ঢাকা , শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল

হাসপাতালে তেলাপোকার রাজত্ব, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ রোগীরা

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৮-০২-২০২৫ ০৩:৪৫:২৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৮-০২-২০২৫ ০৩:৪৫:২৪ অপরাহ্ন
হাসপাতালে তেলাপোকার রাজত্ব, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ রোগীরা ​ছবি: সংগৃহীত
হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে সব জায়গায় ময়লা। দেয়ালে দেয়ালে বাসা বেঁধেছে তেলাপোকা। হাসপাতাল যেন তেলাপোকাদের বাড়িঘরে পরিণত হয়েছে। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই ২৫০ শয্যা ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়ছে। রয়েছে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ারও অভিযোগ।

বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, বিছানার চাদরের নিচে অসংখ্য তেলাপোকা বাসা বেঁধেছে। খাবার থেকে মেঝে সবখানে যেন তেলাপোকার রাজ্য। শুধু তাই নয় এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন রোগী ও স্বজনকে তেলাপোকা কামড় দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে ছেড়েছে হাসপাতাল।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালটি ১৯৮৭ সালে পঞ্চাশ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরুর পর ১৯৯৭ সালে একশ শয্যা এবং সর্বশেষ ২০২০ সালে আড়াইশ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এ হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন সাত-আটশ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন।

গ্রামাঞ্চলের অসহায় দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল ২৫০ শয্যা ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল। জেলার ৫টি উপজেলার রোগীরা ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি জেলার রোগীরাও ছুটে আসছেন আড়াইশ শয্যার এ হাসপাতালটিতে। 

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চিকিৎসা সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা। নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে প্রবেশ করতেই চোঁখে পরবে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে খাবারের উচ্ছিষ্ট পড়ে আছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ সেবা প্রত্যাশীরা। 

শুধু তাই নয়, হাসপাতালটির মেডিসিন, গাইনিসহ অধিকাংশ বিভাগের শয্যায় সেবা নেওয়া রোগীর আশপাশ অপরিচ্ছতার পাশাপাশি সংলগ্ন ওয়াল কিংবা সংরক্ষিত জিনিসপত্র রাখার জায়গাগুলোতে বাসা বেঁধেছে তেলাপোকা। এ অবস্থায় সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করছে। একই সঙ্গে অভিযোগ তুলছেন কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার।

সেবা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগে বলেন, অভাবের কারণে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। জেলা শহরের বাসিন্দা হওয়ায় এ হাসপাতালে দীর্ঘ দিন ধরে একই ডাক্তার চাকরি করছেন। বদলির কোনো নামগন্ধ নেই। হাসপাতালের পাশেই নিয়মিত প্রাইভেট ক্লিনিকে বসে পরামর্শ  দিচ্ছেন। এসব চিকিৎসক হাসপাতালে এসে কিভাবে ভালো চিকিৎসা সেবা দেবে? তাহলে তো বাড়তি আয় কমে যাবে। বিষয়টি সরকারকে কঠোরভাবে দেখা দরকার। সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাতেই চলছে চিকিৎসা সেবা। তাই বাধ্য হয়েই সেবা নিতে আসছেন তারা।

আরিফ নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, অসুস্থ রোগী থাকা বেডে যদি তেলাপোকা থাকে তাহলে মানুষ কিভাবে সুস্থ হবে? বিশেষ করে রাতের বেলায় রোগী ও তার স্বজনরা ঘুমালে তেলাপোকা কানে বা মুখে ঢোকার চেষ্টা করে। এতে আমরা বেশ আতঙ্কিত থাকি।

হাসপাতালে ভর্তি নাজমা নামে এক রোগী বলেন, একটু বাতাস হলে ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে পেটের নাড়িভুঁড়ি উল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। আরেক রোগী বলেন, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর অবহেলার জ্বলন্ত প্রমাণ হাসপাতালের নোংরা অবস্থা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, সবখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা আর নোংরা পরিবেশের কারণে নাক-মুখ বন্ধ করে হাসপাতালে ঢুকতে হয়। কিন্তু কারও যেন কোনো দায় নেই। হাসপাতাল যেন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা মানুষদের অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে ওয়ার্ডসহ ওয়াশ রুমগুলো দ্রুতই নোংরা হয়ে যায়। তাই স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।

হাসপাতালটির শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মো. সাজ্জাদ হায়দার শাহীন বলেন, অপরিচ্ছন্ন অবস্থার কথা বরাবরেই বলা কথা বলা হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। তারা চেষ্টাও করছেন। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আরো প্রয়োজন বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।

আর জেনারেল হাসপাতালটির তত্বাবধায়ক ডা. মোহা. ফিরোজ জামান বলেন, জনবল সংকটের কারণেই এমন পরিস্থিতি। নিজেদের সাধ্যমত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীকে সেবা দিতে হলে অবশ্যই এ হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে রুপান্তিত করতে হবে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ