ঢাকা , বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫ , ১৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পর্যটক বরণে নতুন সাজে কক্সবাজার

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৮-০৩-২০২৫ ০১:২৫:৫৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৮-০৩-২০২৫ ০১:২৫:৫৮ অপরাহ্ন
পর্যটক বরণে নতুন সাজে কক্সবাজার সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখের ছুটিকে সামনে রেখে পর্যটন নগরী কক্সবাজার সেজেছে নতুন রূপে। সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু করে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট সবখানেই চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা ও প্রস্তুতি। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে স্থানীয় প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও ট্যুরিস্ট পুলিশ একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।

পর্যটকদের সুবিধা ও নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা:
পর্যটকদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সৈকতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে তথ্যকেন্দ্র ও সিসি ক্যামেরা। ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘‘ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন দেড় লাখের বেশি পর্যটক সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সমুদ্রসৈকতে পেট্রোল টিমের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যটকদের যেকোনো তথ্য ও সহায়তার জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ ইউনিট কাজ করবে।’'

হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় ঈদ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন:
পর্যটকদের আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হোটেল-মোটেলগুলোতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।কক্সবাজারের হোটেল দ্য কক্স টুডের পরিচালক মহিউদ্দিন খান খোকন জানান, ঈদে আগত অতিথিদের জন্য বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট, হাফ বোর্ড ও ফুল বোর্ড প্যাকেজসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় সুবিধা রাখা হয়েছে।তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে দুই রাত তিন দিনের আবাসন, ডিলাক্স কাপল বেড, এয়ারপোর্ট পিকআপ ও ড্রপ, ওয়েলকাম ড্রিংক, কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট, সুইমিং পুল ব্যবহার, শিশুদের জন্য বিশেষ সুবিধা এবং স্পা, জিম, রেস্টুরেন্ট ও লন্ড্রি সার্ভিসে আকর্ষণীয় ছাড়। আমরা চাই, অতিথিরা যেন নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবেশে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।’’ডি’মোর হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের বান্দরবান, কুয়াকাটা, শ্রীমঙ্গল ও সাজেক ভ্যালির শাখাগুলোতেও ঈদ স্পেশাল প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে আবাসন, খাবার ও অন্যান্য সুবিধায় বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।কক্সবাজারের হোটেল বিচ পার্কের ম্যানেজার আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘ঈদের পরের দুইদিনের সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোর জন্যও বুকিং আসছে। রমজান মাসে পর্যটক কম থাকায় হোটেলের সংস্কারের কাজ হয়েছে, যাতে ঈদে পর্যটকদের নতুনভাবে বরণ করা যায়।’’হোটেল সাউথ বিচ রিসোর্টের পরিচালক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘‘পুরো রমজান জুড়ে হোটেল-মোটেলের সাজসজ্জার কাজ চলছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এ ব্যস্ততা থাকবে। পর্যটকদের জন্য বিশেষ ডিসকাউন্ট ও অফার দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু, পরিস্থিতি এখন ভালো, দ্রব্যমূল্য কিছুটা স্থিতিশীল এবং যাতায়াত ব্যবস্থা স্বাভাবিক তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদে কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটক ভিড় করবেন বলে আশা করছি।’’

স্থানীয় ব্যবসায়ী সালমান রহমান বলেন, ‘‘পর্যটকদের বরণে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এবার নতুন কিছু স্থানীয় পণ্যও দোকানে রাখা হয়েছে। আশা করছি, ঈদে ভালো বিক্রি হবে।’’কক্সবাজারের ইনানী সীপার্ল ওয়াটার পার্কের অ্যাসিস্টেন্ট সেলস ম্যানেজার মো. সরওয়ার ওসমান জানান, তাদের পার্কে দর্শনার্থীরা সুলভমূল্যে বিভিন্ন প্যাকেজ উপভোগ করতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে ওয়েভ পুল, ফ্যান পুল, রেইন ড্যান্স, ওপেন স্লাইড, থান্ডার বোল, মালটি লেন, উইন্ড স্টর্ম, বডি স্লাইড ও আকোয়া লুপসহ ঘোষ্ট হাউস ও ফাইভ ডি সিনেমার বিশেষ আয়োজন।তিনি আরও জানান, দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য লকার, তোয়ালে, কস্টিউম, কুইক বাইট রেস্টুরেন্টসহ নানা সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকবে এবং দর্শনার্থীদের নিরাপদ ও আনন্দময় অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করেছে।

দর্শনীয় স্থানগুলোতে নতুন সাজ ও বিনোদনের ব্যবস্থা:
শহরের প্রধান সমুদ্রসৈকত ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী, মহেশখালীসহ অন্যান্য পর্যটন স্থানগুলোতে নতুন সাজের প্রস্তুতি চলছে। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য রাখা হয়েছে লাইভ মিউজিক ও স্থানীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ বিশেষ আয়োজন। পর্যটন ব্যবসায়ী মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘‘পর্যটকদের বরণে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। টানা ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসবেন। অতিরিক্ত পর্যটকের কারণে হোটেল বুকিং পাওয়া কঠিন হতে পারে, তাই পর্যটকদের অনলাইনে আগাম বুকিং দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’’

পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা নির্দেশিকা:
সমুদ্রস্নানে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লাইফ গার্ড সংস্থাগুলো প্রস্তুতি নিয়েছে।কক্সবাজার সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফ গার্ড জয়নাল আবেদীন ভূট্টো বলেন, ‘‘ঈদে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা সৈকতের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করেছি এবং সেখানে পর্যটকদের সতর্ক করা হবে। পানির প্রবাহ বেশি এমন এলাকায় লাল পতাকা দেওয়া হবে। তাই সবাইকে অনুরোধ করছি, লাইফ গার্ডদের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য।’’

যাতায়াত ব্যবস্থা ও অতিরিক্ত যানবাহনের ব্যবস্থা:
ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে অতিরিক্ত বাস, ট্রেন ও বিমান ফ্লাইটের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।কক্সবাজার পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “ঈদের আগের দুইদিন থেকে কক্সবাজারগামী বাস ও বিমানের টিকিটের চাহিদা বেড়েছে। অতিরিক্ত চাপ সামলাতে পরিবহন কোম্পানিগুলো বিশেষ সার্ভিস চালু করেছে।”সড়কে যানজট এড়াতে জেলা ট্রাফিক পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বাড়ানো হয়েছে এবং পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।ঈদ ও পয়লা বৈশাখের ছুটিতে কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমের প্রত্যাশায় স্থানীয় প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা চাই পর্যটকরা যাতে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ছুটি কাটাতে পারেন। তাই সমুদ্রসৈকতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা ও পর্যটকদের সেবার মান নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

সব মিলিয়ে, এবারের ঈদে কক্সবাজার পর্যটকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা, বিনোদন ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ