ঢাকা , রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫ , ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডেসকো-ডিপিডিসিতে আউট সোর্সিং

বিদ্যুতের দুই সহস্রাধিক কর্মীর মানবেতর জীবন

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৭-০১-২০২৫ ০১:২১:০০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৭-০১-২০২৫ ০২:৩৪:০৭ অপরাহ্ন
বিদ্যুতের দুই সহস্রাধিক কর্মীর মানবেতর জীবন সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান ডেসকো ও ডিপিডিসিতে আউট সোর্সিং বা ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করা দুই সহস্রাধিক কর্মী মানবেতর জীবনযাপন পার করছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো জনবল সরবরাহ করে তাদের বেতনের বিপরীতে সরকারের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে কমিশন নিলেও নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও কর্মীদের বেতন থেকে অবৈধভাবে অর্থ কেটে রাখছে কোম্পানিগুলো। এসব কর্মীদের টাকা অবৈধভাবে কেটে রেখে বছরের পর বছর ধরে নিজেদের পকেট ভারী করছে ঠিাকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

অথচ ঝড়, বৃষ্টি মহামারিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে ঝুঁকিপূর্ণ সব দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছেন আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব প্রকৌশলী ও কর্মীরা। এইজন্য তাঁরা আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রথা বাতিল করে চাকরি স্থায়ী করণের দাবি জানিয়েছেন। সম্প্রতি তাঁদের এই নায্য দাবির কথা তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার নিকটও।

ভুক্তভোগীরা জানান, ডেসকোতে যার বেতন ৫৬ হাজার টাকা তিনি পান মাত্র ৪২ হাজার টাকা। এভাবে যার ৪১ হাজার তিনি পান ৩০ হাজার টাকা, ফোরম্যানের বেতন ২২ হাজার ধরা হলেও তারা পান ১৫ হাজার, লাইনম্যানের বেতন ২০ হাজার হলেও বাস্তবে মেলে ১২ হাজার, সহকারী লাইনম্যানের বেতন ১৬ হাজার হলেও বাস্তবে পান ১০ হাজার টাকা।

আবার ডিপিডিসিতে সিনিয়র ফোরম্যানের ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা বেতন হলেও বাস্তবে তিনি পান ২৪ হাজার টাকা। জুনিয়র ফোরম্যান ৩১ হাজার ৫০০ টাকা পেলেও ঠিকাদার দেন মাত্র ২২ হাজার টাকা। লাইনম্যানের বেতন বাবদ ডেসকো থেকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হলেও ঠিকাদার দেন ১৮হাজার টাকা, সহকারী লাইনম্যানের বেতন ২০ হাজার হলেও বাস্তবে পকেটে যায় ১৪ হাজার টাকা, হেলপারের বেতন বাবদ ১৬ হাজার টাকা দেওয়া হলেও বাস্তবে তারা পান মাত্র ১২ হাজার টাকা।
প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়া এক স্মারকলিপিতে তাঁরা জানান, চাকরি আউট সোর্সিং কোম্পানির কাছে বন্ধক না দিয়ে জাতীয়করণ করে সরাসরি ডেসকো ও ডিপিডিসিতে নিয়োগ দেওয়া হোক। বেতন বৈষম্য দূর করে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে শতভাগ উৎসব ভাতা, প্রণোদনা, নববর্ষ ও বিভিন্ন সরকারি আদেশে জারিকৃত ভাতা প্রদান করা হোক। কর্তব্যরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে পরিবারকে কমপক্ষে ৪০ লক্ষ টাকা এবং অঙ্গহানি হলে কমপক্ষে ২০ লক্ষ টাকা প্রদান করা হোক।

ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত পরিশ্রম করলেও মেলেনা ন্যায্য পারিশ্রমিক। অথচ আউট সোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা ২০১৮ এর ৭ (১) ধারায়, অতিরিক্ত সময় সেবা প্রদান করলে চুক্তি অনুযায়ী অতিরিক্ত সেবা মূল্য প্রদানের কথা রয়েছে।

স্মারকলিপিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডেসকো ও ডিপিডিসিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লাইন অ্যান্ড ইকুয়েপমেন্ট মেইনটেনেন্স, মেইনটেনেন্স অব সাব স্টেশন অ্যান্ড সুইচিং স্টেশন, কমার্শিয়াল অপারেশন সাপোর্ট সার্ভিস এই তিন ক্যাটাগরিতে নিয়োগ দিয়ে থাকে। এসব ক্যাটাগরির অধীনে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, সুপারভাইজার, ফোরম্যান, টেকনিশিয়ান, ইলেক্ট্রিশিয়ান, লাইনম্যান, সহকারী লাইনম্যান, মিটার রিডার, বিল সার্ভার ও হেলপার নিয়োগ দেওয়া হয়। যাদের মধ্যে এই মুহূর্তে ডেসকোতে কর্মরত আছেন ১৩৩৬ জন ও ডিপিডিসিতে কর্মরত আছেন ১০৭৬ জন। বিদ্যুৎ বিল বিতরণ, নতুন সংযোগ-পুনঃ সংযোগ, মিটার বদলের মতো সরাসরি রাজস্ব আদায়ের কাজও সম্পন্ন হয় চুক্তিভিত্তিক এই কর্মীদের দিয়ে।

অথচ আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তরা অধিক দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও স্থায়ী জনবলের মতো বেতন-ভাতা কিংবা সুযোগ সুবিধা পান না তারা। শুধু বেতন-ভাতার বৈষম্য নয় কর্মজীবনে কখনো ছুটিও পান না আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্তরা। কোনো সহকর্মীর ছুটির প্রয়োজন হলে বদলি দায়িত্ব পালন করতে হয় অন্য সহকর্মীদের। চাকরি প্রত্যাশীদের আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োগের সময়ও নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। প্রতি দুই তিন বছর পর পর নিয়োগ নবায়নেও ঘুষ দিতে হয় ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের।

এ ব্যাপারে ডেসকোতে কর্মরত প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, অলিখিত চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো আগ থেকেই নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবের চেক বইয়ে স্বাক্ষর নিয়ে নিজেদের কাছে আটকে রাখেন। ফলে নিজেদের হিসাবে বেতনের টাকা ঢুকলেও তা তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর মৌখিক চুক্তি অনুযায়ী বেতন দেওয়া হয় আউট সোর্সিয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের।

আউট সোর্সিং কর্মীরা বলেন, ‘সরকার বেতন বাবদ অর্থ পরিশোধ করলেও তা সাধারণ প্রকৌশলী ও বিদ্যুৎ কর্মীরা ন্যায্যভাবে পাচ্ছেন না। মাঝখান থেকে আউট সোর্সিং জনবল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পকেট ভারী হচ্ছে। আর বঞ্চনায় মানবেতর জীবন পার করছেন আমাদের দুই সহস্রাধিক কর্মীভাই বোনেরা। এইজন্য সরকারের নিকট আমাদের দাবি আউট সোসিংপ্রথা বাতিল করে চাকরি স্থায়ীকরণ করা হোক।

বাংলা স্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন/
 
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ