বাংলা স্কুপ, ৮ অক্টোবর:
বাংলাদেশে এসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলাম। কোথায় নেই তিনি। ছিলেন মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত ১০ সদস্যের সিন্ডিকেটের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বাদ যাননি ২৫ সদস্যের সিন্ডিকেটের তালিকায়। আছেন ১০১ সদস্যের সিন্ডিকেটের তালিকাতেও। পরিচয় লুকিয়ে নিয়েছেন দুইটি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স। আবার সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকাতেও রয়েছে তাঁর এজেন্সির নাম। আছে নিজস্ব মেডিকেল সেন্টার। তিনিসহ কয়েকজন মিলে বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করেছেন মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর শক্তিশালী সিন্ডিকেট গঠনে। এরইমধ্যে দেখা করেছিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এখন নিজেকে বঞ্চিত দাবি করে শুরু করেছে নানা অপতৎপরতা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়া ও নানা সংকটের জন্য দায়ী বায়রার এই নেতা। তাঁর হাত ধরেই সর্বনাশ নেমে এসেছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে।
বায়রার একাধিক সদস্য জানান, মালয়েশিয়ার জনশক্তি রপ্তানিতে একক ব্যক্তি হিসেবে সবচাইতে লাভবান ফকরুল ইসলাম। তিনি সবসময় সিন্ডিকেটে ছিলেন। তাঁর আছে নিজস্ব মেডিকেল সেন্টার। আছে একাধিক সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সি। তাঁর মেডিকেল সেন্টারের নামে ওয়েলকাম ডায়াগনস্টিক মেডিকেল সেন্টার। তাঁর রিক্রুটিং এজেন্সির নাম হিউম্যান রিসোর্স সেন্টার। ১০১ সিন্ডিকেটভুক্ত তাঁর বেনামী প্রতিষ্ঠান ত্রিবেনি ও সেলিব্রেটি। যার নেপথ্য মালিক ফকরুল ইসলাম নিজেই। তিনি নিজের লাইসেন্স সরাসরি ব্যবহার না করে অন্যের নামে ব্যবসা করছেন। অন্য যাঁরা ব্যবসা করেন তাঁদের লাইসেন্স একটা থাকলেও তাঁর রয়েছে দুটি লাইসেন্স। তাছাড়া অন্য ব্যবসায়ীরা যেখানে মূল ১০১ এজেন্সির মধ্যে অথবা সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে তালিকাভুক্ত ছিলেন। আবার কেউ কেউ শুধু মেডিকেল সেন্টারে ছিলেন। কিন্তু তিনি একমাত্র ব্যক্তি সব জায়গায় আছেন। তিনি প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিকের মেডিকেল চেকআপ করিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। মালয়েশিয়া থেকে ডিমান্ড (চাহিদাপত্র) সংগ্রহ করে বিভিন্ন এজেন্সিকে সরবরাহ করেছেন। তাঁর ডিমান্ড সংগ্রহ করার শ্রমিকের সংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার। এতেও মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
ফকরুলের বিরুদ্ধে এজেন্সি মালিকদের অভিযোগ, ফকরুল বিভিন্ন টকশো ও গণমাধ্যমে ভুল বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শ্রমবাজারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তিনি ও তার সহযোগী সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে। সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো শুধু একটা টিকেট কেটে শ্রমিকদের কাছ থেকে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা নিয়েছে। অথচ তারা আইনের আওতায় আসছে না। মন্ত্রণালয়ের নজরে আসছে না। একদিকে তারা বলছে, ৬ লাখ টাকা করে শ্রমিক গিয়েছে অথচ মাত্র দেড় লাখ টাকায় শ্রমিক পাঠিয়েছে সেই ১০১ সিন্ডিকেট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। অনুমোদিত এজেন্সিগুলো ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে এলোকেশন, জব, ডিমান্ড লেটার, সত্যায়ন, ভিসা করানো, বিটিএমইএর ক্লিয়ারেন্স, নিয়োগানুমতি ও বর্হিগমনসহ যাবতীয় আনুসাঙ্গিক কাজ সম্পাদন করেছে। আর সহযোগী এজেন্সিরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিমানের টিকেট করে আদায় করেছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে।
অপর এজন ব্যবসায়ী জানান, বায়রার যুগ্মমহাসচিবসহ ওইসব নেতাদের আগে জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি। যেহেতু ওরা বেশি টাকা নিয়েছে এবং কাজটা এনেছে তাহলে টাকা তারাই পাচার করেছে। সহযোগী রিক্রুটিং হিসেবে তারা কাজ কিনেছে। ওয়ার্কারদের অর্থও তারা দিয়েছে। সাপ্লাই চেইন ও মার্কেটিং চেইন তাদের। বেশি অর্থ নেওয়ার জন্য তারাই দায়ী। অর্থপাচার জন্যও তারা দায়ী। অথচ জনসাধারণকে বোকা বানিয়ে একতরফা তারা নানামুখী অপপ্রচার করছে।
অভিযোগের বিষয়ে বায়রার সাবেক সভাপতি আলী হায়দার বলেন, বিভিন্ন মহলের অপপ্রচারে আমাদের শ্রমবাজার নষ্ট হচ্ছে। যারা অপপ্রচারে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ শ্রমিক মালশিয়ায় গিয়েছে। এই অভিবাসী শ্রমিকরা দেশের জন্য গত ৩ বছরে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন। নতুন করে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে দেশের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে এবং মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতেও আমাদের শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। কিন্তু এই অসাধু চক্রের কারণে শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়ে আছে।
বিশেষ প্রতিবেদক/এএইচ/এসকে
বাংলাদেশে এসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলাম। কোথায় নেই তিনি। ছিলেন মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত ১০ সদস্যের সিন্ডিকেটের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বাদ যাননি ২৫ সদস্যের সিন্ডিকেটের তালিকায়। আছেন ১০১ সদস্যের সিন্ডিকেটের তালিকাতেও। পরিচয় লুকিয়ে নিয়েছেন দুইটি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স। আবার সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকাতেও রয়েছে তাঁর এজেন্সির নাম। আছে নিজস্ব মেডিকেল সেন্টার। তিনিসহ কয়েকজন মিলে বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করেছেন মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর শক্তিশালী সিন্ডিকেট গঠনে। এরইমধ্যে দেখা করেছিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এখন নিজেকে বঞ্চিত দাবি করে শুরু করেছে নানা অপতৎপরতা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়া ও নানা সংকটের জন্য দায়ী বায়রার এই নেতা। তাঁর হাত ধরেই সর্বনাশ নেমে এসেছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে।
বায়রার একাধিক সদস্য জানান, মালয়েশিয়ার জনশক্তি রপ্তানিতে একক ব্যক্তি হিসেবে সবচাইতে লাভবান ফকরুল ইসলাম। তিনি সবসময় সিন্ডিকেটে ছিলেন। তাঁর আছে নিজস্ব মেডিকেল সেন্টার। আছে একাধিক সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সি। তাঁর মেডিকেল সেন্টারের নামে ওয়েলকাম ডায়াগনস্টিক মেডিকেল সেন্টার। তাঁর রিক্রুটিং এজেন্সির নাম হিউম্যান রিসোর্স সেন্টার। ১০১ সিন্ডিকেটভুক্ত তাঁর বেনামী প্রতিষ্ঠান ত্রিবেনি ও সেলিব্রেটি। যার নেপথ্য মালিক ফকরুল ইসলাম নিজেই। তিনি নিজের লাইসেন্স সরাসরি ব্যবহার না করে অন্যের নামে ব্যবসা করছেন। অন্য যাঁরা ব্যবসা করেন তাঁদের লাইসেন্স একটা থাকলেও তাঁর রয়েছে দুটি লাইসেন্স। তাছাড়া অন্য ব্যবসায়ীরা যেখানে মূল ১০১ এজেন্সির মধ্যে অথবা সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে তালিকাভুক্ত ছিলেন। আবার কেউ কেউ শুধু মেডিকেল সেন্টারে ছিলেন। কিন্তু তিনি একমাত্র ব্যক্তি সব জায়গায় আছেন। তিনি প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিকের মেডিকেল চেকআপ করিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। মালয়েশিয়া থেকে ডিমান্ড (চাহিদাপত্র) সংগ্রহ করে বিভিন্ন এজেন্সিকে সরবরাহ করেছেন। তাঁর ডিমান্ড সংগ্রহ করার শ্রমিকের সংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার। এতেও মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
ফকরুলের বিরুদ্ধে এজেন্সি মালিকদের অভিযোগ, ফকরুল বিভিন্ন টকশো ও গণমাধ্যমে ভুল বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শ্রমবাজারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তিনি ও তার সহযোগী সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে। সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো শুধু একটা টিকেট কেটে শ্রমিকদের কাছ থেকে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা নিয়েছে। অথচ তারা আইনের আওতায় আসছে না। মন্ত্রণালয়ের নজরে আসছে না। একদিকে তারা বলছে, ৬ লাখ টাকা করে শ্রমিক গিয়েছে অথচ মাত্র দেড় লাখ টাকায় শ্রমিক পাঠিয়েছে সেই ১০১ সিন্ডিকেট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। অনুমোদিত এজেন্সিগুলো ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে এলোকেশন, জব, ডিমান্ড লেটার, সত্যায়ন, ভিসা করানো, বিটিএমইএর ক্লিয়ারেন্স, নিয়োগানুমতি ও বর্হিগমনসহ যাবতীয় আনুসাঙ্গিক কাজ সম্পাদন করেছে। আর সহযোগী এজেন্সিরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিমানের টিকেট করে আদায় করেছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে।
অপর এজন ব্যবসায়ী জানান, বায়রার যুগ্মমহাসচিবসহ ওইসব নেতাদের আগে জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি। যেহেতু ওরা বেশি টাকা নিয়েছে এবং কাজটা এনেছে তাহলে টাকা তারাই পাচার করেছে। সহযোগী রিক্রুটিং হিসেবে তারা কাজ কিনেছে। ওয়ার্কারদের অর্থও তারা দিয়েছে। সাপ্লাই চেইন ও মার্কেটিং চেইন তাদের। বেশি অর্থ নেওয়ার জন্য তারাই দায়ী। অর্থপাচার জন্যও তারা দায়ী। অথচ জনসাধারণকে বোকা বানিয়ে একতরফা তারা নানামুখী অপপ্রচার করছে।
অভিযোগের বিষয়ে বায়রার সাবেক সভাপতি আলী হায়দার বলেন, বিভিন্ন মহলের অপপ্রচারে আমাদের শ্রমবাজার নষ্ট হচ্ছে। যারা অপপ্রচারে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ শ্রমিক মালশিয়ায় গিয়েছে। এই অভিবাসী শ্রমিকরা দেশের জন্য গত ৩ বছরে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন। নতুন করে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে দেশের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে এবং মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতেও আমাদের শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। কিন্তু এই অসাধু চক্রের কারণে শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়ে আছে।
বিশেষ প্রতিবেদক/এএইচ/এসকে