ঢাকা , রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​তিস্তায় দেখা মিলল বিরল প্রজাতির পাখির

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১১-০১-২০২৫ ০৭:৩২:২৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১১-০১-২০২৫ ০৭:৩২:২৭ অপরাহ্ন
​তিস্তায় দেখা মিলল বিরল প্রজাতির পাখির
শীতের এ মৌসুমে তিস্তা নদীর পাড়ে দুর্লভ পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনায় তিস্তা যেন ফিরে পেয়েছে পাখিকেন্দ্রিক সৌন্দর্য। বালুময় তিস্তার চরগুলো পরিযায়ী পাখিতে মুখরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পাড়ে বাড়ছে পাখিপ্রেমী দর্শনার্থীদের ভিড়। বহু অচেনা পাখির ভিড়ে এবার তিস্তায় দেখা মিলেছে বিরল প্রজাতির পাখি পাতি মার্গেঞ্জারের। পরিযায়ী এ পাখি দেখতে অনেকটা রাজহাঁসের মতো। ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা কমলা রঙের। ডানা ধূসর, সাদার মিশ্রণ। কয়েক বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দারা একবার এ প্রজাতির পাখি তিস্তায় দেখেছিল। গেল বছর শেষে ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয়বারের মতো তিস্তা নদীতে দেখা মিলল পাতি মার্গেঞ্জার পাখির।
 
তিস্তা নদী এবং নদীর চরে এখন পাতি মার্গেঞ্জারের মতো বিচরণ করছে অগণিত পরিযায়ী পাখি। এর কোনোটা হাজার মাইল দূর থেকে এসে মোহনীয় করে তুলছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। তিস্তা এখন পরিযায়ী পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

শীতের শুরুতেই নদীর পাড়ে পরিযায়ী পাখির দলবেঁধে ওড়াউড়ি, ছোটাছুটি আর ডুব সাঁতারের সুন্দর মুহূর্ত দেখে মুগ্ধ মাঝি, কৃষাণ-কৃষাণি ও স্থানীয় লোকজন। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির উড়ন্ত দৃশ্য উপভোগ করতে পিছিয়ে নেই দর্শনার্থীসহ শৌখিন আলোকচিত্রীরাও।

জানা গেছে, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে তিস্তা নদীর এপার-ওপার। এবারও পাখি আসছে। এবার বেশ কিছু নতুন পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া গেছে। নদীর পরিবেশ-প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় তিস্তাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে পাখিগুলো। নদীতে শামুক, জলজ পোকামাকড় তাদের খাদ্য। তিস্তায় এসব খাদ্য পাওয়া যায় বলে এখানে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে পাখিগুলো।

দীর্ঘদিন ধরে পাখির ছবি তুলতে দেশ-বিদেশে ছুটে বেড়িয়েছেন নদী গবেষক ও শৌখিন আলোকচিত্রী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ। শীতের এই সময়ে দেশে অতিথি পাখির আনাগোনা বাড়ে। ফলে পাখিপ্রেমীদের জন্য এ সময়টা দারুণ। তুহিন ওয়াদুদও পাখির ছবি তোলার জন্য বেছে নিয়েছে এ সময়টি। গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে নৌকায় করে তিস্তা নদীতে পাখির ছবি তুলেছেন। এ সময় ক্যামেরার ভিউফাইন্ডারে চোখে পড়ল দারুণ এক দৃশ্য। তিস্তার জলে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের দেশে বিরল পাখি পাতি মার্গেঞ্জার।

সেদিনের কথা স্মরণ করে তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ওইদিন বেলা দেড়টার দিকে রংপুরের পীরগাছা ও কুড়িগ্রামের উলিপুর সীমান্তঘেঁষা তিস্তা নদীতে পাখির ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎ বিরল মার্গেঞ্জার দেখতে পান। তিস্তায় পানি এখন কম, অনেক স্থানে হাঁটুসমান। এমনই এক জায়গায় পানিতে মাছসহ জলজপ্রাণী শিকার করছিল মার্গেঞ্জারটি। দেখামাত্রই ক্যামেরায় ধারণ করে নেন পাখিটিকে। বেশ কয়েকটি ক্লিকেই ধারণ করেন উড়ন্ত পাতি মার্গেঞ্জারকে। 

তিনি আরও বলেন, শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখি তিস্তায় আসে। আমরা কয়েকজন শৌখিন ফটোগ্রাফার সারা বছর পাখির ছবি তুলি। তিস্তা নদীতে পাখির ছবি তোলার সময় পাতি মার্গেঞ্জারকে দেখতে পাই। এটি পরিযায়ী। মূলত শীতপ্রধান দেশ থেকে পাখিগুলো শীতকালে উত্তরাঞ্চলে চলে আসে। এর আগে আমি কখনও এ পাখিকে তিস্তা নদীতে দেখিনি। বছরের শেষ দিনে দুর্লভ পাখিটির ছবি তুলতে পেরে আনন্দিত। যে পাখির ছবিটি তুলেছি, সেটি মেয়ে মার্গেঞ্জার। ছেলে পাখিগুলো আরও দেখতে আকর্ষণীয়। একে ইংরেজিতে ‘কমন মার্গেঞ্জার’ বলে।

তুহিন ওয়াদুদ বলেন, মার্গেঞ্জার পাখিটি রাজহাঁসের মতো। অনেক শিকারি তিস্তায় আসা পরিযায়ী পাখি শিকারের জন্য ওত পেতে থাকে। জীবন রক্ষা করতে শীতপ্রধান দেশ থেকে শত শত কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পরিযায়ী পাখিরা উত্তরাঞ্চলে আসে। তাই এসব পাখি রক্ষায় প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।

তিস্তায় দুর্লভ পাখির বিচরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিস্তায় কমবেশি পরিযায়ী পাখি আসে। প্রতি বছরের মতো এবারও আসছে। তবে এবার বেশ কিছু নতুন পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া যাচ্ছে তিস্তায়। নদীর পরিবেশ-প্রকৃতি পাখিদের অনুকূলে থাকায় তিস্তাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে এ পাখিগুলো।

জানা যায়, পাতি মার্গেঞ্জার প্রবহমান নদী ও নালয় বিচরণ করে তারা স্রোতের বিপরীতে পানিতে ডুব দিয়ে মাছ শিকার করে। সেই সঙ্গে জলজ পোকামাকড়, ব্যাঙ, চিংড়ি, শামুকজাতীয় প্রাণীসহ লতাপাতা খায়। গাছের প্রাকৃতিক গর্তে এরা আবর্জনা ও কোমল পালকের স্তূপ বানিয়ে ৬ থেকে ১৭টি ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ পীতাভ। এরপর ২৮ থেকে ৩২ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

এদিকে, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে তিস্তা নদীর এপার-ওপার। এবারও পাখি আসছে। এবার বেশ কিছু নতুন পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া গেছে। নদীর পরিবেশ-প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় তিস্তাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে এ পাখিগুলো। নদীতে শামুক, জলজ পোকামাকড় তাদের খাদ্য। তিস্তায় এসব খাদ্য পাওয়া যায় বলে এখানে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে পাখিগুলো।

সুদূর সাইবেরিয়া, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ চীন, লাদাখ থেকে এসব পাখি আসছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ হাঁস, ছোট কান প্যাঁচা, লম্বা পা তিসাবাজ, জিরিয়া, টিটি, মনকান্ড, চখাচখিসহ ৫০ থেকে ৫৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে নদীপাড়ে। তিস্তাকে যেন পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত করা যায় এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।

এ ব্যাপারে সামাজিক বন বিভাগ রংপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রতি বছর শীতে নদীতে বিরল পরিযায়ী পাখিরা আসে। শিকারিদের হাত থেকে এসব পাখি রক্ষায় সামাজিক বন বিভাগের একটি টহল টিম বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ