সপ্তাহ ব্যবধানে আরও অস্থির হয়ে উঠেছে সবজির বাজার। পহেলা বৈশাখ থেকে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজও। তবে সপ্তাহ ব্যবধানে কমেছে মুরগির দাম। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
সপ্তাহ ব্যবধানে প্রায় প্রতিটি সবজিতে দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর এখনও পুরোপুরি সচল হয়নি সরবরাহ ব্যবস্থা। এতে শাক-সবজি কম আসায় দাম বাড়ছে। বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে শাক-সবজি কম আসছে। এতে দাম বাড়ছে কিছুটা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে সবজির। সপ্তাহ ব্যবধানে কোনো কোনো সবজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্তও বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।
বাজারে প্রতি কেজি করলা ৭০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা ও টমেটো ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৫০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, শিম ২৫-৩০ টাকা, সজনে ডাটা ১০০-১২০ টাকা ও ধনেপাতা ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে প্রতি পিস চালকুমড়া ৫০ টাকা ও লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা। দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচেরও। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। পাইকারি পর্যায়ে যা কেনাবেচা হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম।
ক্রেতারা বলছেন, রমজানে সবজির দাম কম থাকলেও, ঈদের পর থেকেই শাক-সবজির বাজার চড়া। দাম কমাতে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে। না হলে ফের অস্থির হয়ে উঠবে নিত্যপণ্যের বাজার। তবে রমজানজুড়ে ভোগানো লেবুর ডজন নেমে এসেছে ৫০-৬০ টাকায়। বিক্রেতার বলছেন, রমজানে যেখানে লেবুর হালি বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০ টাকায়, সেখানে এখন দাম কমে ডজনই বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
লেবু বিক্রেতা শামীম বলেন, বাজারে নতুন লেবু আসছে। এতে দাম কমছে। মান ও আকার ভেদে প্রতিপিস লেবু বিক্রি হচ্ছে ১-৪ টাকায়। বৃষ্টি বাড়লে লেবুর উৎপাদন বাড়বে। তখন দাম আরও কমবে। এদিকে, পহেলা বৈশাখ থেকে চড়েছে পেঁয়াজের বাজার। গত সপ্তাহে যেখানে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, সেখানে আজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আলমগীর বলেন, ‘খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে দাম। কেন বেড়েছে বুঝতেছি না। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে।’আর আড়তদাররা বলেন, এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজে কৃষকরা দাম না পেয়ে লোকসান গুনেছেন। ফলে তারা হালি পেঁয়াজ সব বাজারে না ছেড়ে মজুতের দিকে ঝুঁকছেন। এতে সরবরাহ কমে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে আড়ত, পাইকারি ও খুচরা—সব পর্যায়েই।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিনহাজ বাণিজ্যালয়ের খলিল বলেন, আড়তে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৮ টাকায়। মূলত কৃষকরা পেঁয়াজ মজুত করায় সরবরাহ কমছে। এতে দামে প্রভাব পড়েছে। অস্থিরতা কমেনি চালের বাজারেও। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮৬-৯০ টাকা, আটাইশ ৬০-৬২ টাকা ও নাজিরশাইল ৭৬-৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়। আর দাম বাড়ানোর পর বাজারে সরবরাহ বেড়েছে ভোজ্যতেলের। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৬৯ টাকা ও পাম তেল ১৬৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের জন্য গুনতে হচ্ছে ৯২২ টাকা। তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে আলুর দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর জন্য গুনতে হচ্ছে ২০-২২ টাকা। এছাড়া প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর প্রতিকেজি আমদানি করা রসুনের জন্য ১৮০ থেকে ২১০ ও দেশি রসুনে গুনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
এদিকে, গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে কমেছে সব ধরনের মুরগির দাম। কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৭০ টাকায়। এছাড়া দেশি মুরগি ৬৫০-৬৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৭০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। মুরগির দাম কমলেও বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ২৫০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।তবে কিছুটা বেড়েছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন লাল ডিম ১২০-১২৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, বাজারে কিছুটা চড়েছে মাছের দাম। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা ও শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২,৫০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৪০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন