​টানা বৃষ্টিতে শরীয়তপুর শহরে জনজীবন বিপর্যস্ত

আপলোড সময় : ১৪-০৭-২০২৫ ০৩:০০:২৯ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৪-০৭-২০২৫ ০৩:০০:২৯ অপরাহ্ন
টানা চার দিনের বৃষ্টিতে শরীয়তপুর শহরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। নিম্নাঞ্চলে অনেকের বসতঘরেও ঢুকে পড়েছে পানি। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সামনে পানি জমায় চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সিভিল সার্জন অফিসের সামনে হাঁটুপানি জমেছে। নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

টানা বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে। সড়কে যানবাহন চলাচল করছে তুলনামূলক কম। স্কুল- কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম। ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়েছে বিরূপ প্রভাব। জেলা শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, অধিকাংশ খাল ও জলাশয় ভরাট করে ফেলায় সহজে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে, সামান্য বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় সব এলাকায় এখনো ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা যায়নি। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে যেসব এলাকায় জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে, সেসব এলাকায় দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 

শরীয়তপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে শরীয়তপুর পৌরসভা যাত্রা শুরু করে। ২৪ দশমিক ৭৫ বর্গকিলোমিটারের এ পৌর এলাকা ২০০৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত হয়। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ পৌরসভায় মোট ড্রেন করা হয়েছে ১০ কিলোমিটার। শহরের চৌরঙ্গী মোড় থেকে ৬৭০ মিটার ও পালং স্কুল এলাকা থেকে শাবনুর মার্কেট পর্যন্ত ৬৬০ মিটার ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী, ৭০ হাজার ৫০০ জনসংখ্যার এ পৌর এলাকায় মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৭৯ জন।গত বুধবার থেকে শরীয়তপুরে অবিরাম ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে পৌরসভার অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না। কর্মহীন হয়ে পড়ায় দুঃশ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছেন অনেকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মাঠ, সিভিল সার্জন অফিস, শরীয়তপুর মডেল টাউনের পশ্চিম পাশের চর পালং এলাকার কয়েকটি বাড়ির মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বালুচড়া, পুরান হাসপাতাল রোড, শরীয়তপুর পার্ক, শিল্পকলা একাডেমি, সদর ভূমি অফিসের উত্তর পাশ দিয়ে পাহাড় বাড়ি রোড, তুলাসার, নিরালা আবাসিক এলাকা, শান্তিনগর ও বেপারী পাড়াসহ পৌরসভার নিম্নাঞ্চলগুলো বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

পাহাড়কান্দি এলাকার শোভন পাহাড় বলেছেন, “আমাদের এলাকাটি নিচু হওয়ায় বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন এলাকায় ঘর-বাড়ি তলিয়ে যায়। শহরের আশপাশের খালগুলো খনন না করা হলে এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ করা না হলে আমাদের দুর্ভোগ কমবে না।”

শরীয়তপুর সিভিল সার্জন অফিসের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক এম এম হাবিবুর রহমান বলেছেন, “আমাদের ভবনের পাশের কোনো দিক দিয়ে পানি নিষ্কানের ব্যবস্থা নেই। ভারী বৃষ্টি হলেই জলবদ্ধতা দেখা দেয়। সিভিল সার্জন অফিসের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে, আমাদের অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।”বিডি ক্লিনের জেলা কমিটির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. মাসুদুর রহমান বলেছেন, “কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ন, খাল দখল ও ভরাট হওয়ার হওয়া। পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশানের হস্তক্ষেপে খাল উদ্ধার করে পানিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। অন্যথায় এ জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব হবে না।” 

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. রফিকুল ইসলাম মামুন বলেছেন, “একটু ভারী বৃষ্টি হলেই শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিসের সামনে পানি জমে। এর মূল কারণ হচ্ছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা। এ বিষয়ে আমরা শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগকে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ে তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।”

শরীয়তপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. ওয়াহিদ হোসেন বলেছেন, “অর্থ বরাদ্দ না থাকায় আমরা এখনো প্রতিটি এলাকায় ড্রেন করতে পারিনি। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও খাল ভরাট করার কারণে শহরের কিছু নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে পৌরসভা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পৌর এলাকার পালং স্কুল থেকে শাবনুর মার্কেট ও চৌরঙ্গী থেকে মারকাজ মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণে কাজ চলছে। কিছু কিছু বাড়ির মালিক বাধা দেওয়ায় ড্রেন করতে বেগ পেতে হয়। পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে জমে থাকা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ১০ জন শ্রমিকের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে রাস্তায় জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করছেন। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব হবে।”

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 

সম্পাদক ও প্রকাশক :

মোঃ কামাল হোসেন

অফিস :

অফিস : ৬/২২, ইস্টার্ণ প্লাাজা (৬ তলা), কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, হাতিরপুল, ঢাকা।

ইমেইল :