বেড়েছে মাছ মাংসের দাম
ব্যয়ের তুলনায় আয় না বাড়ায় অধিকাংশের নজর সবজিতে
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১৭-০১-২০২৫ ০৪:৪৪:২৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৭-০১-২০২৫ ০৮:২৮:৩৯ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র : ফোকাস বাংলা নিউজ
বাজারে দামের চাপে ভোক্তার নাভিশ্বাস অবস্থা। তিন বছর ধরে ব্যয়ের তুলনায় আয় না বাড়ায় অনেকে পাত সাজাচ্ছেন নিম্নমানের তরকারি দিয়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নতুন করের বোঝা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর আরও চাপ বাড়িয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে মাছ ও মাংস। বাজারে খাদ্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের দামের আস্ফালন ভোক্তার নীরব কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও, দেশের মানুষের খাদ্যের প্রধান অনুষঙ্গ চাল ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ভোক্তাদের হাঁপিয়ে তুলেছে। আগে থেকেই চড়া দামে বিক্রি হওয়া ফলের দাম আরও বাড়ায় অনেকে কেনার সামর্থ্য হারিয়েছেন। ফলের জুস ও ব্যবহারযোগ্য টিস্যুর নতুন দামের চাপ বিপাকে ফেলেছে মানুষকে।একদিকে এনবিআরের করের চাপ, অন্যদিকে খাদ্যপণ্যের মধ্যে সব ধরনের মাছ ও মাংসের চড়া দাম ভোক্তার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে মাছ ও মাংস। বাজারে খাদ্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের দামের আস্ফালন ভোক্তার নীরব কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাছবাজারগুলোয় ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের মাছ কিছুটা চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের মাছ কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২২০, চাষের শিং ৫০০ থেকে ৫৫০, আকারভেদে চাষের পাঙাশ ১৮০-২২০, ১ কেজি ওজনের রুই ২৫০, ৪ থেকে ৫ কেজির রুই ৪৫০ ও চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায়। আর আকারভেদে প্রতি কেজি কাতলা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০, ট্যাংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ ও চিতল ৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি দেশি শিং ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার ও শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকার ওপরে এবং জাটকা ইলিশের দাম ৫০০ টাকা।
মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা আতাউর বলেন, ‘মৌসুমের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য মাস দু-এক আগেই মাছের দাম বেড়েছে। তবে গত সপ্তাহে কেজিতে আরও ২০ টাকা বেড়েছে। আমরা বেশি দামে কিনলে, বেশিতেই বিক্রি করি।’
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগে থেকে চড়া দামে বিক্রি হওয়া মাংসের দামেও কিছুটা চড়া ভাব এসেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৪০ থেকে ৩৫০ ও দেশি মুরগি ৬০০-৬৫০ টাকায়। আর প্রতি পিস দেশি হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি খাসির মাংসের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা, বাজারে ১ হাজার ১৫০ টাকার খাসির মাংসের দাম বেড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি হয়েছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা কেজিতে, হাড়ছাড়া গরুর মাংসের প্রতি কেজির মূল্য ৯৫০ টাকা।
কলাবাগান বাজারে বাজার করতে আসা ফাহিম নামের এক ক্রেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মাংসের দাম কমাতে সরকারকে নানা পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। কিন্তু সফলতা নেই। এর জন্য সরকারের বাজার মনিটরিং টিমগুলোই দায়ী। ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা গরুর মাংসের দাম হলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ মাংস খাওয়ার অধিকার হারাবেই।’
মানুষের খাদ্যের প্রধান অনুষঙ্গ চালের বাজারেও দামের দাপট দেখা গিয়েছে। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। প্রতি কেজি সরু ও নাজির শাইল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, আটাশ ৬০ থেকে ৬৫, বাসমতী ১০০ ও পাইজাম ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ চালের দাম পাড়া-মহল্লার খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা করে বেশি। মহল্লার দোকানগুলোয় ৬৫ টাকার নিচে চাল কিনতে পারছেন না ক্রেতারা।
চাল, মাছ ও মাংসের বাজারে ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠলেও সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছেন তারা। বাজার শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, বাঁধা কপি ও ফুলকপি ৩০, শিম ৩০ থেকে ৪০, বরবটি ৬০, মুলা ২০, শসা ৪০-৫০ ও কচুর লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কলার হালি ৩০, শালগম ৪০, গাজর ৫০, প্রতি কেজি পেঁপে ২৫-৩০, ঝিঙে-ধুন্দুল ৭০, টমেটো ৫০, পালংশাক, লালশাক, পেঁয়াজের কালি প্রতি আঁটি ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায় ও পাইকারিতে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
অপরিবর্তিত রয়েছে আলু, পেঁয়াজ ও সয়াবিন তেলের দাম। প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৫৫, দেশি রসুন ২৫০ ও ইন্ডিয়ান রসুন প্রতি কেজি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চায়না আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ক্যারোলা আদা ১২০ দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৮৫, খোলা পামতেল ও সুপার প্রতি কেজি ১৭৫, বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন ৮৪০ থেকে ৮৫০ ও বোতলজাত ১ লিটার সয়াবিন ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স