ঢাকা , শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​হারিয়ে যাচ্ছে বগুড়ার ২৩ নদী

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১২-০২-২০২৫ ১২:৫৯:০৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১২-০২-২০২৫ ১২:৫৯:০৮ অপরাহ্ন
​হারিয়ে যাচ্ছে বগুড়ার ২৩ নদী ​ছবি: সংগৃহীত
চীন, ভুটান ও ভারত হয়ে কুড়িগ্রামের নুনখাওয়া নামক স্থানে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও যমুনা সেই ইতিহাস ধরে রাখতে পারেনি। বগুড়ায় গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে নদীটির। এদিকে বগুড়ার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে সুখদহ। দখল-দুষণে ইছামতী, গজারিয়া, নাগরসহ ২৩টি নদনদীর অবস্থা একই রকম। প্রতি বছর শত কোটি টাকার বরাদ্দ এলেও কাজের কাজ কী হয় তা বগুড়াবাসীকে ভাবিয়ে তোলে। 

জেলার প্রধান প্রধান নদীগুলো দিনদিন মরে যেতে বসেছে। পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া, নদীর পানিদূষণ, পলি পড়ে ভরাট, নদীর বুকে চাষাবাদ, অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, ড্রেনের প্রবাহ, ময়লা-আবর্জনা ফেলা, পরে ইচ্ছামতো দখলের কারণে নদীগুলো মরে যাচ্ছে। ফলে বগুড়া অঞ্চলের অন্যান্য নদীগুলো ধীরে ধীরে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদী তার গতিপথ ধীরে ধীরে পরিবর্তন করছে। মূল প্রবাহ থাকছে না যমুনায়। সারিয়াকান্দির কালিতলা গ্রোয়েন বাঁধ থেকে পূর্ব দিকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মূল প্রবাহ সরে যাওয়ায় নতুন নতুন চর জাগতে শুরু করেছে নদীটিতে।

জানা গেছে, যমুনা নদী ৪০ বছর আগে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি সদর, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলা থেকে ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে ময়মনসিংহ জেলার পশ্চিম সীমানা দিয়ে প্রবাহিত হতো। বর্তমানে সারিয়াকান্দি শহর থেকে যমুনা নদীর দূরত্ব মাত্র কয়েক শ মিটার। ক্ষ্যাপাটে স্বভাবের বৈচিত্র্যময় এ নদীটির ইতিহাস সুপ্রাচীন। ভূতাত্ত্বিকদের ধারণা, হিমালয় পর্বতমালা উত্থানের পূর্বে যমুনা নদীর আদি নাম ছিল ব্রহ্মপুত্র। ব্রহ্মপুত্র নদ হিমালয় পর্বতের কৈলাশ শৃঙ্গের একটি হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে চীন, তিব্বত, ভুটান ও ভারতের আসামের মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রামের নুনখাওয়া নামক স্থানে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীটি বগুড়ার শেষ সীমানা শেরপুর ও ধুনট উপজেলার মধ্য দিয়ে রাজবাড়ী গিয়ে গোয়ালন্দঘাটে পদ্মার সঙ্গে মিশেছে।

১৯৭৭ সালে শুরু হয় নদীশাসনের কাজ। ১৯৮৬ সালে সারিয়াকান্দির প্রধান পয়েন্টে কালিতলায় একটি গ্রোয়েন বাঁধ নির্মিত হয়। এরপর ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে ২০০০ সাল পর্যন্ত ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রোয়েন বাঁধটির পুনর্নির্মাণ কাজ শেষ করে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়। সর্বমোট ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটির নামকরণ করা হয় যমুনা এবং বাঙালি নদী একীভূতকরণ রোধ। সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মৌজার জমিগুলো পুনরায় জেগে উঠেছে। এ জমিগুলোতে নানা ধরনের কৃষি ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে এ অঞ্চলগুলো থেকে নদীভাঙনের শিকার হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়া জনসাধারণ আবার নতুন করে এখানে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছেন।

নদীর গতিপথ পরিবর্তনে নানা ধরনের জনদুর্ভোগেরও সৃষ্টি হয়েছে। নদীর নাব্য সংকটের কারণে উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া, নিজবলাইল, শাহানবান্ধা এবং সদর ইউনিয়নের পারতিত পরলের সামনের নৌঘাট শুকনো মৌসুমে বন্ধ থাকছে। এ ছাড়া নাব্য সংকটের কারণে উপজেলার জনবহুল কালিতলা নৌঘাট ৫ কিমি দূরে কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের দেবডাঙায় স্থানান্তর করতে হয়। ঘাটটি দিয়ে যমুনার পূর্বের জেলাগুলোর সঙ্গে পশ্চিমের জেলাগুলোর সংযোগ রয়েছে। ফলে এই নৌঘাটে যাতায়াত করা হাজারো পথচারী সীমাহীন কষ্টে নদী পারাপার হয়ে থাকেন।

এদিকে বর্ষার ভরা যৌবনে দুই কূল উপচিয়ে দাপিয়ে চলা যমুনা নদী ফাল্গুনে শুকিয়ে যাওয়ায় হেঁটেই পার হচ্ছেন স্থানীয়রা। এদিকে নীলফামারী জেলার তিস্তা নদী থেকে বাঙালি নদীর জন্ম। বাঙালি নদী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালী হয়ে বগুড়ায় প্রবেশ করে। বাঙালি নদী বর্তমানে বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীঘাটে হুড়াসাগর নামের নদীর সঙ্গে মিশেছে। ১৮৩ কিলোমিটারের বাঙালি নদীতে কোনো কোনো স্থানে পানি নেই। উজানে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ ও বর্ষাকালে নদীর তীর ভাঙনের ফলে তলদেশে পলি জমে বাঙালি নদীর নাব্য কমে যাচ্ছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, বগুড়া জেলায় ২৩টি নদী ও ৭৯টি খাল রয়েছে। এসব নদী ও খাল রক্ষায় প্রস্তাবিত ৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে করতোয়া নদী উন্নয়ন প্রকল্প। বগুড়া জেলায় বাঙালি নদীর ডান ও বাম তীরে বিভিন্ন স্থানে প্রতিরক্ষার কাজ। সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর বাম তীরের ভাঙন রোধকরণ ও যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ পুনর্বাসন। নদী রক্ষায় বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করেছে। গত ১৫ বছর বগুড়ায় তেমন বরাদ্দ না থাকায় যে কাজগুলো অসমাপ্ত ছিল তা শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে।

 
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ