‘শতবর্ষে শত প্রাণ, বাজুক মনে ঐক্যতান’ এই শ্লোগানে পালিত হচ্ছে আলোকিত মানুষ গড়ার বিদ্যাপীঠ খুলনার ফুলতলার জামিরা বাজার পিপরাইল সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার সকাল হতে মধ্যরাত পর্যন্ত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বসেছিল নবীন আর প্রবীণদের এক মিলনমেলা। এ উপলক্ষে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে যেন বাঁধভাঙ্গা আনন্দ আর উৎসবের সৃষ্টি হয় সেখানে।
অনুষ্ঠানের প্রথমেই বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থী, নবীন-প্রবীণের আড্ডায় প্রাণ ফিরে পায় দিনব্যাপী এ আয়োজন। সহস্রাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উপস্থিত হয়ে একে অপরের সাথে কুশল বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান চত্বর হয়ে ওঠে মুখরিত। এ যেন এক অন্যরকম দৃশ্য। শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ এখন প্রাণের উল্লাসে মাতোয়ারা।
বিশাল প্যান্ডেল জুড়ে চলে দিনভর বিভিন্ন ব্যাচের শৈশবের কথা, স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা, সংবর্ধনা। ফাঁকে ফাঁকে চলে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সেলফি আর ফটোসেশন। এছাড়াও বর্তমান শিক্ষার্থীরা আবীর রঙে রাঙিয়ে দেয় নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন পর প্রিয় সহপাঠি বা প্রিয় বান্ধবীকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে পতাকা উত্তোলন করে বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
শতবর্ষ পূর্তি উৎসবে আসা শিক্ষার্থীদের অনেকেই দেশে ও বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। তারা প্রথমদিনেই ফিরে যান উচ্ছল তারুণ্যে ভরা দিনগুলোতে। পুরোনো সব বন্ধু আর সহপাঠীকে পরষ্পর জড়িয়ে ধরে আত্মহারা হয়ে হাত হাত ধরে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করেন। অনেকে আবার পুরোনো সহপাঠীদের পেয়ে সেলফি তুলতে ব্যাস্ত। কেউ কেউ স্কুল আঙিনায় হেঁটে হেঁটে পুরোনো গাছগুলো খুঁজতে থাকে, যে গাছতলায় বসে সহপাঠীদের নিয়ে আড্ডা দেওয়ার সব স্মৃতিচারণ করে ক্যামেরায় পুরোনো বান্ধবীদের সাথে ছবি তুলে ফটোসেশন করেন।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জামিরার সড়কগুলো ছিলো লোকারণ্য। হাজারো নবীন প্রবীণের প্রাণোচ্ছল অংশগ্রহণে সবুজে প্রকৃতি আর শীতের সন্ধ্যা যেন আরও চঞ্চল হয়ে ওঠে। মুখর হয়ে ওঠে স্কুলমাঠ প্রাঙ্গন। যেন সবার মাঝে আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। অনুষ্ঠানে আগত সকলের আপ্যায়ন, চিকিৎসা, তদারকিসহ সব ব্যাবসস্থা নেয় আয়োজক কমিটি। এছাড়াও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল কঠোর নিরাপত্তা উৎসবের চারিদিকে।
ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান ঘিরে প্রাণের উল্লাস দেখা দেয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ১০০ বছরপূর্তি উদযাপনের অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কাজ নিয়ে যখন ব্যস্ত আয়োজোকরা। তখন দুষ্টামিতে মাতেন ২০০৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। যমুনা টিভিতে কর্মরত সাংবাদিক আজিজ রহমান, প্রিন্ট মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিক নূরুল ইসলাম নিরব, আশা এনজিওতে কর্মরত মো.বায়েজিন হোসেন, ইবনে সিনা ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত মাসুম বিল্লাহ, পল্লী বিদ্যুতে কর্মরত তাহেরা খাতুন, শিক্ষক শামীমা খাতুন, ব্যবসায়ি শহিদুল ইসলাম, মো এরশাদ হোসেন, আব্দুল হাই, রিকাবুল ইসলাম, কারী হিসেবে খ্যাত মো. তুহিনসহ জ্রিরো-৬ ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীরা।
তারা তাদের শতবর্ষের অনুষ্ঠানটিকে আরো স্মরণীয় করে রাখতে পুরো ব্যাচ উঠে পড়েন মঞ্চে। তোলেন মনের মত সেলফি। মাইক ধরে করে বক্তৃতার ঢং। একই রঙের পাঞ্জাবি পড়ে তারা তাক লাগিয়ে দেন পুরো ক্যাম্পাসকে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরো অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসময় সবাইকে ক্যামেরা বন্দিও করা হয়।
শতবর্ষ পুনমিলনী বাস্তবায়ন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক মো.মনিরুজ্জামান, যগ্ম আহ্বায়ক জিমএম শহিদুল ইসলাম ও মো. ওহিদুজ্জামান, সদস্য সচিব বিএম শফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, একে এম নজরুল ইসলাম, মো.হাসান আলিম, এসএম আফিল উদ্দিন, মো. শামীমুল হক, এটিএম রুহুল আমিন, মো.নুরুল ইসলাম, মাওলানা আনোয়ারুল ইসলাম, মো.আলামিন সানা, আমিনুর রহমান, গাজী আলামিন, সেলিম রেজা, আরিপুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জামিরা বাজার পিপরাইল সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার গৌরবময় পথচলা শতবর্ষ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দিনব্যাপী শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল আটটা থেকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় ফুলতলার অপরুপ নৈসর্গিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী জামিরা বাজার পিপরাইল সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার শতবর্ষপূর্তি ও পুনর্মিলনীর এই আয়োজন।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন