সিনিয়র এ্যাসিস্টেন্ট একাউন্টেন্ট (এসএএ)। বর্তমানে তিনি বনশ্রী ডিভিশনে কর্মরত রয়েছেন। অভিযোগপত্রে এই দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এছাড়াও খিওগাঁও থানাধীন সিপাহীবাগ টেম্পুস্ট্যান্ড সংলগ্ন দক্ষিণপাশে ৮ কাঠা জমির উপর একটি ১০তলা ভবনের ৮০ শতাংশ কাজ শেষে হয়েছে। এই ভবনে জসিমের ৪০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জসিম উদ্দিন রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও থানা পূর্ব গোড়ানের একটি বাড়িতে থাকেন। এছাড়াও এই জসিমের 'গ্রীণ সোর্স সোলার কোম্পানি' নামে একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। জমিস উদ্দিন রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ছিলেন। রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে তিনি এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড করেন। বর্তমানেও তিনি ডিপিডিসির শ্রমিক কর্মচারী লীগের (৪৫৭৭) কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক।
ডিপিডিসি সূত্রে জানা যায়, মো. জসিম উদ্দিন ২০০৮ সালের ১ জুলাই বাসাবো ডিভিশনে লাইনম্যান ম্যাট পদে কর্মজীবন শুরু করেন। বাসাবো ডিভিশনেই টানা ১০ বছর কাজ করার পর ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি পেয়ে কাস্টমার সার্ভিস এ্যাটেনডেন্ট হিসেবে বাসাবো ডিভিশনেই কাজ করেন। তিনি ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত বাসাবোতেই কর্মরত ছিলেন। অর্থাৎ বাসাবো ডিভিশনেই তিনি টানা ১২ বছর কর্মরত ছিলেন।
এরপর ২০২০ সালের ১২ আক্টোবর তাঁকে কাস্টমার সার্ভিস এ্যাটেনডেন্ট হিসেবে মাতুয়াইল ডিভিশনে বদলি করা হয়। মাতুয়াইল ডিভিশনে কর্মরত অবস্থায় ২০২২ সালের ২৬ মে তার পদ পরিবর্তন হয়ে সিনিয়র এ্যাসিস্টেন্ট একাউন্টেন্ট (এসএএ) পদে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জসিম উদ্দিনকে বনশ্রী ডিভিশনে বদলি করা হয়।
মাতুয়াইল ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, মাতুয়াইল ডিভিশনে থাকা অবস্থায় জসিমের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠে। অভিযোগে জানা যায়, গ্রাহকের বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণে তিনি ঠিকাদারি কাজ নিয়ে ডিপিডিসির ডিপোজিট (জমা দেয়া সাপেক্ষে কাজ) নিজের কাছে রেখে উন্নয়নের কাজ দেখিয়ে টাকা নিজের পকেটে ঢুকাতো। এতে করে ডিপিডিসি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায়। ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে 'প্রাইজপোস্টিং' দিয়ে বনশ্রী ডিভিশনে বদলি করে।
বাসাবো ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, বাসাবো ডিভিশনে কর্মজীবন শুরু করে টানা ১২ বছর একই জায়গায় কাজ করেন জসিমউদ্দিন। সেই সুবাদে তিনি বিভিন্ন বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংযোগের কন্ট্রাক্ট নিয়ে ১২ বছরেই প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার মালিক বনে যান। গ্রাহকদের উচ্চচাপ বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণ, গ্রাহকের আঙ্গিনায় সোলার বসানোর ঠিকাদারি নিয়ে তিনি বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। তৎকালীন সময়ে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে ছিল সাবস্টেশন ও সোলার কোম্পানির অফিস। মূলত ওই অফিসে বসেই তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন ডিপিডিসির বিভিন্ন ডিভিশনের বিদ্যুৎ সংযোগের ঠিকাদারি কাজ। বিভিন্ন ডিভিশনের প্রকৌশলীদের উৎকোচ দিয়ে গ্রাহকদের উচ্চচাপ সংযোগকে পাশ কাটিয়ে নিম্নচাপ সংযোগ করে বিপুল টাকার মালিক হন। মূলত জসিমের উত্থান বাসাবো ডিভিশন থেকেই। সেখানেই তিনি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে বাসাবো ডিভিশনের বেশ কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এখানে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকায় তিনি এখানে দুর্নীতির একটি একচ্ছত্র সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। বিশেষ করে খিলগাঁও, মুগদা,বনশ্রী,মানিক নগর, মাতুয়াইল ও আদাবর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। উচ্চচাপ সংযোগকে পাশ কাটিয়ে নিম্নচাপ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সূত্র জানায়, এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেন ডিপিডিসির শীর্ষস্থানীয় কয়েক কর্মকর্তা।
অপর একটি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এখন তিনি প্রথম শ্রেণীর রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় স্থান করে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি বেশ কয়েকটি বড় প্রজেক্টও শেষ করেছেন। বর্তমানে মাদারটেক নন্দিপাড়া এলাকায় দুইটি বড় প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রজেক্ট ২০ কাঠার।
এ ব্যাপারে জসিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
লাইনম্যান থেকে কীভাবে শত কোটি টাকার মালিক হলেন জসিম এ বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এডমিন অ্যান্ড এইচ আর) সোনা মনি চাকমা বাংলা স্কুপকে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। সরকার দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স। আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দুনীতি ও গ্রাহক হয়রানির বিরুদ্ধে খুব সোচ্চার। কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত হলে, সে যত প্রভাবশালীই হোক- তিনি কোন ছাড় দেন না। এই ধরণের অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
বাংলা স্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন/
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ডিপিডিসির শ্রমিক কর্মচারী লীগের রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে তিনি এ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ঘুষ, টেন্ডার বাণিজ্য, বিদ্যুৎ চুরি, বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন, অবৈধ সংযোগ স্থাপন, অবৈধ ব্যবসা- এমন কিছু নেই যা তিনি করেননি। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যুতের গ্রাহকদের হয়রানি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ডিপিডিসির অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনি মানুষই মনে করতেন না। তাঁর অনৈতিক প্রস্তাবে কেউ রাজি না হলেই করেছেন খারাপ আচরণ। 'রাজাকার' তকমার ভয় দেখিয়ে সৎ কর্মচারীদের দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নেয়া ছিলো ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতার নিত্যদিনের খেলা। কেউ তার পথের বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে দিতেন হত্যার হুমকিও। এভাবেই আওয়ামী লীগ আমলে ডিপিডিসি দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। ডিপিডিসির বিভিন্ন ডিভিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি বাংলাস্কুপ-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ডিপিডিসির জসিম উদ্দিনের এই অপকর্মের চিত্র।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা যায়, গত ৯ জুলাই ‘বিদ্যুতের লাইনম্যান মো. জসিম উদ্দিন এখন শত কোটি টাকার মালিক’ শিরোনামে একটি অভিযোগপত্র জমা পড়ে দুদকে। অভিযোগটি করেন রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা মো. আশরাফ আলী। দুদক চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগটি করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বনশ্রী ডিভিশনের মো. জসিম উদ্দিন (আইডি নং- ২০৬১০) বিদ্যুতের লাইনম্যান এখন শত কোটি টাকার মালিক। বর্তমানে তিনি একটা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক। এই কর্মচারী প্রভাব খাটিয়ে গ্রাহকদের জিম্মি করে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের উচ্চচাপ (বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণ) সাবস্টেশন নির্মাণের ঠিকাদারি করা, নিম্নচাপ (এলটি) বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংযোগের ঠিকাদারি কাজ করে অবৈধভাবে বহু সম্পদের মালিক বনে গেছেন। কোন গ্রাহক তাকে বিদ্যুৎ সংযোগের ঠিকাদারি কাজ না দিলে তাকে সংযোগ দেয়া হয় না।
ইতিমধ্যেই এই কর্মকর্তা রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় নাম লিখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন। তার কোম্পানির নাম বনশ্রী বিল্ডার্স লিমিটেড। বনানীর ১৭ নং রোডের ডি ব্লকের ইউনাইটেড বেনিসন ভবনে কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয়। আর এই কোম্পানির কর্পোরেট অফিস রামপুরা বনশ্রীর হক টাওয়ারে। এই কোম্পানির ভিজিটিং কার্ডে দেখা যায় মো. জসিম উদ্দিন শেখ ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে রয়েছেন।
বর্তমানে 'সিক্স ড্রিমস' নামে তার প্রজেক্ট চলছে উত্তর নন্দিপাড়ায় রসুলবাগ গ্রীণ সিটি, পূর্ণ খিলগাঁওয়ের বহুতল ভবনের পাশের ২০ কাঠার প্লটে। সেখানে এখনও কোন সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়নি। ২০ কাঠার এই প্লটটির দাগ নং- ১০২৯, আরএস দাগ নং- ১৬৬২, হাল সিটি জরিপ দাগ নং- ১৪১৩৭, মৌজা- নন্দিপাড়া, খিলগাঁও, ঢাকা। এর পাশেই আরেকটি ভবন নির্মাণ করছে এই জসিম। ইতিমধ্যে ৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে ।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সরকারের আধা-স্বায়িত্বশাসিত একটি বিদ্যুৎ কোম্পানিতে ছোট একটা পদে চাকরি করে রাতারাতি একটা লোক কীভাবে এত অর্থবিত্তের মালিক বনে যায়? যার চাকরি বয়সের যোগদানের সময় ২০০৮ সালে লাইনম্যান ম্যাট পদে। তার ঢাকার বাসার ঠিকানা হলো ৪৭৬/১, পূর্ব গোড়ান, থানা- খিলগাঁও, ঢাকা। পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে তিনি পদোন্নতিও বাগিয়ে নেন। হয়ে যান সিনিয়র এ্যাসিস্টেন্ট একাউন্টেন্ট (এসএএ)। বর্তমানে তিনি বনশ্রী ডিভিশনে কর্মরত রয়েছেন। অভিযোগপত্রে এই দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এছাড়াও খিওগাঁও থানাধীন সিপাহীবাগ টেম্পুস্ট্যান্ড সংলগ্ন দক্ষিণপাশে ৮ কাঠা জমির উপর একটি ১০তলা ভবনের ৮০ শতাংশ কাজ শেষে হয়েছে। এই ভবনে জসিমের ৪০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জসিম উদ্দিন রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও থানা পূর্ব গোড়ানের একটি বাড়িতে থাকেন। এছাড়াও এই জসিমের 'গ্রীণ সোর্স সোলার কোম্পানি' নামে একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। জমিস উদ্দিন রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ছিলেন। রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে তিনি এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড করেন। বর্তমানেও তিনি ডিপিডিসির শ্রমিক কর্মচারী লীগের (৪৫৭৭) কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক।
ডিপিডিসি সূত্রে জানা যায়, মো. জসিম উদ্দিন ২০০৮ সালের ১ জুলাই বাসাবো ডিভিশনে লাইনম্যান ম্যাট পদে কর্মজীবন শুরু করেন। বাসাবো ডিভিশনেই টানা ১০ বছর কাজ করার পর ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি পেয়ে কাস্টমার সার্ভিস এ্যাটেনডেন্ট হিসেবে বাসাবো ডিভিশনেই কাজ করেন। তিনি ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত বাসাবোতেই কর্মরত ছিলেন। অর্থাৎ বাসাবো ডিভিশনেই তিনি টানা ১২ বছর কর্মরত ছিলেন।
এরপর ২০২০ সালের ১২ আক্টোবর তাঁকে কাস্টমার সার্ভিস এ্যাটেনডেন্ট হিসেবে মাতুয়াইল ডিভিশনে বদলি করা হয়। মাতুয়াইল ডিভিশনে কর্মরত অবস্থায় ২০২২ সালের ২৬ মে তার পদ পরিবর্তন হয়ে সিনিয়র এ্যাসিস্টেন্ট একাউন্টেন্ট (এসএএ) পদে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জসিম উদ্দিনকে বনশ্রী ডিভিশনে বদলি করা হয়।
মাতুয়াইল ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, মাতুয়াইল ডিভিশনে থাকা অবস্থায় জসিমের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠে। অভিযোগে জানা যায়, গ্রাহকের বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণে তিনি ঠিকাদারি কাজ নিয়ে ডিপিডিসির ডিপোজিট (জমা দেয়া সাপেক্ষে কাজ) নিজের কাছে রেখে উন্নয়নের কাজ দেখিয়ে টাকা নিজের পকেটে ঢুকাতো। এতে করে ডিপিডিসি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায়। ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে 'প্রাইজপোস্টিং' দিয়ে বনশ্রী ডিভিশনে বদলি করে।
বাসাবো ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, বাসাবো ডিভিশনে কর্মজীবন শুরু করে টানা ১২ বছর একই জায়গায় কাজ করেন জসিমউদ্দিন। সেই সুবাদে তিনি বিভিন্ন বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংযোগের কন্ট্রাক্ট নিয়ে ১২ বছরেই প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার মালিক বনে যান। গ্রাহকদের উচ্চচাপ বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণ, গ্রাহকের আঙ্গিনায় সোলার বসানোর ঠিকাদারি নিয়ে তিনি বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। তৎকালীন সময়ে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে ছিল সাবস্টেশন ও সোলার কোম্পানির অফিস। মূলত ওই অফিসে বসেই তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন ডিপিডিসির বিভিন্ন ডিভিশনের বিদ্যুৎ সংযোগের ঠিকাদারি কাজ। বিভিন্ন ডিভিশনের প্রকৌশলীদের উৎকোচ দিয়ে গ্রাহকদের উচ্চচাপ সংযোগকে পাশ কাটিয়ে নিম্নচাপ সংযোগ করে বিপুল টাকার মালিক হন। মূলত জসিমের উত্থান বাসাবো ডিভিশন থেকেই। সেখানেই তিনি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে বাসাবো ডিভিশনের বেশ কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এখানে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকায় তিনি এখানে দুর্নীতির একটি একচ্ছত্র সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। বিশেষ করে খিলগাঁও, মুগদা,বনশ্রী,মানিক নগর, মাতুয়াইল ও আদাবর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। উচ্চচাপ সংযোগকে পাশ কাটিয়ে নিম্নচাপ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সূত্র জানায়, এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেন ডিপিডিসির শীর্ষস্থানীয় কয়েক কর্মকর্তা।
অপর একটি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এখন তিনি প্রথম শ্রেণীর রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় স্থান করে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি বেশ কয়েকটি বড় প্রজেক্টও শেষ করেছেন। বর্তমানে মাদারটেক নন্দিপাড়া এলাকায় দুইটি বড় প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রজেক্ট ২০ কাঠার।
এ ব্যাপারে জসিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
লাইনম্যান থেকে কীভাবে শত কোটি টাকার মালিক হলেন জসিম এ বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এডমিন অ্যান্ড এইচ আর) সোনা মনি চাকমা বাংলা স্কুপকে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। সরকার দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স। আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দুনীতি ও গ্রাহক হয়রানির বিরুদ্ধে খুব সোচ্চার। কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত হলে, সে যত প্রভাবশালীই হোক- তিনি কোন ছাড় দেন না। এই ধরণের অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
বাংলা স্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন/