ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​সাত কলেজ নিয়ে হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৮-০১-২০২৫ ০৫:১২:২৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৮-০১-২০২৫ ০৫:১২:২৪ অপরাহ্ন
​সাত কলেজ নিয়ে হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়
রাজধানীর সাত কলেজের চলমান সমস্যা সমাধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কলেজ সাতটি হলো—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেছা সরকারি কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাতটি কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তের ফলে কোন কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকবে এই সাতটি কলেজ, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বৈঠকের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথকীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল– আগামী বছর ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের ভর্তি কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবে না। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেই সিদ্ধান্ত আমরা এক বছর এগিয়ে এনেছি। চলতি (২০২৪-২৫) শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের ভর্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হবে না।’এই সিদ্ধান্তের ফলে অতি দ্রুত কোনও একটি কর্তৃপক্ষের অধীনে নিতে হবে সাতটি কলেজকে।

কলেজগুলোর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকছে না। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তিও মানবে না শিক্ষার্থীরা। সে কারণে তৃতীয় কোনও কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকবে এই সাতটি কলেজ। কিন্তু নতুন করে কোনও কর্তৃপক্ষ গঠন করা বা নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় করাও জটিল বিষয়। তাছাড়া ছাত্রদের দাবির বিষয়টি গুরুত্ব দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনও উপায় নেই।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে একটি কমিটি গঠন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চার সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানকে। চার সদস্যের অন্যরা হলেন—শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান।

জানতে চাইলে কমিটির প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান বলেন, ‘কোনও প্রকার আলাপ-আলোচনা না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাতটি কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে পরিস্থিতি আরও জটিল করা হলো। সমস্যা সমাধানের বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে তা নেই। কমিটি হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় করার সুপারিশ করতে পারে, কিন্তু তারা তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত হয়নি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। তাছাড়া হঠাৎ সাত কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে অধিভুক্তি বাতিল করা যায় না। তার একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। সময় প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তায় পড়লো। এমন পরিস্থিতি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পরিস্থিতিতে সরকারকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এটি ঠিক হয়নি।’

অধিভুক্তি বাতিলের পর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. কে. এম. ইলিয়াস বলেন, ‘ইতোমধ্যে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি যে সুপারিশ করবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর আমরা চলমান পরীক্ষাগুলো স্থানীয়ভাবে নেবো, যাতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়।’
কোন কর্তৃপক্ষের অধীনে এখন সাত কলেজ পরিচালিত হবে জানতে চাইলে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নতুন কোনও কর্তৃপক্ষের আন্ডারে।’জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তিতে পরিচালিত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, তা হবে না। নতুন কোনও কর্তৃপক্ষের অধীনে।’
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করে তার অধীনে পরিচালিত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো করতে গঠিত কমিটি যে সুপারিশ করবে, সেই সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত হবে।’

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করে এই সাত কলেজ পরিচালিত হবে কিনা জানতে চাইলে একটি কলেজের অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় করা ছাড়া ছাত্ররা মেনে নেবে না। সে কারণে সরকারকে সেদিকেই যেতে হবে। তবে নতুন কোনও কর্তৃপক্ষ গঠন করা হতে পারে কিনা তা নিয়ে কোনও আলোচনা এখনও হয়নি।     এদিকে আন্দোলনকারীদের এক দফা দাবি- সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।


বাংলা স্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন/এসকে 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ