ঢাকা , রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি

​সামিটের কর ফাঁকির সেই ১১০০ কোটি টাকার কী হলো?

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১২-০১-২০২৫ ১২:৫৩:৩০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১২-০১-২০২৫ ০৪:৪১:১৯ অপরাহ্ন
​সামিটের কর ফাঁকির সেই ১১০০ কোটি টাকার কী হলো?
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বড় বড় কিছু শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। বৃহত্তর এই তদন্তের অংশ হিসেবেই কর ফাঁকির অভিযোগ পায় সামিট গ্রুপের দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। রাজস্ব বোর্ডের কর অঞ্চল-২ এর আওতায় করদাতা এই দুই প্রতিষ্ঠানের নাম সামিট পাওয়ার ও সামিট কর্পোরেশন। তারা প্রায় এক হাজার ১১২ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে বলে তদন্তে উঠে আসে। কিন্তু সেই টাকার কী হলো সে বিষয়ে এখনো কোন স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা ও বিশেষজ্ঞরা অন্তর্বর্তী সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। 

অভেযোগ উঠেছিলো, লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে সামিট গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ১১২ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) অনুসন্ধানে এই অভিযোগ করা হয়। প্রতিবেদনে সামিট পাওয়ার লিমিটেডের মালিকানা প্রতিষ্ঠান সামিট কর্পোরেশন লিমিটেড লভ্যাংশ পরিশোধে ২০ শতাংশ উৎস কর এবং সামিট কর্পোরেশনে শেয়ার থাকা সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল তার লভ্যাংশে ১৫ শতাংশ উৎস কর ফাঁকি দিয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছিলো। 

রাজস্ব বোর্ডের সূত্রগুলো জানায়, সামিট পাওয়ারের শেয়ার মালিকানা, লভ্যাংশ ঘোষণা ও প্রদানের তথ্য ছয় সপ্তাহব্যাপী পরীক্ষা করে তারা কর ফাঁকি দিয়েছে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছায় সিআইসি।  এই তদন্ত শুরু হয় গত ২০ আগস্ট, শুরুতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল সামিটের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্যতে। এসব তথ্য জানাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়। তদন্ত চলাচকালীন, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল গ্রুপটির অন্যান্য কোম্পানির বিষয়েও খোঁজখবর শুরু করে। এজন্য অতিরিক্ত জনবল নিয়োজিত করে প্রতিটি কোম্পানির তথ্য অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তখন তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, অনুসন্ধানে যা জানা গেছে তাতে মনে হচ্ছে এই করফাঁকির ঘটনাটা 'হিমশৈলের চুড়ামাত্র'। এই গ্রুপের অধীন অন্যান্য কোম্পানিগুলোর আরও অনিয়ম থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা দলের এক সদস্য জানান, 'এ পর্যন্ত উদঘাটিত কর ফাঁকির মধ্যে এটি অন্যতম বড় হলেও, আমরা আশঙ্কা করছি তদন্তে আরও দুর্নীতির চিত্র উঠে আসবে।' 

এ ব্যাপারে কর অঞ্চল-২ এর কর কমিশনার ব্যারিস্টার মুস্তাসিম বিল্লাহ ফারুকী গণমাধ্যমকে জানান, 'এই ট্যাক্স জোনের দায়িত্ব নেওয়ার পরে আমরা দেখতে পাই কিছু করদাতা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছিল, ফলে এখাতের অন্যান্য করদাতারা বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথা বলছিল। তখন আমরা জানতে পারি, উৎসে কর অব্যাহতির সুবিধাভোগী হচ্ছিল সামিট গ্রুপ। কিন্তু এই সুবিধা প্রদানের বিষয়টা যথাযথভাবে নথিবদ্ধ করা ও মেইনটেইন করা হয়নি। এটা নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা এনবিআরকে বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখতে বলেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে সেই তদন্তের কি অবস্থা তা শিওর বলতে পারছি না। 

জানা যায়, অর্থবছর ২০১৯ থেকে অর্থবছর ২০২৪ পর্যন্ত সামিট পাওয়ারের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সামিট কর্পোরেশনকে দেওয়া লভ্যাংশে ৩১৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা উৎস কর কর্তন করেনি কোম্পানিটি। সেক্ষেত্রে দৈনিক জরিমানা বা সুদ জমা হওয়ার কথা, যার ফলে এক্ষেত্রে করফাঁকির মোট পরিমাণ ৪৬৫.০৭ কোটি টাকা বলে সিআইসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

অন্যদিকে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালকে লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৪৩৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা উৎসে কর কর্তন করেনি সামিট কর্পোরেশন। এতে জরিমানা বা সুদসহ মোট কর ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৬৪৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। 
   
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞারা বলছেন, এভাবে একের পর এক কর ফাঁকি দিয়ে কোম্পানিগুলো কীভাবে চলে তা আমাদের বোধগম্য নয়। নতুন সরকার বিশেষ করে জ্বালানি উপদেষ্টাকে এই বিষয়ে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা। 

তাঁরা আরও জানান, শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে দেশের অর্থ লোপাট হয়েছে। স্বজনপ্রীতি ও কিছু মানুষকে সুবিধা দিতে অপ্রয়োজনে বেসরকারি খাতে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওইগুলো প্রাধান্য দিতে গিয়ে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে। আর সেইসব কোম্পানিগুলো এখনো কিভাবে চলছে তা জানতে চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। 

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরকারের নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস দিতে না পারলেও মেঘনাঘাটে বেসরকারি খাতের সামিট গ্রুপের ৫৮৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে পেট্রোবাংলা গ্যাস সরবরাহ করছে। এতে সরকারের অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে আছে। তারপরে সেই কোম্পানির এতো বড় কর ফাঁকি কিভাবে ধামাচাপা পড়ে গেলো? (চলবে)

বাংলা স্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ