
কুড়িগ্রামে শত্রুতার জেরে বেড়ে চলেছে ফসল নষ্টের মতো ঘৃণ্য অপরাধ। গ্রাম্য রাজনীতি বা ভিলেজ পলিটিক্সের শিকার হয়ে আর্থিক লোকসান, গবাদি পশু ও খাদ্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে রাষ্ট্রেরও। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই মুন্সীপাড়া গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেনের ছেলে ফারুক ইসলাম। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৫৫ শতাংশ জমিতে চলতি বছর বোরো আবাদ করেন। ফসলও অনেক ভালো হয়। কয়েক দিন পরেই পাকা ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছিলেন কৃষক ফারুক। কিন্তু গত ১২ এপ্রিল রাতের আঁধারে একদল দুর্বৃত্ত জমিতে আগাছানাশক জাতীয় পদার্থ দিয়ে পুরো জমির ফসল নষ্ট করেছে। এসময় দুর্বৃত্তরা কৃষকের সেচ পাম্পও চুরি করে নিয়ে যায়। বিষ জাতীয় পদার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি গো খাদ্য নষ্ট হয়েছে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আবাদ করায় এখন দিশেহারা এই পরিবারটি।
একই চিত্র জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের শোলাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা দারিদ্র কৃষক হাবিবুর রহমান। নিজের সঞ্চিত ও ঋণ নিয়ে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ করেছেন ৪০ শতক জমিতে। আধা পাকা ধানে গত ২৫ এপ্রিল রাতের আধারে আগাছানাশক জাতীয় পদার্থ দিয়ে পুরো ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। সবাই যখন ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে তখন হাবিবুর রহমান বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। জমিজমা সংক্রান্ত শত্রুতার বসে আগেও এমনটি হয়েছে বলে জানা যায়। ফসলহানী হওয়ায় এখন দুশ্চিন্তায় এই দম্পতি।
কৃষক ফারুক ইসলাম বলেন, এনজিও ঋণ নিয়ে ৫৫ শতক জমিতে বোরো আবাদ করেছি। ধান কাটার সময় হয়ে আসার মুহূর্তেই পারিবারিক বিবাদের জন্য বিপক্ষরা আমার জমির ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। গরুর খড়সহ ৩০ মণ ধান আমার ক্ষতি হয়েছে। ঋণ পরিশোধ করব নাকি বৃদ্ধ মাকে নিয়ে পরিবার চালাবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এই বিষয়ে আদালতে মামলা করেছি। আমি ন্যায় বিচার চাই।শোলাগাড়ি গ্রামের কৃষক হাবিুর রহমান বলেন, আমার ৪০ শতক পাকা ধানে আগাছানাশক বিষ দিয়ে ধান পুড়িয়ে দিয়েছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরেই এমনটি করেছে প্রতিপক্ষরা। ২০২২ সালেও আমার দেড় একর জমির ফসলহানী করেছিল তারা। সেই বিষয়ে একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এবারও অভিযোগ দিয়েছি। নিজেদের ও ঋণ করে আবাদ করেছি। ধান নষ্ট হওয়ায় এখন ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে চিন্তায় আছি।
একই এলাকার বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম বলেন, আমার জমির কাগজ আছে। হাবিবুরের কোনো জমি নেই। এই জমি আমি আবাদ করেছি। আমার স্ত্রী-সন্তান আর ভাইসহ জমিতে ধান রোপনের ভিডিও আছে। ধান আবাদের আগে সরিষা আবাদ করেছি। সেটিও তারা কিছু নিয়ে গেছে। এর আগেও ওরা জমির ধান নষ্ট করেছিল। সেখানে আমাদেরকেই আসামি করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ধান নষ্ট করার বিষয়ে কোনো অভিযোগ করিনি। স্থানীয় বাসিন্দা বুলবুলি আকতার, রমজান, মজিবর বলেন, সেচ পাম্প চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় পাশ্ববর্তী কৃষকগণও পড়েছেন বিপাকে। সঠিক সময়ে জমিতে পানি দিতে না পারায় ধানের আবাদ কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ থাকলেও এভাবে ফসলের উপর শত্রুতা মেনে নিতে পারছে না প্রতিবেশিরা। রাষ্ট্রের এমন ক্ষতি যারা করেছে সঠিক তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি স্থানীয়দের।
রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, হাবিবুর ও রহিদুলের মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদ দীর্ঘদিনের। ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় গণ্যমান্য নিয়ে ১৫ বারের অধিক মিমাংসার জন্য বসা হয়েছিল। কিন্তু ভিলেজ পলিটিক্সের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আদালতে জমিজমা ও ফসলহানীর মামলা চলমান রয়েছে। ফসলহানী যারা করেছে তাদের আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন সাহস দেখাতে পারে না।কুড়িগ্রাম কৃষি অধিদপ্তরের সহকারী উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, পারিবারিক কোন্দল থেকে কুড়িগ্রামে ধান, সুপারি, কলাগাছসহ বিভিন্ন ফসলহানীর মতো ঘৃণ্য অপরাধ বেড়েছে। চলতি বোরো মৌসুমেও জেলার উলিপুর, রাজারহাট এবং ভূরুঙ্গামারী উপজেলা ১৫০ শতক আধা পাকা বোরো ধান নষ্ট হয়েছে। ফসলহানীর মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা গেলে এমন অপরাধ কমে আসবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই মুন্সীপাড়া গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেনের ছেলে ফারুক ইসলাম। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৫৫ শতাংশ জমিতে চলতি বছর বোরো আবাদ করেন। ফসলও অনেক ভালো হয়। কয়েক দিন পরেই পাকা ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছিলেন কৃষক ফারুক। কিন্তু গত ১২ এপ্রিল রাতের আঁধারে একদল দুর্বৃত্ত জমিতে আগাছানাশক জাতীয় পদার্থ দিয়ে পুরো জমির ফসল নষ্ট করেছে। এসময় দুর্বৃত্তরা কৃষকের সেচ পাম্পও চুরি করে নিয়ে যায়। বিষ জাতীয় পদার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি গো খাদ্য নষ্ট হয়েছে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আবাদ করায় এখন দিশেহারা এই পরিবারটি।
একই চিত্র জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের শোলাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা দারিদ্র কৃষক হাবিবুর রহমান। নিজের সঞ্চিত ও ঋণ নিয়ে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ করেছেন ৪০ শতক জমিতে। আধা পাকা ধানে গত ২৫ এপ্রিল রাতের আধারে আগাছানাশক জাতীয় পদার্থ দিয়ে পুরো ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। সবাই যখন ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে তখন হাবিবুর রহমান বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। জমিজমা সংক্রান্ত শত্রুতার বসে আগেও এমনটি হয়েছে বলে জানা যায়। ফসলহানী হওয়ায় এখন দুশ্চিন্তায় এই দম্পতি।
কৃষক ফারুক ইসলাম বলেন, এনজিও ঋণ নিয়ে ৫৫ শতক জমিতে বোরো আবাদ করেছি। ধান কাটার সময় হয়ে আসার মুহূর্তেই পারিবারিক বিবাদের জন্য বিপক্ষরা আমার জমির ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। গরুর খড়সহ ৩০ মণ ধান আমার ক্ষতি হয়েছে। ঋণ পরিশোধ করব নাকি বৃদ্ধ মাকে নিয়ে পরিবার চালাবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এই বিষয়ে আদালতে মামলা করেছি। আমি ন্যায় বিচার চাই।শোলাগাড়ি গ্রামের কৃষক হাবিুর রহমান বলেন, আমার ৪০ শতক পাকা ধানে আগাছানাশক বিষ দিয়ে ধান পুড়িয়ে দিয়েছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরেই এমনটি করেছে প্রতিপক্ষরা। ২০২২ সালেও আমার দেড় একর জমির ফসলহানী করেছিল তারা। সেই বিষয়ে একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এবারও অভিযোগ দিয়েছি। নিজেদের ও ঋণ করে আবাদ করেছি। ধান নষ্ট হওয়ায় এখন ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে চিন্তায় আছি।
একই এলাকার বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম বলেন, আমার জমির কাগজ আছে। হাবিবুরের কোনো জমি নেই। এই জমি আমি আবাদ করেছি। আমার স্ত্রী-সন্তান আর ভাইসহ জমিতে ধান রোপনের ভিডিও আছে। ধান আবাদের আগে সরিষা আবাদ করেছি। সেটিও তারা কিছু নিয়ে গেছে। এর আগেও ওরা জমির ধান নষ্ট করেছিল। সেখানে আমাদেরকেই আসামি করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ধান নষ্ট করার বিষয়ে কোনো অভিযোগ করিনি। স্থানীয় বাসিন্দা বুলবুলি আকতার, রমজান, মজিবর বলেন, সেচ পাম্প চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় পাশ্ববর্তী কৃষকগণও পড়েছেন বিপাকে। সঠিক সময়ে জমিতে পানি দিতে না পারায় ধানের আবাদ কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ থাকলেও এভাবে ফসলের উপর শত্রুতা মেনে নিতে পারছে না প্রতিবেশিরা। রাষ্ট্রের এমন ক্ষতি যারা করেছে সঠিক তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি স্থানীয়দের।
রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, হাবিবুর ও রহিদুলের মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদ দীর্ঘদিনের। ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় গণ্যমান্য নিয়ে ১৫ বারের অধিক মিমাংসার জন্য বসা হয়েছিল। কিন্তু ভিলেজ পলিটিক্সের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আদালতে জমিজমা ও ফসলহানীর মামলা চলমান রয়েছে। ফসলহানী যারা করেছে তাদের আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন সাহস দেখাতে পারে না।কুড়িগ্রাম কৃষি অধিদপ্তরের সহকারী উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, পারিবারিক কোন্দল থেকে কুড়িগ্রামে ধান, সুপারি, কলাগাছসহ বিভিন্ন ফসলহানীর মতো ঘৃণ্য অপরাধ বেড়েছে। চলতি বোরো মৌসুমেও জেলার উলিপুর, রাজারহাট এবং ভূরুঙ্গামারী উপজেলা ১৫০ শতক আধা পাকা বোরো ধান নষ্ট হয়েছে। ফসলহানীর মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা গেলে এমন অপরাধ কমে আসবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন