সারাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার, যা ইজিবাইক নামে পরিচিত। দেশে অবৈধ ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার ইজিবাইকের সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি। তবে এই রিকশা কতগুলো, তার প্রকৃত হিসাব নেই কারও কাছে। প্রতিটি ইজিবাইকে রয়েছে ১২ ভোল্টের চারটি ব্যাটারি। এই চারটি ব্যাটারি ফুলচার্জ করতে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে, খরচ হয় ৬ থেকে ৭ ইউনিট। এলাকাভেদে চার্জ বাবদ ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা নেয় গ্যারেজ মালিক। আর ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি চার্জ করার জন্য দিতে হয় ৫০ থেকে ৮০ টাকা। এসব ইজিবাইক ও রিকশার ব্যাটারি চার্জ করতে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাটারি চার্জ করতে চুরি করা বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। টাকা বাঁচাতে কিছু অসাধু গ্যারেজ মালিক এ পন্থা অবলম্বন করে থাকে। আর তাদের সহায়তা করছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় দালালচক্র। এতে করে সরকার প্রতিদিনই কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রাত হলেই অনেক অটোরিকশার গ্যারেজে বিদ্যুতের মিটারে সংযোগ না নিয়ে রাস্তার বৈদ্যুতিক খুঁটিতে হুক দিয়ে ব্যাটারি চার্জ করা হচ্ছে সকাল পর্যন্ত। আর সকাল হলেই এই হুকগুলো সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। বাংলা স্কুপের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, নারিন্দা, মাতুয়াইল, ডেমরা, মুগদা, খিলগাঁও, জুরাইন, শীতলক্ষা, পোস্তগোলা, সিদ্ধিরগঞ্জ, আদাবর, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বাড্ডা, টঙ্গি, এলাকায় এই কার্যক্রমগুলো বেশি চলছে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণী কোম্পানিগুলোর মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীদের শিথিলতার কারণে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর সংখ্যা।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর আওতাধীন অবৈধ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান স্তিমিত রয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা জানান, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলনে গত জুন মাস থেকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন সারাদেশে উজ্জীবিত হয়, তখন থেকে তারা সারাদেশে অবৈধ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এই কার্যক্রম তারা অব্যহত রাখতে পারেনি জনবলের কারণে। তাঁরা বলেন, এই অভিযান পরিচালনা করতে গেলে প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত ভ্রামমাণ আাদালত। কিন্তু এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর এই অভিযান বন্ধ থাকার কারণে পোয়াবারো হয়েছে এক শ্রেণীর অবৈধ সংযোগকারীর।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের ডিভিশনগুলোতে অভিযান চলমান রয়েছে। বর্তমানে আমাদের গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৪০ লক্ষ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট জনবল প্রয়োজন। পর্যাপ্ত লোকবল পেলে অভিযান আরো জোরদার হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ নোমান বলেন, অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে আমাদের মাঠপর্যায়ে অভিযান চলছে। ডিপিডিসির বর্তমানে বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে ১৮ লক্ষ। আমাদের ৩৬টি ডিভিশনের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীরা সংবাদ পেলেই অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ওই গ্রাহককে জরিমানার আওতায় আনছে। এই মুহূর্তে রাজধানীতে চারটি মোবাইল কোর্ট কাজ করছে । তবে আরো জনবল পেলে অভিযান আরো জোরালো করা হবে। তিনি আরো বলেন, কোনো অবস্থাতেই অবৈধ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ছাড় দেয়া হবে না। বিদ্যুৎ আইন মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসি (নেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী জাকিউল ইসলাম বলেন, ১৬টি জেলা শহর ও ৩৯টি উপজেলা নিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে ২০ লক্ষেরও অধিক। উত্তরের জনপদগুলোতে রাত্রিকালীন সময়ে ব্যাটারিচালিত যানগুলো চার্জ করতে কিছুসংখ্যক গ্রাহক বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে হুক লাগিয়ে অবৈধ উপায়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। সংস্থাটিতে পর্যাপ্ত লোকবল, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ না থাকায় নিরাপত্তার কারণে রাত্রিকালীন সময় অবৈধ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এতে করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় বেশিসংখ্যক ফাস্ট চার্জিং স্টেশন স্থাপনের উপর জোর দেন তিনি। প্রকৌশলী জাকিউল ইসলাম আরো বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বার্ক) যদি এই শ্রেণির গ্রাহকদের প্রয়োজন বিবেচনায় রেখে আর্কষণীয় ট্যারিফ দেয়, তাহলে ফাস্ট চার্জিংয়ে অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যা কমে আসবে। এর জন্য দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।
এ বিষয়ে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিঃ দাঃ) প্রকৌশলী মো. শামছুল আলম বলেন, ২১টি জেলা সদর ও ২০টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার। এখানে ৮৩ শতাংশ রয়েছে আবাসিক এবং ১৭ শতাংশ রয়েছে বাণিজ্যিক, শিল্প ও অন্যান্য গ্রাহক। এ বছর জেলাতে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ইলেক্ট্রিক যানবাহন। আমরা অবৈধ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। তবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গেলে পর্যাপ্ত লোকবল প্রয়োজন। অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করার কারণে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে ১৩৭৩টি ফাস্ট চার্জিং স্টেশন রয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা না থাকায় অবৈধ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং গ্রাহকদের অন্যান্য সেবা দিতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে হলে দরকার সংশ্লিষ্ট বিতরণী কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সদিচ্ছা। সংশ্লিষ্ট ডিভিশনগুলোর ফিডারে মিটার বসিয়ে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে, আর এই ব্যবহারের সাথে রাজস্ব সঠিকভাবে আসছে কিনা তা দেখভালের দায়িত্ব ওই বিতরণী কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের। তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণী কোম্পানিগুলোর সংযোগ নীতিমালাও আরো সহজ করতে হবে। যাতে গ্রাহক আবেদন করামাত্রই সংযোগ পেয়ে যায়। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ যাতে মানুষ ব্যবহার না করে তার জন্য জনসচেতনতার উপর জোর দেন এই বিশেষজ্ঞ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাংলা স্কুপকে বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণী কোম্পানিগুলো অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সরকার পরিবর্তনের পর কোম্পানিগুলোতে পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় এই কার্যক্রম কিছুটা গতি হারিয়েছে। অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গেলে লোকবল প্রয়োজন। আমি অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। আশা করি, অচিরেই তা বাস্তবায়ন হবে। উপদেষ্টা আরো বলেন, সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরে অনেক বড় ভর্তুকি দেয়। এই ভুর্তকি দেওয়া থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দেশে কোনো অবস্থাতেই অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। যারা অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহার করছেন, দ্রুত তা বন্ধ করে দিন। নইলে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণী কোম্পানিগুলোকে অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে কার্যক্রম আরো গতিশীল করার আহ্বান জানান।
বাংলা স্কুপ/বিশেষ প্রতিবেদক/আমিনুল কবির সুমন/এসকে
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রাত হলেই অনেক অটোরিকশার গ্যারেজে বিদ্যুতের মিটারে সংযোগ না নিয়ে রাস্তার বৈদ্যুতিক খুঁটিতে হুক দিয়ে ব্যাটারি চার্জ করা হচ্ছে সকাল পর্যন্ত। আর সকাল হলেই এই হুকগুলো সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। বাংলা স্কুপের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, নারিন্দা, মাতুয়াইল, ডেমরা, মুগদা, খিলগাঁও, জুরাইন, শীতলক্ষা, পোস্তগোলা, সিদ্ধিরগঞ্জ, আদাবর, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বাড্ডা, টঙ্গি, এলাকায় এই কার্যক্রমগুলো বেশি চলছে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণী কোম্পানিগুলোর মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীদের শিথিলতার কারণে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর সংখ্যা।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর আওতাধীন অবৈধ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান স্তিমিত রয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা জানান, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলনে গত জুন মাস থেকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন সারাদেশে উজ্জীবিত হয়, তখন থেকে তারা সারাদেশে অবৈধ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এই কার্যক্রম তারা অব্যহত রাখতে পারেনি জনবলের কারণে। তাঁরা বলেন, এই অভিযান পরিচালনা করতে গেলে প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত ভ্রামমাণ আাদালত। কিন্তু এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর এই অভিযান বন্ধ থাকার কারণে পোয়াবারো হয়েছে এক শ্রেণীর অবৈধ সংযোগকারীর।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের ডিভিশনগুলোতে অভিযান চলমান রয়েছে। বর্তমানে আমাদের গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৪০ লক্ষ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট জনবল প্রয়োজন। পর্যাপ্ত লোকবল পেলে অভিযান আরো জোরদার হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ নোমান বলেন, অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে আমাদের মাঠপর্যায়ে অভিযান চলছে। ডিপিডিসির বর্তমানে বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে ১৮ লক্ষ। আমাদের ৩৬টি ডিভিশনের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীরা সংবাদ পেলেই অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ওই গ্রাহককে জরিমানার আওতায় আনছে। এই মুহূর্তে রাজধানীতে চারটি মোবাইল কোর্ট কাজ করছে । তবে আরো জনবল পেলে অভিযান আরো জোরালো করা হবে। তিনি আরো বলেন, কোনো অবস্থাতেই অবৈধ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ছাড় দেয়া হবে না। বিদ্যুৎ আইন মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসি (নেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী জাকিউল ইসলাম বলেন, ১৬টি জেলা শহর ও ৩৯টি উপজেলা নিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে ২০ লক্ষেরও অধিক। উত্তরের জনপদগুলোতে রাত্রিকালীন সময়ে ব্যাটারিচালিত যানগুলো চার্জ করতে কিছুসংখ্যক গ্রাহক বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে হুক লাগিয়ে অবৈধ উপায়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। সংস্থাটিতে পর্যাপ্ত লোকবল, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ না থাকায় নিরাপত্তার কারণে রাত্রিকালীন সময় অবৈধ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এতে করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় বেশিসংখ্যক ফাস্ট চার্জিং স্টেশন স্থাপনের উপর জোর দেন তিনি। প্রকৌশলী জাকিউল ইসলাম আরো বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বার্ক) যদি এই শ্রেণির গ্রাহকদের প্রয়োজন বিবেচনায় রেখে আর্কষণীয় ট্যারিফ দেয়, তাহলে ফাস্ট চার্জিংয়ে অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যা কমে আসবে। এর জন্য দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।
এ বিষয়ে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিঃ দাঃ) প্রকৌশলী মো. শামছুল আলম বলেন, ২১টি জেলা সদর ও ২০টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার। এখানে ৮৩ শতাংশ রয়েছে আবাসিক এবং ১৭ শতাংশ রয়েছে বাণিজ্যিক, শিল্প ও অন্যান্য গ্রাহক। এ বছর জেলাতে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ইলেক্ট্রিক যানবাহন। আমরা অবৈধ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। তবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গেলে পর্যাপ্ত লোকবল প্রয়োজন। অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করার কারণে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে ১৩৭৩টি ফাস্ট চার্জিং স্টেশন রয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা না থাকায় অবৈধ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং গ্রাহকদের অন্যান্য সেবা দিতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে হলে দরকার সংশ্লিষ্ট বিতরণী কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সদিচ্ছা। সংশ্লিষ্ট ডিভিশনগুলোর ফিডারে মিটার বসিয়ে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে, আর এই ব্যবহারের সাথে রাজস্ব সঠিকভাবে আসছে কিনা তা দেখভালের দায়িত্ব ওই বিতরণী কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের। তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণী কোম্পানিগুলোর সংযোগ নীতিমালাও আরো সহজ করতে হবে। যাতে গ্রাহক আবেদন করামাত্রই সংযোগ পেয়ে যায়। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ যাতে মানুষ ব্যবহার না করে তার জন্য জনসচেতনতার উপর জোর দেন এই বিশেষজ্ঞ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাংলা স্কুপকে বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণী কোম্পানিগুলো অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সরকার পরিবর্তনের পর কোম্পানিগুলোতে পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় এই কার্যক্রম কিছুটা গতি হারিয়েছে। অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গেলে লোকবল প্রয়োজন। আমি অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। আশা করি, অচিরেই তা বাস্তবায়ন হবে। উপদেষ্টা আরো বলেন, সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরে অনেক বড় ভর্তুকি দেয়। এই ভুর্তকি দেওয়া থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দেশে কোনো অবস্থাতেই অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। যারা অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহার করছেন, দ্রুত তা বন্ধ করে দিন। নইলে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণী কোম্পানিগুলোকে অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে কার্যক্রম আরো গতিশীল করার আহ্বান জানান।
বাংলা স্কুপ/বিশেষ প্রতিবেদক/আমিনুল কবির সুমন/এসকে