‘একেবারেই ট্রাম্পের সমর্থক নই। আমি ওকে কখনওই পছন্দ করিনি।’
‘আমার তাকে নিন্দনীয় বলে মনে হয়।’
‘ওহ গড, একজন ইডিয়ট!’
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে ২০১৬ সালে টুইটার (বর্তমানে এক্স হ্যান্ডেল) এবং সাক্ষাৎকারের সময় এমনই মন্তব্য করেছিলেন জেডি ভান্স। এটা সেই সময়ের ঘটনা যখন স্মৃতিকথা ‘হিলিবিলি এলেজি’র হাত ধরে সদ্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন তিনি।
সেই বছরেই ফেসবুকে তার ল স্কুলের রুমমেট এবং বন্ধু জন ম্যাক্লরিনের (বর্তমানে জর্জিয়ার একজন স্টেট সেনেটর) সঙ্গে কথোপকথনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘আমেরিকান হিটলার’ বলেও মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল তাকে।
সময় বদলেছে। এখন বছর ৪০-এর মি. ভান্স প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘রানিং মেট’ হিসাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ভোটের ময়দানে লড়ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়োর এই সেনেটরের পরিবর্তন অনেককেই অবাক করেছে।
ডেমোক্র্যাট পার্টির জন ম্যাক্লরিনের কথায়, “(জেডি ভান্সের) টেক্সট বার্তায় লেখা ওই শব্দ থেকে আজ ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় সমর্থক হয়ে ওঠার বিষয়টা কল্পনাতীত।”
জেডি ভান্সের নির্ভরযোগ্য রক্ষণশীল ভোটিং রেকর্ড, যুবসম্প্রদায় এবং মধ্য-পশ্চিমা শিকড় ব্যালট বাক্সে রিপাবলিকানদের পক্ষে সমর্থন বাড়িয়ে তুলবে বলেই সেই অনেকে আশা করছেন।
২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থীদের দৌড়ে তিনি প্রথম দিকে থাকবেন বলেও আগাম অনুমান করা হচ্ছে।
এককালে ট্রাম্পের ‘কড়া সমালোচক’ হিসাবে পরিচিত মি. ভান্স প্রচারাভিযানের সময় রিপাবলিকান প্রার্থী হিসাবে নিজেকে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।
প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন বিরোধীদের ‘আক্রমণাত্মক’ সমালোক হিসাবেও। ঐতিহ্যগতভাবে একজন ‘রানিং মেট’-এর ভূমিকা তিনি পালন করছেন। যদিও মি. ট্রাম্পের নিজস্ব বক্তৃতার ধরনের নিরিখে সেটাকে কখন কখনও ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে হতে পারে।
তবে প্রচারাভিযানে তাকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেছে। নিয়মিতভাবে টেলিভিশন শো-তে অংশগ্রহণ করেছেন, বিতর্ক অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে তাকে।
নির্বাচনি সমাবেশগুলোতেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন যা অনেকাংশেই কমালা হ্যারিসের প্রচারাভিযান এবং তার সতর্কভাবে পরিকল্পিত মিডিয়া কৌশলের বিপরীত।
কিন্তু অভিবাসীদের প্রতি মি. ভান্সের কট্টরপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করার পর থেকেই তিনি ওহাইয়োর স্প্রিংফিল্ডে হাইতিয়ান অভিবাসীরা পোষা কুকুর-বেড়াল খেয়ে ফেলছে বলে যে গুজব রটেছিল, তার সমর্থনে বারবার মন্তব্য করেছেন।
মি. ভান্সের পুরনো সাক্ষাৎকারের বিভিন্ন মন্তব্যও আরও একবার সামনে এসেছে যেখানে তিনি গর্ভপাতের উপর দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন বা যুক্তরাজ্যকে ‘ইসলামপন্থী দেশ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
ওই তালিকায় তার তিন বছর আগের ‘সন্তানহীন ক্যাট লেডি’ সম্পর্কিত বিতর্কিত মন্তব্যও রয়েছে যেখানে তিনি মিজ হ্যারিসের প্রসঙ্গও টেনে এনেছিলেন। সেই মন্তব্য নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। শেষপর্যন্ত এই বিষয়ে সাফাইও দিতে হয়েছে তাকে।
জনমত জরিপ বলছে, এই বিতর্কই জেডি ভান্সকে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে কম জনপ্রিয় ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের একজন করে তুলেছে। অর্থনীতি সম্পর্কে তার পপুলিস্ট বার্তাও ভোটারদের বিভ্রান্ত করেছে বলে মনে করা হয়। এটা কিন্তু এমন একটা ইস্যু যাকে মি. ট্রাম্পের শিবির শক্তি হিসাবে দেখে এসেছে।
জন ম্যাক্লরিন মনে করেন তার প্রাক্তন রুমমেট আগে মনে করতেন রিপাবলিকান পার্টির উচিত শ্রমজীবী মানুষের আশার ভরসা দেওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সুযোগও করে দেওয়া। গত কয়েক বছরে যদিও তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচক থেকে তার রানিং মেট হয়ে ওঠার জেডি ভান্সের এই সফর বেশ আকর্ষণীয়। এই প্রতিবেদনে জেডি ভান্সের সেই সফরেরই উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবন
মি. ভান্সের জন্ম ওহাইয়োর মিডলটাউনে। তার নাম ছিল জেমস ডোনাল্ড বোম্যান। তার ছেলেবেলার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না।
তার বাবা যে সময় বাড়ি ছাড়েন, তখন জেডি ভান্সের বয়স খুবই কম আর মা লড়াই করছিলেন মাদকাসক্তির সঙ্গে। পরিস্থিতির কারণে প্রায়শই দাদু-দিদিমার বাড়িতে আশ্রয় নিতে হতো তাকে। পরে জেডি ভান্সকে তার দাদু-দিদিমা দত্তক নেন। বর্তমানে তাদের পদবিটাই ব্যবহার করেন মি. ভান্স।
তার ছাত্রজীবন আর কর্মজীবন বেশ উল্লেখযোগ্য। মিডলটন হাইস্কুল থেকে পাশ করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন কর্পসে যোগ দেন। পরে ইরাকে মোতায়েন করা হয় তাকে। এরপর ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইয়েল ল স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন।
পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়ায় বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।
জেডি ভান্সের বেড়ে ওঠা এবং তার ব্যক্তিত্ব শ্রমজীবী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারে ভেবেই তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত করেছেন বলে মনে করা হয়।
মি. ভান্সের ভারতীয় যোগ
মি. ভান্সের একটা ভারতীয় যোগ রয়েছে। তার স্ত্রী ঊষা চিলুকুরি ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
২০১৩ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন তাদের পরিচয় হয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইয়েল ল স্কুলে পড়ার সময় ‘শ্বেতাঙ্গ-অধ্যুষিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক অবক্ষয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রথম দেখা হয় তাদের। ২০১৪ সালে বিয়ে করেন এই যুগল। তারপর অনেকটা পথ একসঙ্গে পেরিয়ে এসেছেন তারা।
বর্তমানে এই দম্পতির তিনজন সন্তান রয়েছে - ইভান, বিবেক ও মিরাবেল।
লেখক হিসাবে খ্যাতি
‘হিলবিলি এলেজি’ নামক স্মৃতিকথার সাফল্য তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। সর্বাধিক বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকায় রয়েছে তার লেখা ‘হিলিবিলি এলেজি’, যার অবলম্বনে ছায়াছবিও তৈরি হয়েছে। নেটফ্লিক্সে দেখা যেতে পারে এই সিনেমা।
মি. ভান্সের লেখনীতে উঠে এসেছে অ্যাপেলেচিয়া অঞ্চলের কথা যেখানে তার বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা থাকতেন। এই বিশাল পার্বত্য অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের বিরাণ এলাকা থেকে শিল্পন্নোত মধ্য-অঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বের প্রান্ত পর্যন্ত প্রসারিত। এই অংশে দেশের কয়েকটা দরিদ্রতম এলাকাও রয়েছে।
‘হিলবিলি এলেজি’-তে মি. ভান্সের বেড়ে ওঠা, তার চারপাশের পরিস্থিতি, বন্ধু ও পরিজনদের ভুল সিদ্ধান্ত আর অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতার কথা ফুটে উঠেছে। রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি বর্ণনা করেছেন কীভাবে তার পরিচিত মানুষেরা পরিশ্রম করার বদলে সরকারি অনুদানের উপর নির্ভর করতেন।
এই বইয়ের সাফল্য তাকে লেখক হিসাবে বিখ্যাত করে তোলার পাশাপাশি,ভাষ্যকার হিসাবেও পরিচিতি দিয়েছিল। বিভিন্ন নামকরা অনুষ্ঠানে ভাষ্যকার হিসাবে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হতো যেখানে তিনি মূলত শ্বেতাঙ্গ শ্রমজীবী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের বিষয়ে কথা বলতেন।
সেই সময়, তৎকালীন রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী মি. ট্রাম্পের সমালোচনা করার সুযোগ খুব কমই হাতছাড়া করতেন তিনি।
২০১৬ সালের অক্টোবরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি মনে করি এই নির্বাচন সত্যিই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, বিশেষত শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণির ওপর।”
“এটা (তৎকালীন নির্বাচন) মানুষকে অন্যদের দিকে আঙুল তোলার অজুহাত দিচ্ছে, তা সে মেক্সিকান অভিবাসী হোক, চীনা বাণিজ্য বা অভিজাত ডেমোক্র্যাট হোক বা অন্যরা।”
প্রসঙ্গত, মি. ট্রাম্পের প্রচারের অংশ হিসাবে তিনি নিজেও এই একই কাজ করে এসেছেন।
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে রাজনীতি
২০১৭ সালে ওহাইয়োতে ফিরে আসেন এবং আর্থিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন জেডি ভান্স।
রাজনীতিতে তার প্রবেশকে কেন্দ্র করে অনেকদিন থেকেই গুঞ্জন চলছিল। এই গুঞ্জন বাস্তবে পরিণত হয় ২০২২ সালে যখন ওহাইয়োর রিপাবলিকান সেনেটর রব পোর্টম্যান পুনর্র্নিবাচনের জন্য প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রথমদিকে মি. ভান্সের রাজনৈতিক প্রচার বেশ ধীর গতিতে চলছিল। তার প্রাক্তন বস পিটার থিয়েল তাকে এক কোটি ডলার দিয়ে সাহায্য করলে নির্বাচনি প্রচারে গতি আসে।
ক্রমশ মি. ভান্সের আলোচনার ফোকাস অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে থাকে।
‘হিলিবিলি এলেজি’তে যাদের ব্যর্থতার বিষয়ে লিখেছিলেন, তাদের নিয়ে কথা বলার জন্য ক্রমশ কম সময় ব্যয় করতে থাকেন তিনি। পরিবর্তে ডেমোক্র্যাট ও অভিজাতদের সম্পর্কে বলার জন্য বেশি সময় ব্যয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
সেই সময় তার একাধিক বিতর্কিত মন্তব্যের ক্লিপিং আবার সামনে এসেছে।
তবে তার রাজনৈতিক ময়দানে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তার অতীতের সমালোচনা। কারণ ওহাইয়োতে রিপাবলিকানদের সমর্থকের সংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য।
ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে থাকা টেক্সট বার্তা অনুসারে, ২০২০ সালের শেষের দিক পর্যন্ত মি. ট্রাম্পের বিষয়ে সংশয় ছিল মি. ভান্সের। চার বছর আগে তিনি লিখেছিলেন যে প্রেসিডেন্ট “তার অর্থনৈতিক জনপ্রিয়তা (একটা বিচ্ছিন্ন চীন সম্পর্কিত নীতি ছাড়া) বাস্তবায়িত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন” এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদ হারাবেন।
তবে সেনেটের জন্য প্রচারের সময় তার আগের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন মি. ভান্স। এইভাবে তিনি মি. ট্রাম্পের এবং ক্রমশ রিপাবলিকানদের সমর্থন পেতে সক্ষম হন যা তাকে সেনেটে যেতে সাহায্য করে।
একইসঙ্গে তিনি ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ রাজনীতির একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন - এবং প্রায় সম্পূর্ণভাবেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে তাকে সহমত পোষণ করতেও দেখা যায়।
ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর হিসেবে বিবেচিত এই পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছেন জেডি ভান্স।
প্রসঙ্গত, তার স্ত্রী ঊষা ভান্সও তার ক্যারিয়ারে সফল।
তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের কেরানি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সম্প্রতি মুঙ্গার, টোলস অ্যান্ড ওলসন নামক শীর্ষস্থানীয় ল ফার্মের অংশ ছিলেন। তবে মি. ট্রাম্প জেডি ভান্সকে তার রানিং মেট হিসাবে মনোনীত করার পর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করেন ।
গাজা-ইউক্রেন সহ অন্যন্য ইস্যুতে তার অবস্থান
সেনেটে তিনি নির্ভরযোগ্য কনজারভেটিভ (রক্ষণশীল) ভোটার হিসাবে পরিচিত তিনি। জনপ্রিয় অর্থনৈতিক নীতিকে সমর্থন করতে দেখা যায়। ইউক্রেনকে সহায়তার ক্ষেত্রে সংশয় প্রকাশ করেছেন মি. ভান্স।
ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বাধীন চেম্বারে তার সংক্ষিপ্ত মেয়াদের কারণে, তার অনুমোদন করা বিল খুব কমই এগিয়ে গেছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নীতি পরিবর্তনের বদলে ‘বার্তা পাঠানোই’ এই বিলগুলো উপস্থাপনের পিছনে উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করা হয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে শিবির তৈরি হয়েছে বা প্রতিবাদ দেখানো হয়েছে এমন কলেজ এবং অনিবন্ধিত অভিবাসীদের নিয়োগকারী কলেজের জন্য ফেডারেল তহবিল থেকে যাওয়া টাকা আটকে দেওয়ার জন্য বিল উপস্থাপন করেছিলেন।
গত মার্চ মাসে এমন এক আইনের অনুমোদন করেছিলেন তিনি যেখানে বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন অনুসরণ না করলে চীন সরকারকে মার্কিন মূলধন বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
গত জুলাইয়ে ন্যাশনাল কনজারভেটিজম কনফারেন্সে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আমেরিকান গণতন্ত্রের জন্য আসল হুমকি হলো আমেরিকান ভোটাররা অভিবাসন কমানোর পক্ষে ভোট দিচ্ছে এবং আমাদের রাজনীতিবিদরা আমাদের আরও সংখ্যক অভিবাসিতদের নিয়ে এসে আমাদের পুরস্কৃত করে চলেছেন।”
তিনি বলেছিলেন যে ‘আমেরিকান ড্রিম’ ধারণার মূল কথাই হলো – “যে দেশকে আপনি নিজের বাড়ি বলে চেনেন, সেখানে আপনি নিজের এবং আপনার পরিবারের জন্য একটা ভাল জীবন গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন” যা “বামপন্থীরা অবরুদ্ধ” করে রেখেছে।
ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে তার মত- “এই বিষয়ে কোনও দিশা বা উপসংহার নেই যেদিকে আমরা যাচ্ছি বা ইতিমধ্যে অর্জন করেছি বলে দাবি করতে পারি।”
ওই একই সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন যে অভিবাসনের কারণে যুক্তরাজ্য “তেমন ভাল অবস্থায় নেই” এবং দাবি করেছিলেন যে লেবার পার্টির নেতৃত্বে ওই দেশ “প্রথম সত্যিকারের ইসলামপন্থী দেশ” হয়ে উঠবে যাদের হাতে পারমাণবিক বোমাও আছে।
তার মনোনয়নের পরপরই জুলাই মাসে মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে প্রবেশের সময় তিনি উচ্ছ্বসিত অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন।
তবে তারপর থেকে তার নাম খবরের শিরোনামে এসেছে মূলত বিতর্কের কারণেই।
ভোটের প্রচারে তার মন্তব্য এবং কিছু বিতর্ক
কোনও প্রমাণ নেই এমন এক ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া গুজবে উল্লেখ করা হয়েছিল, হাইতিয়ান অভিবাসীদের খাদ্য হলো পোষা প্রাণী। সেই গুজব শোনা গিয়েছিল মি. ভান্সের কণ্ঠেও। এই একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছিলেন মি. ট্রাম্প। তার এই মন্তব্য স্প্রিংফিল্ডে ব্যাপক বিপত্তি দেখা দেয়। এই শহর কিন্তু মি. ভান্সের নিজের শহর ওহাইয়ো থেকে খুব দূরে নয়।
সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে মি. ভান্স বলেছিলেন, “একটা গল্প তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন তিনি... মিডিয়া আসলে আমেরিকান জনগণের দুর্ভোগের দিকে মনোযোগ দেয়।”
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে তার নির্বাচনি এলাকার বাসিন্দারা হাইতিয়ান অভিবাসীদের পোষ্য প্রাণী খাওয়ার বিষয়ে তাকে বলেছিলেন। যদিও এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর জন্য তার সেনেট অফিসকে অনুরোধ করা হলেও তাদের তরফে সাড়া মেলেনি।
২০১৯ সালে গর্ভাবস্থার ১৫ সপ্তাহের পরে গর্ভপাত সম্পর্কিত দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করেছেন জেডি ভান্স।
তবে সম্প্রতি তিনি এই বিষয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছেন যে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে স্টেটগুলো।
তিনি জানিয়েছেন যে কংগ্রেস যদি গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে তবে ট্রাম্প দেশব্যাপী গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞায় ভেটো দেবেন। এই মন্তব্যের জন্য মি. ট্রাম্পের কাছ থেকে তার তিরস্কার জুটেছিল।
প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে মি. ট্রাম্প বলেন, “আমি জেডির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করিনি। আমি মনে করি না এই নিয়ে তার যদি কোনও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে থাকে তাহলে তা আমার চিন্তাকে প্রতিফলিত করবে। উনি আমার হয়ে কথা বলছিলেন না।”
বাংলা স্কুপ/ডেস্ক/এসকে
‘আমার তাকে নিন্দনীয় বলে মনে হয়।’
‘ওহ গড, একজন ইডিয়ট!’
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে ২০১৬ সালে টুইটার (বর্তমানে এক্স হ্যান্ডেল) এবং সাক্ষাৎকারের সময় এমনই মন্তব্য করেছিলেন জেডি ভান্স। এটা সেই সময়ের ঘটনা যখন স্মৃতিকথা ‘হিলিবিলি এলেজি’র হাত ধরে সদ্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন তিনি।
সেই বছরেই ফেসবুকে তার ল স্কুলের রুমমেট এবং বন্ধু জন ম্যাক্লরিনের (বর্তমানে জর্জিয়ার একজন স্টেট সেনেটর) সঙ্গে কথোপকথনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘আমেরিকান হিটলার’ বলেও মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল তাকে।
সময় বদলেছে। এখন বছর ৪০-এর মি. ভান্স প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘রানিং মেট’ হিসাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ভোটের ময়দানে লড়ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়োর এই সেনেটরের পরিবর্তন অনেককেই অবাক করেছে।
ডেমোক্র্যাট পার্টির জন ম্যাক্লরিনের কথায়, “(জেডি ভান্সের) টেক্সট বার্তায় লেখা ওই শব্দ থেকে আজ ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় সমর্থক হয়ে ওঠার বিষয়টা কল্পনাতীত।”
জেডি ভান্সের নির্ভরযোগ্য রক্ষণশীল ভোটিং রেকর্ড, যুবসম্প্রদায় এবং মধ্য-পশ্চিমা শিকড় ব্যালট বাক্সে রিপাবলিকানদের পক্ষে সমর্থন বাড়িয়ে তুলবে বলেই সেই অনেকে আশা করছেন।
২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থীদের দৌড়ে তিনি প্রথম দিকে থাকবেন বলেও আগাম অনুমান করা হচ্ছে।
এককালে ট্রাম্পের ‘কড়া সমালোচক’ হিসাবে পরিচিত মি. ভান্স প্রচারাভিযানের সময় রিপাবলিকান প্রার্থী হিসাবে নিজেকে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।
প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন বিরোধীদের ‘আক্রমণাত্মক’ সমালোক হিসাবেও। ঐতিহ্যগতভাবে একজন ‘রানিং মেট’-এর ভূমিকা তিনি পালন করছেন। যদিও মি. ট্রাম্পের নিজস্ব বক্তৃতার ধরনের নিরিখে সেটাকে কখন কখনও ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে হতে পারে।
তবে প্রচারাভিযানে তাকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেছে। নিয়মিতভাবে টেলিভিশন শো-তে অংশগ্রহণ করেছেন, বিতর্ক অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে তাকে।
নির্বাচনি সমাবেশগুলোতেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন যা অনেকাংশেই কমালা হ্যারিসের প্রচারাভিযান এবং তার সতর্কভাবে পরিকল্পিত মিডিয়া কৌশলের বিপরীত।
কিন্তু অভিবাসীদের প্রতি মি. ভান্সের কট্টরপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করার পর থেকেই তিনি ওহাইয়োর স্প্রিংফিল্ডে হাইতিয়ান অভিবাসীরা পোষা কুকুর-বেড়াল খেয়ে ফেলছে বলে যে গুজব রটেছিল, তার সমর্থনে বারবার মন্তব্য করেছেন।
মি. ভান্সের পুরনো সাক্ষাৎকারের বিভিন্ন মন্তব্যও আরও একবার সামনে এসেছে যেখানে তিনি গর্ভপাতের উপর দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন বা যুক্তরাজ্যকে ‘ইসলামপন্থী দেশ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
ওই তালিকায় তার তিন বছর আগের ‘সন্তানহীন ক্যাট লেডি’ সম্পর্কিত বিতর্কিত মন্তব্যও রয়েছে যেখানে তিনি মিজ হ্যারিসের প্রসঙ্গও টেনে এনেছিলেন। সেই মন্তব্য নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। শেষপর্যন্ত এই বিষয়ে সাফাইও দিতে হয়েছে তাকে।
জনমত জরিপ বলছে, এই বিতর্কই জেডি ভান্সকে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে কম জনপ্রিয় ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের একজন করে তুলেছে। অর্থনীতি সম্পর্কে তার পপুলিস্ট বার্তাও ভোটারদের বিভ্রান্ত করেছে বলে মনে করা হয়। এটা কিন্তু এমন একটা ইস্যু যাকে মি. ট্রাম্পের শিবির শক্তি হিসাবে দেখে এসেছে।
জন ম্যাক্লরিন মনে করেন তার প্রাক্তন রুমমেট আগে মনে করতেন রিপাবলিকান পার্টির উচিত শ্রমজীবী মানুষের আশার ভরসা দেওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সুযোগও করে দেওয়া। গত কয়েক বছরে যদিও তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচক থেকে তার রানিং মেট হয়ে ওঠার জেডি ভান্সের এই সফর বেশ আকর্ষণীয়। এই প্রতিবেদনে জেডি ভান্সের সেই সফরেরই উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবন
মি. ভান্সের জন্ম ওহাইয়োর মিডলটাউনে। তার নাম ছিল জেমস ডোনাল্ড বোম্যান। তার ছেলেবেলার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না।
তার বাবা যে সময় বাড়ি ছাড়েন, তখন জেডি ভান্সের বয়স খুবই কম আর মা লড়াই করছিলেন মাদকাসক্তির সঙ্গে। পরিস্থিতির কারণে প্রায়শই দাদু-দিদিমার বাড়িতে আশ্রয় নিতে হতো তাকে। পরে জেডি ভান্সকে তার দাদু-দিদিমা দত্তক নেন। বর্তমানে তাদের পদবিটাই ব্যবহার করেন মি. ভান্স।
তার ছাত্রজীবন আর কর্মজীবন বেশ উল্লেখযোগ্য। মিডলটন হাইস্কুল থেকে পাশ করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন কর্পসে যোগ দেন। পরে ইরাকে মোতায়েন করা হয় তাকে। এরপর ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইয়েল ল স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন।
পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়ায় বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।
জেডি ভান্সের বেড়ে ওঠা এবং তার ব্যক্তিত্ব শ্রমজীবী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারে ভেবেই তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত করেছেন বলে মনে করা হয়।
মি. ভান্সের ভারতীয় যোগ
মি. ভান্সের একটা ভারতীয় যোগ রয়েছে। তার স্ত্রী ঊষা চিলুকুরি ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
২০১৩ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন তাদের পরিচয় হয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইয়েল ল স্কুলে পড়ার সময় ‘শ্বেতাঙ্গ-অধ্যুষিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক অবক্ষয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রথম দেখা হয় তাদের। ২০১৪ সালে বিয়ে করেন এই যুগল। তারপর অনেকটা পথ একসঙ্গে পেরিয়ে এসেছেন তারা।
বর্তমানে এই দম্পতির তিনজন সন্তান রয়েছে - ইভান, বিবেক ও মিরাবেল।
লেখক হিসাবে খ্যাতি
‘হিলবিলি এলেজি’ নামক স্মৃতিকথার সাফল্য তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। সর্বাধিক বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকায় রয়েছে তার লেখা ‘হিলিবিলি এলেজি’, যার অবলম্বনে ছায়াছবিও তৈরি হয়েছে। নেটফ্লিক্সে দেখা যেতে পারে এই সিনেমা।
মি. ভান্সের লেখনীতে উঠে এসেছে অ্যাপেলেচিয়া অঞ্চলের কথা যেখানে তার বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা থাকতেন। এই বিশাল পার্বত্য অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের বিরাণ এলাকা থেকে শিল্পন্নোত মধ্য-অঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বের প্রান্ত পর্যন্ত প্রসারিত। এই অংশে দেশের কয়েকটা দরিদ্রতম এলাকাও রয়েছে।
‘হিলবিলি এলেজি’-তে মি. ভান্সের বেড়ে ওঠা, তার চারপাশের পরিস্থিতি, বন্ধু ও পরিজনদের ভুল সিদ্ধান্ত আর অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতার কথা ফুটে উঠেছে। রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি বর্ণনা করেছেন কীভাবে তার পরিচিত মানুষেরা পরিশ্রম করার বদলে সরকারি অনুদানের উপর নির্ভর করতেন।
এই বইয়ের সাফল্য তাকে লেখক হিসাবে বিখ্যাত করে তোলার পাশাপাশি,ভাষ্যকার হিসাবেও পরিচিতি দিয়েছিল। বিভিন্ন নামকরা অনুষ্ঠানে ভাষ্যকার হিসাবে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হতো যেখানে তিনি মূলত শ্বেতাঙ্গ শ্রমজীবী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের বিষয়ে কথা বলতেন।
সেই সময়, তৎকালীন রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী মি. ট্রাম্পের সমালোচনা করার সুযোগ খুব কমই হাতছাড়া করতেন তিনি।
২০১৬ সালের অক্টোবরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি মনে করি এই নির্বাচন সত্যিই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, বিশেষত শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণির ওপর।”
“এটা (তৎকালীন নির্বাচন) মানুষকে অন্যদের দিকে আঙুল তোলার অজুহাত দিচ্ছে, তা সে মেক্সিকান অভিবাসী হোক, চীনা বাণিজ্য বা অভিজাত ডেমোক্র্যাট হোক বা অন্যরা।”
প্রসঙ্গত, মি. ট্রাম্পের প্রচারের অংশ হিসাবে তিনি নিজেও এই একই কাজ করে এসেছেন।
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে রাজনীতি
২০১৭ সালে ওহাইয়োতে ফিরে আসেন এবং আর্থিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন জেডি ভান্স।
রাজনীতিতে তার প্রবেশকে কেন্দ্র করে অনেকদিন থেকেই গুঞ্জন চলছিল। এই গুঞ্জন বাস্তবে পরিণত হয় ২০২২ সালে যখন ওহাইয়োর রিপাবলিকান সেনেটর রব পোর্টম্যান পুনর্র্নিবাচনের জন্য প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রথমদিকে মি. ভান্সের রাজনৈতিক প্রচার বেশ ধীর গতিতে চলছিল। তার প্রাক্তন বস পিটার থিয়েল তাকে এক কোটি ডলার দিয়ে সাহায্য করলে নির্বাচনি প্রচারে গতি আসে।
ক্রমশ মি. ভান্সের আলোচনার ফোকাস অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে থাকে।
‘হিলিবিলি এলেজি’তে যাদের ব্যর্থতার বিষয়ে লিখেছিলেন, তাদের নিয়ে কথা বলার জন্য ক্রমশ কম সময় ব্যয় করতে থাকেন তিনি। পরিবর্তে ডেমোক্র্যাট ও অভিজাতদের সম্পর্কে বলার জন্য বেশি সময় ব্যয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
সেই সময় তার একাধিক বিতর্কিত মন্তব্যের ক্লিপিং আবার সামনে এসেছে।
তবে তার রাজনৈতিক ময়দানে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তার অতীতের সমালোচনা। কারণ ওহাইয়োতে রিপাবলিকানদের সমর্থকের সংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য।
ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে থাকা টেক্সট বার্তা অনুসারে, ২০২০ সালের শেষের দিক পর্যন্ত মি. ট্রাম্পের বিষয়ে সংশয় ছিল মি. ভান্সের। চার বছর আগে তিনি লিখেছিলেন যে প্রেসিডেন্ট “তার অর্থনৈতিক জনপ্রিয়তা (একটা বিচ্ছিন্ন চীন সম্পর্কিত নীতি ছাড়া) বাস্তবায়িত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন” এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদ হারাবেন।
তবে সেনেটের জন্য প্রচারের সময় তার আগের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন মি. ভান্স। এইভাবে তিনি মি. ট্রাম্পের এবং ক্রমশ রিপাবলিকানদের সমর্থন পেতে সক্ষম হন যা তাকে সেনেটে যেতে সাহায্য করে।
একইসঙ্গে তিনি ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ রাজনীতির একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন - এবং প্রায় সম্পূর্ণভাবেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে তাকে সহমত পোষণ করতেও দেখা যায়।
ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর হিসেবে বিবেচিত এই পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছেন জেডি ভান্স।
প্রসঙ্গত, তার স্ত্রী ঊষা ভান্সও তার ক্যারিয়ারে সফল।
তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের কেরানি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সম্প্রতি মুঙ্গার, টোলস অ্যান্ড ওলসন নামক শীর্ষস্থানীয় ল ফার্মের অংশ ছিলেন। তবে মি. ট্রাম্প জেডি ভান্সকে তার রানিং মেট হিসাবে মনোনীত করার পর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করেন ।
গাজা-ইউক্রেন সহ অন্যন্য ইস্যুতে তার অবস্থান
সেনেটে তিনি নির্ভরযোগ্য কনজারভেটিভ (রক্ষণশীল) ভোটার হিসাবে পরিচিত তিনি। জনপ্রিয় অর্থনৈতিক নীতিকে সমর্থন করতে দেখা যায়। ইউক্রেনকে সহায়তার ক্ষেত্রে সংশয় প্রকাশ করেছেন মি. ভান্স।
ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বাধীন চেম্বারে তার সংক্ষিপ্ত মেয়াদের কারণে, তার অনুমোদন করা বিল খুব কমই এগিয়ে গেছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নীতি পরিবর্তনের বদলে ‘বার্তা পাঠানোই’ এই বিলগুলো উপস্থাপনের পিছনে উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করা হয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে শিবির তৈরি হয়েছে বা প্রতিবাদ দেখানো হয়েছে এমন কলেজ এবং অনিবন্ধিত অভিবাসীদের নিয়োগকারী কলেজের জন্য ফেডারেল তহবিল থেকে যাওয়া টাকা আটকে দেওয়ার জন্য বিল উপস্থাপন করেছিলেন।
গত মার্চ মাসে এমন এক আইনের অনুমোদন করেছিলেন তিনি যেখানে বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন অনুসরণ না করলে চীন সরকারকে মার্কিন মূলধন বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
গত জুলাইয়ে ন্যাশনাল কনজারভেটিজম কনফারেন্সে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আমেরিকান গণতন্ত্রের জন্য আসল হুমকি হলো আমেরিকান ভোটাররা অভিবাসন কমানোর পক্ষে ভোট দিচ্ছে এবং আমাদের রাজনীতিবিদরা আমাদের আরও সংখ্যক অভিবাসিতদের নিয়ে এসে আমাদের পুরস্কৃত করে চলেছেন।”
তিনি বলেছিলেন যে ‘আমেরিকান ড্রিম’ ধারণার মূল কথাই হলো – “যে দেশকে আপনি নিজের বাড়ি বলে চেনেন, সেখানে আপনি নিজের এবং আপনার পরিবারের জন্য একটা ভাল জীবন গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন” যা “বামপন্থীরা অবরুদ্ধ” করে রেখেছে।
ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে তার মত- “এই বিষয়ে কোনও দিশা বা উপসংহার নেই যেদিকে আমরা যাচ্ছি বা ইতিমধ্যে অর্জন করেছি বলে দাবি করতে পারি।”
ওই একই সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন যে অভিবাসনের কারণে যুক্তরাজ্য “তেমন ভাল অবস্থায় নেই” এবং দাবি করেছিলেন যে লেবার পার্টির নেতৃত্বে ওই দেশ “প্রথম সত্যিকারের ইসলামপন্থী দেশ” হয়ে উঠবে যাদের হাতে পারমাণবিক বোমাও আছে।
তার মনোনয়নের পরপরই জুলাই মাসে মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে প্রবেশের সময় তিনি উচ্ছ্বসিত অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন।
তবে তারপর থেকে তার নাম খবরের শিরোনামে এসেছে মূলত বিতর্কের কারণেই।
ভোটের প্রচারে তার মন্তব্য এবং কিছু বিতর্ক
কোনও প্রমাণ নেই এমন এক ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া গুজবে উল্লেখ করা হয়েছিল, হাইতিয়ান অভিবাসীদের খাদ্য হলো পোষা প্রাণী। সেই গুজব শোনা গিয়েছিল মি. ভান্সের কণ্ঠেও। এই একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছিলেন মি. ট্রাম্প। তার এই মন্তব্য স্প্রিংফিল্ডে ব্যাপক বিপত্তি দেখা দেয়। এই শহর কিন্তু মি. ভান্সের নিজের শহর ওহাইয়ো থেকে খুব দূরে নয়।
সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে মি. ভান্স বলেছিলেন, “একটা গল্প তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন তিনি... মিডিয়া আসলে আমেরিকান জনগণের দুর্ভোগের দিকে মনোযোগ দেয়।”
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে তার নির্বাচনি এলাকার বাসিন্দারা হাইতিয়ান অভিবাসীদের পোষ্য প্রাণী খাওয়ার বিষয়ে তাকে বলেছিলেন। যদিও এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর জন্য তার সেনেট অফিসকে অনুরোধ করা হলেও তাদের তরফে সাড়া মেলেনি।
২০১৯ সালে গর্ভাবস্থার ১৫ সপ্তাহের পরে গর্ভপাত সম্পর্কিত দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করেছেন জেডি ভান্স।
তবে সম্প্রতি তিনি এই বিষয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছেন যে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে স্টেটগুলো।
তিনি জানিয়েছেন যে কংগ্রেস যদি গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে তবে ট্রাম্প দেশব্যাপী গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞায় ভেটো দেবেন। এই মন্তব্যের জন্য মি. ট্রাম্পের কাছ থেকে তার তিরস্কার জুটেছিল।
প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে মি. ট্রাম্প বলেন, “আমি জেডির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করিনি। আমি মনে করি না এই নিয়ে তার যদি কোনও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে থাকে তাহলে তা আমার চিন্তাকে প্রতিফলিত করবে। উনি আমার হয়ে কথা বলছিলেন না।”
বাংলা স্কুপ/ডেস্ক/এসকে