ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে অনিরাপদ খাদ্যের কারণে বছরে মারা যায় ৩৫ হাজার মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০২-০২-২০২৫ ০৪:২২:৪৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০২-০২-২০২৫ ০৪:২২:৪৫ অপরাহ্ন
দেশে অনিরাপদ খাদ্যের কারণে বছরে মারা যায় ৩৫ হাজার মানুষ ​ছবি: সংগৃহীত
'পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। আমাদের পুষ্টির সমস্যার মূল কারণই হচ্ছে অনিরাপদ খাদ্য। আর অনিরাপদ খাবার গ্রহণের ফলে শিশু, গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা তৈরি হয়। আবার অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের কারণে দিনে ৫ শতাংশ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। আর দেশে বছরে ৩৫ হাজার মানুষ অনিরাপদ খাদ্যের কারণে মারা যায়।'

জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২৫ পালন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রোববার (২ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্পেশালাইজড হসপিটালের হলে সেমিনারটির আয়োজন করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 'খাদ্য হোক নিরাপদ, সুস্থ থাকুক জনগণ'।

বিএফএসএ'র চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) জাকারিয়ার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান, বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল খালেক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম, মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম।

খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সুস্থতা এই তিনটি জিনিসকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। এগুলো একে অপরের পরিপোরক। আর সুস্থ থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। কেননা বর্তমানে বিশ্বে ৭০০ বিলিয়ন লোকের খাদ্য কত নিরাপদ আজ সেই প্রশ্নটি জেগেছে। তিনি বলেন, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের কারণে দিনে ৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে নানা কারণে আমাদের খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ইকোনাইটের সংক্রমণে সবজি পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে, এসব বিদেশে রপ্তানি করতে সমস্যায় পড়তে হয়। আজকের সেমিনার থেকে আলোচনার মাধ্যমে একটি দিকনির্দেশনা বেরিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা করছি।

স্বাগত বক্তব্যে জাকারিয়া বলেন, আজ আমাদের তিনটি কাজ একসঙ্গে হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে একনেকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জন্য ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হতে পারে। তা ছাড়া খুলনায় ল্যাব স্থাপনে গণপূর্ত থেকে জমি বরাদ্দের কাজ হবে। আর জাতীয় সেমিনার। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্য অনুযায়ী, আমাদের দেশে দৈনিক ৮০ জন ও বছরে ৩০ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এর অন্যতম কারণ অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করা। আমরা শিশুদের নিরাপদ খাদ্যে উদ্বুদ্ধ করতে লুডু খেলার ঘর তৈরি করেছি। যাতে তাদের মধ্যে খাদ্য নিরাপদতা নিয়ে সচেতনতা বাড়ে।

ড. খালেদা ইসলাম বলেন, ব্যাকটেরিয়া, কেমিক্যাল, কাঁচের টুকরা ইত্যাদির কারণে খাদ্য অনিরাপদ হয়। তা ছাড়া পানিবাহিত ভাইরাস, বিষাক্ত পদার্থের কারণেও অনিরাপদ হয়। অনিরাপদ খাদ্যের কারণে ১০ জনের একজন অসুস্থ হয়। অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে বিশ্বে পাঁচ বছরের নিচে ৪ লাখ ২০ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বছরে ৩৫ হাজার মানুষ অনিরাপদ খাদ্যের কারণে মারা যায়।

২০২১ সালের বাংলাদেশ খাদ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউটের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের খাবারে কত ভেজাল রয়েছে ঘির মধ্যে ৬৬.৬৭%, গুড়ে ৪৩.৭৫%, মধুতে ৩৩.৩৩%, মিষ্টিতে ২৮.৫৭%, হলুদে ২৭.৯৩%, ডাল/ছোলায় ৫%, চালে ৮.৩৩%, মরিচে ১৪.৬৩%, গুঁড়া দুধে ১৬.৬৭ এবং লবণে ১৭.৩৩ শতাংশ।

খাদ্য নিরাপদ রাখার উপায় সম্পর্কে ড. খালেদা ইসলাম বলেন, খাদ্য নিরাপদ রাখতে হলে ১. খাবার পরিষ্কার রাখতে হবে, ২. রান্না ও কাঁচা খাবার একসঙ্গে রাখা যাবে না, ৩. রান্না করতে হবে ঢেকে, ৪. খাবার সঠিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে এবং ৫. রান্নায় নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে। বাজার থেকে কী ধরনের খাবার কিনতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফল, শাক-সবজি কেনার সময় রং ঠিক আছে কিনা তা দেখতে হবে। মৌসুমি ফল, শাক-সবজি কিনতে হবে। পঁচা বা গন্ধযুক্ত খাবার কেনা যাবে না। হাত দিয়ে দেখতে হবে। তেলের ব্যবহার সম্পর্কে বলেন, তেলে চর্বির পরিমাণ কতটা সেটা দেখতে হবে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ