ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ , ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লিবিয়ায় জিম্মি শিবচরের অর্ধশত যুবক

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৯-০৪-২০২৫ ১২:৪৭:৫৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৯-০৪-২০২৫ ০২:২৯:৪০ অপরাহ্ন
লিবিয়ায় জিম্মি শিবচরের অর্ধশত যুবক ফাইল ছবি
লিবিয়ায় মাফিয়াদের কাছে জিম্মি হয়ে বন্দিশালায় আছে মাদারীপুরের শিবচরের অন্তত অর্ধশত যুবক। সেসব বন্দিশালায় তাদের ওপর চালানো হচ্ছে পাশবিক নির্যাতন। ভিডিও কলে পরিবারের কাছে চাওয়া হচ্ছে মুক্তিপণ। ভিটেমাটি বিক্রি আর চড়া সুদে লাখ লাখ টাকা মাফিয়াদের হাতে তুলে দিলেও খোঁজ মিলছে না যুবকদের।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ, ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়ার মূলহোতা আবুল কালাম মুন্সি। মামলায় গ্রেফতারের পর জামিনে বেরিয়ে ভুক্তভোগীদের হুমকি দিচ্ছেন তিনি। ভুক্তভোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে দিচ্ছে একাধিক মামলা। পুলিশ বলছে, মানবপাচার মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে শিগগিরই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

শিবচরের নিখলী ইউনিয়নের দক্ষিন চরকামারকান্দি গ্রামের দুবাই প্রবাসী মাসুদ মোল্লা। ছোট ভাইকে ইতালি পাঠানোর জন্য দালালদের সঙ্গে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করেন তিনি। তবে তার ভাই এখনও ইতালি যেতে পারেননি। রয়েছেন লিবিয়ায়। সেখানে তার ওপর নির্যাতন চালিয়ে দেশ থেকে নেওয়া হচ্ছে মুক্তিপণ।মাসুদ মোল্লা বলেন,  ‘ছোট ভাই সোহাগকে ইলাতি পাঠাতে দালালচক্রের সঙ্গে চুক্তি হয়। এক বছর আগে সোহাগকে প্রথমে শ্রীলংকা নেওয়া হয়। পরে মিশর এবং সবশেষ নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ায়। সেখানে মাফিয়াদের বন্দিশালায় আটকের পর নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। কয়েক দফায় ৪৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দিয়েছি। এরপর ভাইয়ের কোনো খোঁজ নেই।’

লিবিয়ায় জিম্মি অবস্থায় থাকা সোহেল আহম্মেদের ভাই বিএম রুবেল বলেন, ‘আমার ভাইকে ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ইতালির উদ্দেশে দালাল আবুল কালাম মুন্সির হাতে তুলে দেয়। লিবিয়ায় নিয়ে তারা আমার ভাইকে বন্দি করে ফেলে। মাফিয়াদের মাধ্যমে নির্যাতন করে। কয়েক দফায় মোট ৫১ লাখ টাকা নেয় আমাদের কাছ থেকে। জমিজমা বিক্রি ও চড়া সুদে টাকা এনে দালালদের হাতে তুলে দেই। অধিকাংশ টাকা দালাল আবুল কালাম মুন্সির ইসলামী ব্যাংক এজেন্টের মাধ্যমে দেওয়া হয়। আমরা এ ব্যাপারে মামলা করলে উল্টো আমাদের ফাঁসাতে দালালচক্র মামলা দিয়ে হয়রারি করেই যাচ্ছে।’

শুধু সোহাগ মোল্লা ও সোহেল আহম্মেদ নয়, উপজেলার অর্ধশত যুবক ভাগ্য বদলের আশায় ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছেড়ে একইভাবে এখন জিম্মি লিবিয়ায়। কারো কারো খোঁজও মিলছে না দুমাস ধরে। যোগাযোগ নেই পরিবারের সঙ্গে। স্বজনদের অভিযোগ, মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের হোসেনেরহাট এলাকার ইসলামি ব্যাংকের এজেন্ট আবুল কালাম মুন্সি ও তার সহযোগীদের প্রলোভনেই ঘটছে এমন ঘটনা। অভিযোগের বিষয়ে আবুল কালাম মুন্সির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) শেখ সাব্বির হোসেন বলেন, ‘অভিযুক্ত দালালদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে তদন্ত চলছে। জেলার গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি সিআইডিও কাজ করছে। মানবপাচার মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে। বাদীপক্ষকে অন্য মামলা দিয়ে যদি হয়রানি করে তাহলে তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ