ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫ , ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​ঝুঁকি নিয়ে পারাপার!

জরাজীর্ণ কাঠের পোল, অসহায় এলাকাবাসী

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১২-০৩-২০২৫ ০৫:১৯:৫৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১২-০৩-২০২৫ ০৫:১৯:৫৭ অপরাহ্ন
জরাজীর্ণ কাঠের পোল, অসহায় এলাকাবাসী ​ছবি: সংগৃহীত
চিত্রানদীর ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা জরাজীর্ণ কাঠের পোলটিই একমাত্র ভরসা। পিলারগুলো মরিচা ধরা, কাঠের পাটাতনে ফাঁকা, একটু অসাবধান হলেই নদীতে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা! দূর থেকে দেখলে মনে হবে কোনো পরিত্যক্ত সেতুর ধ্বংসাবশেষ।

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের চিত্রা নদীর ওপর নির্মিত কলকলিয়া-মায়েরখালী কাঠের পোলটি দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রতিদিন গোয়ালখালী, কাঠালবাড়ি, বানিয়াখালীসহ ১০ গ্রামের কয়েকশ মানুষের একমাত্র ভরসা। শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, পথচারী সবার জন্যই কাঠের পোলটি যেন এক আতঙ্কের নাম।

বছরের পর বছর প্রতিশ্রুতি মিললেও দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কাঠের পোলটি যেন এক অভিশাপ। একাধিকবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন পথচারী ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ভয়ে অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আর কালক্ষেপণ নয় এবার চাই স্থায়ী সমাধান!

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বারবার আবেদন করেও কাঠের পোলটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এলাকার লোকজন নিজেরাই চাঁদা তুলে বারবার সাময়িক সংস্কার করেছেন, কিন্তু স্থায়ী সমাধান মেলেনি।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইমা আফরিন বলেন, ১০ বছর ধরে এই পোলটি ব্যবহার করছি। আমাদের কাছে এটি একটি অভিশাপ। এখন এটি একদম কঙ্কালসার হয়ে গেছে। স্কুলে যেতে গিয়ে কয়েকবার নদীতে পড়ে গেছি। সংস্কারের কথা অনেক বছর ধরে শুনছি, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি।

এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে ছোট ছোট শিশুদেরও। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া জানায়, এক দিন ব্রিজ পার হতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম, খুব ব্যথা পেয়েছিলাম। সরকার যেন তাড়াতাড়ি আমাদের ব্রিজটা ঠিক করে দেয়।

শুধু শিক্ষার্থী নয়, অভিভাবকরাও রয়েছেন আতঙ্কে। নীলিমা নামে এক শিক্ষার্থীর মা সুবর্ণা সরকার বলেন, বাচ্চাদের একা স্কুলে পাঠাতে ভয় পাই। বাধ্য হয়ে প্রতিদিন সঙ্গে যেতে হয়। এই ব্রিজ পার হতে নিজেরই ভয় লাগে, ওরা তো এখনো ছোট। সরকারের কাছে অনুরোধ, অন্তত আমাদের এই ভয়টা দূর করে দিন।

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক গোলকিপার শেখ জিয়া বলেন, ফকির হাট এবং মোল্লারহাট যাওয়ার জন্য একমাত্র ভরসা এই কাঠের পোলটি। দুই উপজেলার মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যমই এটি। অথচ দীর্ঘদিন এই অবস্থায় পড়ে থাকায় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে দুই উপজেলার মানুষ। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এই এই ব্রিজটি যেন অতি দ্রুত ঠিক করে দিয়ে আমাদের একটু স্বস্তি দেন।

ষাটোর্ধ্ব মৃণাল কান্তি, যিনি দীর্ঘদিন ধরে এই পথ ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, এটি আমাদের একমাত্র পারাপারের মাধ্যম। এই ব্রিজের জন্য কত শিশুর বাবা-মা তাদের স্কুলে যেতে দেয় না, সেটা দেখার কেউ নেই। অনেক দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেও এখনো পর্যন্ত কিছু পেলাম না। সরকার যেন অতি দ্রুত আমাদের এই কাঠের পোলটি ব্রিজ বানিয়ে দেয়।

কলকলিয়া গুরুচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রজীত মজুমদার বলেন, প্রতিদিন এই ব্রিজ পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু পুনর্নির্মাণ না হলে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

বাগেরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান বলেন, কাঠের পোলের স্থানে ৫৫ মিটার দীর্ঘ আরসিসি সেতু নির্মাণের জন্য নকশা তৈরির কাজ চলছে। প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষ হলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে।

 
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ