অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে। তারা এটা (ভোট) করতে চায় কিনা, সেই সিদ্ধান্ত তাদেরই (আওয়ামী লীগ) নিতে হবে। আমি তাদের হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না’।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া সংবাদদাতা সামিরা হুসেইনের নেওয়া সাক্ষাৎকারটি বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিবিসিতে প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকায় সরকারি বাসভবন যমুনায় বসে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনে কারা অংশ নেবে, তা নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে বলা হলে মুহাম্মদ ইউনূস ‘হতভম্ব’ হয়ে পড়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল না যে আমি সরকারের নেতৃত্ব দেব। আমি আগে কখনও সরকার চালাইনি। অথচ আমাকেই প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে হবে। ব্যাপারটি যখন ঠিক হয়ে গেল, তখন আমরা কাজগুলো সংগঠিত করতে শুরু করি। আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, দেশের জন্য অর্থনীতি ঠিক করা আমাদের অগ্রাধিকার ছিল।
তিনি আরও বলেন, সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে আমার কোনো ধারণা ছিল না। আগে কখনও সরকার যন্ত্রের কোনো অংশ চালাইনি এবং সেই দায়িত্বই তখন কাঁধে এলো। দায়িত্ব নেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও অর্থনীতি ঠিক করাই দেশের জন্য অগ্রাধিকার ছিল জানিয়ে বলেন, এসব ঠিক হওয়ার পরে আমরা সংগঠিতভাবে কাজ শুরু করি।
ড. ইউনূস বলেন, শান্তি, শৃঙ্খলা ও অর্থনীতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। ভেঙে চুরমার হয়েছে অর্থনীতি, বিধ্বস্ত অবস্থা। এটা এমন যেন ১৬ বছর ধরে কিছু ভয়ংকর টর্নেডো বয়ে গেছে। আমরা টুকরোগুলো তুলে জড়ো করার চেষ্টা করছি।
আগামী নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তার সরকার কত দ্রুত প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে পারে তার ওপর নির্ভর করে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন করবেন। আমাদের চাওয়া যদি দ্রুত সংস্কার করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরেই আমাদের নির্বাচন হবে। আর যদি সংস্কার দীর্ঘতর হয়, তবে আমাদের আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দিতে আসছেন- এমন ঘোষণায় গত ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের অনেকের বাড়িঘরে ভাঙচুর হয়। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। দলটি দাবি করছে, বাংলাদেশ তাদের জন্য ‘নিরাপদ নয়’। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেছেন, দেশে আদালত রয়েছে, আইন রয়েছে, থানা রয়েছে- তারা সেখানে গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারে, অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারে। কেবল বিবিসির সাংবাদিকের কাছে অভিযোগ করলেই হবে না, আপনাকে থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাতে হবে এবং দেখুন আইন তার পথে রয়েছে কিনা।
মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) কার্যক্রম সংকুচিত করার মাধ্যমে বৈদিশিক সহায়তার পরিমাণ কমিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সংস্থাটির সকল কর্মসূচি কার্যকরভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্তে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে এর প্রভাব পড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেছেন, ‘এটা তাদের সিদ্ধান্ত। এটা সহায়ক হয়েছে। কেননা তারা যেটা করছে সেটা আমরা করতে চেয়েছিলাম। যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং এমন আরও অনেক কিছু। তবে সেগুলো আমরা তাৎক্ষণিকভাবে করতে পারিনি।’
বাংলাদেশে সরকারি উন্নয়ন সহায়তা সরবরাহকারী তৃতীয় বৃহত্তম দেশ যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর বাংলাদেশকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। এই ঘাটতি কীভাবে পূরণ হবে তা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ড. ইউনূস বলেন, ‘যখন এটা হবে তখন আমরা ব্যবস্থা নেব।’
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন/এসকে
নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে: ড. ইউনূস