​ইসরায়েল যুদ্ধে ভালো করছে, এখন থামতে বলা কঠিন : ট্রাম্প

আপলোড সময় : ২১-০৬-২০২৫ ০৩:১৬:৩৩ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২১-০৬-২০২৫ ০৩:১৬:৩৩ অপরাহ্ন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে ইরানের ওপর হামলা বন্ধ করতে বলার পক্ষপাতী নন। যদিও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, যতক্ষণ ইসরায়েল ইরানের ওপর আক্রমণ চালাবে, ততক্ষণ ওয়াশিংটনের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা হবে না।

শুক্রবার (২০ জুন) ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন এই অনুরোধটা করা খুবই কঠিন। কেউ যদি জিততে থাকে, তখন তাকে থামানো একটু কঠিন হয়। সেই তুলনায় হেরে গেলে বলা সহজ হয়। তবে আমরা প্রস্তুত, ইচ্ছুক ও সক্ষম — আমরা ইরানের সঙ্গে কথা বলছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধের দিক থেকে ইসরায়েল ভালো করছে। আর… ইরান ততটা ভালো করছে না। তাই কাউকে থামাতে বলা এখন একটু কঠিন।’

ইরানের পরমাণু ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে নিষ্ক্রিয় করার লক্ষ্যে এক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, ‘ইসরায়েলি আগ্রাসন না থামা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনার জায়গা নেই।’ 

তবে পরে তিনি জেনেভায় ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন, যেখানে ইউরোপ একটি কূটনৈতিক পথ তৈরি করার আশায় ছিল।

ইউরোপীয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ট্রাম্প একেবারেই তাচ্ছিল্য করে বলেন, ‘তারা সাহায্য করেনি। ইরান ইউরোপের সঙ্গে কথা বলতে চায় না। তারা আমাদের সঙ্গেই কথা বলতে চায়। ইউরোপ এটা সামাল দিতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় শান্তির পক্ষেই থাকি। কিন্তু মাঝে মাঝে শান্তি আনতে কিছু কঠোরতা দরকার হয়।’

ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন স্থল সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা শেষ জিনিস যা আপনি চাইবেন।’

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ইরানকে একটা সময় দিচ্ছি। আমি বলব, দুই সপ্তাহই সর্বোচ্চ সময়সীমা ‘

ইরাক যুদ্ধ বনাম ইরান পরিস্থিতি
অনেকে আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও কোনো ভুল বা মিথ্যা অজুহাতে আরেকটি যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরাক যুদ্ধের সময় কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র ছিল না। কিন্তু এবার ইরানের ‘উল্লেখযোগ্য’ পরিমাণে পারমাণবিক উপকরণ জমা হয়েছে। তারা কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।’

সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘সময়সীমা মাস নয়, বরং কয়েক সপ্তাহ।’ যদিও ইসরায়েল দাবি করেছে, ১৩ জুন ভোরে তাদের প্রথম হামলার আগে ইরান ‘মাত্র কয়েক দিনের’ দূরত্বে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি ছিল।

জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক গ্যাবার্ড ‘ভুল’
জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড মার্চে কংগ্রেসে বলেছিলেন, ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়নি। ট্রাম্প আবারও তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘তিনি ভুল।’

পরে গ্যাবার্ড এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্টে বলেন, তার বক্তব্য ‘বিভাজন তৈরির উদ্দেশে’ ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

তিনি লেখেন, ‘আমেরিকার গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ইরান যদি চূড়ান্তভাবে অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তারা কয়েক সপ্তাহ থেকে মাসের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে পারবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে এটা ঘটতে দিতে চান না, সে ব্যাপারে তিনি পরিষ্কার এবং আমি এতে একমত।’

ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কি ইরানকে শান্তিপূর্ণ ও স্বল্প মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেবেন? জবাবে ট্রাম্প প্রশ্ন তোলেন, ‘তাদের এত তেল আছে, তাহলে পরমাণু বিদ্যুৎ দরকারই বা কেন?’

ইসরায়েল একা ফোর্ডো ধ্বংস করতে পারবে না
ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল একা ইরানের ফোর্ডো গোপন পারমাণবিক স্থাপনাটি ধ্বংস করতে পারবে না। তার কথায়, ‘তাদের সক্ষমতা সীমিত। তারা হয়তো অল্প কিছু অংশ ভাঙতে পারবে, কিন্তু গভীরে যেতে পারবে না। তাদের সেই সক্ষমতা নেই।’ 

তবে তিনি এও বলেন, ‘হয়তো সেটা আর প্রয়োজন হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগে বলেছিলেন, ইসরায়েলের পক্ষে সব পারমাণবিক স্থাপনাই ধ্বংস করা সম্ভব।

তবে ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্রের মতো বি-২ বোমারু বিমান বা ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা নেই, যেগুলো প্রায় ৬০ মিটার গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম। ফোর্ডো পর্বতের ভেতরে থাকায় এর ধ্বংসে এমন অস্ত্র অত্যাবশ্যক হতে পারে।

ইসরায়েল যদিও দাবি করেছে তারা বিকল্প উপায়ে ফোর্ডো ধ্বংস করতে পারবে। তারপরও তারা যুক্তরাষ্ট্রকে এই লড়াইয়ে পাশে চায়। বিশেষ করে ফোর্ডোর বিরুদ্ধে সরাসরি হামলার জন্য।

কূটনৈতিক ব্যর্থতা ও যুদ্ধের সূচনা
ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে মধ্যপ্রাচ্যে হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং যুদ্ধ নিরুৎসাহিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে একটি কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত দুই মাস সময়সীমার মধ্যে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

ইসরায়েল গত সপ্তাহে সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়াকে কারণ দেখিয়ে ইরানে তাদের ব্যাপক সামরিক হামলা শুরু করে। লক্ষ্য ছিল— ইরানি সামরিক নেতারা, পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু।

ইরান পাল্টা জবাবে ৪৭০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রায় এক হাজার ড্রোন ইসরায়েলে নিক্ষেপ করেছে।

ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও হাসপাতাল সূত্র অনুযায়ী, ইরানি হামলায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আবাসিক ভবনে আঘাত হেনেছে, তীব্র ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে ইরান দাবি করেছে, ইসরায়েলি হামলায় তাদের অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও বেসামরিক মানুষ। এরপর থেকে তারা নিহতের সংখ্যা আর হালনাগাদ করেনি।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এসকে

সম্পাদক ও প্রকাশক :

মোঃ কামাল হোসেন

অফিস :

অফিস : ৬/২২, ইস্টার্ণ প্লাাজা (৬ তলা), কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, হাতিরপুল, ঢাকা।

ইমেইল :