ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​নাইট কোচে উঠতে নারীদের ভয়

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৫-০২-২০২৫ ০৪:৫৩:৫৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৫-০২-২০২৫ ০৪:৫৩:৫৪ অপরাহ্ন
​নাইট কোচে উঠতে নারীদের ভয় ​ফাইল ছবি
ঢাকা-রাজশাহী রুটের একটি বাসে ডাকাতি ও নারীদের শ্লীলতাহানির পর থেকে নাইট কোচে উঠতে নারীদের ভয় করছে। বিশেষ করে রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর নারী যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রয়োজনের তাগিদে তারা যাতায়াত করছেন ঠিকই, কিন্তু বাসে ওঠার আগে নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবছেন অনেকে।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলসের একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে চলন্ত বাসে ডাকাতি শুরু হয়। প্রায় তিনঘণ্টা ধরে ডাকাতি শেষে একই জায়গায় বাসটি ঘুরিয়ে নিয়ে ভোর ৪টার দিকে ডাকাতরা নেমে যায়। তার আগে বাসের সব যাত্রীর সর্বস্ব লুটে নেওয়া হয়। বাসটিতে ৬৩ জন যাত্রীর মধ্যে ৮-১০ জন নারী ছিলেন। ডাকাতদলের তল্লাশির সময় তারা শ্লীলতাহানির শিকার হন।

এই ঘটনার পর ঢাকা-রাজশাহী রুটের ইউনিক রোড রয়েলসের বাসে যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। লোকাল এই বাসের রাজশাহী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো. জুয়েল বলেন, “ধর্ষণের ঘটনা না ঘটলেও ফেসবুকে তা ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবে আমাদের বাসে যাত্রী একটু কমেছে।”

তিনি দাবি করেন, “যাত্রীর নিরাপত্তা তাদের কাছে আগে। রাত-বিরাতে পাশের সিটে যদি নারী না থাকেন, তাহলে একজন নারীকে বাসের টিকিট দেওয়া হয় না। ঢাকাগামী অন্য কোচের তুলনায় তাদের ভাড়া অর্ধেক।”

ঢাকা-রাজশাহী রুটে যে কয়েকটি কম্পানির উন্নতমানের বাস চলে তার মধ্যে গ্রামীণ ট্রাভেলস অন্যতম। এই বাসের রাজশাহী কাউন্টারের মাস্টার আশিকুল ইসলাম বলেন, “বাসে ডাকাতির ঘটনার পর নারীরা একটু উদ্বিগ্ন বলে মনে হয়েছে। কেউ কেউ বাসে ওঠার আগে আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আমাদের নিরাপত্তা বলতে তো নারীর পাশে নারীর সিট দেওয়া, এইটুকুই আমরা করে যাচ্ছি। এটা আগে থেকেই করি।”

গাজীপুরের একটি পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ করেন রাজশাহীর সেলিনা খাতুন। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে তিনি গাজীপুর যাওয়ার জন্য রাজশাহীর শিরোইলে একটি লোকাল বাসে বসেছিলেন। সম্প্রতি বাসে ডাকাতি ও নারীদের শ্লীলতাহানির খবর তিনিও পেয়েছেন। কথা হলে সেলিনা খাতুন বলেন, “খবরটা দেখার পর থেকেই ভয় লাগছে। রাতে যাবই না ভেবেছিলাম। কিন্তু সুপারভাইজার কল দিচ্ছে। কালই কাজে যোগ দিতে হবে। বাধ্য হয়ে তাই রাতেই যাওয়া লাগছে।”

বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় আরেক যাত্রী তানিশা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, “যে অবস্থা এখন দেখলাম, জরুরি না হলে রাতে বাসে যেতামই না। ট্রেনের টিকিটের চেষ্টা করেছিলাম, হলো না। ফলে বাধ্য হয়ে বাসেই যেতে হবে। রাস্তাঘাটে কপালে কী অপেক্ষা করছে কে জানে?”

ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ডাকাতির ওই ঘটনার পর যাত্রীর সংখ্যা কমেনি। প্রয়োজনের তাগিদে তাদের যেতেই হচ্ছে। তবে, নারীরা দিনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বেশি। যদিও বিভিন্ন স্থানে ভর্তি পরীক্ষার কারণে পার্থক্যটা তেমন বোঝা যাচ্ছে না।

ঢাকা-রাজশাহী রুটের লোকাল বাস শিশির-এর সুপারভাইজার মো. লিটন। শিরোইল এলাকায় বাসের জন্য যাত্রী ডাকতে দেখা যায় তাকে। ডাকাতির ঘটনার পর কী প্রভাব পড়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পার্থক্য তেমন নেই। মানুষকে প্রয়োজনের তাগিদে যেতেই হচ্ছে। করোনার সময় তো গোটা বাংলাদেশ বন্ধ ছিল, তাও মানুষ গন্তব্যে গেছে। এই যে এত এত দুর্ঘটনা রাস্তায় হচ্ছে, তাও কি মানুষ যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে? করেনি। কিন্তু ভয় তো একটা থাকছেই।”

তিনি আরো বলেন, “আগেও এমন ডাকাতির ঘটনা অহরহ ঘটেছে। তারপর কমে গিয়েছিল। এখন প্রশাসনে একটু ঘাটতি রয়েছে, তাই এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটে গেছে। ফেসবুকের যুগে এই একটা ঘটনা ভাইরালও হয়ে গেছে। ফলে যাত্রীদের মধ্যে একটু বেশি আতঙ্ক আছে। তারা (যাত্রী) লোকাল বাসে না গিয়ে, অন্তত ভালো বাসে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কয়েকদিন ধরে এটাই মনে হচ্ছে।”

রাজকীয় পরিবহনের কাউন্টারে বসেছিলেন যাত্রী কুরবান আলী। তিনি বলেন, “আমরা তো ভালো বাসে ১০০০-১২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে পারি না। ২৫-৩০০ টাকায় লোকাল বাসে যাতায়াত করি। এই বাসেই ডাকাতি হয়েছে। এ রকম ঘটনা যাতে আর না হয়, সেজন্য রাস্তায় পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা উচিত।”

জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, “লোকাল বাসে এইগুলো (চুরি-ডাকাতি) বেশি হচ্ছে। টাঙ্গাইলের ঘটনার পর যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আগে বাস ছাড়ার আগে যাত্রীদের ভিডিও করে নেওয়া হতো। সেটা মাঝে বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেটা আবার চালু করা হচ্ছে। আমরা নিজেরাই বাস ছাড়ার আগে এবং পথের বিভিন্ন স্থানে এটা শুরু করেছি।” তিনি আরো বলেন, “পাশাপাশি বাসে সিসি ক্যামেরা চালু রাখা যায় কি না, যেটা কাউন্টার থেকেই সরাসরি দেখা যাবে- এই বিষয়টি নিয়েও আমরা কাজ করছি। এক্ষেত্রে বাস মালিকদেরও সহযোগিতা দরকার।”

ডিআইজি বলেন, “মহাসড়কে আমাদের পেট্রোলিং বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সঙ্গেও সমন্বয় করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি. দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি করে ফেলতে পারব।”

 
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ