ঢাকা , শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫ , ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​ঋণের দুষ্টচক্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৯-০১-২০২৫ ০৪:২৭:২৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৯-০১-২০২৫ ০৪:২৭:২৯ অপরাহ্ন
​ঋণের দুষ্টচক্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ​ছবি: সংগৃহীত
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এক ধরনের ঋণের দুষ্টচক্রে আটকে পড়েছে বলে মনে করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ধানমন্ডির কার্যালয়ে আয়োজিত ‘সিপিডি (২০২৫) : বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৪-২৫ : সংকটময় সময়ে প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি খাত মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছে, যার জন্য মূলত পূর্ববর্তী সরকারের নীতিকাঠামো দায়ী। এই সংকট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শুরু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এক ধরনের ঋণের দুষ্টচক্রে আটকে পড়েছে। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় সরকারি এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কাছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ২১ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বকেয়া প্রায় ৮৪৫ মিলিয়ন ডলার বা ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি আইপিপি এবং সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের কারণে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত পেট্রোবাংলার পাওনা মোট ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাস ও এলএনজি আমদানির জন্য বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে মোট ৭২২ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৮ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে পেট্রোবাংলার। অন্যদিকে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের জন্য শেভরন বাংলাদেশের কাছে ২২২.৫৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৬৭০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এদিকে পেট্রোবাংলার কাছে ৩৫ হাজার ৮৬২ কোটি টাকার ভ্যাট বকেয়া রয়েছে এনবিআরের।

সিপিডি তাদের প্রবন্ধে বলেছে, ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পর্যায়ক্রমিক বন্ধের ফলে এমনটা হয়েছে। গত ছয় মাসে নতুন কোনো জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়নি। জ্বালানি মিশ্রণে গ্যাস বা এলএনজি ৪৩ শতাংশ শেয়ার নিয়ে প্রধান অবস্থানে রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান এখনও নগণ্য, ৪ শতাংশ। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংযোজনের অগ্রগতি তেমন হয়নি।

সিপিডি বলছে, সরকার ঘোষণা করেছে যে সরকার নয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) জনশুনানির মাধ্যমে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করবে। তবে এখনো জ্বালানি তেলের মূল্য সরকার নির্ধারণ করছে, যা আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের প্রতিফলন করে না। দুর্ভাগ্যবশত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষ সংস্কারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৫টি গ্যাস কূপখননের পরিকল্পনা রয়েছে। যার মধ্যে ১০টি কূপ ভাড়া করা রিগের মাধ্যমে খনন করা হবে এবং বাকিগুলো উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত মাত্র একটি কূপ খনন শুরু হয়েছে এবং আরেকটি কূপের জন্য জরিপ চলছে।

অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানির এবং পুনরায় স্পট এলএনজি আমদানি অনুমোদন দিয়েছে। প্রায় দুই ডজন প্রতিষ্ঠানকে এলএনজি সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির জন্য। একইসঙ্গে সরকার ৩৭টি সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এলওআই বাতিল করেছে। এধরনের উদ্যোগ সরকারের আমদানি খরচ কমানো এবং দেশীয় সম্পদ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সংঘর্ষপূর্ণ বলেও মনে করে সিপিডি।

বাংলা স্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন/এসকে 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ