সোনার চেয়েও লাভজনক যে ফল চাষ

আপলোড সময় : ২৪-০৬-২০২৫ ০৩:০০:২৭ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৪-০৬-২০২৫ ০৩:০৮:৪৫ অপরাহ্ন
চকলেট তৈরির প্রধান উপাদান কোকোর বৈশ্বিক সংকটের ফলে দাম বেড়ে যাওয়ায় ইকুয়েডরের কৃষকরা তাদের প্রধান কৃষিপণ্য কলার বদলে কোকো চাষের দিকে ঝুঁকছে। চকলেটের এই মূল উপাদানের বৈশ্বিক ঘাটতির কারণে কোকোর দামে উল্লম্ফনে বিপুল মুনাফা করছেন।মিলাগ্রো, ইকুয়েডর থেকে এএফপি জানায়, কোকো এখন আন্দিজ অঞ্চলের দেশটিতে বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত হয়েছে, যা সোনার পাশাপাশি তামা, রূপা এবং দেশের শীর্ষ কৃষিপণ্য কলাকেও টেক্কা দিচ্ছে।

প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী বন্দর শহর গুয়ায়াকিলের নিকটবর্তী মিলাগ্রো অঞ্চলে ৫০ বছর বয়সী কৃষক সেরজিও লেমা যেন নিজের সৌভাগ্যে বিশ্বাসই করতে পারছেন না। তিনি তার বাগানের মধ্য দিয়ে হেঁটে বেড়াতে গিয়ে তার গাছে পাকা আয়তাকার কোকোর শুঁটি পরীক্ষা করার সময় এএফপিকে বলেন, কয়েক বছর আগেও কোকোর দাম এত কম ছিল যে, কেবলমাত্র খামারের খরচই কোনোভাবে মেটানো যেত। কিন্তু গত দুই বছরে জলবায়ু পরিবর্তন ও রোগবালাইয়ের কারণে আইভরি কোস্ট এবং ঘানায় (যারা বিশ্ব কোকো উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি যোগান দেয়) ভালো ফলন না হওয়ায় দাম বেড়ে যায়। কৃষক সেরজিও  লেমার আয় এখন তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। একশো কেজির এক বস্তা কোকোর দাম আগে যেখানে ছিল ১০০ ডলার, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ ডলারে।তিনি আরও বলেন, এখন আমার স্বপ্ন হল কিছু টাকা জমিয়ে ঋণ নিয়ে আরও একখণ্ড জমি কেনা।”

২০২৪ সালে, ইকুয়েডর ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের কোকো রপ্তানি করেছে। যা খনিশিল্পের আয়কে ছাড়িয়ে গেছে।২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, কোকো রপ্তানি কলা রপ্তানিকে ছাপিয়ে গেছে। যা বিগত ৬০ বছরে প্রথমবার ঘটেছে। ইকুয়েডর দীর্ঘদিন ধরে কলার শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ।দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লোস রিওস প্রদেশে, কৃষক মার্কো ভাসকেজ তার অতিরিক্ত আয়ে খামার আধুনিকায়ন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আগের দামে বিনিয়োগ করা অসম্ভব ছিল। এখন আমি বেশি বীজ কিনেছি এবং একটি সেতু নির্মাণ করেছি, যা আগে বন্যায় জমি প্লাবিত হতো।’বিশ্বব্যাপী "ঈশ্বরের খাদ্য" নামে পরিচিত কোকোর উৎপত্তিস্থল হিসেবে বিবেচিত ইকুয়েডর বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কোকো উৎপাদনকারী দেশটি। "ফাইন ফ্লেভার কোকো" রপ্তানিতেও বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে দেশটি-এই বিশেষ জাতের কোকো তার সমৃদ্ধ ও ফলীয় স্বাদের জন্য বিখ্যাত।তবে উৎপাদনের ৯০ শতাংশই সিসিএন-৫১ নামের জেনেটিকালি উন্নত এক প্রকার জাতের, যা ১৯৮০-এর দশকে উদ্ভাবিত হয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য। এই জাত আজ আফ্রিকার কোকো ক্ষেত্রগুলোর রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ইকুয়েডরের কোকো রপ্তানিকারক সমিতি আনেকাকাও-এর সভাপতি ইভান অনতানেদা বলেন, “এই সমৃদ্ধি আকস্মিক নয়; এটি বহু বছর ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ ও গবেষণার ফল, যার মাধ্যমে আমরা একটি টেকসই জাত তৈরি করতে পেরেছি।”জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আফ্রিকায় অতিবৃষ্টি ও চরম খরার কারণে ফসল ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, আন্তর্জাতিক বাজারে কোকোর দাম প্রতি মেট্রিক টনে রেকর্ড ১২০০০ ডলারে পৌঁছেছিল, যা পরে কমে ৮,৫০০ ডলারে নেমে আসে।আনেকাকাও-এর হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৪ লাখ উৎপাদক ও রপ্তানিকারক এই মূল্যবৃদ্ধির সুবিধা পেয়েছেন।তবে, এই অর্থনৈতিক জোয়ারের একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে: ইকুয়েডর, পেরু ও ভেনেজুয়েলাসহ অন্যান্য দক্ষিণ আমেরিকান দেশে কোকো চাষিদের লক্ষ্যবস্তু করছে চাঁদাবাজি ও অপরাধচক্র।অতিরিক্ত মুনাফার জন্য হুড়োহুড়ির কারণে পরিবেশগত ভাবমূর্তিও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। পরিবেশবাদীরা বারবার অভিযোগ করেছে, কোকো চাষে ব্যাপক বন উজাড় করা হচ্ছে।তবে ইউরোপীয় কমিশন ২০২৫ সালের মে মাসে প্রকাশিত একটি বহুল প্রতীক্ষিত প্রতিবেদনে ইকুয়েডরকে  উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বন উজাড়কারী দেশের তালিকা থেকে বাদ রেখেছে।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন

সম্পাদক ও প্রকাশক :

মোঃ কামাল হোসেন

অফিস :

অফিস : ৬/২২, ইস্টার্ণ প্লাাজা (৬ তলা), কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, হাতিরপুল, ঢাকা।

ইমেইল :