গণবিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিদ্যুৎখাতে মহা লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় খুচরায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম ছিল ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম প্রায় ২৪০ শতাংশ বাড়ানো হলেও এই সময়ে বিদ্যুত খাতের লোকসান ঠেকেছে ২ লাখ কোটি টাকার উপর। বিপরীতে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যাযের ভিভিআইপি ব্যক্তি থেকে শুরু বিদ্যুৎ খাতের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা শুরু করে মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ খাত থেকে গত ১৫ বছরে প্রায় কয়েক লাখ কোটি টাকা লুটপাট করেছে।
পতিত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাত ছিল ওই সময়ে এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের জন্য আলাদীনের যাদুর চেরাগের মতো। অভিযোগ আছে, লুটপাটকারি পতিত সরকারের দায়িত্বে থাকা বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিব কিংবা পতিত সরকারের সবোর্চচ পর্যায়ের ভিভিআইপি ব্যক্তিদের কোটি কোটি টাকা কিংবা ডলার প্রয়োজন হতো ‘আলাদিনের চেরাগ’ খ্যাত বিদ্যুৎ খাতের গায়ে হাত দিত। বিদ্যুত খাতে তাদের হাত পড়লেই বেরিয়ে আসতো ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ নামক এক অদৃশ্য দৈত্য। অদৃশ্য দৈত্য দৃশ্যমান হয়েই লুটেরাদের কাছে নির্দেশ প্রার্থনা করতো, হুজুর বলুন। সেই সময় অদৃশ্য দৈত্য থাকায় লুটেরাদের সুবিধা প্রকট হতো। তারা জানিয়ে দিতেন এত টাকা প্রয়োজন, অদৃশ্য দৈত্য তৎক্ষনি তা ব্যবস্থা করে দিতে পারতো।
পতিত সরকারের শেষ কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ খাতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিন্ডিকেট তাদের কাজের সুবিধার্থে একজন অদৃশ্য দৈত্য সৃষ্টি করেন। অদৃশ্য দৈত্য হিসেবে তারা বেছে নিয়েছিলেন বিদ্যুৎ ভবনের আওয়ামীপন্থী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রক ( হিসাব ও অর্থ ) মোঃ নাছরুল হককে। ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের বরপুত্র হিসেবে পরিচিত মোঃ নাছরুল হক ছিলেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান, অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওএসডি হওয়া সাবেক সদস্য (অর্থ) শেখ আকতার হোসেনের ছায়াসঙ্গী। মোঃ নাছরুল হকের স্বাক্ষরে ২০২৩/২০২৪ অর্থবছরে অর্থ্যাৎ মাত্র এক বছরেই বিদ্যুৎ বিভাগে প্রায় ৮৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আইসিপি, রেন্টাল, ক্রসবর্ডার বা ইন্ডিয়া থেকে আমদানি ব্যয়, ক্যাপাসিটি চার্জ, উন্নয়ন, সংস্কারসহ বিভিন্ন খাতে এই অর্থ ব্যয় দেখানো হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন খাতের অর্থ লুটপাট সহজতর করতে এই খাতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিন্ডিকেটরা বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড শাখার সভাপতি মোঃ নাছরুল হককে অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে নিয়ম বহির্ভূতভাবে একক ক্ষমতা প্রদান করে। সিন্ডিকেটের কাজের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান ও সদস্য আকতার হোসেন সরাসরি ভূমিকা নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সকল ব্যাংক হিসাব পরিচালনা এবং তহবিল স্থাপনের ক্ষেত্রে মোঃ নাছরুল হকের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা করেন। অর্থাৎ তহবিল স্থাপনের নোটে বা চেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের যে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা অনুমোদন বা স্বাক্ষর করলেও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি নাছরুল হক অনুমোদন না দিলে কিংবা স্বাক্ষর না করলে তহবিল স্থানান্তর হয় না। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুবিধার্থে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণবিধি লংঘন করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এ রকম সিদ্ধান্ত নেয়। এ থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আর্থিক শৃংখলা ভঙ্গ হয়। সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও প্রতিমন্ত্রীর ছোটভাই ইন্তেখাবুল হামিদ, কেরানীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, বেক্সিমকো, সামিট, ইউনাইটেড, হোসাফ, এস আলম গ্রুপ ও পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরসহ উচ্চ পর্যায়ের সকল সিন্ডিকেটের হাজার হাজার কোটি টাকা নয়ছয় করার সুবিধা হয়। এই সুযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়াল সিন্ডিকেটের সহযোগী হিসেবে ‘অদৃশ্য দৈত্য’ নাছরুল হকের নেতৃত্বে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তারা আরেকটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে আখের গুছিয়েছেন। নাছরুল হক সিন্ডিকেটে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন অর্থ পরিদপ্তরের পরিচালক হাবিব উল্লাহ, অতিরিক্ত পরিচালক (বহিঃ অর্থ) রুহুল কবির, উপ-সচিব আব্দুল হালিম, উপ-পরিচালক ( ফান্ড) নুরুস ছফা ও মেহবুব মোর্শেদ। বিদ্যুৎ ভবনে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ নামে তাদের একটি সংগঠন আছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা হিসেবে তারা বছরের পর বছর ধরে একই পদে, একই স্থানে কর্মরত। বিদ্যুৎ ভবনের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মোহাঃ নাছরুল হক ২০২১ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদুৎ ভবনে ‘হিসাব ও অর্থ এর দপ্তর’ শাখায় পরিচালক অর্থ, পরিচালক হিসাব এবং পদোন্নতি পেয়ে নিয়ন্ত্রক ( হিসাব ও অর্থ ) পদে কাজ করছেন। তাকে পদোন্নতি দিয়েও একই স্থানে বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে। উপপরিচালক (অর্থ) মেহবুব মোর্শেদ গত ১২ বছর ৮ মাস ধরে, মোঃ নূরুস সফা কর্মরত ১১ বছর ৭ মাস ধরে একই পদে কর্মরত। উপপরিচালক (অর্থ) তালুকাদার জুলফিকার কয়েকদফা পদোন্নতি পেয়েওে ২৫ বছর ৭ মাস যাবৎ এই স্থানে। উপ সচিব আব্দুল হালিম ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে অর্থ্যাৎ ৮ বছর ৯ মাস ধরে একই স্থানে কর্মরত। বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃত্ব দেওয়ায় বিদ্যুৎ ভবনের এই কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে কাজ করার সুযোগ পায়। বছরের পর বছর ধরে অভিযুক্ত বিদ্যুৎ ভবনের ‘হিসাব ও অর্থ এর দপ্তর’ শাখার কর্মকর্তারা একই স্থানে কর্মরত থেকে মাফিয়া সিন্ডিকেটদের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছেন। নিজেরাও হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে অভিযুক্তরা একই পদ আকঁড়ে ধরে সেবার বদলে ঘুষ, দুর্নীতি, কমিশন, পদোন্নতি,বদলী বাণিজ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিল অনুমোদন, বিল ছাড় করা প্রতিটি খাতে এ সিন্ডিকেটকে টাকা দিতে হতো। বিদ্যুৎ ভবনের বঙ্গবন্ধু পরিষদের এই সিন্ডিকেটের দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তারা দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করে বিদেশে অর্থপাচার, বিলাসবহুল জীবন-যাপন এবং প্রতিবেশি দেশে একাধিক বাড়ি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক কর্মকর্তা কর্মচারীদের পেনশন ফান্ড, ডেপ্রিসিয়েশন ফান্ড, কেন্দ্রীয় জি.পি.এফ, গ্রাহক জামানতের অর্থ, ঠিকাদার জামানতের অর্থ এবং সম্পত্তি বীমা তহবিলের অর্থ ইত্যাদি বাবদ জমাকৃত অর্থ স্থায়ী জামানত হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা হয়। সুদসহ যাহার পরিমাণ ৪,৪৪৮.৪২ ( চার হাজার চারশত আটচল্লিশ দশমিক বিয়াল্লিশ) কোটি টাকা। এ টাকার মধ্যে ৩০২৬.৩৭ (তিন হাজার ছাব্বিশ দশমিক সাইত্রিশ) কোটি টাকা সিন্ডিকেট প্রধান, আলাদিনের চেরাগের ‘অদৃশ্য দৈত্য’, নিয়ন্ত্রক (হিসাব ও অর্থ ) নাছরুল হক সরকারি ব্যাংকে জমা না রেখে বেসরকারি ‘দুর্বল’ ব্যাংকসমূহে জমা করেন।
এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীনসহ আওয়ামী লীগের ব্যাংক লুটপাটকারীদের বিভিন্ন ‘দূর্বল’ ব্যাংকে তিন থেকে সাড়ে শতাংশ হারে কমিশন নিয়ে টাকা জমা রেখে নাছরুল হক সিন্ডিকেট হাতিয়ে নেয় পায় শতকোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে ১৬৬১. ৬২ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫৩৯.৯৪ কোটি টাকা, ফাষ্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকে ১৭১.৭৫ কোটি টাকা, ন্যাশন্যাল ব্যাংক লি. এ ১৮১.৮২ কোটি টাকা, ইউসিবি ব্যাংকে ২৬২.০৭ কোটি টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সরকারি ব্যাংকে টাকা জমা না রেখে নাছরুল হক সিন্ডিকেট প্রায় শত কোটি কমিশন গ্রহনের মাধ্যমে এসব ঝুঁিকপূর্ন এবং দুর্বল টাকা জমা করেন। এখন প্রয়োজনের সময় টাকা উত্তোলন করতে না পেরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আর্থিক সংকটে পড়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের প্রাপ্য না পেয়ে আন্দোলন করছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়াল সিন্ডিকেটের সহযোগী, তাদের ‘অদৃশ্য দৈত্য’, নিয়ন্ত্রক ( হিসাব ও অর্থ ) নাছরুল হকের স্বাক্ষরে বিগত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে আইপিপি, রেন্টাল, ক্রসবর্ডার বা ইন্ডিয়া থেকে আমদানিসহ বিদ্যুৎ ক্রয় খাতে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই দেয়া হয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, এক বছরে ব্যয় করা ৮৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে কমপক্ষে ১৫/১৬ হাজার কোটি টাকা মাফিয়া সিন্ডিকেটের পকেটে ঢুকেছে। আর এই হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিতে সবার ক্যাশিয়ার হিসেবে ছিলেন ‘অদৃশ্য দৈত্য’ নাছরুল হক। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যম সারির কর্মকর্তা হয়েও সুযোগে হাতিয়ে নিয়েছেন শত কোটি টাকা। তার বড় ছেলে ইশবা রায়হান কানাডায় পড়ালেখা করে। এদিকে নাছরুল হক প্রতিমাসে একাধিকবার বড় অংকের অর্থ পাঠাতেন কানাডায়। ছেলের পড়ালেখার সুযোগ নিয়ে এই অর্থ পাচার করেছেন কানাডায়।
ফোর পার্সেন্ট সিন্ডিকেট : বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, সদস্য স্বাক্ষর করলেও বিদ্যুৎ ভবনের হিসাব ও অর্থ শাখার নাছরুল হক সিন্ডিকেট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিলের বিপরীতে তহবিল স্থাপনের জন্য শতকরা ৩ থেকে ৪ শতাংশ কমিশন নিয়ে থাকেন। তাদেরকে ঘুষ প্রদান ব্যতিত কোন বিলের বিপরীতে অর্থ ছাড় অথবা তহবিল স্থাপন হয় না। M/s GE Global Parts and Products GmbH এবং M/s BHEL-GE Gas Turbine Services pvt.Ltd. India এই দুটি প্রতিষ্ঠান নাছরুল হক সিন্ডিকেটকে ঘুষ না দেওয়ার কারণে তাদের পাঁচটি ফাইল প্রায় ৭ (সাত) মাস তহবিল স্থাপন না করে আটকে রাখা হয়। বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধযোগ্য বিলগুলি আটকে রাখায় মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে ১.১৭ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে। গত ১৫ বছরে শুধমাত্র ফাইল আটকে রাখার কারনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতি হয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা।
বহাল তবিয়তে নাছরুল হক সিন্ডিকেট: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, সদস্য (অর্থ)কে সরানো হলেও নাছরুল হকসহ তার সিন্ডিকেটের সকল সদস্য, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সকল কর্মকর্তা স্ব স্ব পদে বহাল তবিয়তে আছেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাছরুল হক ও তার সহযোগী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সদ্য অবসরে যাওয়া সচিব বরাবর আবেদন করেছেন গত এক মাস আগে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রক ( হিসাব ও অর্থ ) মোঃ নাছরুল হক বলেন, তিনি কোন রকম অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতির সাথে জড়িত নয়। হিসাব ও অর্থ শাখায় কোন সিন্ডিকেট নেই। তারা তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করেন।
এসব বিষয়ে পিডিবির সাবেক কোনো চেয়ারম্যান বা সদস্য মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিগত সরকারের আমলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ লোপাট হয়েছে। এসবের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। এজন্য একজন বিচারপতিকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। (চলবে)
বাংলা স্কুপ/বিশেষ প্রতিবেদক/এসকে
পতিত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাত ছিল ওই সময়ে এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের জন্য আলাদীনের যাদুর চেরাগের মতো। অভিযোগ আছে, লুটপাটকারি পতিত সরকারের দায়িত্বে থাকা বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিব কিংবা পতিত সরকারের সবোর্চচ পর্যায়ের ভিভিআইপি ব্যক্তিদের কোটি কোটি টাকা কিংবা ডলার প্রয়োজন হতো ‘আলাদিনের চেরাগ’ খ্যাত বিদ্যুৎ খাতের গায়ে হাত দিত। বিদ্যুত খাতে তাদের হাত পড়লেই বেরিয়ে আসতো ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ নামক এক অদৃশ্য দৈত্য। অদৃশ্য দৈত্য দৃশ্যমান হয়েই লুটেরাদের কাছে নির্দেশ প্রার্থনা করতো, হুজুর বলুন। সেই সময় অদৃশ্য দৈত্য থাকায় লুটেরাদের সুবিধা প্রকট হতো। তারা জানিয়ে দিতেন এত টাকা প্রয়োজন, অদৃশ্য দৈত্য তৎক্ষনি তা ব্যবস্থা করে দিতে পারতো।
পতিত সরকারের শেষ কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ খাতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিন্ডিকেট তাদের কাজের সুবিধার্থে একজন অদৃশ্য দৈত্য সৃষ্টি করেন। অদৃশ্য দৈত্য হিসেবে তারা বেছে নিয়েছিলেন বিদ্যুৎ ভবনের আওয়ামীপন্থী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রক ( হিসাব ও অর্থ ) মোঃ নাছরুল হককে। ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের বরপুত্র হিসেবে পরিচিত মোঃ নাছরুল হক ছিলেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান, অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওএসডি হওয়া সাবেক সদস্য (অর্থ) শেখ আকতার হোসেনের ছায়াসঙ্গী। মোঃ নাছরুল হকের স্বাক্ষরে ২০২৩/২০২৪ অর্থবছরে অর্থ্যাৎ মাত্র এক বছরেই বিদ্যুৎ বিভাগে প্রায় ৮৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আইসিপি, রেন্টাল, ক্রসবর্ডার বা ইন্ডিয়া থেকে আমদানি ব্যয়, ক্যাপাসিটি চার্জ, উন্নয়ন, সংস্কারসহ বিভিন্ন খাতে এই অর্থ ব্যয় দেখানো হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন খাতের অর্থ লুটপাট সহজতর করতে এই খাতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিন্ডিকেটরা বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড শাখার সভাপতি মোঃ নাছরুল হককে অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে নিয়ম বহির্ভূতভাবে একক ক্ষমতা প্রদান করে। সিন্ডিকেটের কাজের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান ও সদস্য আকতার হোসেন সরাসরি ভূমিকা নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সকল ব্যাংক হিসাব পরিচালনা এবং তহবিল স্থাপনের ক্ষেত্রে মোঃ নাছরুল হকের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা করেন। অর্থাৎ তহবিল স্থাপনের নোটে বা চেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের যে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা অনুমোদন বা স্বাক্ষর করলেও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি নাছরুল হক অনুমোদন না দিলে কিংবা স্বাক্ষর না করলে তহবিল স্থানান্তর হয় না। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুবিধার্থে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণবিধি লংঘন করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এ রকম সিদ্ধান্ত নেয়। এ থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আর্থিক শৃংখলা ভঙ্গ হয়। সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও প্রতিমন্ত্রীর ছোটভাই ইন্তেখাবুল হামিদ, কেরানীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, বেক্সিমকো, সামিট, ইউনাইটেড, হোসাফ, এস আলম গ্রুপ ও পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরসহ উচ্চ পর্যায়ের সকল সিন্ডিকেটের হাজার হাজার কোটি টাকা নয়ছয় করার সুবিধা হয়। এই সুযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়াল সিন্ডিকেটের সহযোগী হিসেবে ‘অদৃশ্য দৈত্য’ নাছরুল হকের নেতৃত্বে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তারা আরেকটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে আখের গুছিয়েছেন। নাছরুল হক সিন্ডিকেটে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন অর্থ পরিদপ্তরের পরিচালক হাবিব উল্লাহ, অতিরিক্ত পরিচালক (বহিঃ অর্থ) রুহুল কবির, উপ-সচিব আব্দুল হালিম, উপ-পরিচালক ( ফান্ড) নুরুস ছফা ও মেহবুব মোর্শেদ। বিদ্যুৎ ভবনে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ নামে তাদের একটি সংগঠন আছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা হিসেবে তারা বছরের পর বছর ধরে একই পদে, একই স্থানে কর্মরত। বিদ্যুৎ ভবনের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মোহাঃ নাছরুল হক ২০২১ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদুৎ ভবনে ‘হিসাব ও অর্থ এর দপ্তর’ শাখায় পরিচালক অর্থ, পরিচালক হিসাব এবং পদোন্নতি পেয়ে নিয়ন্ত্রক ( হিসাব ও অর্থ ) পদে কাজ করছেন। তাকে পদোন্নতি দিয়েও একই স্থানে বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে। উপপরিচালক (অর্থ) মেহবুব মোর্শেদ গত ১২ বছর ৮ মাস ধরে, মোঃ নূরুস সফা কর্মরত ১১ বছর ৭ মাস ধরে একই পদে কর্মরত। উপপরিচালক (অর্থ) তালুকাদার জুলফিকার কয়েকদফা পদোন্নতি পেয়েওে ২৫ বছর ৭ মাস যাবৎ এই স্থানে। উপ সচিব আব্দুল হালিম ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে অর্থ্যাৎ ৮ বছর ৯ মাস ধরে একই স্থানে কর্মরত। বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃত্ব দেওয়ায় বিদ্যুৎ ভবনের এই কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে কাজ করার সুযোগ পায়। বছরের পর বছর ধরে অভিযুক্ত বিদ্যুৎ ভবনের ‘হিসাব ও অর্থ এর দপ্তর’ শাখার কর্মকর্তারা একই স্থানে কর্মরত থেকে মাফিয়া সিন্ডিকেটদের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছেন। নিজেরাও হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে অভিযুক্তরা একই পদ আকঁড়ে ধরে সেবার বদলে ঘুষ, দুর্নীতি, কমিশন, পদোন্নতি,বদলী বাণিজ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিল অনুমোদন, বিল ছাড় করা প্রতিটি খাতে এ সিন্ডিকেটকে টাকা দিতে হতো। বিদ্যুৎ ভবনের বঙ্গবন্ধু পরিষদের এই সিন্ডিকেটের দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তারা দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করে বিদেশে অর্থপাচার, বিলাসবহুল জীবন-যাপন এবং প্রতিবেশি দেশে একাধিক বাড়ি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক কর্মকর্তা কর্মচারীদের পেনশন ফান্ড, ডেপ্রিসিয়েশন ফান্ড, কেন্দ্রীয় জি.পি.এফ, গ্রাহক জামানতের অর্থ, ঠিকাদার জামানতের অর্থ এবং সম্পত্তি বীমা তহবিলের অর্থ ইত্যাদি বাবদ জমাকৃত অর্থ স্থায়ী জামানত হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা হয়। সুদসহ যাহার পরিমাণ ৪,৪৪৮.৪২ ( চার হাজার চারশত আটচল্লিশ দশমিক বিয়াল্লিশ) কোটি টাকা। এ টাকার মধ্যে ৩০২৬.৩৭ (তিন হাজার ছাব্বিশ দশমিক সাইত্রিশ) কোটি টাকা সিন্ডিকেট প্রধান, আলাদিনের চেরাগের ‘অদৃশ্য দৈত্য’, নিয়ন্ত্রক (হিসাব ও অর্থ ) নাছরুল হক সরকারি ব্যাংকে জমা না রেখে বেসরকারি ‘দুর্বল’ ব্যাংকসমূহে জমা করেন।
এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীনসহ আওয়ামী লীগের ব্যাংক লুটপাটকারীদের বিভিন্ন ‘দূর্বল’ ব্যাংকে তিন থেকে সাড়ে শতাংশ হারে কমিশন নিয়ে টাকা জমা রেখে নাছরুল হক সিন্ডিকেট হাতিয়ে নেয় পায় শতকোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে ১৬৬১. ৬২ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫৩৯.৯৪ কোটি টাকা, ফাষ্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকে ১৭১.৭৫ কোটি টাকা, ন্যাশন্যাল ব্যাংক লি. এ ১৮১.৮২ কোটি টাকা, ইউসিবি ব্যাংকে ২৬২.০৭ কোটি টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সরকারি ব্যাংকে টাকা জমা না রেখে নাছরুল হক সিন্ডিকেট প্রায় শত কোটি কমিশন গ্রহনের মাধ্যমে এসব ঝুঁিকপূর্ন এবং দুর্বল টাকা জমা করেন। এখন প্রয়োজনের সময় টাকা উত্তোলন করতে না পেরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আর্থিক সংকটে পড়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের প্রাপ্য না পেয়ে আন্দোলন করছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়াল সিন্ডিকেটের সহযোগী, তাদের ‘অদৃশ্য দৈত্য’, নিয়ন্ত্রক ( হিসাব ও অর্থ ) নাছরুল হকের স্বাক্ষরে বিগত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে আইপিপি, রেন্টাল, ক্রসবর্ডার বা ইন্ডিয়া থেকে আমদানিসহ বিদ্যুৎ ক্রয় খাতে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই দেয়া হয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, এক বছরে ব্যয় করা ৮৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে কমপক্ষে ১৫/১৬ হাজার কোটি টাকা মাফিয়া সিন্ডিকেটের পকেটে ঢুকেছে। আর এই হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিতে সবার ক্যাশিয়ার হিসেবে ছিলেন ‘অদৃশ্য দৈত্য’ নাছরুল হক। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যম সারির কর্মকর্তা হয়েও সুযোগে হাতিয়ে নিয়েছেন শত কোটি টাকা। তার বড় ছেলে ইশবা রায়হান কানাডায় পড়ালেখা করে। এদিকে নাছরুল হক প্রতিমাসে একাধিকবার বড় অংকের অর্থ পাঠাতেন কানাডায়। ছেলের পড়ালেখার সুযোগ নিয়ে এই অর্থ পাচার করেছেন কানাডায়।
ফোর পার্সেন্ট সিন্ডিকেট : বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, সদস্য স্বাক্ষর করলেও বিদ্যুৎ ভবনের হিসাব ও অর্থ শাখার নাছরুল হক সিন্ডিকেট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিলের বিপরীতে তহবিল স্থাপনের জন্য শতকরা ৩ থেকে ৪ শতাংশ কমিশন নিয়ে থাকেন। তাদেরকে ঘুষ প্রদান ব্যতিত কোন বিলের বিপরীতে অর্থ ছাড় অথবা তহবিল স্থাপন হয় না। M/s GE Global Parts and Products GmbH এবং M/s BHEL-GE Gas Turbine Services pvt.Ltd. India এই দুটি প্রতিষ্ঠান নাছরুল হক সিন্ডিকেটকে ঘুষ না দেওয়ার কারণে তাদের পাঁচটি ফাইল প্রায় ৭ (সাত) মাস তহবিল স্থাপন না করে আটকে রাখা হয়। বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধযোগ্য বিলগুলি আটকে রাখায় মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে ১.১৭ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে। গত ১৫ বছরে শুধমাত্র ফাইল আটকে রাখার কারনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতি হয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা।
বহাল তবিয়তে নাছরুল হক সিন্ডিকেট: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, সদস্য (অর্থ)কে সরানো হলেও নাছরুল হকসহ তার সিন্ডিকেটের সকল সদস্য, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সকল কর্মকর্তা স্ব স্ব পদে বহাল তবিয়তে আছেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাছরুল হক ও তার সহযোগী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সদ্য অবসরে যাওয়া সচিব বরাবর আবেদন করেছেন গত এক মাস আগে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রক ( হিসাব ও অর্থ ) মোঃ নাছরুল হক বলেন, তিনি কোন রকম অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতির সাথে জড়িত নয়। হিসাব ও অর্থ শাখায় কোন সিন্ডিকেট নেই। তারা তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করেন।
এসব বিষয়ে পিডিবির সাবেক কোনো চেয়ারম্যান বা সদস্য মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিগত সরকারের আমলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ লোপাট হয়েছে। এসবের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। এজন্য একজন বিচারপতিকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। (চলবে)
বাংলা স্কুপ/বিশেষ প্রতিবেদক/এসকে