সূর্যমুখীর ক্ষেতে দর্শনার্থীর হিড়িক, সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চাষি
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১৬-০২-২০২৫ ০৫:১৪:৩৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৬-০২-২০২৫ ০৫:১৪:৩৮ অপরাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
সবুজ পাতার মধ্যে মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে হলুদ রঙের সূর্যমুখী ফুল। সামান্য বাতাসেই দোল খাচ্ছে ফুলগুলো। এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে দলে-দলে আসছেন নানা বয়সের কয়েক শ মানুষ। পাহারায় লোক রেখেও দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেউ শাড়ি পড়ে, কেউ বা আবার সালোয়ার কামিজ পরে তুলছেন ছবি বা সেলফি। কেউবা আবার বাগান থেকে সূর্যমুখী ফুল তুলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাগানের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। বড়দের সাথে শিশুরাও মেতেছে সমান আনন্দে।
শেরপুরে সূর্যমুখী চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। তেলবীজ উৎপাদনের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে কৃষি পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা। এদিকে সূর্যমুখীর বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত দর্শনার্থী।
শেরপুর সদরের শেরীর চর এলাকার শেরপুর-জামালপুর মহাসড়কের পাশের এ বাগান এখন সবার পরিচিত। শুধু স্থানীয়রাই নন, আশপাশের জেলা থেকেও আসছেন অনেকে। পিছিয়ে নেই ভিডিও তৈরি করা ব্লগার, ইউটিউবার ও টিকটকাররাও। শেরপুর সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় লছমনপুরের কৃষকরা শুরু করেন সূর্যমুখী চাষ। বিঘা প্রতি চাষের খরচ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা, আর আয় হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। সূর্যমুখী গড় ফলন প্রায় ১৪ মণ এবং প্রতি মণ সূর্যমুখী বীজ বিক্রি হয় ২৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকায়। এছাড়া প্রতি দর্শনার্থীর জন্য ৫০ টাকা প্রবেশ ফি নির্ধারণ করেছেন কৃষকরা। এতে প্রতিদিন গড়ে আয় হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। কৃষক হায়দার আলী (৫০) বলেন, এ বছর কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৩ বিঘা জমিতে সূর্যমূখীর চাষ করেছি। ফুল দেখে বোঝা যায় এবার সূর্যমূখীর ভালো ফলন হবে।
এছাড়া আমাদের অনেক দর্শনার্থীদের চাপ থাকায় প্রবেশ ফি'র মাধ্যমে বাড়তি টাকা আয় হচ্ছে। কৃষক আসাদ মিয়া (৪৮) বলেন, আমি ৬ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। তবে আগামীতে আরো বৃহৎ আকারে করবো। স্থানীয় কৃষি অফিসের লোকজন আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে। তারা মাঝে মধ্যে আমার এ বাগান পরিদর্শনে আসেন।
দর্শনার্থী লাবনী আক্তার (৩০) জানান, প্রতিদিন অনেকেই সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসছে। তাই আমিও আসলাম। বাগানে প্রবেশের জন্য ৫০ টাকা টিকেট কেটে নিয়েছি। পুরো বাগান ঘুরে দেখলাম, ছবি তুললাম খুব ভালো লাগছে। ইউটিউবার আশিক আহমেদ (২৮) জানান, ফেসবুকে দেখলাম এ বাগানে অনেকেই ছবি তুলেছে। অবশেষে আমিও সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে এসেছি। এসে খুব ভালো লাগছে। তাই একটি ব্লগ তৈরি করার পাশাপাশি বেশ কিছু ছবি তুললাম এবং কয়েকটি ভিডিও তৈরি করলাম।
শেরপুর সদরের উপজেলা কৃষি অফিসার মুসলিমা খানম নীলু বলেন, কৃষি শুধু কৃষিতে সীমাবদ্ধ নেই এখন। কৃষি এখন পর্যটনে রুপান্তর হয়েছে। মানুষ এ মাঠে এসে আনন্দ পাচ্ছে। শেরপুরে এ বছর ৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে এবং জেলায় ১৪ টন সূর্যমুখী বীজ সংগ্রহের আশা রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, সূর্যমুখী ফুল চাষ দিয়ে শেরপুরে পর্যটনের এরিয়া তৈরি হলো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বাস্তবায়ন হচ্ছে সূর্যমুখী প্রদর্শনী। এছাড়া কৃষকদের নতুন ফসল চাষে দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ। ভবিষ্যতে কৃষি পর্যটনেও সম্ভাবনা সৃষ্টির পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স