
বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন দপ্তর, সংস্থা ও কোম্পানিগুলোতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকরির অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত মানদণ্ড নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। প্রকৌশলীরা বলছেন, অসম প্রতিযোগিতা ও বৈষম্য নিরসনের জন্য চাকরির অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত মানদণ্ড সংশোধন করা জরুরি। প্রকৌশলীদের দাবির সঙ্গে একমত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানও। শীঘ্রই প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, সম্প্রতি সরকারি খাতের (জিওবি/এসওই/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা) ক্ষেত্রে ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা ও তিন বছর জাতীয় পে-স্কেলের গ্রেড-০৪ বা তদূর্ধ পদে চাকরির অভিজ্ঞতা রাখার বিষয়টি উল্লেখ করে সংশোধনী আনা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের সংশোধনী এখনো আনা হয়নি।
গত ২৯ এপ্রিল বিদ্যুৎ বিভাগের কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স-২ অধিশাখার উপসচিব ফারজানা খানম স্বাক্ষরিত আদেশে (স্মারক নং- ২৭.০০.০০০০.০৮৯.০৬.০০১.২৫.১৬৩) শুধুমাত্র বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে (বিআরইবি) নিয়োগসংক্রান্ত গাইডলাইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। এতে বলা হয়, ওই পদ দুটিতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (এসি) হিসেবে তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেই আবেদন করা যাবে।
বিগত সরকারের সময় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (এসি) হিসেবে তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে আবেদন করা যেত। কিন্তু ২০২৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এক 'অতি জরুরি' অফিস আদেশে (স্মারক নং-২৭.০০.০০০০.০৮৯.০৬.০০১.২৫.৫৮) বলা হয়, ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে আবেদনের জন্য প্রার্থীর কমপক্ষে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, যার মধ্যে কমপক্ষে ৩ বছর উচ্চপদস্থ ব্যবস্থাপনা পদে (প্রধান প্রকৌশলী বা সমমানের এবং তদুর্ধ) কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এমডি নিয়োগের মানদণ্ড সংক্রান্ত এই জটিলতা তুলে ধরে এর প্রতিকার চেয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ বিতরণী কোম্পানির প্রকৌশলীরা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ও কোম্পানিগুলোর বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানা যায়, আবেদনগুলোতে প্রকৌশলীরা বলেছেন, বিদ্যুৎ খাতের সকল প্রতিষ্ঠানে প্রধান প্রকৌশলী পদ শূন্য পদের বিপরীতে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। শূন্যপদের বিপরীতে পদোন্নতি দেওয়া হয় বিধায় অধিকাংশ প্রার্থীর ৩০-৩২ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকার পরেও দেখা যায় যে খুব কমসংখ্যক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীই প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পান এবং পদোন্নতি পেলেও এক থেকে দেড়বছর প্রধান প্রকোশলী হিসেবে চাকরি করতে পারেন। তাই সম-প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সরকারি খাতের (জিওবি/এসওই/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা) মত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের সংশোধনী প্রণয়নের জন্য অনুরোধ করেছেন প্রকৌশলীরা।
আবেদনগুলোতে প্রকৌশলীর নিয়োগসংক্রান্ত জটিলতার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে বিপিডিবি এবং বিআরইবির ক্ষেত্রে নিয়োগের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রহসনের ইন্টারভিউ পদ্ধতির ফলে ১৯৯১-১৯৯৬ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক কর্মকর্তা যাদের ৩০-৩২ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁদের অনেককেই ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়নি এবং অনেককে দেরি করে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়। এর ফলে অনেক কর্মকর্তা ৩০-৩২ বছর চাকরি করে ইন্টারভিউর ডাক না পেয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে চাকরির মেয়াদ শেষে অবসরে চলে গেছেন এবং যারা পদোন্নতি পেয়েছেন তাঁরাও সর্বোচ্চ এক থেকে দেড়বছর প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন। যেখানে বিগত স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে সুবিধাভোগী অনেক জুনিয়র কর্মকর্তা এই সুবিধা গ্রহণ করে অনেকেই প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে ২০৩০-২০৩৬ সালে অবসরে যাবেন।
বিপিডিবি এবং বিআরইবির ক্ষেত্রে নিয়োগের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয় বিধায় জুনিয়র কর্মকর্তারা এইধরণের কোন সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন না। তথাপি প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ০১ বা ০২ বছরের অধিক সময় প্রধান প্রকৌশলী পদে থাকা সম্ভব হয় না।
প্রকৌশলীরা তাঁদের আবেদনে সুপারিশ প্রস্তাব করেছেন- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ২৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা ও ৩ বছর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সমমানের বা তদূর্ধ পদে চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদের জন্য শিক্ষাগত ও কারিগরি যোগ্যতার পাশাপাশি সরকারি খাত (জিওবি/এসওই/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা) এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি উভয়ের ক্ষেত্রেই চাকরির অভিজ্ঞতা ২৫ বছর করার প্রস্তাব করেছেন।
পাঁচটি বিতরণী কোম্পানির প্রকৌশলীরা বলছেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ বিতরণী কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। এই মুহূর্তে যদি বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট গাইডলাইনটি সংশোধন না হয়, তাহলে অনেক মেধাবী প্রকৌশলী আবেদন করতে পারবেন না। তাই দ্রুত গাইডলাইনটি সংশোধন করে পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। প্রকৌশলীরা আরো বলেন, বর্তমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব যথেষ্ট মেধাবী ও দক্ষ। তাঁরা সাবেক স্বৈরাচার সরকারের ভুলনীতি বাতিল করে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ নিশ্চিত করতে গাইডলাইনে দ্রুত সংশোধনী আনবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রকৌশলীরা।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাংলা স্কুপকে জানিয়েছেন, শীঘ্রই এসংক্রান্ত গাইডলাইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এসকে
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নেতৃত্ব দেবেন প্রকৌশলীরাই