​বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নেতৃত্ব দেবেন প্রকৌশলীরাই

আপলোড সময় : ১০-০৫-২০২৫ ০৫:১৩:০৫ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১১-০৫-২০২৫ ১২:২২:৫৯ পূর্বাহ্ন
আমিনুল কবীর সুমন॥
বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন দপ্তর, সংস্থা ও কোম্পানিগুলোতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের সুযোগ কমেছে।  ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের যে মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রকৌশলীরা প্রশ্ন তুলেছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলছেন, এই খাতের নেতৃত্ব দেবেন দেশের মেধাবী প্রকৌশলীরাই। এর জন্য নিয়োগসংক্রান্ত গাইডলাইন সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে অন্তবর্তী সরকার।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের মানদণ্ড নির্ধারণ করে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক 'অতি জরুরি' অফিস আদেশ (স্মারক নং-২৭.০০.০০০০.০৮৯.০৬.০০১.২৫.৫৮) জারি করে। বিদ্যুৎ বিভাগের কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স-২ অধিশাখার উপসচিব ফারজানা খানম স্বাক্ষরিত আদেশে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগের মানদণ্ড তুলে ধরা হয়। বলা হয়, 'বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন দপ্তর/সংস্থা/কোম্পানিসমূহের নিয়োগ, পদোন্নতি, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন বিষয়ে জটিলতা নিরসন সংক্রান্ত কমিটি'র সুপারিশ মোতাবেক কোম্পানিসমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নরূপ মানদণ্ড অনুসরণের পরামর্শ প্রদান করা হলো।

মানদণ্ডগুলো মধ্যে একটি হলো- বিদ্যুৎ খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রার্থীর কমপক্ষে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যার মধ্যে কমপক্ষে ৩ বছর উচ্চপদস্থ ব্যবস্থাপনা পদে (প্রধান প্রকৌশলী বা সমমানের এবং তদুর্ধ) কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এই ধারাটি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন প্রকৌশলীরা। তাঁরা বলছেন, যে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রধান প্রকৌশলী পদটি হলো কারিগরি দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় ও সম্মানজনক পদ। এমনও দেখা যায়, সারা জীবন চাকরি করে অনেক প্রকৌশলী পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে প্রধান প্রকৌশলী হতে পারেন না। আবার কেউ যদি এই পদে পদোন্নতিও পান, অবসর নেয়ার সময় এসে পড়ায় তিনি এক-দেড় বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। অথচ ওই প্রকৌশলীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পেশাগত অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক ভারী থাকে। প্রকৌশলীরা বলছেন, আগে তাঁরা ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদের জন্য আবেদন করতে পারতেন। নতুন নিয়মের গ্যাড়াকলে এখন সেই রাস্তাটিও বন্ধ হয়ে গেছে। তাহলে কাদের স্বার্থে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে এই শর্ত জুড়ে দেওয়া হলো?

বিতরণী কোম্পানিগুলোর সাধারণ প্রকৌশলীরা বলছেন, বিগত সময়ে এই খাতে আমরা সময়মত পদোন্নতি পাইনি। এতে আমাদের চাকরির বয়সও চলে যাচ্ছে। আগে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (এসি) হিসেবে তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেই চলত। এখন এই সংস্কারের নামে আমাদের আরো বৈষম্যের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থী না পেলে অবসরপ্রাপ্ত অথবা চলতি দায়িত্বে থাকা আমলারা প্রাধান্য পাবেন। এ কারণেই নিয়োগসংক্রান্ত গাইডলাইনে ধারাটি যুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ প্রকৌশলীদের।

তাঁরা আরো বলেন, বর্তমানে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ বিতরণী সংস্থায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ খালি রয়েছে। সে সব জায়গায় ইতিমধ্যেই ধারাটি সংযুক্ত করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে করে প্রতিভাবান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অনেক প্রকৌশলীই এখানে আবেদন করতে পারছেন না। এ নিয়ে প্রকৌশলী সমাজের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাঁরা দ্রুত ধারাটি সংশোধন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পুন:প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে কোম্পানিগুলোতে দ্রুত অন্যান্য পদে পদোন্নতি দিয়ে শূন্যপদ পূরণেরও আহ্বান জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা। 

বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থা/কোম্পানিসমূহে নিয়োগ, পদোন্নতি, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন বিষয়ে জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে গত ১২ জানুয়ারি চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সুপারিশেই অফিস আদেশটি জারি করে বিদ্যুৎ বিভাগ। আহ্বায়ক শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও পাবলিক পলিসি বিশেষজ্ঞ আব্দুল হালিম শনিবার (১০ মে) বাংলা স্কুপকে বলেন, আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছিলাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বিদ্যুৎ খাতের কোনো সংস্থায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারসহ সব ধরনের প্রকৌশলীরাই আবেদন করতে পারবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যতটুকু মনে পড়ে, বিদ্যুৎ বিভাগের ওই আদেশটি সংশোধন হওয়ার কথা। হয়েছে কি না, তা বলতে পারব না। তবে সংশোধন হলে প্রকৌশলীদের আর আপত্তি থাকার কথা নয়।

তিনি বলেন, এই খাতে বিগত সরকারের সৃষ্ট বৈষম্য দূর করতে আমরা শুধু বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ করেছি। সিদ্ধান্ত নেবেন অন্তবর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা। আমি নিজেও চাই, এ দেশের প্রকৌশলীরা তাঁদের যোগ্যতার মাপকাঠিতে সংস্থার প্রধান হোক। দেশের মেধা দেশেই থাকুক।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান  শনিবার (১০ মে) বাংলা স্কুপকে বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নিয়োগ, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাবেক স্বৈরাচার সরকারের ভ্রান্তনীতি ছিল। এই খাতে দীর্ঘদিন পদোন্নতিও হচ্ছিল না। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় এই খাতের যাবতীয় জটিলতা নিরসনের জন্য আমরা একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দিয়েছিলাম। ওই কমিটির সুপারিশের আলোকে বিদ্যুৎবিভাগ একটি নিয়োগসংক্রান্ত গাইডলাইন দিয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে বিতরণী সংস্থাগুলোতে প্রকৌশলীরাই ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ পেতেন। আমরা সেই ধারা ভেঙ্গে দিয়েছি। এখন যে কেউ যোগ্যতা অনুসারে ওই পদে আবেদন করতে পারবেন। এতে করে বৈষম্য দূর হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

উপদেষ্টা আরো বলেন, প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে তিন বছরের অভিজ্ঞতা না থাকলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে আবেদন করতে পারবে না- তা আমার জানা ছিল না। আমি বিষয়টির খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিব। আমি চাই, দেশের প্রতিভাবান প্রকৌশলীরাই তাঁদের মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নেতৃত্ব দিক। এতে মেধাবী প্রকৌশলীরা বিদেশে না গিয়ে দেশেই তাঁদের মেধা কাজে লাগাবেন। এগিয়ে যাবে দেশ, উপকৃত হবে জাতি।

বাংলা স্কুপ/প্রতিবেদক/এসকে

সম্পাদক ও প্রকাশক :

মোঃ কামাল হোসেন

অফিস :

অফিস : ৬/২২, ইস্টার্ণ প্লাাজা (৬ তলা), কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, হাতিরপুল, ঢাকা।

ইমেইল :