ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ , ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাওরে ধান কাটার ধুম, দাম নিয়ে শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৭-০৪-২০২৫ ০১:০৯:০৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৭-০৪-২০২৫ ০১:০৯:০৯ অপরাহ্ন
হাওরে ধান কাটার ধুম, দাম নিয়ে শঙ্কা ফাইল ছবি
কিশোরগঞ্জে হাওরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সোনালি ধানের হাতছানি। কাঁচা-পাকা সোনা রঙের মন জুড়ানো ধানের শিষ হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। হাওরের মাঠে এখন চলছে এসব ধান কাটার ধুম। কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওরের কৃষাণ-কৃষাণীরা। তবে ধানের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় বোরো ধানা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। এর মাঝে শুধু হাওরেই ১ লাখ ৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যেখান থেকে উৎপাদিত চালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। গত বছর ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১২০০ টাকা প্রতি মণ। তবে এবার তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৪৪০ টাকা প্রতিমণ। কেজিপ্রতি যার দাম ৩৬ টাকা। সরকার এ বছর কৃষকদের কাছ থেকে ৩৯ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪৮ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ করবে বলে জানা গেছে। কৃষকরা বলছেন, খরচ ও ঋণ মেটাতে অনেক চাষি ধান ঘরে না তুলেই বিক্রি করে দিচ্ছেন ৮২০ থেকে ৯০০ টাকা মণ দরে। যেখানে এক মণ বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত। এতে খুব একটা খুশি হতে পারছেন না কৃষকরা।

কিশোরগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগাম পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ফসলহানি রোধে এবার কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে উপজেলায় ২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ১২৯টি ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।নিকলীর সবচেয়ে বড় হাওর জোয়ানশাহী হাওরের কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘২ একর বোরো ২৮ জাতের ধান কাটতেছি। ফলন ভালো হয়েছে। তবে ধান কাটার মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের সংকট রয়েছে এলাকায়। তাই পরিবারের লোকজন ও এলাকার শ্রমিকদের নিয়ে ধান কাটছি। ধানের ন্যায্যমূল্য পেলে আমরা লাভবান হবো। জমি আবাদ করতে গিয়ে ঋণ করতে হয়েছে। তবে ভালোয় ভালোয় ধান তুলতে পারলে সব ঋণ শোধ করা যাবে।’নিকলীর সিংপুর গ্রামের কৃষক মাসুদ মিয়া বলেন, আমরা কৃষক মানুষ, ঋণ করে বোরো ধান করেছি। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এখন দাম ভালো পেলে লাভবান হবো। না হলে ঋণের বোঝা বইতে হবে।

হাওরের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের হাওরে হাইব্রিড ছক্কা, ফাইজং ও হাইব্রিড ২৯ ধানের ভালো ফলন হয়েছে। শুনেছি হাওরে বাঁধ হয়েছে। তাই বন্যা হাওয়ার শঙ্কা কম। কষ্টের ফসল নষ্ট হলে কী কষ্ট, এইটা বইলা বোঝাইতাম পারতাম না। এখন হাওরের দিকে ছাইয়া ছাইয়া দুই হাত তুইলা দোয়া করি, যে ধান জমিতে আছে সেই ধানের যাতে কোনো ক্ষতি না অয়।’নেত্রকোনা জেলার সুসং দুর্গাপুর থেকে ১৬ জনের একটি শ্রমিক দল নিয়ে এসেছেন রুহুল আমিন নামের শ্রমিক দলনেতা। তিনি জানান, গত বছর শ্রমিকের মূল্য বেশি ছিল, এবার কম। হাওরে এখন মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটা হয়, তাই তাদের মূল্য কম। হার্ভেস্টার মেশিনের মালিক মাহবুবুর রহমান বলেন, শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে অনেক সময় লাগে। হার্ভেস্টার মেশিন দিয়ে ১ একর জমির ধান কাটতে মাত্র ১ ঘণ্টা লাগে। মেশিনে ধান কেটে কৃষক সহজেই বাড়ি নিয়ে যেতে পারে।

কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামার বাড়ি) উপ-পরিচালক ড. মো. সাদিকুর রহমান জানান, খাদ্যে উদ্বৃত্ত কিশোরগঞ্জ জেলায় চলতি বছর ১ লাখ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও অতিক্রম করবে। এ বছর সরকারিভাবে নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকে ৩৯ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪৮ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ করা হবে। কৃষি শ্রমিকের সংকট কাটাতে হাওরে ২২০টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন ধান কাটার কাজ করছে। এছাড়া প্রতিদিনই বাহিরের জেলা থেকে হার্ভেস্টার মেশিন আসছে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি//এনআইএন
 
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ