নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের দিকে নজর এখন সরকারের। সারা দেশের দৃষ্টি এখন তাই ইসির দিকে। কাদের অধীনে হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, কারা আসতে যাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনে- এ নিয়ে সবার আগ্রহ। ইসি গঠনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, পেশাজীবী সংগঠন থেকে পাঁচ শতাধিক বিশিষ্টজনের নামের প্রস্তাব পেয়েছে সার্চ কমিটি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে এ নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। ছোট-বড় প্রায় সব দলই নামের প্রস্তাব দিয়েছে। একাধিক দলের সূত্র জানায়, নামের তালিকায় কিছু কিছু দল সরকারি কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, শিক্ষক, সাহিত্যিক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের নাম প্রস্তাব করেছে। সার্চ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে এসব নাম জমা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সার্চ কমিটির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য বিএনপি দুজন সাবেক সচিবের নাম প্রস্তাব করেছে। তাদের মধ্যে এ এম এম নাসির উদ্দিন সাবেক জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে গেছেন। এছাড়াও প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে প্রস্তাবনা এসেছে বর্তমান সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার ও সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম শহিদ খানের নাম। অন্যদিকে, কমিশনার হিসেবে ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন, সাবেক ইসি সচিব জকরিয়া ও সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্টার ইকতিদার আহমেদের নাম এসেছে। এছাড়াও তালিকায় রয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও প্রফেসর রুহুল আমিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম হাসান তালুকদার এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরীর নাম। এছাড়া সাবেক যুগ্মসচিব, তাহমিদা আহমেদ, ড. এ ওয়াই এম একরামুল হক ও মুনির চৌধুরী নামও প্রস্তাব করেছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
এদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন কমিশনার পদের জন্য আটজনের নাম প্রস্তাব করেছে জামায়াতে ইসলামী। আর বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট ও এলডিপি পৃথকভাবে নাম প্রস্তাব করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। পাঁচটি পদের জন্য পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নামের তালিকা জমা দিয়েছে। নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপকসহ মোট ছয়জনের নাম প্রস্তাব করেছে। দলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুহুল আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুমের নাম প্রস্তাব করেছে বলে সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি ছাড়াও, যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী কয়েকটি দল ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য সাবেক সচিব শফিকুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করেছে। বিএনপিসহ ১৭টি দল ও জোট তাদের নিজ নিজ দল ও জোটের নামের প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত অনুসন্ধান কমিটি ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবারের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে নাম প্রস্তাব করার জন্য রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ, ১৪-দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টির কাছে কোনো নাম চায়নি অনুসন্ধান কমিটি।
জানা গেছে, ছয় দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চের প্রতিটি দল পৃথকভাবে তাদের প্রস্তাবিত নামগুলো শেষ দিনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দিয়েছে। তবে এই ছয় দলের প্রস্তাবিত নামের তালিকায় সাবেক সচিব শফিকুল ইসলাম ও মহিবুল হকের নাম ‘কমন’ রয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খানের নামও প্রস্তাব করেছে ।
অন্যদিকে, চারজন নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য বিএনপি আটজনের নাম প্রস্তাব করেছে। প্রতিটি পদের জন্য দুটি করে নাম দিয়েছে বলে জানা গেছে। আর যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২-দলীয় জোট প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচটি পদের জন্য পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি) গত বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আবদুর রশিদের সঙ্গে দেখা করে তাদের দলের প্রস্তাবিত নামের এই তালিকা দেন।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসের মাথায় ২০২৪ এর বিতর্কিত নির্বাচনের জন্য পদত্যাগ করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকে প্রায় দুই মাস ধরে কোনো নির্বাচন কমিশনার ছাড়াই চলছে ইসি সচিবালয়। এর ধারাবাহিকতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছিল সার্চ কমিটির কাছে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নাম প্রস্তাবের শেষ সময়।
এবার দু’একটি ছাড়া বেশিরভাগ দলই মেইলে তাদের প্রস্তাবিত নামগুলো জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপি পাঁচটি, এবি পার্টি পাঁচটি ও বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য ১০টি, জেএসডি চারটি ও গণ অধিকার পরিষদ ছয়টি নাম প্রস্তাব করেছে। গত ৩১ অক্টোর সার্চ কমিটি গঠন করে বলা হয়েছে, ১৫ দিনের কার্যদিবসের মধ্যে বাছাই করা নামের তালিকা জমা দিতে হবে রাষ্ট্রপতির কাছে।
উল্লেখ্য, গত নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় ২০২২ সালেও ছয় শতাধিক নামের প্রস্তাব পেয়েছিল তখনকার সার্চ কমিটি। পরে সংক্ষিপ্ত করে ৩২২ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল মন্ত্রিপরিষদের ওয়েবসাইটে। সেখান থেকে ওই সময় ইসি গঠন করা হয়েছিল।
বাংলা স্কুপ/এএইচ/এসকে