ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন (ডিপিডিসি) কোম্পানির কাকরাইল ডিভিশনের একটি চক্র গ্রাহকের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিদ্যুৎচুরির মহোৎসবে মেতে উঠেছে। এতে করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। ঘটনা জানাজানি হলে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। আর এই কমিটি প্রতিবেদন দেয় মূল অভিযুক্তদের বাদ দিয়েই। ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায় মূল হোতারা।
কাকরাইল ডিভিশনের মো. মুসা মুজিব গং নামে এক বিদ্যুৎ গ্রাহক তাঁর বাড়ির আঙ্গিনায় একটি আবাসিক ও একটি বাণিজ্যিক মিটার সংযোগ নিয়ে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকার বিদ্যুৎ চুরি করছেন। আর এই চক্রের সঙ্গে ওই ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ভূইয়ার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযুক্তরা জানিয়েছেন। সূত্রের দাবি, কাকরাইল ডিভিশনের মুন পাওয়ার ইন্জিনিয়ারিং কোম্পানির বাৎসরিক (সিএসএস) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মিটার রিডার আব্বাস, সুপারভাইজার (কর্মাশিয়াল) দিলীপ কুমার ত্রিপুরাসহ বেশ কয়েকজন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত।
জানা যায়, মো. মুসা মুজিব গং নামে কাকরাইল ডিভিশনের এক বিদ্যুৎ গ্রাহক বছরের পর বছর দুইটি মিটারে বিদ্যুৎ চুরি করে আসছিলো। আর তাকে এই কাজে সহায়তা করছিলো মিটার রিডার আব্বাস। জানা যায়, আব্বাস ওই গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে মাসোহারা নিতো। বিনিময়ে গ্রাহকের ব্যবহারকৃত বিদ্যুতের রিডিং বিলে কম দেখাতো।
আরও জানা যায়, ওই বিদ্যুৎ গ্রাহক তার বাড়ির আঙ্গিনায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক দুইটি মিটারের একই নাম্বার দিয়ে ডুপ্লিকেট মিটার ব্যবহার করতো। সম্প্রতি বিদ্যুৎচুরির ঘটনায় কাকরাইল ডিভিশনের একটি কারিগরি দল তাঁর লাইন বিচ্ছিন্ন করলে জরিমানা থেকে বাঁচতে শুরু হয় ঘুষ নিয়ে দেন-দরবার।
জানা যায়, ওই গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার রিডার আব্বাস ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওই গ্রাহক ৩ লাখ টাকা দেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ভুঁইয়ার কাছে মিটার রিডার বিষয়টি ফয়সালা করতে গেলে তিনি নিজেই ৫ লাখ টাকার ঘুষ দাবি করেন। পরবর্তীতে আব্বাসকে ৫ লাখ টাকা দিতে গ্রাহক অস্বীকৃতি জানালে, তাঁকে বড় জরিমানার আওতায় আনা হবে বলে মিটার রিডার হুমকি দেয়। বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় আব্বাস গ্রাহককে ঘুষের তিন লাখ টাকা ফেরত দিয়ে দেন। ইতিমধ্যে ওই ডিভিশনেরই আরেক বিল সুপারভাইজার দিলীপ কুমার ত্রিপুরা গ্রাহককে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি বিষয়টি যথাযথ সমাধান করে দিবেন।
সূত্র জানায়, বিল সুপারভাইজার দিলীপ ওই গ্রাহকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেন। পরবর্তীতে তিনি ওই গ্রাহককে দিয়ে গত ২৪ জুলাই ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) সোনামনি চাকমার কাছে কাকরাইল ডিভিশনের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দাখিল করান।
ওই বাড়ির মালিকের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলী গং এই অভিযোগটি দাখিল করেন।
ঘটনা জুন মাসে হলেও গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে। সূত্র জানায়, সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের এক প্রভাবশালী নির্বাহী পরিচালকের নির্দেশনায় মূল অভিযুক্তদের বাদ দিয়েই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
ওই ডিভিশন সূত্র থেকে জানা যায়,গঠিত তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। কিন্তু অপরাধীরা ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, ওই মিটার রিডার ও বিল সপুারভাইজার এখনও চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছে।
বাংলা স্কুপের তথ্যানুসন্ধানে বিদ্যুৎচুরির বিষয়টি স্পষ্ট হয়। আবাসিক পুরাতন মিটার নং-২৯৮৩১৭, কাস্টমার নং- ১৯২৬৬২২৬, হিসাব নং- কেএ -৭৮৩৬, বিদ্যুৎ বিল পর্যালোচনা করে দেখা যায় ২০২৪ সালের জুন মাসে মিটারটিতে রিডিং ছিলো ২১২০ ইউনিট। ওই মাসেই তখন গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের রিডিং দেখায় ৬৮২২ ইউনিট।
জানা যায়, ওই গ্রাহক ওই মিটার নাম্বার দিয়ে ডুপ্লিকেট একটি মিটার তার আঙ্গিনায় স্থাপন করে, তখন ওই মিটারে রিডিং ছিলো ৮৫০০ ইউনিট। ডিপিডিসির ওই গ্রাহকের কম্পিউটার লেজার অনুযায়ি অক্টোবর ২০১৯ সাল থেকে গড়ে ৩০০ ইউনিটের উপরে বিদ্যুৎ বিল করা হয়নি।
আরও দেখা যায়, ঐ গ্রাহককে বিদ্যুৎ অফিসের লেজার থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত গড় বিল ৩০০ ইউনিট করে করা হয়েছে। অফিস কর্তৃক নতুন মিটারে গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ঐ গ্রাহককে গড় ব্যবহার ১৬৮০ ইউনিট হিসাবে বিল দেওয়া হয়েছে। বর্তমান মিটার (এসএস ১৭১০৭৭০৫) এর গত তিন মাসে গড় ব্যবহার ১৬৮০ ইউনিট করে দেখানো হয়েছে। কিন্তু বিগত সময়ে পুরাতন মিটার (২৯৮৩১৭) এ গড় ব্যবহার ছিলো ৩০০ ইউনিটের কম!
গ্রাহকের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই মিটারে প্রতিমাসে ১৪০০ ইউনিট করে রাজস্ব হারিয়েছে। ওই ১৪০০ ইউনিটে প্রতিমাসে রাজস্ব আসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এতে পাঁচ বছরে ডিপিডিসি রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা।
জানা যায়, ওই বিদ্যুত গ্রাহক ওই মিটারে ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ চুরি করে আসছিলো। এতে করে গ্রাহক ১৮ লাখ টাকার বিদ্যুৎ চুরি করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।
গ্রাহক স্থাপনায় বাণিজ্যিক মিটার নাম্বার-৭৫৪৫৯৫, কাস্টমার নাম্বার-১৯২১১১৩১, হিসাব নাম্বার-১৬৮০, ২০২৪ সালের জুন মাসে অফিস কর্তৃক গ্রাহককে বিদ্যুৎ বিল প্রদান করা হয় ৩৩৭০১ ইউনিট। কিন্তু উক্ত স্থাপনায় একটি ডুপ্লিকেট মিটার নাম্বার-৭৫৪৫৯৫, রিডিং ছিলো ১০২০৩ ইউনিট। ২০২৪ সালের জুন মাসে ডিভিশন থেকে কারিগরি দল গ্রাহক স্থাপনা থেকে যে মিটারটি খুলে নিয়ে আসে তখন ওই ডুপ্লিকেট মিটারের নাম্বার ছিলো ৭৫৪৫৯৫। তাতে রিডিং ছিলো ১০২০৩ ইউনিট। জানা যায়, গ্রাহককের ওই অরজিনাল মিটারে তখন রিডিং ছিলো ৬২ হাজার ইউনিট।
কাকরাইল ডিভিশনের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই গ্রাহকের আঙ্গিনার দুইটি মিটারই অফিস কর্তৃক পরিবর্তনের সময় স্টোরে জমা রাখা হয়নি। তিনি আরও জানান, অফিসের ওই অসাধু চক্রটি গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুষ নেওয়ায় মিটার পরিবর্তনের নিয়মাবলি অনুসরণ করা হয়নি। কেননা গ্রাহককের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ায় গ্রাহককে বিদ্যুৎ চুরির বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে। ওই প্রকৌশলী এই অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়ী করেছেন।
গ্রাহকের বিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাণিজ্যিক বিল প্রতি ইউনিট ১৩ টাকা করে ধরা হলে মোট ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ডিপিডিসির রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
এখন প্রশ্ন থাকে, ওই মিটারটি (৭৫৪৫৯৫) পরিবর্তন হলে ৭৫৪৫৯১ নাম্বার মিটারটি কোথায়? আর ৭৫৪৫৯৫ নাম্বার মিটারটি গ্রাহকের আঙ্গিনায় কীভাবে আসলো? এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার।
গ্রাহকের বিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৭৫৪৫৯৫ মিটারটিতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১০২০৩ ইউনিট রিডিং ব্যবহার হয়েছে। প্রশ্ন থাকে, ওই মিটারে তাহলে জুন পর্যন্ত ৩৩৭০১ ইউনিট বিলে আসলো কোথা থেকে?
এ বিষয়ে কাকরাইল ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ভূইয়া বলেন, গ্রাহকের কাছ থেকে কেউ ঘুষ নিয়েছেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। মিটার রিডার আব্বাস, বিল সুপারভাইজার দিলীপ আমার কথা বলে টাকা নিয়েছে কিনা, আমি তা জানি না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা এখন পর্যন্ত কাউকে বরখাস্ত করিনি। তিনি আরো বলেন, ওই দুটি মিটার স্টোরে জমা হয়নি, এটি সত্য। গ্রাহক মিটার দুটি কী করেছে, তাও আমি জানি না।
গ্রাহককে জরিমানার আওতায় কেন আনা হয়নি এ প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ভূইয়া বলেন, এটি আমাদের পরিচালক (প্রশাসন) স্যার বলতে পারবেন। তিনি এ বিষয়ে গ্রাহককে একটু কম টাকা জরিমানা করতে বলেছেন। আমরা ওই স্থাপনায় চেক মিটার বসিয়েছি। চেক মিটারের রিডিং দেখে গ্রাহককে জরিমানা করা হবে। ওই গ্রাহকের জরিমানার টাকার বিল কত টাকা হবে তা জানার জন্য মিটারিং ডিভিশনে চিঠি দিয়েছি। মিটারিং ডিভিশন এখন পর্যন্ত তা জানায়নি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিল সুপারভাইজার দিলীপ আমাদের নির্বাহী পরিচালক স্যারের খুব কাছের মানুষ। দিলীপের টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছি। এ বিষয়ে ওই বিল সুপারভাইজার এর কাছ থেকে তিনি কোন টাকা নেননি বলে দাবি করেছেন। তিনি আরও বলেন, পুরো ঘটনাটি আমাদের নির্বাহী পরিচালক স্যার মনিটরিং করছেন। আমি যা করেছি তা আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক করেছি।
এ ব্যাপারে ডিপিডিসির কাকরাইল সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (এসি) মো. হানিফ উদ্দিন বাংলা স্কুপকে বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ি ওই গ্রাহককে জরিমানার আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলা স্কুপ/প্রতিবেদক/এসকে
কাকরাইল ডিভিশনের মো. মুসা মুজিব গং নামে এক বিদ্যুৎ গ্রাহক তাঁর বাড়ির আঙ্গিনায় একটি আবাসিক ও একটি বাণিজ্যিক মিটার সংযোগ নিয়ে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকার বিদ্যুৎ চুরি করছেন। আর এই চক্রের সঙ্গে ওই ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ভূইয়ার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযুক্তরা জানিয়েছেন। সূত্রের দাবি, কাকরাইল ডিভিশনের মুন পাওয়ার ইন্জিনিয়ারিং কোম্পানির বাৎসরিক (সিএসএস) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মিটার রিডার আব্বাস, সুপারভাইজার (কর্মাশিয়াল) দিলীপ কুমার ত্রিপুরাসহ বেশ কয়েকজন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত।
জানা যায়, মো. মুসা মুজিব গং নামে কাকরাইল ডিভিশনের এক বিদ্যুৎ গ্রাহক বছরের পর বছর দুইটি মিটারে বিদ্যুৎ চুরি করে আসছিলো। আর তাকে এই কাজে সহায়তা করছিলো মিটার রিডার আব্বাস। জানা যায়, আব্বাস ওই গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে মাসোহারা নিতো। বিনিময়ে গ্রাহকের ব্যবহারকৃত বিদ্যুতের রিডিং বিলে কম দেখাতো।
আরও জানা যায়, ওই বিদ্যুৎ গ্রাহক তার বাড়ির আঙ্গিনায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক দুইটি মিটারের একই নাম্বার দিয়ে ডুপ্লিকেট মিটার ব্যবহার করতো। সম্প্রতি বিদ্যুৎচুরির ঘটনায় কাকরাইল ডিভিশনের একটি কারিগরি দল তাঁর লাইন বিচ্ছিন্ন করলে জরিমানা থেকে বাঁচতে শুরু হয় ঘুষ নিয়ে দেন-দরবার।
জানা যায়, ওই গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার রিডার আব্বাস ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওই গ্রাহক ৩ লাখ টাকা দেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ভুঁইয়ার কাছে মিটার রিডার বিষয়টি ফয়সালা করতে গেলে তিনি নিজেই ৫ লাখ টাকার ঘুষ দাবি করেন। পরবর্তীতে আব্বাসকে ৫ লাখ টাকা দিতে গ্রাহক অস্বীকৃতি জানালে, তাঁকে বড় জরিমানার আওতায় আনা হবে বলে মিটার রিডার হুমকি দেয়। বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় আব্বাস গ্রাহককে ঘুষের তিন লাখ টাকা ফেরত দিয়ে দেন। ইতিমধ্যে ওই ডিভিশনেরই আরেক বিল সুপারভাইজার দিলীপ কুমার ত্রিপুরা গ্রাহককে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি বিষয়টি যথাযথ সমাধান করে দিবেন।
সূত্র জানায়, বিল সুপারভাইজার দিলীপ ওই গ্রাহকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেন। পরবর্তীতে তিনি ওই গ্রাহককে দিয়ে গত ২৪ জুলাই ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) সোনামনি চাকমার কাছে কাকরাইল ডিভিশনের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দাখিল করান।
ওই বাড়ির মালিকের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলী গং এই অভিযোগটি দাখিল করেন।
ঘটনা জুন মাসে হলেও গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে। সূত্র জানায়, সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের এক প্রভাবশালী নির্বাহী পরিচালকের নির্দেশনায় মূল অভিযুক্তদের বাদ দিয়েই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
ওই ডিভিশন সূত্র থেকে জানা যায়,গঠিত তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। কিন্তু অপরাধীরা ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, ওই মিটার রিডার ও বিল সপুারভাইজার এখনও চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছে।
বাংলা স্কুপের তথ্যানুসন্ধানে বিদ্যুৎচুরির বিষয়টি স্পষ্ট হয়। আবাসিক পুরাতন মিটার নং-২৯৮৩১৭, কাস্টমার নং- ১৯২৬৬২২৬, হিসাব নং- কেএ -৭৮৩৬, বিদ্যুৎ বিল পর্যালোচনা করে দেখা যায় ২০২৪ সালের জুন মাসে মিটারটিতে রিডিং ছিলো ২১২০ ইউনিট। ওই মাসেই তখন গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের রিডিং দেখায় ৬৮২২ ইউনিট।
জানা যায়, ওই গ্রাহক ওই মিটার নাম্বার দিয়ে ডুপ্লিকেট একটি মিটার তার আঙ্গিনায় স্থাপন করে, তখন ওই মিটারে রিডিং ছিলো ৮৫০০ ইউনিট। ডিপিডিসির ওই গ্রাহকের কম্পিউটার লেজার অনুযায়ি অক্টোবর ২০১৯ সাল থেকে গড়ে ৩০০ ইউনিটের উপরে বিদ্যুৎ বিল করা হয়নি।
আরও দেখা যায়, ঐ গ্রাহককে বিদ্যুৎ অফিসের লেজার থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত গড় বিল ৩০০ ইউনিট করে করা হয়েছে। অফিস কর্তৃক নতুন মিটারে গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ঐ গ্রাহককে গড় ব্যবহার ১৬৮০ ইউনিট হিসাবে বিল দেওয়া হয়েছে। বর্তমান মিটার (এসএস ১৭১০৭৭০৫) এর গত তিন মাসে গড় ব্যবহার ১৬৮০ ইউনিট করে দেখানো হয়েছে। কিন্তু বিগত সময়ে পুরাতন মিটার (২৯৮৩১৭) এ গড় ব্যবহার ছিলো ৩০০ ইউনিটের কম!
গ্রাহকের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই মিটারে প্রতিমাসে ১৪০০ ইউনিট করে রাজস্ব হারিয়েছে। ওই ১৪০০ ইউনিটে প্রতিমাসে রাজস্ব আসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এতে পাঁচ বছরে ডিপিডিসি রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা।
জানা যায়, ওই বিদ্যুত গ্রাহক ওই মিটারে ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ চুরি করে আসছিলো। এতে করে গ্রাহক ১৮ লাখ টাকার বিদ্যুৎ চুরি করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।
গ্রাহক স্থাপনায় বাণিজ্যিক মিটার নাম্বার-৭৫৪৫৯৫, কাস্টমার নাম্বার-১৯২১১১৩১, হিসাব নাম্বার-১৬৮০, ২০২৪ সালের জুন মাসে অফিস কর্তৃক গ্রাহককে বিদ্যুৎ বিল প্রদান করা হয় ৩৩৭০১ ইউনিট। কিন্তু উক্ত স্থাপনায় একটি ডুপ্লিকেট মিটার নাম্বার-৭৫৪৫৯৫, রিডিং ছিলো ১০২০৩ ইউনিট। ২০২৪ সালের জুন মাসে ডিভিশন থেকে কারিগরি দল গ্রাহক স্থাপনা থেকে যে মিটারটি খুলে নিয়ে আসে তখন ওই ডুপ্লিকেট মিটারের নাম্বার ছিলো ৭৫৪৫৯৫। তাতে রিডিং ছিলো ১০২০৩ ইউনিট। জানা যায়, গ্রাহককের ওই অরজিনাল মিটারে তখন রিডিং ছিলো ৬২ হাজার ইউনিট।
কাকরাইল ডিভিশনের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই গ্রাহকের আঙ্গিনার দুইটি মিটারই অফিস কর্তৃক পরিবর্তনের সময় স্টোরে জমা রাখা হয়নি। তিনি আরও জানান, অফিসের ওই অসাধু চক্রটি গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুষ নেওয়ায় মিটার পরিবর্তনের নিয়মাবলি অনুসরণ করা হয়নি। কেননা গ্রাহককের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ায় গ্রাহককে বিদ্যুৎ চুরির বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে। ওই প্রকৌশলী এই অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়ী করেছেন।
গ্রাহকের বিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাণিজ্যিক বিল প্রতি ইউনিট ১৩ টাকা করে ধরা হলে মোট ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ডিপিডিসির রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
এখন প্রশ্ন থাকে, ওই মিটারটি (৭৫৪৫৯৫) পরিবর্তন হলে ৭৫৪৫৯১ নাম্বার মিটারটি কোথায়? আর ৭৫৪৫৯৫ নাম্বার মিটারটি গ্রাহকের আঙ্গিনায় কীভাবে আসলো? এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার।
গ্রাহকের বিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৭৫৪৫৯৫ মিটারটিতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১০২০৩ ইউনিট রিডিং ব্যবহার হয়েছে। প্রশ্ন থাকে, ওই মিটারে তাহলে জুন পর্যন্ত ৩৩৭০১ ইউনিট বিলে আসলো কোথা থেকে?
এ বিষয়ে কাকরাইল ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ভূইয়া বলেন, গ্রাহকের কাছ থেকে কেউ ঘুষ নিয়েছেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। মিটার রিডার আব্বাস, বিল সুপারভাইজার দিলীপ আমার কথা বলে টাকা নিয়েছে কিনা, আমি তা জানি না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা এখন পর্যন্ত কাউকে বরখাস্ত করিনি। তিনি আরো বলেন, ওই দুটি মিটার স্টোরে জমা হয়নি, এটি সত্য। গ্রাহক মিটার দুটি কী করেছে, তাও আমি জানি না।
গ্রাহককে জরিমানার আওতায় কেন আনা হয়নি এ প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ভূইয়া বলেন, এটি আমাদের পরিচালক (প্রশাসন) স্যার বলতে পারবেন। তিনি এ বিষয়ে গ্রাহককে একটু কম টাকা জরিমানা করতে বলেছেন। আমরা ওই স্থাপনায় চেক মিটার বসিয়েছি। চেক মিটারের রিডিং দেখে গ্রাহককে জরিমানা করা হবে। ওই গ্রাহকের জরিমানার টাকার বিল কত টাকা হবে তা জানার জন্য মিটারিং ডিভিশনে চিঠি দিয়েছি। মিটারিং ডিভিশন এখন পর্যন্ত তা জানায়নি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিল সুপারভাইজার দিলীপ আমাদের নির্বাহী পরিচালক স্যারের খুব কাছের মানুষ। দিলীপের টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছি। এ বিষয়ে ওই বিল সুপারভাইজার এর কাছ থেকে তিনি কোন টাকা নেননি বলে দাবি করেছেন। তিনি আরও বলেন, পুরো ঘটনাটি আমাদের নির্বাহী পরিচালক স্যার মনিটরিং করছেন। আমি যা করেছি তা আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক করেছি।
এ ব্যাপারে ডিপিডিসির কাকরাইল সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (এসি) মো. হানিফ উদ্দিন বাংলা স্কুপকে বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ি ওই গ্রাহককে জরিমানার আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলা স্কুপ/প্রতিবেদক/এসকে