গণতান্ত্রিক, ন্যায়সংগত ও সাম্যভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং জনগণের মতামত নিয়ে সংবিধান সংস্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন।
সোমবার (৪ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘সংবিধান দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
সভায় সাংবিধানিক শাসন রক্ষায় জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সকল সংবিধানিক সংস্কার করতে হবে। মৌলিক বিষয়ে হাত দেওয়া যাবে না। ব্যক্তির ইচ্ছায় নয়, জনগণের মতামত নিয়ে সংবিধান সংস্কার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ ক্ষমতার মালিক, মালিকদের দায়িত্ব অনেক। প্রত্যেক নাগরিককে প্রহরির ভূমিকায় থাকতে হবে।
প্রবীণ এই রাজনীতিক আরো বলেন, ‘গত জুলাই-আগস্টে আমরা একটি মর্মান্তিক পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছি। বিগত সরকারের আমলে দেশের মানুষের ওপর বৈষম্য-নির্যাতন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা আমাদের ১৯৭১ সালের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার কাজ এখনো শেষ হয়নি। তাই আজকের প্রেক্ষাপটে আমাদের সংবিধানকে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এই সংবিধান যাতে কোনোভাবে অত্যাচারের সুযোগ না দেয় তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধান সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।’
কামাল হোসেন বলেন, ‘জনগণ মনে করলে সংবিধান সংশোধনী আনা যেতে পারে। সংবিধানে ষোলটি সংশোধনী হয়েছে। যখন দেখা গেছে সংবিধানে কোনো ঘাটতি তৈরি হয়েছে, মানুষের স্বার্থে কাজে লাগছে না, তখন সংবিধান বদলানো হয়েছে। তবে তা করতে হবে মানুষকে নিয়ে। কোনো ব্যক্তি এমনকি রাষ্ট্রপতিও কলমের খোচায় সংবিধান বদলাতে পারবেন না। সংখ্যাগরিষ্ট মত গড়ে উঠলে সংবিধানে হাত দেওয়া যেতে পারে। যেন-তেনভাবে এটাতে হাত দেওয়া যাবে না। এমনকি, সংসদও মৌলিক বিষয়ে হাত দিতে পারে না।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন, নাকি পুনঃলিখন, এই বিতর্ক আমাদের অনেক বড় সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন বা সংস্কার করলে তার অনুমোদন করবে কে? ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে যদি সংবিধান সংশোধন হয়, সেই সংশোধন টেকে না। গ্রামে মুরগি চুরি করলে বিচার হয়, সংবিধান লঙ্ঘন করলে বিচার হয় না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্ররা, তাদের ম্যান্ডেট ছিল চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ। সেটা তো বাদ করে দিল। কোটি কোটি মানুষ এটা সমর্থন দিয়েছে। আজকে নতুন সরকার। ছাত্ররা সেই সময় বলেনি যে, তারা রাষ্ট্র সংস্কার করবে। এটা তাদের ম্যান্ডেট ছিল না। এটা (সংবিধান সংস্কার) পার্লামেন্টের কাজ।’
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের যে জোয়ারের পানি বইছে, এ জোয়ারের পানিতে পা দিলে পা ফসকে কখন পড়ে যাবো টের পাব না। তাই সংবিধান সংস্কার সম্পর্কে কিছু বলাটা অনুচিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘৫২ বছরে আমরা ১২ ধরণের সরকার গঠন করলাম। দেশ চালাতে গেলে, রাষ্ট্র চালাতে গেলে সব রাষ্ট্রেরই সমস্যা হয়। কিন্তু সমস্যার পর এই যে এতবার সরকার গঠন করা হলো, এটা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনার অপরিপক্কতার বহিঃপ্রকাশ। সমস্যায় পড়লেই আমরা সমাধান খুঁজি সরকারের গঠন পরিবর্তনে। এটা দুনিয়াতে কেউ করে না।’
লেখক, গবেষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকার কোনো সংস্কার করতে পারে না। শুধু সুপারিশ করতে পারে। ক্ষমতা থাকতে হবে নির্বাচিত সরকারের হাতে।’
আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন সংবিধান দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. আবু ইয়াহিয়া দুলাল। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন- গণতান্ত্রিক আইনজীবী সতিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহিদুল বারি, উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের প্রমুখ।
বাংলা স্কুপ/প্রতিবেদক/এসকে
সোমবার (৪ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘সংবিধান দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
সভায় সাংবিধানিক শাসন রক্ষায় জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সকল সংবিধানিক সংস্কার করতে হবে। মৌলিক বিষয়ে হাত দেওয়া যাবে না। ব্যক্তির ইচ্ছায় নয়, জনগণের মতামত নিয়ে সংবিধান সংস্কার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ ক্ষমতার মালিক, মালিকদের দায়িত্ব অনেক। প্রত্যেক নাগরিককে প্রহরির ভূমিকায় থাকতে হবে।
প্রবীণ এই রাজনীতিক আরো বলেন, ‘গত জুলাই-আগস্টে আমরা একটি মর্মান্তিক পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছি। বিগত সরকারের আমলে দেশের মানুষের ওপর বৈষম্য-নির্যাতন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা আমাদের ১৯৭১ সালের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার কাজ এখনো শেষ হয়নি। তাই আজকের প্রেক্ষাপটে আমাদের সংবিধানকে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এই সংবিধান যাতে কোনোভাবে অত্যাচারের সুযোগ না দেয় তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধান সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।’
কামাল হোসেন বলেন, ‘জনগণ মনে করলে সংবিধান সংশোধনী আনা যেতে পারে। সংবিধানে ষোলটি সংশোধনী হয়েছে। যখন দেখা গেছে সংবিধানে কোনো ঘাটতি তৈরি হয়েছে, মানুষের স্বার্থে কাজে লাগছে না, তখন সংবিধান বদলানো হয়েছে। তবে তা করতে হবে মানুষকে নিয়ে। কোনো ব্যক্তি এমনকি রাষ্ট্রপতিও কলমের খোচায় সংবিধান বদলাতে পারবেন না। সংখ্যাগরিষ্ট মত গড়ে উঠলে সংবিধানে হাত দেওয়া যেতে পারে। যেন-তেনভাবে এটাতে হাত দেওয়া যাবে না। এমনকি, সংসদও মৌলিক বিষয়ে হাত দিতে পারে না।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন, নাকি পুনঃলিখন, এই বিতর্ক আমাদের অনেক বড় সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন বা সংস্কার করলে তার অনুমোদন করবে কে? ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে যদি সংবিধান সংশোধন হয়, সেই সংশোধন টেকে না। গ্রামে মুরগি চুরি করলে বিচার হয়, সংবিধান লঙ্ঘন করলে বিচার হয় না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্ররা, তাদের ম্যান্ডেট ছিল চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ। সেটা তো বাদ করে দিল। কোটি কোটি মানুষ এটা সমর্থন দিয়েছে। আজকে নতুন সরকার। ছাত্ররা সেই সময় বলেনি যে, তারা রাষ্ট্র সংস্কার করবে। এটা তাদের ম্যান্ডেট ছিল না। এটা (সংবিধান সংস্কার) পার্লামেন্টের কাজ।’
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের যে জোয়ারের পানি বইছে, এ জোয়ারের পানিতে পা দিলে পা ফসকে কখন পড়ে যাবো টের পাব না। তাই সংবিধান সংস্কার সম্পর্কে কিছু বলাটা অনুচিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘৫২ বছরে আমরা ১২ ধরণের সরকার গঠন করলাম। দেশ চালাতে গেলে, রাষ্ট্র চালাতে গেলে সব রাষ্ট্রেরই সমস্যা হয়। কিন্তু সমস্যার পর এই যে এতবার সরকার গঠন করা হলো, এটা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনার অপরিপক্কতার বহিঃপ্রকাশ। সমস্যায় পড়লেই আমরা সমাধান খুঁজি সরকারের গঠন পরিবর্তনে। এটা দুনিয়াতে কেউ করে না।’
লেখক, গবেষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকার কোনো সংস্কার করতে পারে না। শুধু সুপারিশ করতে পারে। ক্ষমতা থাকতে হবে নির্বাচিত সরকারের হাতে।’
আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন সংবিধান দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. আবু ইয়াহিয়া দুলাল। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন- গণতান্ত্রিক আইনজীবী সতিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহিদুল বারি, উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের প্রমুখ।
বাংলা স্কুপ/প্রতিবেদক/এসকে