শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, এ পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু
আপলোড সময় :
০৬-১০-২০২৪ ১২:৪৬:৫৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৬-১০-২০২৪ ০৫:৪৫:৩১ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র : সংগৃহীত
বাংলা স্কুপ, ৬ অক্টোবর:
টানা ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া বন্যায় এখন পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই। পাশাপাশি কৃষি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসনসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিজিবি। এছাড়া শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধারকাজে যুক্ত হয়েছেন।
এদিকে শনিবার রাত থেকে নতুন করে শেরপুর সদর এবং নকলা উপজেলার আরও ৭টি ইউনিয়ন পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় শেরপুরের মহারশি, সোমেশ্বরী, চেল্লাখালি, ভোগাই ও মৃগী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে শেরপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত শেরপুরের ৫টি উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ। ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার সব সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, সবশেষ শনিবার রাতে নকলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বন্যায় নালিতাবাড়ী উপজেলায় পাঁচজন ও ঝিনাইগাতীতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার সকাল থেকেই নালিতাবাড়ী উপজেলায় উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে সেনাবাহিনী। ৬টি স্পিড বোটের মাধ্যমে ৬০ জন সেনাসদস্য উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, পানিবন্দি মানুষদের সঠিকভাবে উদ্ধার করতে সফল হয়েছি। অনেককে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি এবং শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। উপজেলার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রানা বলেন, নালিতাবাড়ীতে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১২৩টি। এর মধ্যে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি ইউনিয়নে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
শেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকারের দেওয়া তথ্যমতে, শুধু ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ৫৭টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিক হিসাবে ১১ কোটি টাকার বেশি। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, জেলার কমপক্ষে ৩০ হাজার হেক্টর আমন এবং এক হাজার হেক্টর সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৭০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
শেরপুরের যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে সে স্কুলগুলোকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রেজয়ানকে বলেন, আশ্রয়কেন্দ্র খোলা বিদ্যালয়গুলো আগামী কয়েকদিন বন্ধ থাকবে, যেসব এলাকায় পানি নেই সেখানে নিয়মিত ক্লাস চলবে। কতটি বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে সে সংখ্যা রোববার (৬ অক্টোবর) বিকালে জানা যাবে।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, জেলার বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। দুর্গতদের উদ্ধারে ও শুকনো খাবার পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। একইসঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাচ্ছি।
ডেস্ক/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স