ঢাকা , শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জমজমাট ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মাছের মেলা

​কাতল মাছের মিষ্টি!

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১২-০২-২০২৫ ০৭:০৬:২৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১২-০২-২০২৫ ০৭:০৬:২৫ অপরাহ্ন
​কাতল মাছের মিষ্টি! ​ছবি: সংগৃহীত
বগুড়ায় ইছামতি নদীর তীরে বসেছে চারশত বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মাছের মেলা। প্রথম দিকে মেলাটি ‘সন্ন্যাস মেলা’ হিসেবে পরিচিত পেলেও পরে এলাকাবাসী মাছের মেলা বলে অভিহিত করেন। কেউ কেউ আবার এতে মিষ্টি মেলা কিংবা জামাই মেলাও বলে থাকেন। প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার নদী তীরে বসে এই মেলা। জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের পোড়াদহের ইছামতী নদীর তীরে বসে এই মেলা।

কথিত আছে এক সন্ন্যাসী পোড়াদহে একটি বট গাছের নিচে বসে ধ্যান করছিলেন। মাঘের শেষ বুধবারে সেখানে ভক্তরা আসত। পূজা, অর্চনা হত। দোকান পাট বসত। এভাবেই মেলার সূচনা। সেই বট গাছটি ভেঙে পড়লে সেখানে আরেকটি বট গাছ রোপণ করা হয়। সেই গাছের পূজা অর্চনা চলে মেলার দিনটি। একদিনের এই মেলায় লাখো মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। মেলা উপলক্ষে গাবতলী, জেলা সদর, শাহজাহানপুর, ধুনট, সারিয়াকান্দী উপজেলাতেও উৎসবের আমেজ পড়েছে। তবে জায়গা স্বল্পতার কারণে একইদিনে মেলার ব্যাপ্তি গাবতলী উপজেলার দারিয়াল বাজার, অদ্দিরখোলা, পাচমাইল, কালিমাবাদ স্কুল মাঠ, দূর্গাহাটা স্কুল মাঠ, শাহজাহান পুরের মাদলা, সারিয়াকান্দীর জোড়গাছাসহ সদরের ফতেহ আলী বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

মেলায় মাছ ও মিষ্টির পাশাপাশি নাগরদোলা, সার্কাস, যাদু খেলা, ছোটদের খেলনাসহ নানা ধরনের দোকান দেখা যায়। তবে আগের মত বড় বড় বাঘাইর, বোয়াল, কাতল, চিতল না পাওয়া গেলেও মাঝারি ধরনের মাছের কমতি ছিল না। এবার মেলার বড় আকর্ষণ ছিল ২৬ কেজির কাতলা এবং ১২ কেজির মাছ আকৃতির মিষ্টি।

মহিষাবান এলাকার ৭৫ বছর বয়সি তমছের আলী জানান, বাবা-দাদাদের কাছ থেকে গল্প শুনেছি, ইছামতির তীরে একটি বট পাকুড় গাছের নিচে এক সন্ন্যাসী এসে ধ্যান করতেন। মাঘের শেষ বুধবারে সেখানে পুজো হত। ধীরে ধীরে সেই পুজোকে কেন্দ্র করে মেলা গড়ে উঠে। তিনি বলেন, “ঈদে কেউ বাড়িতে না আসলেও মেলা উপলক্ষে সবাই আসে। তা বিদেশ কিংবা যেখানেই চাকরি করুক। এ ছাড়া মেয়ে এবং জামাই আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করা হয়। বিশেষ করে জামাইদের। তাই এখন এটা জামাই মেলা হিসাবেই পরিচিতি পেয়েছে।”

পোড়াদহ এলাকার ৬৫ বছর বয়সি মাছ ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, পোড়াদহ মেলার মূল আকর্ষণ ছিল বিশাল আকৃতির বাঘাইড় মাছ। কিন্তু ওই মাছ ধরা সরকার নিষিদ্ধ করায় আর মাছটি কেউ আনেন না। আগে মহিষের গাড়ি, গরুর গাড়িতে করে পাঁচ মণ থেকে সাত মণ পর্যন্ত বাঘাইর মেলায় আসত। “এক কেজি থেকে ১২০ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ ও ৪০ থেকে ৫০ কেজি ওজনের রুই মাছও উঠত। এখন আর অতবড় মাছ পাওয়া যায় না। ২৬ কেজির একটি কাতলা মাছ এনেছি। দাম চাচ্ছি প্রতি কেজি ১৬০০ টাকা।”

শাহজাহানপুরের মিষ্টি দোকানি আল-আমিন বলেন, কালোজাম, ল্যাংচা, জিলাপি, চমচম, রসগোল্লা, খাজা, ঝুড়িসহ মাছ আকৃতির বড় মিষ্টি এনেছেন তিনি। ১২ কেজি থেকে শুরু করে হাফ কেজির মাছ আকৃতির মিষ্টিও এনেছেন। দাম হাঁকছেন প্রতিকেজি ৫০০ টাকা। মাছ ক্রেতা তানিয়া রহমান চাকরি করেন ঢাকায়। বাড়ি মালিয়ান ডাংগা। মেলা উপলক্ষে বাড়িতে এসেছেন। তিনি জানান, বড় একটি কাতলা মাছ দাম করছি। দাম ১৬০০ টাকা চাচ্ছে। ১২০০ টাকা কেজি বলছি কিন্তু দিচ্ছে না।

মেলায় মিষ্টি কিনছেন নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সাগর ও সৈকত নামের দুই জমজ ভাই। সাগর এবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ এবং সৈকত রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। পরিবারের সঙ্গে তারা মেলায় এসেছেন। তারা জানান, গল্প শুনেছি পোড়াদহ মেলার। মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া পরিবারের সদস্যরা খুশি হয়েছেন। তাই বড় বড় মিষ্টি কিনতে এবং মেলা দেখতে এসেছেন তারা। দারুণ উপভোগও করেছেন। মেলা কমিটির ইজারাদার আব্দুল মজিদ বলেন, “সুন্দরভাবে মেলার আয়োজন করেছি। কোনো বিশৃঙ্খলা যেন না হয়, সেজন্য পুলিশও মোতায়েন আছে।”

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ