দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও গণপরিবহন চলছে আগের মতোই। রাজধানীতে সেই পুরোনো কায়দায় বাস-মিনিবাসের প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতা চলছেই। যাত্রীদের জীবন বিপন্ন করে সড়কের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের সামনেই গণপরিবহনের চালকেরা এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অসুস্থ এই প্রতিযোগিতার কারণেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রী, পথচারী এবং সাধারণ মানুষ। রাজপথে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলও বড় হচ্ছে। সোমবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, অধিক যাত্রী ও মুনাফার লোভে কে কার আগে যাবেন, এ নিয়ে চালকদের এই দৌরাত্ম্য বছরের পর বছর চলে আসছে। তাদের অভিযোগ, চালকদের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা থামানোর কেউ নেই। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও সেই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নানা উদ্যোগের পরও কোনো পরিবর্তন আসেনি। সড়কের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের সামনেই তারা এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই প্রতিযোগিতার কারণেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রী, পথচারী এবং সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে সকাল সাড়ে দশটায় মতিঝিল শাপলা চত্বরে সোনালী ব্যাংকের সামনে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরগামী এটিসিএল, এফটিসিএল, বাহনসহ বিভিন্ন কোম্পানির বড় বাসগুলো একটার পেছনে আরেকটা লেগে আছে। সামনের বাস না সরলে পেছনের বাসটা সজোরে ধাক্কা মারছে। যাত্রাবাড়ী থেকে আসা ৮ নম্বর রুটের বাসসহ অন্যান্য রুটের মিনিবাসগুলো কোনটা একটার পেছনে, কিংবা কোনটা আরেকটার সামনে পথরোধ করে দাঁড়িয়ে আছে। একই অবস্থা গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ সড়কে। শিকড়, বোরাক, আনন্দ কোম্পানির বাসগুলো চলাচল করে কোনও শৃঙ্খলা না মেনেই। এ কারণে গুলিস্তান গোলচত্বরে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশের সামনেই প্রতিটি স্ট্যান্ডে বাসচালকরা বিশৃঙ্খলভাবে গাড়ি রাখেন যাত্রী তোলেন। সিটগুলো যাত্রীতে পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কেউ স্ট্যান্ড ছাড়তে চান না। যাত্রীদের চাপাচাপিতে বাসটি যখন অপর স্ট্যান্ডের দিকে ছুটে যায়, তখন এর গতি থাকে বেপরোয়া। এ ক্ষেত্রেও কে কার আগে যাবে, তা নিয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। তখন সড়ক দিয়ে পারাপার হতে থাকা পথচারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়ে। ফলে প্রায় সময়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে নিরীহ পথচারীরা। বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অনেক সময় খোদ বাসটাই উল্টে গিয়ে যাত্রীদের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নিয়মিত যারা বাসে চলাচল করেন এমন কজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেছেন, চালকদের এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা থামানোর কেউ নেই। আর এ কারণেই রাজপথে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলও বড় হচ্ছে। তারা বলছেন, রেষারেষি করে বাস চালাতে নিষেধ করলেও চালকরা শুনে না।
নগরীর বাড্ডা, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ক্লাসিক ভিক্টর, রাইদা, আকাশ, তুরাগ, রইস, রাজধানী, স্মার্ট উইনার, অছিম ও প্রচেষ্টা পরিবহন ফাঁকা সড়কে যাত্রী তুলতে রেষারেষি করে বাস চালাচ্ছে। সামনের বাস না সরলে পেছনের বাসটা সজোরে ধাক্কা মারছে।
পর্যবেক্ষণে আরও দেখা গেছে, যেসব বাস এ ধরনের প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে সেগুলো কোম্পানি বহির্ভূত। একই রুটে চলছে একাধিক মালিকের বাস। এ ছাড়া কোম্পানির নামেও বিভিন্ন মালিকের বাস অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামে প্রতিদিন।
তবে বাসচালক ও মালিক, উভয়পক্ষই একটি বিষয়ে একমত- ড্রাইভারদের মাসিক বেতন নির্ধারণ করে দেয়া হলে বন্ধ হবে লোকাল বাসে যাত্রী তোলার অসুস্থ প্রতিযোগিতা। দূরপাল্লার গাড়িতে যাত্রী নিতে পাল্লাপাল্লি না থাকলেও রাজধানীর ভিতরের সড়কগুলোতে এটা প্রকট। কোনো নির্ধারিত মাসিক বেতন নেই, বাস মালিক আর চালকদের মধ্যে চলছে দৈনিক হারে টাকার ভাগ বাটোয়ারা।
মনির, কবির এবং হাবিব প্রত্যেকে কাজ করেন গণপরিবহনে। শুরুতে তারা দূরপাল্লার বাস কোম্পানিতে কাজ করলেও কেউই সেখানে স্বস্তি পাননি। একটু ভাল থাকার আশায় কাজ শুরু করলেন লোকাস বাস কোম্পানিতে। কিন্তু এখানে এসে ঠিক কতটা ভালো আছেন তাদের দেখলেই তা বোঝা যাচ্ছে। এখন তারা যে রুটে তারা গাড়ি চালান, সেখানে যাত্রী নেয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা তীব্রভাবে চলছে। এমন অবস্থায় কম বিপদে নেই সড়কে থাকা পথচারী আর যাত্রীরা। বিভিন্ন চাপে ড্রাইভার-হেল্পারদের নাকাল হওয়ার দশা হলেও মালিকপক্ষরা উল্টো তাদের ওপরই দায় চাপান। তবে মাসিক বেতন বেধে দেয়ার পক্ষে বাস মালিক আর চালকরা। এরপরও কেনো এটা কার্যকর হচ্ছে না তা কেউ জানে না।
বিদ্যমান সঙ্কট নিরসনে সব পক্ষের সমন্বয়ের উপর জোর দিয়েছে বিআরটিএ। সংস্থাটির ঢাকা বিভাগের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ড্রাইভারদের তাড়াহুড়ো থাকে যাত্রী তুলে ইনকাম করার জন্য। আমি পরিবহন মালিকদের সাথে ড্রাইভারদের মাসিক বেতনভুক্তির ব্যাপারে বসবো।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাসের এক কনডাক্টর জানান, ড্রাইভার, হেলপার ও আমি—এই তিনজন মিলে বাসটির মালিকের কাছ থেকে লিজ নিয়েছি। সরকার পরিবর্তনের আগে সব মিলিয়ে দৈনিক ২ হাজার টাকা আমাদের বিভিন্ন খাতে দিতে হতো। ভেবেছিলা ইউনুস সরকার আসায় এর অবসান হবে। কিন্তু তা হলো না। এখনো বিভিন্ন ভাবে আমাদের খরচ বেড়ে গেছ। আর মালিককে দেওয়ার পর যা থাকে, সেটা আমরা তিন জনে ভাগ করে নেই। কোন কোন দিন খরচ বাদ দিয়ে আমাদের সংসারের টাকা উঠে না। তাই যাত্রী তুলতে প্রতিযোগিতা না করলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। আমাদের বেতন ভাতা নির্ধারিত হলে এমনটা হতো না বলেও তিনি জানান।
পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির এক নেতা বলেন, ঢাকায় এখন দক্ষ চালকের খুবই অভাব। সবসময় যানজট থাকে বলে দক্ষ চালকরা দূরপাল্লায় চলে যান। তাই আমরা ভালো মানের চালক তৈরির চেষ্টা করছি। তখন আর এই বিশৃঙ্খলা থাকবে না।
বাংলা স্কুপ/ নূরুল ইসলাম নিরব/ এসকে
সংশ্লিষ্টদের মতে, অধিক যাত্রী ও মুনাফার লোভে কে কার আগে যাবেন, এ নিয়ে চালকদের এই দৌরাত্ম্য বছরের পর বছর চলে আসছে। তাদের অভিযোগ, চালকদের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা থামানোর কেউ নেই। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও সেই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নানা উদ্যোগের পরও কোনো পরিবর্তন আসেনি। সড়কের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের সামনেই তারা এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই প্রতিযোগিতার কারণেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রী, পথচারী এবং সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে সকাল সাড়ে দশটায় মতিঝিল শাপলা চত্বরে সোনালী ব্যাংকের সামনে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরগামী এটিসিএল, এফটিসিএল, বাহনসহ বিভিন্ন কোম্পানির বড় বাসগুলো একটার পেছনে আরেকটা লেগে আছে। সামনের বাস না সরলে পেছনের বাসটা সজোরে ধাক্কা মারছে। যাত্রাবাড়ী থেকে আসা ৮ নম্বর রুটের বাসসহ অন্যান্য রুটের মিনিবাসগুলো কোনটা একটার পেছনে, কিংবা কোনটা আরেকটার সামনে পথরোধ করে দাঁড়িয়ে আছে। একই অবস্থা গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ সড়কে। শিকড়, বোরাক, আনন্দ কোম্পানির বাসগুলো চলাচল করে কোনও শৃঙ্খলা না মেনেই। এ কারণে গুলিস্তান গোলচত্বরে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশের সামনেই প্রতিটি স্ট্যান্ডে বাসচালকরা বিশৃঙ্খলভাবে গাড়ি রাখেন যাত্রী তোলেন। সিটগুলো যাত্রীতে পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কেউ স্ট্যান্ড ছাড়তে চান না। যাত্রীদের চাপাচাপিতে বাসটি যখন অপর স্ট্যান্ডের দিকে ছুটে যায়, তখন এর গতি থাকে বেপরোয়া। এ ক্ষেত্রেও কে কার আগে যাবে, তা নিয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। তখন সড়ক দিয়ে পারাপার হতে থাকা পথচারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়ে। ফলে প্রায় সময়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে নিরীহ পথচারীরা। বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অনেক সময় খোদ বাসটাই উল্টে গিয়ে যাত্রীদের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নিয়মিত যারা বাসে চলাচল করেন এমন কজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেছেন, চালকদের এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা থামানোর কেউ নেই। আর এ কারণেই রাজপথে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলও বড় হচ্ছে। তারা বলছেন, রেষারেষি করে বাস চালাতে নিষেধ করলেও চালকরা শুনে না।
নগরীর বাড্ডা, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ক্লাসিক ভিক্টর, রাইদা, আকাশ, তুরাগ, রইস, রাজধানী, স্মার্ট উইনার, অছিম ও প্রচেষ্টা পরিবহন ফাঁকা সড়কে যাত্রী তুলতে রেষারেষি করে বাস চালাচ্ছে। সামনের বাস না সরলে পেছনের বাসটা সজোরে ধাক্কা মারছে।
পর্যবেক্ষণে আরও দেখা গেছে, যেসব বাস এ ধরনের প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে সেগুলো কোম্পানি বহির্ভূত। একই রুটে চলছে একাধিক মালিকের বাস। এ ছাড়া কোম্পানির নামেও বিভিন্ন মালিকের বাস অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামে প্রতিদিন।
তবে বাসচালক ও মালিক, উভয়পক্ষই একটি বিষয়ে একমত- ড্রাইভারদের মাসিক বেতন নির্ধারণ করে দেয়া হলে বন্ধ হবে লোকাল বাসে যাত্রী তোলার অসুস্থ প্রতিযোগিতা। দূরপাল্লার গাড়িতে যাত্রী নিতে পাল্লাপাল্লি না থাকলেও রাজধানীর ভিতরের সড়কগুলোতে এটা প্রকট। কোনো নির্ধারিত মাসিক বেতন নেই, বাস মালিক আর চালকদের মধ্যে চলছে দৈনিক হারে টাকার ভাগ বাটোয়ারা।
মনির, কবির এবং হাবিব প্রত্যেকে কাজ করেন গণপরিবহনে। শুরুতে তারা দূরপাল্লার বাস কোম্পানিতে কাজ করলেও কেউই সেখানে স্বস্তি পাননি। একটু ভাল থাকার আশায় কাজ শুরু করলেন লোকাস বাস কোম্পানিতে। কিন্তু এখানে এসে ঠিক কতটা ভালো আছেন তাদের দেখলেই তা বোঝা যাচ্ছে। এখন তারা যে রুটে তারা গাড়ি চালান, সেখানে যাত্রী নেয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা তীব্রভাবে চলছে। এমন অবস্থায় কম বিপদে নেই সড়কে থাকা পথচারী আর যাত্রীরা। বিভিন্ন চাপে ড্রাইভার-হেল্পারদের নাকাল হওয়ার দশা হলেও মালিকপক্ষরা উল্টো তাদের ওপরই দায় চাপান। তবে মাসিক বেতন বেধে দেয়ার পক্ষে বাস মালিক আর চালকরা। এরপরও কেনো এটা কার্যকর হচ্ছে না তা কেউ জানে না।
বিদ্যমান সঙ্কট নিরসনে সব পক্ষের সমন্বয়ের উপর জোর দিয়েছে বিআরটিএ। সংস্থাটির ঢাকা বিভাগের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ড্রাইভারদের তাড়াহুড়ো থাকে যাত্রী তুলে ইনকাম করার জন্য। আমি পরিবহন মালিকদের সাথে ড্রাইভারদের মাসিক বেতনভুক্তির ব্যাপারে বসবো।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাসের এক কনডাক্টর জানান, ড্রাইভার, হেলপার ও আমি—এই তিনজন মিলে বাসটির মালিকের কাছ থেকে লিজ নিয়েছি। সরকার পরিবর্তনের আগে সব মিলিয়ে দৈনিক ২ হাজার টাকা আমাদের বিভিন্ন খাতে দিতে হতো। ভেবেছিলা ইউনুস সরকার আসায় এর অবসান হবে। কিন্তু তা হলো না। এখনো বিভিন্ন ভাবে আমাদের খরচ বেড়ে গেছ। আর মালিককে দেওয়ার পর যা থাকে, সেটা আমরা তিন জনে ভাগ করে নেই। কোন কোন দিন খরচ বাদ দিয়ে আমাদের সংসারের টাকা উঠে না। তাই যাত্রী তুলতে প্রতিযোগিতা না করলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। আমাদের বেতন ভাতা নির্ধারিত হলে এমনটা হতো না বলেও তিনি জানান।
পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির এক নেতা বলেন, ঢাকায় এখন দক্ষ চালকের খুবই অভাব। সবসময় যানজট থাকে বলে দক্ষ চালকরা দূরপাল্লায় চলে যান। তাই আমরা ভালো মানের চালক তৈরির চেষ্টা করছি। তখন আর এই বিশৃঙ্খলা থাকবে না।
বাংলা স্কুপ/ নূরুল ইসলাম নিরব/ এসকে